অটোয়া, রবিবার ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪
অমিতা মজুমদার এর দু'টি কবিতা

পোষ্য বনাম পোষক
দাঁড়কাক কেউ পোষেনা,
কেন?
দাঁড়কাক দেখতে কুৎসিত বলে!
না কী তার স্বর কর্কশ বলে?
সবাই কেন ময়না, তোতা, টিয়া পুষতে চায়?
দেখতে সুদর্শন আর সুমধুর স্বর বলে!
না কী ভেতরের কথা অন্য!
দাঁড়কাক কি তার সুতীব্র কর্কশ স্বরে জানিয়ে দেয়,
সে কারও পোষ মানবে না।
সে তার বুনো স্বভাব নিয়েই সন্তুষ্ট,
স্বাধীনভাবে বাঁচতে চায় সে।
শেখানো সুমধুর বুলি নয়,
কর্কশ কা কা রবই  তার প্রিয়।
ময়না, তোতা, টিয়াকে পোষ মানানো যায় অনায়াসে,
তারা সেই বুলি শেখে যা পালনকর্তা শুনতে চায়।
পোষ্য বনাম  পোষকের মাঝেও,
থাকে বুঝি এক অলিখিত সমঝোতা। 

বেঁচে থাকা
মৃত্যুর আগে সবাই-ই বেঁচে থাকে।
তবে সে বাঁচা কি সবাই একই রকম বাঁচে? 
নাকি কেউ বাঁচে প্রাণে,
আবার কেউ বাঁচে মনেপ্রাণে।
প্রাণে যে বাঁচে তার কাছে হয়তো প্রতিটা সকালের সুর্য একইরকম। 
পুব দিক রাঙিয়ে ওঠে, 
পশ্চিমে লাল আভা ছড়িয়ে অস্ত যায়।
কারণ এটাই নিয়ম----
নিয়মের বাইরে যেতে পারে না কেবলই  প্রাণে বাঁচে যে ।
তার জানাই হয় না,
সজনে ডাঁটার চচ্চড়ি আর মাটন কষার ফারাকটা কি?
সে খায় উদরপূর্তির জন্য। 
তাই মায়ের হাতের কুমড়ো ফুলের বড়া,
আর পাঁচতারা রেস্তোরাঁর কন্টিনেন্টাল খাবারের তফাৎ,
তার কাছে জরুরী কোনো বিষয় নয়।
যে মনেপ্রাণে বাঁচে---
তার কাছে প্রতিটা সকালের রঙ-রূপ আলাদা,
অস্তগামী সুর্য তাকে আগামীকালের বারতা জানিয়ে যায়।
তার কাছে জীবনের জলছবি সবসময় কথা বলে।
মায়ের রাঁধা চালতার চাটনির স্বাদ,
সে পায় না বিলাসী খাবারের সমারোহে।
প্রাণে বাঁচা মানুষটার জন্য,
শারীরিক উপস্থিতিই সর্বশেষ কথা। 
আর মনেপ্রাণে বাঁচতে চায় যে----
তার কাছে শারীরিক উপস্থিতিও মিথ্যে হয়ে যায় কখনো কখনো।
দূর্বাঘাসের ডগায় জমে থাকা একফোঁটা শিশির বিন্দুও,
তার কাছে প্রাণের মতোই দামি।
শুধু প্রাণে বাঁচতে চায় যে সে জানেই না----
ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি আর মুষলধারে বর্ষার,
সুর ও ছন্দের অমিল কিছু আছে কি- না? 
পুব আকাশে রংধনুর রঙ ছড়ালে,
তার কিছুই যায় আসে না।
মনেপ্রাণে বাঁচে যে জন-----
সে বৃষ্টি আর বর্ষার সুর ও ছন্দের সাথে,
আপনা আপনি গুনগুনিয়ে ওঠে। 
রংধনুর রঙ নিয়ে মনের ক্যানভাসে,
ছবি আঁকতে বসে যায় আপন খেয়ালে।।

অমিতা মজুমদার
রামপুরা,ঢাকা
বাংলাদেশ