অটোয়া, বুধবার ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
কুলছনের পোস্টমর্টেম - ইকবাল কবীর রনজু

ধিকার যেখানে থাকে না সেখানে আগ্রহও যে থাকতে নেই মনে প্রাণে একথা বিশ্বাস করলেও আজ করিম মিয়ার সে বিশ্বাসে ফাঁটল ধরেছে। নইলে কুলছন বেগমের মৃত্যু সংবাদ শুনে করিম মিয়ার মনে নানা প্রশ্ন জাগবে কেন? অপমৃত্যু বলে? স্বাভাবিক মৃত্যু হলে কি বিষয়টা করিম মিয়াকে ভাবাতো না? গায়ের রঙ কালো হলেও সুঠাম দেহী এবং তেজী ছিল ও। ছিল না কেবল কোন অবলম্বন।
     বাপের মৃত্যুর পাঁচ বছর পরে কুলছনের মা টা ও মারা যায়।  ও যখন একেবারেই একা হয়ে গিয়েছিল তখন গ্রামের মানুষ বুঝিয়ে সুজিয়ে মাঝ বয়স পেড়িয়ে যাওয়া নিঃসন্তান  বিপত্নীক করিম মিয়ার সাথে বিয়ে দেয় যুবতী কুলছনকে। এসব প্রায় বিশ বছর আগের কথা। কালো হলেও অল্প বয়সী অবিবাহিত মেয়েকে বউ হিসেবে পেয়ে খুশীই হয়েছিল করিম মিয়া। তবে সংসার জীবনে মাঝে মধ্যে কুলছন যখন বয়সের যথেষ্ট ফারাকের কথা স্মরণ করিয়ে দিতো এবং স্বামীকে বুড়ো আখ্যা দিত তখন মর্মার্থ বুঝলেও কিছুই করার থাকতোনা করিম মিয়ার।  
     মাছ বাজারের দিকে কয়েকটা কুকুর ঘেউ ঘেউ করে উঠলে উচ্চ শব্দে বাঁশি বাজাতে বাজাতে লাঠি হাতে সেদিকে এগিয়ে যায় করিম মিয়া। রাতের আবছা আলোয় তাকে দেখে দ্রুত অন্য দিকে চলে যায় কুকুর গুলো। বন্ধ দোকান গুলোর দড়জায় টর্চের আলো ফেলে একবার দোকান গুলো দেখে নেয় সে। আশে পাশে কাউকে দেখতে না পেয়ে বিল্লালের সবজির দোকানে ফিরে আসে। মাস খানেক হলো দোকানে আসে না বিল্লাল। মালপত্র ও নেই। তাই ফাঁকা দোকানটায় বসে রাত কাটায় আর বাজার পাহাড়া দেয় করিম মিয়া। মশার কামড়ে অতিষ্ট হয়ে কয়েলের দিকে তাকাতেই দেখতে পায় নিভে গেছে কয়েলটা। কয়েলটির মতো এরকম এমনি এমনিতেই কি কুলছনের জীবন তরী নিভে গেছে? নাকি রাত শেষে কয়েলের জলন্ত অংশ যেমন করে নেভাই আমরা তেমনি করে দুমরে মুচরে ভেঙ্গে কেউ কুলছনের জীবন তরী নিভিয়ে ফেলেছে ওরা?
     এমন আবোল তাবোল ভাবতে ভাবতে ঝিমাচ্ছিলো করিম মিয়া। দ্বিতীয় ফোনটা যখন আসে তখন চারপাশ অনেকটা ফরসা হয়ে এসেছে। অন্য দিন শেষ রাতে ঝিমুনী ধরলেও ফজরের আজানের শব্দে জেগে ওঠে সে। আজ আওয়াজটা শুনতেই পায়নি। ভাঙ্গা চোরা বাটন ফোনের মনিটর নষ্ট হওয়ায় করিম মিয়া বুঝতে পারে না কে ফোন করেছে। আব্বা, “মায়ের লাশ কি থানায় এনেছে?”। গলা শুনেই বুঝতে পারে মেয়ে ববিতার ফোন। রাত দুটোর দিকে ববিতার খালা রহিমা প্রথম ফোন করে করিম মিয়াকে জানায়, আলাউদ্দিন ও তার প্রথম স্ত্রী কুলছনকে মেরে ফেলে রশিতে বেঁধে ঘরের ডাবের সাথে ঝুলিয়ে রেখেছে। আব্বা, তুমি কি আমার কথা শুনছো? শুনছি পুলিশ গেছে। মাকে থানায় আনলো কি না খোঁজ নিয়ে দেখ। আমরা থানায় আসছি বলেই ফোন রাখে ববিতা।
     কাঁচা বাজারের পূব উত্তর কোনার নল কূপটায় হাত মুখ ধুয়ে গামছা দিয়ে মোছে করিম। মাছের গাড়ি গুলো বাজারের মধ্যের রাস্তা দিয়ে দ্রুত ছুটছে আড়তের দিকে। দোকান খুলতে শুরু করেছে সবজি, মুদী দোকানদাররা। আলাউদ্দিনের গ্রাম, মহাজের পাড়ার দুজন সবজি ব্যবসায়ী করিম মিয়াকে আগে থেকেই চিনতো। তারা করিম মিয়াকে দেখে এগিয়ে আসে। জানায়, আসার সময় তারাও লাশ দেখে এসেছে। গলায়, গায়ে অজস্র আঘাতের চিহ্ন। ফাঁসিতে ঝোলানো থাকলেও কুলছনের পা মাটিতেই ছিল। দেখেই বোঝা যাচ্ছে ওকে মেরে ফেলা হয়েছে। পুলিশ গিয়ে লাশ নামিয়েছে। আলাউদ্দিন ও তার প্রথম স্ত্রী পলাতক। পুলিশ খুঁজে পাচ্ছে না। শোক, সমবেদনা, সহমর্মিতা জানায় সবজী ব্যবসায়ীরা। মুখ দিয়ে কথা বোড়োয় না করিম মিয়ার। চুপ চাপ শুনে যায়। কুলছনের আচার আচরণে যতই ত্যক্ত বিরক্ত হোক না কেন করিম মিয়া কোন দিন ওর গায়ে হাতও তোলেনি।
     বাজার আর থানার মধ্যে কোন দূরত্ব নেই বললেই চলে। মাঝ খান দিয়ে একটা পাকা সড়ক চলে গেছে ছাইকোলা গ্রাম হয়ে কাছিকাটা বিশ্বরোডের দিকে। চুনুর চায়ের দোকান থেকে বিশ-তিরিজ গজ দক্ষিণে থানার গেট। চুনুর চায়ের দোকানের সামনের বেঞ্চটায় কোন রকমে বসে করিম মিয়া। গায়ে গতরে যেন একদম শক্তি নেই। শংকরের বাঁশির শব্দ শুনতে পায় সে। এমন শব্দ আগেও অনেক বার শুনেছে। শংকরের সাথে কত দিন এক সাথে চা খেয়েছে, গল্প করেছে। আজ এ লাশের উপর শংকরের যতটা অধিকার রয়েছে করিম মিয়ার তাও নেই। শংকর লাল নিশান লাগানো লাশবাহী ভ্যান নিয়ে থানায় ঢুকছে। থানার কিছু আনুষ্ঠানিকতা শেষে আবার পোস্টমর্টেমের জন্য মর্গে নিয়ে যাবে মৃত দেহটি। পোস্ট মর্টেম শেষে দাবীদারের নিকট পৌছে দেবে। 
     করিম মিয়া কুলছনকে দেখার জন্য থানায় ঢুকবে? মন সায় দিচ্ছে না। কুলছনের করা অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তাকে ধরে এনে অযথা এ থানায় আটকে রেখেছিল। তখন ববিতা খুব ছোট। কাজ ছিল না করিম মিয়ার। ঠিকমতো সংসার চলেনা। এক বেলা খাবার জোটে তো আর এক বেলা জোটে না। সংসারে এ নিয়ে নিত্য ঝগড়া বিবাদ লেগেই থাকতো। কুলছন যখন শিশু সন্তানকে রেখে গৃহ পরিচারিকার কাজ নিয়ে মালয়েশিয়া যেতে চায় তখন বাধ সেধেছিল করিম মিয়া। নাইট গার্ডের এ চাকুরীটা তখন হয় হয় অবস্থা। সাবালিকা কুলছন তার স্বাধীনতায় বাধ সাধার অভিযোগ আনেন স্বামীর বিরুদ্ধে। এ নিয়ে থানায় দরবার, শালিশ বৈঠক ও হয়। কুলছনকে ঠেকাতে পারেনি করিম মিয়া। একদিন কোলের শিশুটাকে নিয়ে রহিমার বাড়ি চলে যায় কুলছন। নিজের সামান্য কিছু টাকা ও রহিমার সহায়তায় পাড়ি জমায় মালয়েশিয়ায়। চাকুরীটা করিম মিয়ার হয়েছে ঠিকই কিন্তু তত দিনে সব ওলট পালট হয়ে গেছে।
     সাত বছর পর একবার দেশে ফিরলেও কুলছন আর যোগাযোগ রাখেনি করিম মিয়ার সাথে। ববিতার সাথেও অনেক দিন দেখা নেই করিম মিয়ার। কুলছন ও মেয়ে ববিতাকে বাড়ি ফিরিয়ে আনতে একদিন করিম মিয়া নিজেই উপযাচক হয়ে রহিমার বাড়ি গিয়েছিল। সেদিন সেখানেই ভ্যান চালক আলাউদ্দিনের সাথে প্রথম পরিচয় হয় তার। কুলছন আলাউদ্দিনকে তার খালাতো ভাই বলে পরিচয় করিয়ে দেয়। করিম মিয়ার চোখের সামনে অবিশ্বাস্য ভাবে কুলছন আলাউদ্দিনের সাথে এমন ঘনিষ্টতায় জড়ায় যে করিম মিয়াকে দ্রুত সেখান থেকে চলে আসতে কুলছনকে মুখে আর কিছু বলতে হয়নি। করিম মিয়া ওখান থেকে চলে আসার সময় ববিতা চুপিসারে ছল ছল চোখে ধরা গলায় তার বাবাকে জানায়, “আব্বা, মা নাকি আলাউদ্দিন মামাকে বিয়ে করবে।”
     কিছু দিন পরে একটা চিঠি আসে করিম মিয়ার ঠিকানায়। করিম মিয়া তো হতবাক। কে তাকে চিঠি লিখবে? চিঠি লেখার মতো তার কোথাও তো এমন কেউ নেই। পিয়ন চিঠির খামটি করিম মিয়ার হাতে দেয়। খাম ছিড়ে চিঠি বের করে পিয়নের হাতে দিয়ে পড়ে শোনাতে বলে সে। চিঠি হাতে নিতেই পিয়ন বুঝতে পারে এটি ডিভোর্স নোটিশ। এক নজর নোটিশের দিকে তাকিয়ে পিয়ন জানায়, কুলছন বেগম আপনাকে ডিভোর্স করেছে। কাঁপা কাঁপা হাতে ডিভোর্সের কাগজটি পুনরায় হাতে নেয় করিম মিয়া। পিয়নের গমন পথের দিকে তাকিয়ে থাকে নিষ্পলক। এর পর আর কখনো কুলছনের খোঁজ নেয়নি করিম মিয়া।
     বেলা বাড়ার সাথে সাথে ভীড় বাড়ছে চুনুর চায়ের দোকানে। চায়ের কাপে চিনি মেশানোর টুং টাংশব্দ কানে আসছে তার। এরি মধ্যে হকার ছেলেটা পেপার দিয়ে গেল। পাশের কে একজন পেপার টা খুলে নাড়া চারা করছে। পাশে বসা অপর একজনের বিড়ির ধুয়া নাকে আসতেই পুরোনা নেশাটা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। অনেক দিন বিড়ি খায় না করিম মিয়া, বিড়ি খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে সে। চুনুর নিকট থেকে একটা বিড়ি আর দিয়াশলাই চেয়ে নিয়ে বিড়ি ধরিয়ে আয়েশ করে টানতে থাকে। একটু আগে দূর থেকে ববিতা ও রহিমাকে থানায় ঢুকতে দেখেছে করিম মিয়া।  
     লাশের গাড়ি নিয়ে মর্গের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়লো শংকর। দক্ষিণ দিকে চলে গেল গাড়িটা। পেছন পেছন রহিমা ও বেড়িয়ে রাস্তায় আসে। দূর থেকে করিম মিয়াকে দেখে তার কাছে আসে রহিমা। শালীর সাথে ও অনেক দিন পরে দেখা তার। রহিমা যে টুকু জানালো তার মর্মার্থ এই যে, সেবার মালয়েশিয়া থেকে ফেরার পর রহিমার বাড়িতে কিছু দিন কাটিয়ে আবার মালয়েশিয়া পাড়ি জমিয়েছিল কুলছন। সর্বশেষ মাস দুয়েক আগে দেশে ফিরে আলাউদ্দিনকে বিয়ে করে সতীনের সংসারে ঘর করতে যায় কুলছন। গতকাল রহিমার বাড়ি থেকে ববিতার বিয়ে হয়। আলাউদ্দিন আর কুলছন সে বিয়েতেও গিয়েছিল। বর, কনের বিদায়ের পর রাতে আলাউদ্দিন কুলছনকে নিয়ে বাড়ি ফেরে। আলাউদ্দিন কোন বৌয়ের ঘরে শুবে এ নিয়ে দুই সতীনের ঝগড়া শুরু হয়। ঝগড়া চলা কালীন সময়ে কুলছন রহিমাকে ফোন দিয়েছিল। সেসময়ই রহিমা ফোনে ঝগড়া ঝাটি এমনকি কুলছনকে মার ধোরের শব্দ পর্যন্ত শুনেছে। বাঁচাও বাঁচাও বলে সেসময় চিৎকার করছিল কুলছন। হঠাৎই রহিমার ফোনটি বন্ধ হয়ে যায়। এর পর থেকে বারংবার চেষ্টা করেও কুলছনের সাথে যোগাযোগ করতে না পেরে রহিমা রাতেই কুলছনের বাড়িতে চলে যায়। গিয়ে দেখে আলাউদ্দিনের বাড়িতে শত শত মানুষ। ঘরের ডাবের সাথে ঝুলছে কুলছনের মর দেহ। পা মাটিতেই রয়ে গেছে। দেখেই বোঝা যায় মেরে ফেলা হয়েছে। শরীরে অজস্র আঘাতের চিহ্ন। মোবাইলে কিছু ছবিও তুলে রেখেছে রহিমা। পুলিশ গিয়ে থানায় নিয়ে আসে লাশ। সব কিছু শুনে নিজের জন্য না হলেও ওরসজাত কন্যা সনন্তানের কথা ভেবে হতভম্ব হয়ে পরে করিম মিয়া। 
     এর পরে ঘটে নানান নাটকীয়তা। স্থানীয় থানার কর্মকর্তা কুলছন বেগমের অপমৃত্যুর মামলা রেকর্ড করে। আলাউদ্দিন ও তার প্রথম স্ত্রী তখনও পলাতক। স্থানীয় পত্র পত্রিকায় খবর আসে কুলছন বেগম আত্ম হত্যা করেছে। দু একটি কাগজে এ মুত্যুকে রহস্য জনক বলা হয়েছে। করিম মিয়া পড়তে জানে না, অন্যরা এসব খবর পড়ে শুনিয়েছে তাকে। ইউপি চেয়ারম্যানের বরাত দিয়ে পত্র পত্রিকা এও লিখেছে কুলছন বেগম মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন। কিন্তু এমন খবর কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিলনা করিম মিয়া। আর যাই হোক, যেভাবেই কুলছনের মৃত্যু হোক ও তো মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলনা। যার ইশারাতেই হোক, ন্যায় পেতে আদালতে বোন হত্যার বিচার চেয়ে মামলা দায়ের করে রহিমা। আদালত থানার কর্মকর্তার নিকট কুলছন বেগমের মৃত্যুর সমস্ত তথ্য প্রমান চেয়ে বসলে গুরত্ব বেড়ে যায় রহিমারও।
     কুলছনের পায়ের মোটা গোছার দিকে আলাউদ্দিনের যতটা না দৃষ্টি ছিল তার চেয়ে বেশি দৃষ্টি ছিল  প্রবাস জীবনে অর্জিত যৎসামান্য টাকা পয়সার দিকে। ব্যক্তিত্ব বলতে তেমন কিছু না থাকলেও সুঠাম দেহ টাকে পুঁজি হিসেবে কাজে লাগিয়েছে আলাউদ্দিন। তাই শেষ অবধি কৌশল করে হোক আর ভালবেসে হোক সেসব টাকা পয়সার মালিক হয়ে যায় আলাউদ্দিন। কুলছন ভালবেসে হোক, মোহে পরে হোক আর অবলম্বন পাকা পোক্ত করতেই হোক সতীনের সাথে সংসার করতে হবে জেনেও দ্বিতীয় বিয়ে করেছিল আলাউদ্দিনকে।
     থানার বড় কর্মকর্তা রাতের আাঁধারে বিশ্বস্ত গ্রাম পুলিশকে সাথে নিয়ে রহিমার মতো মানুষের বাড়িতে হাজির হলে রহিমা রীতিমতো ভয় পেয়ে যায়। মোটা টাকার লোভ দেখিয়ে আদালত থেকে হত্যা মামলাটি প্রত্যাহার করে নিতে বলেন বড় কর্মকর্তা। নইলে অন্য যে কোন মামলায় ফাঁসানোর হুমকিও দিয়ে আসেন তিনি।
     কুলছন বিদেশ যাওয়ার সময় রহিমার নিকট থেকে বেশ কিছু টাকা নিয়েছিল সে টাকা শোধ করেনি সে। ববিতাকে দীর্ঘ দিন নিজ খরচায় লালন পালন করেছে। বিনিময়ে তো কিছুই পায়নি রহিমা। তাই ভেবে চিন্তে এবার কিছু পেতে ও অন্য কোন ঝামেলায় না জড়াতে অবশেষে মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয় সে। গ্রাম পুলিশের সহায়তায় লাখ টাকায় দফা রফা হলেও অন্যরা মধ্যস্বত্ত্ব ভোগ করায় কুলছনের হাতে পৌছে পঞ্চান্ন হাজার টাকা। ববিতা এর কানা কড়িও পায়নি। পোষ্ট মর্টেম রিপোর্টে কুলছনের ‘মস্তিষ্ক বিকৃতি ও আত্মহত্যা’ খোদিত হয়। ববিতা ও করিম মিয়া অসহায়ত্ব ও অধিকারের কাছে পরাজিত হলেও তাদের হৃদয়ের গহীন তলে বেহালার করুন সুর ভেসে আসে মুহুর্মুহু।
     ববিতাকে সঙ্গে নিয়ে করিম মিয়া ধুলো ওড়ানো মেঠো পথে কুটিরের পানে চলে। পশ্চিমে সূর্য কিরণ লাল আভা ছড়িয়ে পটে যেতে ব্যস্ত। অদূরে ববিতা ও করিম মিয়াকে ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর দেখা যায়। মনে হয় ববিতার হাত শাড়ীর আচলে সিক্ত লোচন মুছতে ব্যস্ত। হয়তো ববিতারা জানতেই পারে না পৃথিবীটা এমনই।

ইকবাল কবীর রনজু 
সহকারী অধ্যাপক, মির্জাপুর ডিগ্রী কলেজ
পাবনা, বাংলাদেশ