অটোয়া, রবিবার ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪
দেওয়ান সেলিম চৌধুরী'র দু'টি কবিতা

বিশ্বাসের কারাগারে
ন্মই বলে দেবে ধর্ম্ম তোমার
তাতে নেই কারো হাত,
শুধু জন্মের কারণেই পূজনীয় কেউ কেউ
পাপ না করেও কেউ, নিকৃষ্ট জাত।
এ ভাবেই শুরু হয় বিশ্বাসের পক্ষপাত।
ব্রহ্মার মুখ থেকে ব্রাহ্মণের সৃষ্টি
পা থেকে শূদ্র 
পা তো অনেক দামী
তবে শূদ্র কেন ক্ষুদ্র?
কেন ব্রাহ্মণ আরতি দেয় ব্রহ্মার পায়ে
আরো তো পবিত্র অঙ্গ ছিল ব্রহ্মার গায়ে।
বিশ্বাস যেমনই হোক, আকড়ে থাকা চাই
কোথাও পালিয়ে যাবে; এমন সাধ্য নাই।
মনের মাঝে লালন করা বিশ্বাসের বাসা
তিলে তিলে গড়ে উঠা বাঘ, প্রচণ্ড খাসা
দেয়না দূরে যেতে, ঘুরে ফিরে বিশ্বাসে আসা।
মানুষ তিলে তিলে ডুবে যায় বিশ্বাসের কাছে
প্রশ্নহীন, যুক্তিহীন, চার-দেয়ালের মাঝে।
যা কিছু যায়না দেখা দিনের আলোয়
দেখা যাবেও না কোন দিন।
তাকেও দেখিতে পাবে গভীর অন্ধকারে
আলোক বিহীন।
ধর্ম্ম বলেছে তাই, বিশ্বাস করা চাই
মুক্ত বুদ্ধির হেথা, নাহি কোন ঠাই।
সমাজ দাঁড়িয়ে আছে খর্গহাতে, ভিন্ন ভিন্ন জাতে
মানুষ অবিশ্বাসী হলে, অমঙ্গল হয় তাতে।
চারিদিকে চেয়ে দেখি, কত মেকি, বিশ্বাসীর দল
নিজের স্বার্থ লাগি ধরিয়াছে কত বিচিত্র ছল।

সত্যের সন্ধানে
বিধাতাকে খোঁজা চাই প্রতিদিনের নৈমিত্তিক কাজে
নিঃশব্দে ফোটা ফুল, আর প্রাণের প্রতিটা ভাঁজে।
প্রজাপতির ডানার রঙ, পাখীর কাকলী, আর প্রকৃতির মাঝে।
বিন্দুর চেয়েও ছোট প্রাণে, যেখানে বিধাতার মহিমা জাগে।
কখনো খুঁজতে যাইনি তাঁকে ধর্ম্মের মাঝে,
বিধাতা অনেক মহৎ, দৈন্যতায় তাঁরে নাহি সাজে।
ধর্ম্মের বিধাতার আছে দূরদৃষ্টির অভাব
কারণে অকারণে ভুল করার রাজকীয় স্বভাব।
ভালোবেসে কাছে টানা, আবার মূহুর্তে দূরে
কাউকে দিয়ে দেন আকাশ জমিন, কাউকে নরকের ঘরে।
কখনো রয়ে যান প্রাণের কাছাকাছি ধমনীর মাঝে
কখনো ও বা আরশে সমাসীন বিচারকের সাজে।
মুসাকে রক্ষা করেন অতিযত্নে নিজের হাতে,
ধীরে ধীরে বেড়ে উঠা ফেরাউনের সাথে।
সমুদ্র দ্বিখণ্ডিত করে, নিয়ে আসা নিশ্চিন্ত পাড়ে
জীবনের শেষ ইচ্ছা দেননি কেন মিটাবারে তাঁরে?
মুসার মৃত্যু হলো অনাদরে, পিসগা পাহাড়ে।
বিধাতার অসীম কৃপায় জন্ম হলো যার
কেহই নিলোনা তাঁর পিতৃত্বের ভার।
ক্রুশবিদ্ধে মৃত্যু হলো, সত্যের প্রতি অবিচার 
বিন্দুমাত্র নড়িলোনা টনক ধর্ম্মের বিধাতার।
বিধাতা শুধু দেখেই গেলেন, পড়িলোনা দীর্ঘশ্বাস
পিতৃবিহীন সন্তানের বুকে, শুধু বিধাতারই ছিল বাস।
বেহেস্তের বাগানে রাখা, দুটি মাত্র প্রাণ
ভালোমন্দ বুঝেনি তখনো, তারই সাথে শয়তান
কেন আদমকে একা রাখা, ভেবে হয়রান
হয়ত বিধাতাও বুঝে নাই, ঘটনার শেষ পরিণাম।
শয়তান জিতে গেলো, দোষ হলো বিবি হাওয়ার
সবাই এড়িয়ে গেলো, নিজ দায়িত্ব ভার
শুধু একটা ভুলেই, আদম হারালো তাঁর স্বর্গ উপহার।
এ ভাবেই গল্পের শুরু হলো, পৃথিবীতে মানুষ আসার।
মানুষের সৃষ্টি নিয়ে কত বিচিত্র গল্প গাথা
বিধাতার সাজানো বাগান, মূহুর্তে হয়ে যায় বৃথা
শয়তানের কাছে হেরে যান ধর্ম্মের বিধাতা
বিধাতাকে মর্যাদা দিতে,  কেন মিছে নিয়ে আসা শয়তান
ধর্ম্মের মাঝে বিধাতাকে খোঁজা, বিধাতারই অপমান।

দেওয়ান সেলিম চৌধুরী। অটোয়া, কানাডা