অটোয়া, রবিবার ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪
নীরেশ দেবনাথ এর দু'টি কবিতা

ধান-দূর্বা
জিকের গোধূলিতে কেন এলে প্রিয়তম,
বাকি কিছু নাহি মম
তুলি দিব তোমারই করে।
চুম্বন তুমি এঁকে দাও আমারি অধরে
তোমার বক্ষমাঝে তুলি লও মোরে,
ভাসি আমি অশ্রুলোরে।
কী দিয়া বরিয়া লব আজি গোধূলিতে -
যাহা দিব তাহা মাথা পেতে নিতে
পারিবে না ওগো মোর প্রিয়?
না পারিলে তবে তব পদপ্রান্তে স্থান দিও।

ধান-দূর্বা দিয়া আজি বরিবো তোমায়
ভুল হলে ক্ষমা ক'র অসীম ক্ষমায়।
যেদিন হয়েছে অন্ত আকাঙ্ক্ষা-আশা,
সে দিনই মরিয়া গেছে হৃদয়ের যত ভালোবাসা।
অশ্রু শুকায়েছে বহুদিন,
মরমে ছিঁড়িয়া গেছে হৃদয়ের বীণ -
তন্ত্রীতে লাগে না আর সুর
অধর প্রান্তে হাসি ফোঁটে না মধুর।
যদি বক্ষে তব দাও মোরে স্থান,
ডাকিলে ডাকিতে পারে হৃদয় মাঝারে পুনঃ বান।

আজি মোর সম্বল শুধু দূর্বা আর ধান -
এগুলিরে পারো কি দিতে তব মস্তকে স্থান?
ধান-দূর্বা দিয়া বরে দেবতারে,
আমি বরিবো তোমারে;
তুমি মোর দেব, তুমি মোর প্রিয়,
ওগো, তুমি মোর ধান-দূর্বারে মান দিও।
দিবসের খরতাপে শুষ্ক ফুলমালা
পারিবে করিতে তোমার হৃদয় আলা?
তুমি জান, মণি মাণিক্যের ঘটা নাহিকো আমার,
আছে শুধু তনুখানি আর ক্রন্দন ত্রিযামার।
ক্ষণেক দাঁড়াও প্রিয়, অভিমান ভুলি
ধান আর দূর্বা আনি তুলি।
ধান-দূর্বা দিয়াই তোমারে বরিবো আমি -
সে-ই হবে মোর হৃদয়ের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রণামি।

বিদায়
কাহারে দিব গো বিদায় মোর এই যৌবনের দিনে?
হারালে কি পাবো তারে চিনে?
বিচ্ছেদ ব্যথা মূর্ত হয়ে উঠে
সকল বাধা বন্ধ টুটে
হইবে যে পাগলের প্রায়,
তখন কি হায়
হইবে গো ভালো?
হৃদয়ের সকল মন্দ গুলো
একত্রে করিবে হাহাকার -
তখনও কি আমি থাকিব নির্বিকার?

বিদায়ের নাহিকো প্রয়োজন মোর
ভালোবেসেছি যারে জীবন ভোর;
প্রয়োজন নাহিকো হারায়ে খুঁজিতে  ফিরে ফিরে,
প্রয়োজন বিনা ভাসিতে অশ্রু নীরে।

বিদায়ের পরে
জানি আমি, অধিক মনে পড়িবে প্রিয়রে,
ভালো তারে আরো বাসিবো
নয়নের নীরে শুধু ভাসিবো
শ্যামের বিরহে রাধার মতন,
আমিও হারায়ে খুঁজিব অমূল্য রতন।
তার কোনো নাহি প্রয়োজন
ইচ্ছা ক'রে হারাতে নাহি চাহে মোর মন।
নাহি প্রয়োজন কপট অশ্রুজলে
কে চাহে গো ডুবিতে অতলের তলে!
দিবস যামি
কাঁদিতে পারিব না আমি;
তাই প্রিয়রে ছাড়িতে নাহি চাই -
রিয়া রাখিতে চাহি মোর কাছে সর্বদাই।

মোর পূর্ণ যৌবনে
গুনগুনিয়ে ওঠে মৌমাছি মৌবনে,
যৌবনে বিরহে থাকি
অবসিত যৌবনের দিনে কি করিব বসে থাকি
সাজায়ে ফুলের ডালা?
তখন কি মোর হৃদয় হইবে গো আলা
আমার প্রিয়র দরশনে
তাহার মধুর কর পরশনে?

ভ্রমর ভঞ্জে মধু প্রস্ফুটিত পুষ্পের কাছে,
ঝরা ফুলের কাছে কী বা চাহিবার আছে?
তাই আমি ছাড়িব না কোনমতে
বক্ষের পিঞ্জর হতে।
ক্ষণিকের তরে কোনদিন
ঝঙ্কারি উঠিবে না মোর বীণ।
তাই
প্রিয়রে কোন মতেই ছাড়িতে নাহি চাই।

নীরেশ দেবনাথ
তালবনা, কালনা