অটোয়া, রবিবার ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪
সুনির্মল বসু'র দুইটি কবিতা

ক্যানভাসে রাত্রির জলছবি
রাত গভীর হলে জানালার পাশে নারকেল গাছের মাথায় চাঁদ ভেসে যায়,
নীল আকাশে সাদা মেঘ ময়ূরপঙ্খী সাজে দূর দেশে যায়,
তারার আলোর মালাপরা রাত্রি চেয়ে দ্যাখে, আর গভীর মুগ্ধতায় বুঁদ হয়ে যায়,
সমুদ্র নীল আকাশ মাটির পৃথিবীর দিকে চেয়ে থাকে,
কদাচিৎ অরণ্য পাখি টিহি টিহি ডাকে দিগন্ত রেখায় উড়ে যায়,
মধ্যরাতে নীল কাচের বাড়িতে কে যেন ভায়োলিনে বিষণ্নতা সুর তোলে,
জানালার শার্সিতে মুখ রেখে দাঁড়িয়ে থাকে কোনো বিষন্ন নায়িকা,
কথা দিয়ে তাঁর প্রেমিক পুরুষটি আজও ফিরে আসেনি,
রাত গভীর হলে, শহরের পানশালার বন্ধ দরোজায় প্রার্থী হয়ে দাঁড়ায় কোনো নেশাগ্রস্ত পুরুষ,
রাজপথে হাল্লা গাড়ি ছোটে, বস্তিতে কান্নার রোল ওঠে, অভাবী মানুষের হাহাকার রাতের আকাশ থেকে খান খান করে ভেঙে পড়ে,
বিশাল ডানায় রাতের অন্ধকার মেখে আকাশে ঢাউস ঈগল উড়ে যায়,
প্রাচুর্য এবং হাহাকার, একে অন্যকে ব্যঙ্গ করে,
গাছের পাতায় শিশির ঝরে পড়ে,
ধানক্ষেতের উপর দিয়ে উদাসী বাতাস বয়ে যায়,
ভোররাতে ফুল ফোটবার শব্দ শোনা যায়,
কামিনী ফুলের গাছের ওপর শিরশিরে বাতাস বয়ে যায়,
বাতাস তখন জনান্তিকে চুপ কথা বলে,
চরাচর জুড়ে নিবিড় নিস্তব্ধতা, ঝিলের জলে চাঁদের ছায়া পড়ে, দীঘির পাড়ে সুপারি গাছের ছায়ায় ঢেকে যায় কোনো বিরহিনী নায়িকার মুখ,
ভালোবাসা একদিন যাকে নিঃস্ব করেছিল,
সে আজ ভালোবাসার খোঁজে পথে নেমেছে,
জীবন কাকে যে কখন দাঁড় করিয়ে দেয়, কেউ জানে না,
ভোররাতে আকাশ ফর্সা হলে, জেলেরা বহতা নদীর তীরে মত মৎস্য শিকারে বের হয়, আকাশে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি ওড়ে,
রাতের নদী দিনের আলোয় কত কথা বলে,
উদাসী বাউল আপন-মনে গেয়ে চলে,
রাই জাগো, রাই জাগো।

সমুদ্রের ডাকে
দানিং কারা যেন আমার
স্মৃতির বন্দরে হেঁটে বেড়ায়,
জানিনা বুঝিনা  
প্রিয় মুখ কোথায় হারায়।

স্বপ্নে আসো স্মৃতিতে ভাসো
তোমরা কারা?
কড়া বাজাও  তোমরা কী সেই
আপন যাঁরা?

অথচ, একদা জীবন ছিল
ভরা নদী  কত তার ঢেউ,
লেগেছিল ফাগুন-গন্ধ
জানেনা তো কেউ।

পালহীন ভাঙা নৌকো আমার
ক্লান্ত গতিহীন,
ছন্দ নিয়ে কারবার আমার
জীবন ছন্দহীন।

স্বপ্নে আসো  স্মৃতিতে ভাসো
তোমরা কারা?
রাত এলে  সমুদ্রের ডাকে
আমিও দেবো সাড়া।।।।

 সুনির্মল বসু। কলকাতা