কিশোর প্রেমের নৌকা ভাসে বর্ষার জলে - অমিতা মজুমদার
সেদিন ছিল আষাঢ় নয়ত শ্রাবণের এক বিকেল,
সন্ধ্যা ছুঁই ছুঁই করছে উঠোনের ঝিঙেফুলে।
হলুদ ঝিঙেফুলগুলো,
কিছুটা মনমরা,বিষন্ন।
আকাশের মেঘেরা কেমন মুখগোমড়া করে আছে,
বর্ষা বর্ষা বিকেলগুলো বুঝি এমনই হয়।
পাশের বাড়ির বৌদি এলো সেই মেঘ মাথায় করে,
আঁচলের তলায় ব্লাউজের ফাঁক গলিয়ে বের করল একখানা নীল খাম।
নরম সুরে বলল,
একটু পড়ে দাও না ভাই।
আমি শ্যামল তখন ডুবে ছিলাম,
আমার থেকে এক ক্লাস উপরের সুলেখা মিত্রের ধ্যানে।
ঠিক যেন গল্পে শোনা পরীর মতো,
দেখতে ছিল সে।
মনে মনে ভাবছিলাম একদিন ধরিয়ে দেবো,
দুলাইনের একখানা চিঠি।
যাতে লেখা থাকবে, "ভালোবাসি ভালোবাসি"...
এমন সময় বৌদির নীলখাম চোখের সামনে দেখে,
একটু হকচকিয়ে গেলাম।
তবে কি সুলেখা মিত্রই লিখেছে,
আমায় ভালোবাসার কথা!
বৌদির ডাকে চোখ মেলে উঠে বসি,
পড়তে থাকি সেই চিঠি।
যাতে দুলাল দাদা লিখেছে..
প্রিয়তমেষু,
ভালো আছো আশা করি।
পর সমাচার এই যে,
পরম করুণাময়ের কৃপায় আমার পদোন্নতি হইয়াছে,
আগামী মাসে আমি তোমাদের কাছে আসিতে পারিব।
মা -বাবা,খোকা সহ আমরা,
একসাথে দিনাতিপাত করিব।
ইহার অধিক আনন্দের কথা আর কি হইতে পারে!
আজ এখানেই বিরতি টানিলাম,
তুমি সকলের সাথে সাথে নিজের খেয়াল রাখিয়ো।
পুনরায়,
সকলের কুশল মঙ্গল কামনা করিয়া রাখিতেছি।
পুনশ্চঃ তোমাকে যাহা দেওয়ার সাক্ষাতে দিব।
লেখাটুকু পড়িবার আগেই আমার সেই অবগুন্ঠনবতী বৌদি,
চিলের মতো ছোঁ মারিয়া পত্রখানা নিয়া,
আবার ব্লাউজের ভিতরে চালান করিয়া দিল।
আমি হতভাগা সুলেখা মিত্রের সেই পরীর মতো মুখখানি,
আবার দেখিবার চেষ্টা করিলাম।
কিন্তু আমাকে ব্যর্থতার গ্লানি লইয়া ছোটভাইটার সাথে,
উঠোনের জলে কাগজের নৌকা ভাসাইতে যাইতে হইল।
২৫/০৬/২০২১
অমিতা মজুমদার
ঢাকা, বাংলাদেশ
-
ছড়া ও কবিতা
-
06-09-2021
-
-