অটোয়া, শুক্রবার ১৮ অক্টোবর, ২০২৪
স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী : ৫০ বছরে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা - ড. ফজলুল হক সৈকত

    শিক্ষাকে নিয়ে আমাদের চিন্তার এবং দুশ্চিন্তার কোনো সীমা-পরিসীমা নেই। যদিও এখনও পর্যন্ত, আমাদের দেশে, শিক্ষা অনেকাংশেই মধ্যবিত্তের প্রধান অবলম্বন। উচ্চবিত্ত কিংবা নিম্নবিত্ত অথবা বিত্তহীন কখনোই শিক্ষাকে আশ্রয় ভেবে নিতে পারেনি। ধনী আর গরীবের কাছে টাকাটাই মুখ্য। তাই তারা তাদের সন্তানদের অর্থ-উপার্জনের দিকে বেশি মনোযোগী করে তোলেন। অন্যদিকে মধ্যবিত্তের সন্তানেরাও ভালো (আকর্ষণীয় বেতনের) একটি চাকুরির জন্য পড়ালেখার দিকে আকৃষ্ট হয়Ñ বিশেষ করে পরিবারের আগ্রহে বা চাপে। ধনী এবং ব্যবসায়ীরা সন্তানদের চাকুরির পিছনে ছোটার চেয়ে উদ্যোক্তা হয়ে চাকুরির সুযোগ সৃষ্টি এবং বিশেষত মুনাফার জন্য যোগ্য হিশেবে তৈরি করতে ভালোবাসেন। এক্ষেত্রে মধ্যবিত্ত ও দরিদ্ররা পিছিয়ে। কেননা, উদ্যোক্তা হয়ে বাণিজ্য কিংবা শিল্প প্রতিষ্ঠা ও তার সম্প্রসারণ তাদের জন্য অপেক্ষাকৃত কঠিন পথ। তবে, আশার কথা হলো মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর উচ্চবিত্ত এবং ব্যবসায়ীরাও পরবর্তী প্রজন্মকে উচ্চশিক্ষিত করতে অগ্রসর হয়েছে। দেশ-বিদেশ থেকে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করে তাদের সন্তানাদি নিজেদের ব্যবসার নেতৃত্ব দিচ্ছেন। মোটকথা, গত ৫০ বছরে এদেশে শিক্ষার প্রতি মানুষের আগ্রহ বেড়েছে- বৃদ্ধি পেয়েছে শিক্ষার প্রয়োজনের ভুবন।
     ১৯৭১ সালে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর থেকেই একটি সার্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থা সবার কাম্য ছিল। সাধারণ সরকারি প্রাথমিক শিক্ষা, কিন্ডারগার্টেন, মাদ্রাসা শিক্ষা, ইংলিশ মিডিয়াম শিক্ষা ইত্যাকার শিক্ষাপদ্ধতি একই প্রজাতন্ত্রে প্রচলিত থাকাটা শিক্ষার স্বার্থেই বিপজ্জনক। নিয়মিত ও স্বাভাবিক প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার বাইরে সারা পৃথিবীতে আরো কয়েক ধরনের শিক্ষাপদ্ধতি চালু রয়েছে- এগুলোর মধ্যে বয়স্কশিক্ষা, উপআনুষ্ঠানিক শিক্ষা, দূরশিক্ষণ, সাক্ষরতা অভিযান, সান্ধ্যকালীন শিক্ষা প্রভৃতির কথা উল্লেখ করা যায়; বাংলাদেশে এ কয়টি শিক্ষাপদ্ধতি কোনো না কোনোভাবে প্রচলিত আছে।
     ৫০ বছরে আমাদের শিক্ষাভুবনে সবচেয়ে বড় অর্জন হলো শিক্ষানীতি প্রণয়ন। ২০১০ সালে এই যুগান্তকারী ঘটনার ভেতর দিয়ে জাতি একটি বিশেষ ও অনন্য জায়গায় উন্নীত হয়েছে। এর আগে কয়েকটি শিক্ষা কমিশন গঠন করা হলেও সেগুলো খসড়া পর্যায়ে আটকে ছিল। শিক্ষানীতি অনুমোদনের ফলে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় এবং ব্যবস্থাপনায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। শিক্ষা-প্রসারের পাশাপাশি এর বৈশিষ্ট্যগত রূপান্তরও বিশেষভাবে নজর কেড়েছে। যদিও গ্রেডিং পদ্ধতি নিয়ে রয়েছে অনেক বিরূপ সমালোচনা, তবু বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় এবং অংশগ্রহণে এই পদ্ধতি নতুন প্রজন্মকে সহায়তা করেছে।
     প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষকদের পেশাগত গ্রেড উন্নয়ন এবং বিপুল সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগের ফলে দীর্ঘদিনের সংকটের প্রায় সবটাই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে। এছাড়া অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে আধুনিক পাঠদান পদ্ধতির প্রয়োগ অনেকক্ষেত্রে সহজতর হয়েছে। মাধ্যমিক স্তরে বিপুলভাবে বেড়েছে উত্তীর্ণের সংখ্যা। শত শত কলেজ প্রতিষ্ঠা ও সরকারি অনুদানের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে খুলে গেছে নতুন নতুন দরোজা। প্রায় সকল ইউনিয়নে কলেজ স্থাপনের মাধ্যমে প্রান্তিক পর্যায়ে শিক্ষা গ্রহণের অপার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। ব্রিটিশ বা পাকিস্তান আমলে গ্রাম-গঞ্জের ছেলেদের বহুদূর পথ পারি দিয়ে স্কুল-কলেজে যেতে হতো। মেয়েরা সে সুযোগ পেত না। ফলে নারীশিক্ষার হার তখন ছিল খুবই কম। বিশেষ করে শহরে গিয়ে বা সেখানে অবস্থান করে লেখাপড়া করা অনেকের পক্ষেই সম্ভব ছিল না। সকল নাগরিকের জন্য শিক্ষার সুযোগ অবারিত হয়েছে- এটি বড়ই আনন্দের কথা। ১৯৭১ সালে আমরা যে স্বাধীনতা বা বিজয় অর্জন করেছি, তার ফল পেতে সহায়তা করেছে শিক্ষার বিস্তার। শিক্ষা মানুষকে স্বপ্ন দেখায়- জাতিকে কল্পনা ও পরিকল্পনার উন্নততর ধাপে পা রাখতে প্রেরণা যোগায়। স্বাধীন দেশে আমরা সে স্বপ্নে বারবার বিভোর হয়েছি। শিক্ষাকে আশ্রয় করে আমরা নতুন নতুন কল্পনার হিসাব মিলাতে চেষ্টা করেছি। 
     বিগত ৩ দশকে ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত হয়েছে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্র। নতুন নতুন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন প্রভৃতির মাধ্যমে উচ্চশিক্ষা যেমন মানুষের বাড়ির আঙিনায় পৌঁছে গেছে, তেমনি শিক্ষার হারও বৃদ্ধি পেয়েছে অবিশ্বাস্যরকমভাবে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আগে সীমিত সংখ্যক মেধাবী শিক্ষার্থী লেখাপড়ার সুযোগ পেত। বাকিদের কাছে উচ্চশিক্ষা ছিল অধরা বাসনামাত্র। বর্তমানে বেশি সংখ্যক প্রান্তিক শিক্ষার্থী সরকারি খরচে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করতে পারছে। একটা সময় ছিল যখন দেশের উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানেরা পড়াশোনার জন্য বিদেশে পাড়ি জমাতো। এতে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার হয়ে যেত। ১৯৯২ সালে দেশে বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়। ফলে দেশে বসে আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষালাভের সুযোগ পেল আমাদের ভবিষ্যৎ-নির্মাণকারী প্রজন্ম। দেশও আর্থিকভাবে লাভবান হলো। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ফলে শিক্ষা-বাজারে প্রতিযোগিতা তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতির লেজুরবৃত্তির ফলে জেঁকেবসা বছরের পর বছর সেশনজটের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি লাভ করেছে শিক্ষার্থীরা- প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ-প্রতিযোগিতার ইতিবাচক ফলাফলে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সারাদেশে কলেজশিক্ষায় সম্প্রসারণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের পড়াশোনা। ১৯৯২ সালের আগে অল্প কয়টি কলেজে গ্র্যাজুয়েশনের সুযোগ ছিল। বর্তমানে সে সংখ্যা বহুগুণ বেড়েছে। আর উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে স্তরে ঝরে-পড়া শিক্ষার্থীদের জীবনে নতুন করে শিক্ষালাভের আনন্দধারা প্রবাহিত করেছে। এভাবে এদেশে উচ্চশিক্ষার উঠানে বয়ে গেছে প্লাবনের পানি। সকলের অগোচরে বিপ্লব ঘটেছে জনজীবনে। সামাজিক, অর্থনৈতিক পরিচিতি ও পরিসরের ব্যাপক রূপান্তর সাধিত হয়েছে এসব উদ্যোগের ফলে। 
     সম্প্রতি, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সরাসরি তত্ত্বাওবধানে এবং শিক্ষামন্ত্রণালয়ের সহায়তায় কলেজশিক্ষার মান-উন্নয়নে হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে বিশ্বব্যাংক। বিশ্বের অন্যান্য দেশে, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং মালয়েশিয়ার বিশ্বমানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের সুযোগ লাভ করছে এদেশের কলেজশিক্ষকগণ।
     দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ফলে বাংলাদেশ চিন্তা ও গবেষণায় বিশ্বদরবারে মর্যাদার সাথে বিবেচ্য হয়ে উঠেছে। তথ্য-প্রযুক্তি এবং কৃষির সম্প্রসারণে আমাদের শিক্ষাভুবন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। বিশেষ করে ধান ও ফল গবেষণায় আমাদের সাফল্য দৃষ্টান্তমূলক। অর্থনৈতিক বিকাশে এভাবে শিক্ষা যে বিশেষ অবদান রাখতে পারে, তা বাংলাদেশে ৫০ বছর আগে কল্পনাও করা যেত না। আমরা জানি, জ্ঞানচর্চার সর্বোচ্চ স্থান হলো বিশ্ববিদ্যালয়। উচ্চশিক্ষার এই পরিসরটিকে যত বেশি রাজনীতিমুক্ত ও দলাদলিমুক্ত রাখা যায়, জাতির জন্য ততই মঙ্গল। কিন্তু, বর্তমান বাংলাদেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তো বটেই প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও দলীয় প্রভাবে স্বাভাবিক ও প্রত্যাশিত অ্যাকাডেমিক চরিত্র ধরে রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে।
     গতানুগতিক বা প্রথাগত পাঠদানের সময় ফুরিয়েছে বেশ খানিকটা আগে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কোনোকালে ফ্যাশন হয়ে আবির্ভুত হয়নি। মানুষ এসবের প্রয়োগে নিজেদের ও অপরের জীবন-অভিজ্ঞান পাল্টে দিয়েছে। তাই সামাজিক-সাংস্কৃতিক পরিবর্তন এবং জ্ঞান-বিজ্ঞানের রূপ-রূপান্তর তার প্রতিটি পদক্ষেপ দিয়ে আমাদেরকে সর্বদা সহায়তা করছে। প্রযুক্তি কোনো প্রতিকূল শক্তি নয়; আমাদের চলার পথে কোনো প্রতিবন্ধকতা তৈরি করাও এর কাজ নয়। প্রযুক্তি আমাদের বন্ধু। যেমন নিসর্গের শোভা। চাঁদের আলো। নদীর প্রবহমানতা। যেমন বাতাস ও সূর্যালোক। তাই শিক্ষাভুবনে কমপিউটার, ইন্টারনেট, প্রজেক্টর, ডিজিটাল বোর্ড প্রভৃতির ব্যবহার আজ আর কোনো ফ্যাশনের পর্যায়ে পড়ে না- এটা প্রয়োজন। কোভিড-১৯ মহামারির সময়ে বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও অনলাইন বা ডিজিটাল ক্লাসসহ যাবতীয় শিক্ষা-কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এতে শিক্ষাভুবনে যুক্ত হয়েছে নতুন মাত্রা। 
     শিক্ষার মুক্তি না হলে জাতির কাক্সিক্ষত মুক্তির পথে কেন দ্বারপ্রান্তেও আমরা পৌঁছুতে পারবো না। আর জাতিকে শিক্ষার আলো প্রদান করতে হলে ক্যাম্পাস থেকে দলীয় রাজনীতির লেজুরবৃত্তি অনতিবিলম্বে দূর করতে হবে। অবশ্য প্রয়োজনে নির্দলীয় শিক্ষক কল্যাণ পরিষদ এবং শিক্ষার্থী কল্যাণ পরিষদ থাকতে পারে; এই পরিষদগুলো কেবল নিজেদের অধিকার, মর্যাদা এবং প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের জন্য কাজ করবে- সারা দুনিয়ার ভালো ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এরকম ব্যবস্থা রয়েছে। আমরা (বিশেষত আমাদের কর্তাব্যক্তিরা) এত বিদেশভ্রমণ করি, তো সুপ্রতিষ্ঠিত ও সেরা সেরা সব বিদ্যাপীঠের কাঠামোগুলো দেখে তো কিছুটা ধারণা ও শিক্ষা নিতে পারি! জানি না, সে পরিবেশ ও সময় আমাদের বাড়ির উঠানে (জাতির ভাগ্যাকাশও বলা চলে) কবে হাজিরা দেবে!
     বাংলাদেশ শিক্ষা-কাঠামো, ব্যবস্থাপনা এবং মান-নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়নে খুব বেশি অগ্রগতি লাভ করেছে এমনটা জোর দিয়ে বলা যাবে না। আমাদের শিক্ষা-ব্যবস্থায় কিছু ত্রুটি ও অসংগতি রয়ে গিয়েছে। সুপরিকল্পিত ব্যবস্থাপনা এখনও তৈরি হয়নি। আবার সকলস্তরে এবং সকল প্রতিষ্ঠানে যে মানসম্মত শিক্ষাপ্রদানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, তাও নয়। কোনো কোনো উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান বেকার সৃষ্টির কারখানায় পরিণত হয়েছে; তারা সার্টিফিকেট বিতরণ করছে - জ্ঞানপ্রদানের দিকে তেমনভাবে নজর দিচ্ছে না। পরিকল্পিত শিক্ষাব্যবস্থার অভাবে প্রতি বছর শিক্ষা শেষ করে অনেকে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করতে পারছে না। মানবসম্পদ-ব্যবস্থাপনার সুষ্ঠু পরিবেশ আজও নিশ্চিত হয়নি। বাড়ছে বেকারের সংখ্যা। চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষিত জনশক্তি তৈরি না হওয়ায় একদিকে বৃদ্ধি পাচ্ছে বেকারত্ব, অন্য দিকে বাড়ছে দক্ষ-প্রশিক্ষিত ও প্রয়োজনীয় শিক্ষিত লোকের অভাব। কাজেই এসব অসংগতি দূর করে চাহিদার সাথে সংগতি রেখে পেশা ও বৃত্তিমূলক পরিকল্পিত শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তনের দিকে আমাদেরকে এগিয়ে যেতে হবে।
     গত ৫০ বছরে শিক্ষার ক্ষেত্রে উল্লেখ করার মতো কিছু সাফল্য এবং অর্জনের পরেও, হিসাবের খাতা খুললে দেখা যায়- আমরা অনেক অনেক চিন্তার জায়গায় পিছিয়ে আছি। যেভাবে সাধারণ শিক্ষা বিস্তার লাভ করেছে, সেই তুলনায় কারিগরি ও কর্মমুখি শিক্ষার পথ বিস্তৃত হয়নি। সময়ের সাথে, যুগের চাহিদার সাথে তাল মিলিয়ে আমরা শিক্ষাকে কাজে লাগাতে অনেকটাই ব্যর্থ হয়েছি। মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনার সাথে শিক্ষাকে আমরা সম্পৃক্ত করতে পারিনি। এখন কৃষি বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে কিংবা ইতিহাসে স্নাতকোত্তর পাশ করে ব্যাংকে চাকুরি করতে হয়। ইঞ্জিনিয়ারিং-এ লেখাপড়া শেষ করে এখনও কাউকে কাউকে বেকার থাকতে হয়। আমাদের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চাকুরি বাজারের সাথে পরিচিত হয়ে উঠতে পারেনি। ফলে লাখ লাখ বেকারকে প্রতিদিন চাকুরিতে আবেদনের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন ও মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা না হলে শিক্ষার মানও ক্রমাগত নিম্নগামী হয়ে পড়বে। সম্ভবত পড়ছেও। কাজেই কোয়ান্টিটির সাথে কোয়ালিটি নিশ্চিত করার জন্য আমাদেরকে আরো বেশি উদ্যোগী হতে হবে। তা না হলে, ৫০ বছরে আমরা যতটুকু এগিয়েছি, হয়তো, অনাগতকালে সে-পথ থেকে ছিটকে পড়তে হবে। কিন্তু আমরা আশাবাদী। অর্জনকে ধরে রাখতে প্রত্যয়ী। শিক্ষাকে শক্তি হিশেবে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের মানুষ নির্মাণ করবে আগামীদিনের স্বপ্নময় রাজ্য- সেই প্রত্যাশা।

ড. ফজলুল হক সৈকত। বাংলাদেশ