অটোয়া, রবিবার ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪
কিঞ্চিৎ ফটোসেশান- টিটোন হোসেন

রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে তাদের দিকে তাকালাম-
তারা বলছিলো তারা ক্ষুধার্ত; খাবার চাই, 
একটু এগিয়ে গিয়েই আবার পিছনে দেখলাম, 
তারা বসে পড়েছে মাথায় হাত দিয়ে। 
কিছু রোগা সোগা কুকুর ঘুরছিলো পাশেই,
মুমূর্ষু মুখে তাকিয়ে ছিলো কুকুরগুলো।

বুভুক্ষু দেহে বস্ত্র বলতে পরনে ছেড়া লুঙ্গি, 
গায়ে ছিলো ছেঁড়া ফাটা গেঞ্জি। 
চোখের খাজগুলো পূর্ণ ছিলো লবন জলে,
সাগরের পানির মতো তিক্ত লবণাক্ত হয়তো।

কিছু লোক এলো দামী পোশাকে ঢাকা শরীরে,
পারফিউমের ঘ্রাণে পেটের ক্ষুধা আধেকটা-
কেটেই গেলো তারপর শুরু হলো অভিনয়;
ক্যামেরা তাক করে বুভুক্ষু প্রাণীর ছবি তোলা,
ঘেউঘেউ শব্দে কুকুরের আকুতিভরা প্রলাপে
ভেবেছিলো খাবার এসেছে কিন্তু না;
ওনারা এসেছে রহস্যের কিনারে কিছু ছবি নিতে, 
খাবার তো ছবির পরে আসবে গাড়িতে।

ভীতিকর মৃত্যুর মিছিলে চলতে চলতে-
তাদেরই জীবন দিতে হয় প্রতিমুহূর্তে।
যুদ্ধের দামামায় জীবনের বিন্দু রক্তে,
প্রতিবারই প্রতিবাদে শামিল হয়ে রুখে,
সাহসী বীর হয়ে ইতিহাস গড়ে তোলে,
দেশের জয়গান তারা গেয়ে যায় মুহূর্তে। 

ধনীরা তো থাকে ঐ উঁচু তলার রঙমহলে,
হাড়ি হাঁড়ি উচ্ছিষ্ট ডাস্টবিন ফেলে নিমিষে।
ক্ষুধার জ্বালা বোঝা দায়!
কুকুর আসার আগেই কাকগুলো খায়;
বস্ত্র বিহীন মানুষগুলো মানুষ নাকি আবার, 
ওরা তো পথের কুকুরের থেকেও নিকৃষ্ট।

কিছু লোক এসে আবার গুনতে শুরু করলো,
কতজন বুভুক্ষু প্রাণী আছে রাস্তায় শুয়ে;
দামী পোশাক দেখে পাশের কুকুরগুলো-
ঘেউঘেউ শব্দে এগিয়ে এসে ভেবেছিলো-
খাবার এসেছে কিন্তু না; তারা এসেছিলো গুনতে,
আসলে কতজন না খেয়ে আছে, 
প্রতিবারই সেই বুভুক্ষু প্রাণীগুলোকে গুনছে, 
কিন্তু বারবার কুকুরগুলো বাদ পড়ছে.....
গোনা তালিকায় খাবার তো বহুদূরে। 

কিছু পর আবার স্যুট পরা কিছু মানুষ এলো,
তারা জিজ্ঞেস করতে এসেছে প্রাণীগুলোকে
আসলে কতদিন ধরে তারা না খেয়ে আছে,
কি কি খাবার হবে তালিকায় সেটা জানতে,
খাবারের বাইরে আর কিছু দরকার কিনা?
খাবারের পর তারা ঠিক মতো হাত ধোয় কিনা?
তারা কিছু নিয়ম তালিকা ধরিয়ে দিয়েই-
রহস্যের কিনারে আবারও কিঞ্চিৎ ফটোসেশান,
সামনে মানুষ তারপর বুভুক্ষু প্রাণী তারও 
পিছনে কিছু রোগা-সোগা কুকুর ছিলো দাঁড়িয়ে।

টিটোন হোসেন 
প্রভাষক, ব্যবস্থাপনা
ধামরাই সরকারি কলেজ, ঢাকা