অটোয়া, রবিবার ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪
সত্যেন্দ্রনাথ পাইন কয়েকটি কবিতা

স্বপ্ন
ঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল, আমি প্রধানমন্ত্রী হয়েছি,
সামনে বিরাট ভারতবর্ষ নামের এক তরতাজা যুবতী।
যাকে দেখে গলা শুকিয়ে কাঠ।
ইচ্ছে হলো তার প্রেম সাগরে ডুব দিই।
আকন্ঠ পান করি তার সুধারস।
ইচ্ছে হলো জাপটে ধরি বুকের মাঝে।
কুটিল দৃষ্টিতে দেখলাম তাকে
ধর্ষণের ভঙ্গিতে।
নিজের ছায়াপথ করলো বিদ্রুপ আমাকে।

সারা দেশ ঘুরে খুঁজতে চাইলাম আর এক যুবতী
পৃথিবীতেও বেরুলাম খুঁজতে আর এক ভারতবর্ষকে
কুকুরগুলোর ঘেউ ঘেউ শব্দে আঁতকে উঠলাম।
প্রাণভয়ে ছুটলাম এদিক সেদিক।
কেউ বাঁচাতে এলো না।
সকলেই তখন ছুটছে আর ছুটছে।
যেন পাগল হয়ে গেছে সব্বাই।

শেষ কালে ঘুমের রেশ কাটিয়ে উঠে দেখি
বিছানায় শুয়ে,
নাইট বাল্বটা জ্বলছে
শেয়ালের চিৎকার শোনা যাচ্ছে।
রাতের প্যাঁচা কেঁদে উঠলো
ব্যাঙ্গ করে ডাক দিলো ব্যাঙের দল।
শ্মশানে শোনা গেল হরিধ্বনি
ভোর হতে এখনও বেশ সময় বাকি
উঠে পড়লুম, ভাবতে ভাবতে শিউরে উঠলুম।

প্রধানমন্ত্রী হবার স্বপ্ন নিমেষে গেল হারিয়ে ।
মনে পড়লো শ্মশান, চিতা, কবরস্থান।
নিচে গভীর খাদ,
এখানে নামলে টেনে তোলার কেউ নেই।
অজস্র গিরিখাত।
মৃত মানুষের হাড়গুলো এখানে রক্ষিত
দুচোখে আতঙ্ক ঘণীভূত হতেই ঘামে ভিজে গেল
সারাটা শরীর।
কেউ খোঁজ নিল না আমার।
হি হি হি করে হেসে উঠলো একশো তিরিশ কোটি মানুষ।

আবার শুয়ে পড়লাম বিছানায় মুখ গুঁজে।

কল তলায়
ল তলায় জলের কলটা থেকে জল পড়ছে অনবরত;
একলা একলা, ঝরছে, কেউ বাধা দেবার নেই
কোনও বন্ধু, কোনও প্রিয়জন নেই, আপন মনে ঝেড়ে ফেলছে তার রাগ অভিমান চাপা কান্না।
তার নিজস্ব প্রতিবেদক হিসেবে দায়িত্ব পালন
করে চলেছে  সে নিজেই।
তার অবিরাম গভীর আর্তনাদ এঁকে দিচ্ছে এক কঠিন জিজ্ঞাসা।

না আছে তার বন্ধু, আত্মীয় পরিজন।
আমি শুনতে পেয়েও কিছ করার সাহস পাইনি।
যদি কেউ ভেতরে থাকে এই আশঙ্কায়।
অথচ আমি পারতুম। হ্যাঁ আমিই
ঠিক পারতুম তার বন্ধের কিনারা খুঁজে দিতে
যাই হোক, সেই কল তলায় এখন অদ্ভুত নীরবতা
পুরুষদের মধ্যে যেন শিৎকারের অদম্য তাজা কটু গন্ধ নাকে লেগে
কল তলায় এখন কেউ নেই
বিনা কারণে আর জল পড়ে না।

হয়তোবা সে দুঃখ ভুলে একলা থাকার ইচ্ছে টাকে
ধরে রাখতে পেরেছে চিরজীবনের মতো।

আমি কি পারতুম, মনে তো হয় না।

নাগরিক আকাশ
কাশটা চুরি হয়ে গেছে, বিজ্ঞাপন আর ফেস্টুনে
বাঁশ নারকেল তাল তমাল সবুজ বন ঘেরা
দিগন্ত যেন আজ পরিযায়ী।
বড় বড় অট্টালিকা,  বাতি স্তম্ভ, সুউচ্চ সেতুর বন্ধন
হিমালয় সম চিমনি ঢাকা আকাশ হারিয়েছে নাগরিকত্ব।
মহামান্য আদালত, মনুমেন্ট হয়ে উপহাসের ছলে বিদ্রুপ করে তাকে।
আকাশ পথে ড্রোন, রকেট, বিমান, নকল সৌরজগতের নৈশভোজের আড়ম্বরে ম্রিয়মান।

এখন আকাশকে কে দেবে বিমল নাগরিকত্ব?
কি নামে পরিচিত হবে নতুন করে নতুনভাবে??

সত্যেন্দ্রনাথ পাইন
সোনাতলা, হাওড়া