অটোয়া, রবিবার ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪
শেকড়ের টানে - গোলাম কবির

হ্যাঁ, এই তো!
একটু চোখ বন্ধ করো। 
মনে করো তুমি এই ঢাকা শহর ছেড়ে 
একদমই তোমার চিরচেনা গ্রামের 
মেঠো পথ ধরে হাঁটছো। 
কী, দেখতে পাচ্ছো তো এখন সব? 
সোঁদা মাটির গন্ধ পাচ্ছো, পাচ্ছো না? 
পাট পচা ঘ্রাণ আসছে না নাকে? আসছে? 
এভাবেই হেঁটে হেঁটে আরো সামনের দিকে এগিয়ে যাও। 
আমের মুকুলের, মেহগনি ফুলের ঘ্রাণ পাচ্ছো তো!
তারপর আর একটু সামনে হাঁটতে থাকো, 
এখন তুমি একটু কষ্ট করে ক্ষেতের আল ধরে হাঁটো, কী? 
সরিষার হলুদ ফুল আর পিয়াজের ক্ষেতে 
সাদা ফুলের বাতাসে ঢেউ খেলা দেখে তোমার মন উতলা হচ্ছে না?
হবারই কথা। 
এটা কী পাখির গান? শুনতে পাচ্ছো কি? 
না, এটা খঞ্জনা নয়, এটা মনেহয় ঘুঘু পাখির ডাক। 
দুপুরবেলা তো, তাই।
কী মন কেমন করছে, তাই না? 
এখন আবারো হাঁটতে থাকো সোজা - 
যেখানে বিশাল একটা অজগর সাপের মতো আঁকাবাঁকা হয়ে
দুই গ্রামকে আলাদা করে দেয়া 
নদীর ধার ঘেঁষে, কী সুন্দর ঝিরঝিরে বাতাসে 
তোমার চুল গুলো উড়িয়ে নিচ্ছে তাই না? 
নদীতে বালক বয়সের কতো গুলো ছেলেমেয়ে 
সাঁতার কাটছে, কেউ কেউ আবার ঝাঁকি জাল দিয়ে
ছোটো মাছ ধরছে মজা করে, দেখতে পাচ্ছো তো?
নৌকায় ওটা কাদের বাড়ির বৌ যাচ্ছে বলো তো, তালুকদার বাড়ির? হলো না! 
ওটা রায় বাবু'র বড়ো বৌ যাচ্ছে বাপের বাড়িতে, 
মাঝির সামনেই বসে আছে ভুলু কান্ত রায়, 
আমার ছেলেবেলার বন্ধু - 
ওর মাথার খাড়া খাড়া চুল দেখেই বুঝেছি। 
মন খারাপ হলে মাঝেমাঝে আমি এভাবেই 
চোখ বন্ধ করে চলে আসি। 
এখন আর গ্রামে সেভাবে আসা হয় না তো!
তাই এভাবেই কল্পনার আশ্রয় নিই, 
মন ভালো হয়ে যায় নিজের শেকড়ের কাছে এলে। 
ইচ্ছে হলে তুমিও এভাবে আসতে পারো 
গ্রামে, শেকড়ের টানে।

গোলাম কবির
তাজমহল রোড, 
মোহাম্মদপুর, ঢাকা।