অটোয়া, রবিবার ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
যুদ্ধবাজ মানুষ কি কখনো শান্তিপ্রিয় হবে? -অমল রায়

মাঝে মাঝে মনে হয় এই পৃথিবী বহুকাল ভালো-ভালোই চলছিল এই পৃথিবীর তথাকথিত সৃষ্টির সেরা জীবটির আবির্ভাবের আগ পর্যন্ত! অন্য প্রাণীরাও মাঝে মাঝে ঝগড়া বিবাদ করে বটে, তবে তারা তা করে নিতান্তই তাদের খাদ্য সংগ্রহের প্রতিযোগিতায় বা তাদের আবাসস্থানটি রক্ষণাবেক্ষণের তাগিদে, কিন্তু যুদ্ধার্থী মানুষজাতি সংঘর্ষে লিপ্ত হয় মূলত তাদের লোভ, লালসা, অহমিকা আর জিঘাংসায় তাড়িত হয়ে!

এই একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে মানুষের অর্জন যদিও অনেক - বিজ্ঞান আর প্রযুক্তিতে মানুষের উন্নতি অসাধারণ -   মানুষ ৩৮৪,৪০০ কিলোমিটার  দূরের চাঁদে পদার্পন করেছে আজ থেকে ৫২ বছর আগে, আর ৩৫৪,৮৯০,০০০ কিলোমিটার দূরের মঙ্গলগ্রহেও মানুষ যাবে হয়তো কয়েক বছরের মধ্যেই। কিন্তু দুৰ্ভাগ্যজনক ভাবে মানুষ অনেক বিষয়েই তার নিজের প্রজাতির অন্য সদস্যদের প্রতি চরমভাবে ঈর্ষাণ্বিত এবং তার নিজের গ্রহটির যথাযথ সংরক্ষণের প্রতি ভয়ানক রকমের উদাসীন। আগস্ট ২১, ২০২১ সালের বিশ্ব-ব্যাংকের এক রিপোর্ট অনুযায়ী এখনো এই পৃথিবীর ৯.২ শতাংশ অর্থাৎ ৬৮৯,০০০,০০০ মানুষ ভীষণভাবে দারিদ্র পীড়িত যাদের অর্ধাহারে বা অনাহারে দিন কাটাতে হয়, অপরদিকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিশেষ করে অর্থনৈতিক ভাবে সমৃদ্ধশালী দেশগুলিতে মানুষের লাগামহীন ভোগ বিলাসিতার কারণে এই পৃথিবীর জলবায়ু তথা প্রাকৃতিক পরিবেশ বিশেষ হুমকির সম্মুখীন। Intergovernmental Panel on Climate Change (IPCC) -এর সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, গ্ল্যাসিয়ার আর সমুদ্রের বরফগলা সহ বিগত ৫ বৎসর ছিল সাম্প্রতিক কালের উষ্ণতম বৎসর। জলবায়ু বিশেষজ্ঞদের মতে যদি মানুষ যদি জীবাশ্ম জ্বালানী ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে এনে গ্রীণহাউস গ্যাস (প্রধানতঃ কার্বন-ডাই-অক্সাইড) নির্গমন নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে তবে এই পৃথিবীতে বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড় এবং বন্য আগুন এর তান্ডব বাড়তেই থাকবে। পৃথিবী-ব্যাপী এই জলবায়ু পরিবর্তন, দারিদ্র, আর অসাম্য দূরীকরণে এই পৃথিবীর সকল দেশের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা অতীব জরুরি। কিন্তু দুঃখজনক ভাবে আমরা দেখছি তৎপরিবর্তে সারা পৃথিবীতে বেশিরভাগ দেশের সামরিক খাতে ব্যয় বরাদ্ধ বেড়েই চলছে। দেশে দেশে পারস্পরিক সহযোগিতার পরিবর্তে দেশগুলি একে অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হবার প্রস্তুতিতে নিমগ্ন। বর্তমানে পৃথিবীর নয়টি দেশ - যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ফ্রান্স, চীন, যুক্তরাজ্য, পাকিস্তান, ভারত,  ইস্রায়েল এবং উত্তর কোরিয়া আণবিক বোমার মতো ভয়ানক মারণাস্ত্রের অধিকারী। তৃতীয় মহাযুদ্ধটি যদি কোন কারণে সংঘটিত হয়েই যায় তবে এই পৃথিবীর পরিণতি কি হবে তাতো বলাই বাহুল্য। 

ক্রিস্টোফার লীন হেজেস (Christopher Lynn Hedges) মানবধিকার ও যুদ্ধ বিষয়ক একজন স্বনামধন্য আমেরিকান সাংবাদিক। তিনি একজন Foreign Correspondent হিসাবে The New York Times সহ বিভিন্ন গুরুত্ব পূর্ণ প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন কাজ করেন এবং ৫০ টির ও অধিক দেশ থেকে যুদ্ধ এবং মানবধিকার বিষয়ে রিপোর্ট করেন। তিনি Columbia University, New York University, the University of Toronto and Princeton University-তে অধ্যাপনা সহ যুদ্ধ বিষয়ে অনেক গবেষণা করেন। ২০০২ সালে তিনি Human Rights সাংবাদিকতার জন্য “Amnesty International Global Award” পুরস্কারে ভূষিত হন। ২০০৩ সালে তিনি "What Every Person Should Know About War" নামে একটি গুরুত্বপূর্ণ বই প্রকাশ করেন। সেই বই থেকে যুদ্ধ বিষয়ক কিছু তথ্য আমার বন্ধুদের জন্য এখানে সংযোজন করলাম। 

যুদ্ধ কি?  - মানুষে মানুষে সক্রিয় সংঘর্ষে যেখানে ১,০০০ বেশি মানুষ প্রাণ হারায় তাকে যুদ্ধ বলে।  

এই পৃথিবীতে কি কখনো শান্তি ছিল?  - বিগত ৩,৪০০ বৎসরের ইতিহাসে মাত্র ২৬৮ বৎসর এই পৃথিবী যুদ্ধ বিহীন ছিল; অর্থাৎ মানুষের লিপিবদ্ধ ইতিহাসের মাত্র ৮ শতাংশ সময় মানুষ শান্তিতে ছিল। 

কত মানুষ যুদ্ধে মারা গেলো?  - শুধুমাত্র বিংশ শতাব্দীতে কমপক্ষে ১০৮,০০০,০০০ মানুষ যুদ্ধের কারণে নিহত হয়েছে, এবং ধারণা মতে মানুষের জানা ইতিহাসে ১৫০,০০০,০০০ থেকে ১,০০০,০০০,০০০ মানুষ নিহত হয়েছে। 

সারা বিশ্বে কত মানুষ সামরিক বাহিনীতে কাজ করেছে?  - সম্মিলিত ভাবে সারা পৃথিবীতে ২১,৩ ০০,০০০ জন; এর মধ্যে চীনের ২,৪০০,০০০; যুক্তরাষ্ট্রের ১,৪০০,০০০; ভারত ১,৩০০,০০০; উত্তর কোরিয়া ১,০০০,০০০ এবং রাশিয়া ৯০০,০০০। পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ২০ টি সামরিক বাহিনীর মধ্যে ১৪ টিই হলো উন্নয়নশীল দেশে। 

২০০৩ সালে কয়টি যুদ্ধ চলছিল?  - এই সময় সারা পৃথিবীতে ৩০ টি যুদ্ধ চলছিল - দেশগুলি হলো আফগানিস্তান, আলজেরিয়া, বুরুন্ডি, চীন, কলম্বিয়া, কঙ্গো, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইসরাইল, ইরাক, লাইবেরিয়া, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, পেরু, ফিলিপিন্স, রাশিয়া, সোমালিয়া, সুদান, এবং উগান্ডা। 

মানুষ কেন যুদ্ধ করে?  - এর কি কোন জেনেটিক কারণ আছে? - মানুষের মধ্যে কোন single “war gene" নেই। অনেক গুলি জিনের সম্মিলিত ফলাফলের কারণে মানুষ হিংসাত্বক হতে পারে; তবে মানুষের মধ্যে আগ্রাসন মানুষের biology এবং environment এর মিথস্ক্রিয়ার    ফলাফল।  

যুদ্ধ কি মূলত পুরুষ ভিত্তিক?  - পৃথিব্যাপী সামরিক বাহিনীতে নিয়োজিত ৯৭ শতাংশ হলো পুরুষ। যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর মাত্র ১৫ শতাংশ (২০৪,০০০) মহিলা।

মেয়েরা কি পুরুষের মতো কার্যকরভাবে যুদ্ধ করতে সক্ষম?  – হ্যাঁ। যদিও প্রকৃতিগতভাবে পুরুষের তুলনায় কম সংখ্যক মহিলাই "natural killers", এবং আকৃতিগত ভাবে গড়ে পুরুষের তুলনায় ছোট, অনেক মহিলাই আছে যারা মানসিক এবং শারীরিক ভাবে যুদ্ধ করতে সক্ষম। আবার এমন অনেক পুরুষও আছে যারা শারীরিক এবং মানসিকভাবে যুদ্ধ করতে অপারগ। অনেক মেয়েরই যুদ্ধ ক্ষেত্রে পারঙ্গমতা প্রদর্শনের নজির আছে। ১৮৫৫ সালে Dr. Mary Walker আমেরিকার গৃহযুদ্ধের সময়ে Medal of Honor-এ   ভূষিত হন। 

বেসামরিক লোকজন কেন যুদ্ধের প্রতি আকৃষ্ট হয়?  - প্রায়শঃ পর্যবেক্ষকদের কাছে যুদ্ধ একটি সম্মানজনক ও মহৎকাজ এবং এটিকে দেশে দেশে একটি প্রতিযোগিতার সুযোগ হিসাবে দেখা হয় এবং যুদ্ধজয়ীকে "বিজয়ী" হিসাবে অভিনন্দিত করা হয়। 

যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ কি যুদ্ধ সমর্থন করে?  - আমেরিকা যখন কোন সামরিক হস্তক্ষেপ করে তখন শুরুতে ৬৫ -৮৫ শতাংশ লোক তা সমর্থন করে।  ১৯৬৫ সালে আমেরিকার ভিয়েতনাম যুদ্ধে ৬৪ শতাংশ আমেরিকানদের সমর্থন ছিল। যখন আমেরিকান সৈন্যের নিহত হওয়ার ঘটনা বাড়ে তখন আস্তে আস্তে সমর্থন কমতে থাকে। কোরিয়ান এবং ভিয়েতনাম যুদ্ধের শেষে দিকে আমেরিকানদের সমর্থন ৩০ শতাংশে নেমে আসে। তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ভয়াবহ হওয়া এবং প্রলম্বিত হওয়া সত্বেও এর প্রতি আমেরিকানদের সমর্থন ৭৭ শতাংশের নিচে নামেনি। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ৩৫ টি দেশের সম্পৃক্ততায় ইরাক যুদ্ধে (Gulf war)–ও আমেরিকানদের সমর্থন প্রায় একইরকম ছিল। 

কতজন আমেরিকান যুদ্ধে মারা গেছেন?  - সরাসরি যুদ্ধে ৬৫০,০০০ জনের বেশি নিহত হয়েছে। এছাড়া যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে প্রশিক্ষণ জনিত দুর্ঘটনা, আহত হওয়া এবং বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাবের কারণে আরো ২৪৩,০০০ জন মারা যায়। কেবলমাত্র বিংশ শতাব্দীতে সরাসরি যুদ্ধের কারণে ১ম মহাযুদ্ধে প্রায় ৫৩,০০০, ২য় মহাযুদ্ধে ২৯১,০০০, কোরিয়ান যুদ্ধে ৩৩,০০০, ভিয়েতনাম যুদ্ধে ৪৭,০০০ এবং ইরাক যুদ্ধে ১৪৮ জন মারা যায়। যুদ্ধের সময় রোগ, দুর্ঘটনা এবং অন্যান্য কারণে মৃত্যুর সংখ্যা সহ  মোট মৃত্যুর সংখ্যা হলো : প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ১১৬,০০০; দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ১,৪০০,০০০;  কোরিয়ান যুদ্ধে ৫৩,০০০; ভিয়েতনাম যুদ্ধে ৯০,০০০ এবং Gulf War-এ ৪০০ জন।  

আমেরিকার সামরিকবাহিনী কতটা মারাত্মক?  - এটা পরিমাপ করা কঠিন যে আমেরিকার সামরিক শক্তি তার শত্রূপক্ষের কতজনকে হত্যা করেছে, তবে সাধারণত আমেরিকা এবং তাদের মিত্রবাহিনীর সৈন্যরা যে পরিমানে হতাহত হয় তার ১০ থেকে ২০ গুণ বেশি হতাহত হয় শত্র‌ু পক্ষের সৈন্য। অনুমান করা হয় উপসাগরীয় যুদ্ধে (Gulf war) ১,৫০০ থেকে ১০০,০০০ ইরাকী সৈন্য নিহত হয়েছে। যুদ্ধে নিহত প্রতিপক্ষের সর্বনিম্ন সংখ্যাও আমেরিকার নিহত সৈন্যদের তুলনায় অন্তত ১০ গুণ বেশি। ভিয়েতনাম যুদ্ধে আনুমানিক ৮৫০, ০০০ ভিয়েতনামি মারা যায় যা আমেরিকার নিহতের সংখ্যার (৪৭,০০০) চেয়ে ১৮ গুণ বেশি I কোরিয়ান যুদ্ধে ৬০০,০০০ এর ও বেশি উত্তর কোরিয়ান এবং ১,০০০,০০০ চীনা যুদ্ধা মারা যায় যার পরিমান নিহত আমেরিকার সৈন্যদের (৩৩,০০০ জন) তুলনায় ৫০ গুণ বেশি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ২৯১,০০০ আমেরিকার সার্ভিসম্যান মারা যায় এবং জার্মানি এবং জাপানের স্থল, নৌ এবং বিমান বাহিনীর সম্মিলিত নিহতের সংখ্যা যথাক্রমে ৩,২৫০,০০০ এবং ১,৫০৭,০০০ যা আমেরিকার নিহতদের তুলনায় ১৬ গুণ বেশি।  

আমেরিকার সামরিকশক্তি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কী পরিমান খরচ হয়?  - ১৯৭৫ সাল থেকে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র তার জাতীয় প্রতিরক্ষা খাতে মোট দেশীয় পণ্য উৎপাদনের (জিডিপি) ৩ থেকে ৬ শতাংশ বা মোট জাতীয় বাজেটের ১৫ থেকে ৩০ শতাংশ ব্যয় করে। এর অর্থ এই একবিংশ শতাব্দীর শুরুর বছরগুলোতে প্রতিবছর সামরিক খাতে যুক্তরাষ্ট্র মোটামূটি ভাবে ব্যয় করছে ৩৫০ বিলিয়ন (৩৫০ ,০০০,০০০,০০০) ডলার। সেই তুলনায় অন্যান্য খাতে ব্যয়ের পরিমান হলো: মোটামুটি ১৫ বিলিয়ন দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা,  এবং ৬০ বিলিয়ন শিক্ষা খাতে। ১৯৪০ থেকে ১৯৯৬ সালের মধ্যে, যে সময়টায় রাশিয়ার সাথে স্নায়ুযুদ্ধ (Cold war) সহ অনেকগুলো যুদ্ধ আর শান্তির চক্র চলছিল, সেই সময় যুক্তরাষ্ট্র সামরিক খাতে ব্যয় করে ১৬.২৩ ট্রিলিয়ন ডলার, যার থেকে ৫.৮২ ট্রিলিয়ন ব্যয় করে পারমাণবিক অস্ত্রের জন্য; পাশাপাশি স্বাস্থ্য সেবায় ব্যয় ছিল মাত্র ১.৭০ ট্রিলিয়ন এবং আন্তর্জাতিক বিষয়ে মাত্র ১.২৪ ট্রিলিয়ন ডলার।   [১ ট্রিলিয়ন = ১,০০০,০০০,০০০,০০০] 

যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র কত খরচ করে?  - উপসাগরীয় যুদ্ধে (Gulf war) খরচ প্রায় ৭৬ বিলিয়ন ডলার, ভিয়েতনাম যুদ্ধে ৫০০ বিলিয়ন ডলার, কোরিয়ান যুদ্ধে ৩৩৬ বিলিয়ন ডলার এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ৩ ট্রিলিয়ন ডলার; আবার অন্যভাবে বলা যায় যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের মাথাপিছু ব্যয়ের পরিমান ছিল উপসাগরীয় যুদ্ধে (Gulf war) ৩০৬ ডলার, ভিয়েতনাম যুদ্ধে ২,২০৪ ডলার, কোরিয়ান যুদ্ধে ২,২৬৬ ডলার এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ২০,৩৮৮ ডলার I শুরুতে ইরাক যুদ্ধের আনুমানিক নিদ্ধারিত ব্যয় ছিল ৫০ থেকে ১৪০ বিলিয়ন ডলার, এবং তার সাথে অতিরিক্ত ৭৫ থেকে ৫০০ বিলিয়ন ডলার দখলদারিত্ব ও শান্তিরক্ষার জন্য যার অর্থ মাথাপিছু ব্যয়ের পরিমান ছিল ৪৪৪ থেকে ২,২৭৪ ডলার।  

আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক শিল্প কত বড়?  - সামরিক বাহিনীতে সরাসরি কর্মরত ১.৪ মিলিয়ন কর্মী ছাড়াও সামরিক বাহিনী আরো অতিরিক্ত ৬২৭,০০০ জন বেসামরিক লোক নিয়োগ করে। প্রতিরক্ষা বাহিনী আরো নিয়োগ করে ৩ মিলিয়ন। সামরিক এবং এর সাথে সম্পৃক্ত নির্মাণ ভিত্তি মিলিয়ে সর্বমোট আমেরিকার শ্রম শক্তির ৩.৫ শতাংশ। ২০০২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা অধিদপ্তর সামরিক কন্ট্রাক্টরদের (Boeing and Lockheed Martin) ক্ষেত্রে ১৭০.৮ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে। 

আমেরিকার সামরিকশিল্পের আকৃতি কিভাবে পরিবর্তিত হয়েছে?  - ঐতিহাসিক ভাবেই ২০০৩ সালের শ্রম শক্তির ৩.৫ শতাংশ সামরিক খাতে বরাদ্ধ অল্প বলেই বিবেচিত হয়। ১৯৮৭ সালে, স্নায়ুযুদ্ধের শেষের দিকে, সামরিক বাহিনী সহ প্রতিরক্ষা বিভাগ ছিল শ্রম বাজারের ৫.৭ শতাংশ; ১৯৬৮ সনে ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় ৯.৮ শতাংশ; দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ৩৯ শতাংশ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রতিরক্ষায় নিয়োগ কমে যায় ৪.৫ শতাংশে, কিন্তু পরে ১৯৫১ সালে কোরিয়া যুদ্ধের সময় এবং স্নায়ু যুদ্ধের (Cold war) শুরুতে এটা লাফ দিয়ে হয়ে যায় ১১ শতাংশ।     

আমেরিকার সামরিকশিল্প কি সেখানকার প্রতিরক্ষা ব্যয় নির্ধারণে সহায়তা করে?  – হ্যাঁ। ২০০০ সালে সেখানকার তদবির গ্রূপ প্রায় ৬০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করে। সেখানকার Defense political action committee ও প্রতি congressional election cycle-এ মোটামুটি ১৪ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করে। সেখানকার মহাকাশ প্রতিরক্ষা (Defense aerospace), ইলেকট্রনিক্স প্রতিরক্ষা (Defense electronics) এবং অন্যান্য বিবিধ প্রতিরক্ষা সমূহ যথাক্রমে ৩১, ৪৪ এবং ৪৬তম শিল্প।

আমেরিকার সামরিক শিল্প প্রতি বছর কী পরিমান অস্ত্র রপ্তানি করে?  - ২০০১ সালে আমেরিকার অস্ত্র প্রস্তুতকারকরা ৯.৭ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র সারা পৃথিবীব্যাপী রপ্তানি করে। আন্তর্জাতিক অস্ত্র রপ্তানিতে যুক্তরাজ্য দ্বিতীয় - ৪ বিলিয়ন ডলার। সেই সাথে নতুন ভাবে আমেরিকা আরো বিক্রি করে ১২.১ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র। রাশিয়া ছিল দ্বিতীয় - ৫.৮ বিলিয়ন। যুক্তরাষ্ট্র হলো পৃথিবীর সর্ববৃহৎ অস্ত্র প্রস্তুতকারক; সমগ্র পৃথিবীতে যত অস্ত্র বিক্রি হয় তার প্রায় অর্ধেকের যোগানদার।    

আমেরিকার কোম্পানিসকল যে যুদ্ধাস্ত্র রপ্তানি করে তার কতগুলো উন্নয়নশীল দেশে যায়?  - মোটামুটি অর্ধেক। ১৯৯৪ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ১৩১ বিলিয়ন ডলারের যুদ্ধাস্ত্র রপ্তানি করে এবং এর মধ্যে ৫৯ বিলিয়ন ডলারের যুদ্ধাস্ত্র গেছে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে যুদ্ধাস্ত্র রপ্তানিতে যুক্তরাষ্ট্রের স্থান সকলের শীর্ষে, তারপর দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্থানে যথাক্রমে রাশিয়া এবং ফ্রান্স। 

যুদ্ধ বেসামরিক লোকদের জন্য কতটা ভয়াবহ?  - খুবই মারাত্নক। ১৯০০ এবং ১৯৯০ সালের মধ্যে যুদ্ধে ৪৩ মিলিয়ন সৈন্য মারা গেছে, কিন্তু বেসামরিক লোক মারা গেছে ৬২ মিলিয়ন। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে ৩৪ মিলিয়নেরও বেশি বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে। এক মিলিয়ন লোক মারা গেছে উত্তর কোরিয়ায়। কয়েক শত সহস্র মারা গেছে দক্ষিণ কোরিয়ায়, এবং ২০০,০০০ থেকে ৪০০,০০০ ভিয়েতনামে। ১৯৯০ সালের দিকের যুদ্ধগুলোতে যে সকল মানুষ প্রাণ হারিয়েছে তার ৭৫ থেকে ৯০ শতাংশই ছিল বেসামরিক লোক। 

সূত্র: The book “What Every Person Should Know About War; by Chris Hedges, 2003

অমল রায়
ইকালুইট, নুনাভুট