অটোয়া, বৃহস্পতিবার ২ মে, ২০২৪
লুৎফুন নাহার এর কয়েকটি কবিতা

ভুলে যাওয়া 
দাবী-দাওয়া ভুলে, শেকড় তুলে নিয়ে হেঁটে যায় গাছ
মাছেরও যে জল চাই, সে কাথা ভুলে যায় সুধীজন
অক্সিজেন ছিনিয়ে নিয়ে
ইনিয়ে বিনিয়ে বলে যায় তারা, বাঁচো! 
বাহ্ কি সাহসী পণ।

সুখী হবার সুধা উবে যায় বাষ্প হয়ে
পড়ে থাকে শূন্য পাত্র, শূন্যে চেয়ে
আমার রক্তাক্ত বেলা শুধু কাঁটা চেনে, কাটা আর ক্ষত চেনে!
এই অচেনা শহরের অচেনা পথে।

খণ্ড-খণ্ড ভাগ্যলিপি জড়ো করে যে পুস্তক রচিত হয়
তার বোঝা কতোটা ভাড়ী, সেটা বোঝা বড় দায়
যে পুষ্প হতে খসে পড়ে পাপড়ি, তা দিয়ে কি মালা হয়? 
রঙ-মাখা হাসির প্রলেপে তবু মুছে যায় কষ্ট-দাগ, সেরে ওঠে ক্ষত
রাজ্যের যত কোলাহলের মাঝে আমাদের প্রেম এক মৌন-ব্রত।

মনের কথা জেনে গেলে মন, জানালার এপাশ-ওপাশ একাকার 
ঘরের ভেতরে আকাশ না-কি আকাশের 
     -নিচে ঘর, তাতে কি-বা আসে যায়?
জীবনের দায়ে 
ধারকৃত সম্পর্কের দায় চুকাতে-চুকাতে
বাঁচতে ভুলে যায় মানুষ; নিজেকে অন্ধ করে চিরতরে
চারপাশে সাজিয়ে আলোর পসরা, দৃষ্টির প্রার্থনা করে আজীবন।
চিৎকার করতে গিয়ে 
নিজেই দাবিয়ে দেয় নিজের গলা
অনিচ্ছের দড়িতে ঝুলে বিব্রত হয় তারা
ভুলে যতো দাবী-দাওয়া ফর্দ
আয়ত্ব করে দিন-রাত মৌন ব্রত।

আনফিট
কেবল বেঁচে থাকার জন্য বেলে গেছি অগণিত স্ট্রাগলের রুটি 
দিনে-দিনে অভিমান ফুলে ফেঁপে উল্টে পড়ে যাপনের তাওয়া থেকে
ঝুলে যায় টাইট-ফিট বদনের স্কিন, খুলে যায় বহু মজবুত বাঁধনের গিঁট
এতো খুলেও খোলে না শুধু সৌভাগ্যের কপাট 
আমি যেনো সবখানেই বেমানান, বেঢপ আকৃতির 
কোথাও যেনো কাজে আসি না কারও, সবখানেতেই ভীষণ আনফিট!

অভাব
রপর বাতাসে ভাসিয়ে বিশদ প্রশ্নবোধক
হেঁটে যাই আমরা ভিন্ন গন্তব্যে যে যার মতন 
অথচ, ভালোই জানো-
তুমি ছাড়া আমার কোনো আকাশ নেই
নীল সাদা ধূসর রঙের মেঘ নেই, বৃষ্টি নেই!
নেই কোনো উড়ালও 
আছে কেবল ডানা ঝাপটানো যাতনার
বাঁচা না-মরার মাঝামাঝি কিছু হাহাকার, আর
জাগতিক নিয়ম-মাঝে অনিয়মে বেড়ে ওঠা 
এক সাগর আবেগী আকুলতা।

বস্তুত একই পৃথিবীতে থেকেও আমরা পুষি ভিন্ন গ্রহের স্বভাব 
বেঁচে থাকার চেয়ে সম্পর্ক বাঁচিয়ে রাখা মানুষের সর্বদাই বড় অভাব।

আবদ্ধতা
রিচয় পচে গিয়ে হঠাৎ দু’টি মানুষ অপরিচিত হয়ে যায়
চেনা পথে রোজ তারা হাঁটে অচেনা ভঙ্গিমায় 
কারও চোখের তারায় ঝিলিক খেলে না আর আকাশের তারা
কথা হয় না কত কাল, চলে যায় কত-কত অমাবস্যা পূর্ণিমা
আসে না জীবনে পুনর্মিলনী ক্ষণ, দীর্ঘ বিচ্ছেদে বাড়ে হৃদয়ের ছেদ 
বাড়ে আকুলতা আরও, অকূল দরিয়ায় ডুবে যাওয়া তরীটির মতো
অস্তিত্বে লালিত অবলম্বন চোখ মেললেই ছেয়ে যায় শূন্যতায়
তবু জীবন কোথাও যেনো বাঁধা এক আলিঙ্গনহীন আবদ্ধতায়।

দূর্গা
র্শায় বদ করতে তোমাদের অসুর আচরণ 
যুগে-যুগে পৃথিবীতে হয় ছদ্মবেশী দূর্গা’র আগমন
সাবধান হও, সামলে চলো সম্ভ্রান্ত লোভ
পাপের পোস্টার ছাপে না সত্য, সম্ভ্রম উজাড় হয় তবুও।
সম্মান দেখালে সম্মান মিলবে
অপমানে হরণ হবে তোমারও মান
নারীর সম্মান ছিনিয়ে নিয়ে 
ছিনিমিনি খেলার আগে মায়ের মুখটা ভেবো একবার
তুমি যারে তুচ্ছ করো অপশক্তির দম্ভে হে শয়তান
মা দূর্গার রূপ দিয়েছেন তাকেই স্বয়ং ঐ আসমান।

লুৎফুন নাহার। যুক্তরাজ্য