অটোয়া, রবিবার ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪
নারীর পরিচয় হোক শুধু মানুষ – শামীমা কালাম

রেকটু ধৈর্য্য ধরো, সন্তানের মুখের দিকে তাকাও,
ধৈর্য্য ধরেছি, সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়েছি, বন্যার জলের মতো ভেসে যায় আমার ধৈর্য্য,
অন্য সকলের মতো দিবা রাত্রি যায়।
দিব্যি তিন বেলা ভাতের সঙ্গে গিলি স্বামী শুশুড়ি ননদের নির্যাতন।
সামান্য লবনের দোহাইয়ে মুঠো মুঠো চুল টেনে হিসরে উপরে দেয় স্বামী – চাকরি ছেড়েছি।
একদিন সামান্য কথা কাটা-কাটি নিয়ে গলা ছেপে ধরে,
দোহাই লাগে – আমাকে জানে মেরো না,
পাশে ঘুমিয়ে থাকা নিষ্পাপ তিনটি সন্তান কান্না করতে করতে আমার কাছে এলো,
কচি কচি সন্তান না আমাকে বাঁচাতে পারে, না থামাতে পারে তাদের বাবাকে,
আমি চিৎকার করলে ঠোঁট নাক মুখ আরো জোড়ে চেপে ধরে,
আমি কাঁদি, বাচ্চাগুলো কাঁদে,
সারাটি কক্ষে হাউমাউ, তবু আমার শশুড়ি, আমার ননদ, আমার কাজের বুয়াটি পর্যন্ত দরজায় আসে না,
একুশ বছরের বিবাহিত জীবনে সবাই জেনে গেছে আমার নির্যাতন রোজ রাতের সাধারণ ব্যাপার,
এ বাড়ির পুরুষ মানে সিংহ, নারী মানে বিড়াল
আবার মাকে ফোন করি
আমি আবার বাবাকে অনুরোধ করি, কান্না করি,
নিয়ে যাও আমাকে এই স্বামীর নরক থেকে,
মা বলে ধৈর্য ধরো, বাবা বলে সমাজ কি বলবে,
আমার মান-সম্মানের কথা ভেবেছো বোকা মেয়ে।
তোমার মাকে ও তো কত আঘাত করেছি তবু
তোমাদের ছেড়ে কখনো বাবার বাড়ি যায় নি। 
আমি বাধ্য হয়ে পুলিশে কল দিলাম,
যেদিন আমার স্বামী জানতে পারলো পুলিশে কল দিয়েছি, 
সেদিন রাতে আমার লাশ পাওয়া গেলো ভাঙা ফ্যানের সঙে। 
সেদিন বাবা আসলো
সেদিন মা আসলো
সেদিন আমার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহপাঠি, শিক্ষক, পাড়ার মুরব্বি, পুলিশ, 
আমার আত্মীয় স্বজন সবাই আমার লাশ নিয়ে গেলো, আমাকে কেউ নিতে এলো না,
আমি চিরায়ত আবহমান বাংলার ঐতিহ্য হয়ে আছি,
একদিন হয়তো আমার মেয়েরা মানুষ হয়ে বেঁচে উঠবে।
একদিন আমার মেয়েরা একা দাঁড়াতে শিখবে 
একদিন মন্দ উপ্যাখান ছুড়ে দিয়ে বলবে আমি মানুষ,
মানুষের সব অধিকার আছে, 
মানুষ হাটে, মানুষ প্রতিবাদ করে। মানুষ নিজের জন্য লড়াই করে।
আমি হয়তো মানুষ ছিলাম না
একজন পুরুষের স্ত্রী
একজন অসহায় মায়ের মেয়ে
মানুষের নিজস্ব পরিচয় থাকে। 
একটু লড়াই, অস্থিত্ব আর অধিকার নিয়ে কাঁধে
নারীর পরিচয় হোক মানুষ, শুধু মানুষ। 

শামীমা কালাম। ক্যানাডা