বিদায় দাও - সত্যেন্দ্রনাথ পাইন
ঈশান--- কোনও দিন
ক্লান্ত অবসরে
যদি
তোমার চেতনা নিয়ে বসি এককোনে
রুদ্ধহীন দ্বারে কোন ক্ষণে কোনও খানে
শুনতে পাবো কি প্রেমের সেই অসীম বারতা!
পাবো কি তোমার কাছে অনন্ত নীরবতা পালনের
এক দৃশ্যমান অক্ষয় সূচি!
পুরোনো ডায়েরির পাতা ঘেঁটে
পাবো কি খুঁজে অফুরন্ত প্রেমের বুকফাটা হাহাকার শুনতে!
কিংবা আউটরাম ঘাটের জলযানে
ছলাৎ ছলাৎ ঢেউয়ের আগমনী শুনতে
আর
সন্ধ্যার আধো অন্ধকারে পাবো কি দেখা
নিভৃতে নিষ্পলক চেয়ে থাকা দুটি নয়নের
একান্ত আলিঙ্গনের অঙ্গীকার!!
ঈশিতা --- নাগো না
বোলো না বোলো না অমন করে
বড় ব্যথা পাই মনে আজও।
তুমি যে ছিলে আমার প্রেরণা
আমার একান্ত অসীম আত্মীয়তার বন্ধন।
তোমাকে আমার সাথে বিচ্ছিন্ন করে কে যে দিল
তা জানিনা।
শরীরের মিলন হয়নি তোমার সাথে ঠিকই
কিন্তু পাগলামিও তো হয়নি ছন্দের আবাহনে
কোনও নির্জনে চাঁদনী আলোতে, ঘোর অমাবস্যার অন্ধকারেও
তবু যেমন সূর্যমুখী চেয়ে থাকে সূর্যের পানে
আমি ও চেয়েছিলাম বুকে মুখে সময়ের হাসনুহানাতে তোমার দিকে ঈশান, বৃষ্টির ঝিরি ঝিরি মধুর আলাপনে।
আত্মসাৎ করিনি তোমার
সততার লাবণ্যটাকে এতটুকু; জিজ্ঞাসা
করিনি কভু
তোমার চাহিদার দৌড় কতখানি।
তবু মোরা বেসে ছিলাম ভালো থাকার
আয়োজনের দিনগুলোতে।
কিন্তু সেই তুমি কেমন ফস্ করে
পালিয়ে গেলে গতিহীন ছন্দে গভীর
জ্ঞানের অধিকারী হতে! সেই সময়
আমি ছিলাম হতদরিদ্র এক মানব কন্যা।
তুমি ছিলে সোনার ছেলে, মুক্তোর মতো ঝকঝকে
এক পরদেশী।
তাই বুঝি চলে যেতে পারলে নিঃসংশয়ে অতি সহজেই
আমাকে কড়া শাসনে রেখে
এ চরাচরে?
ঈশান-- দ্যাখো, আজ আমি নিঃস্ব রিক্ত শতদল।
সন্দেহ কোরোনা এতটুকু আমায়।
গরীব বড়লোকের ব্যবধান
আমার জীবনের পথে ফেলেনি কোনো পিচ্ছিল
দাগ কোনও সময়।
হয়তোবা পারবে না যমালয়ে যাবার প্রাক্কালেও।
তুমি ইংরেজি জানা নিস্তব্ধ আকাশের ধ্রুবতারা।
আমি এক গেঁয়ো ছেলে
সুর হারা তানপুরার বেহাগ।
তুমি যদি নদীর কলতান হও সে সময়
আমি হলাম বন্যার জলে ভেসে আসা এক ছিন্ন পদ্মপুরাণ।
আমাকে ভুল বুঝে অভিমান কোরোনা গো প্রিয় সীতা।
আমার ভিতরের জিনিস টাকে বানিয়ে তোলো বরং মিলন বাসরে আকাঙ্ক্ষার অট্টালিকায়।
দ্যাখো এখনও মনে হয় সেই নামটা উচ্চারণ করে ডাকি।
তোমাকে সীতা বলেই ডাকতাম আমি তখন
অনেকেই বিদ্রুপ ছুঁড়ে দিত নামটার সাথে।
তুমি বা আমি কেউই কোনও প্রতি বাদ করিনি সে সময়।
মনে পড়ে!
বরং বেশ ভালোই লাগতো বলো।
এখনও কি তুমি সেই রাম ঘরণী সীতা হয়েই কাঁদো?
ঈশিতা-- না আমার জন্যে আর কিছুই বোধহয় ভালো নয়।
তুমিও আর সীতা নাম ধরে নতুনভাবে কলঙ্কিত কোরোনা।
এখানে অশোক কাননে ভালোই আছি আমি
ঐ খাঁচায় বন্দী পাখিটার মতোই।
অথচ তুমি তো ভালোই জানো মহাষ্টমীর রাতে কিংবা
বড়দিনের রাতে একা একা কত্ত ঘুরেছি
পুরুষদের পায়ে পা মিলিয়ে।
আজ আমার সব মানা। আমি নাকি গৃহবধূ!?
দ্যাখো শান (ঈশানের ছোট ডাক) মেয়েদের কী জীবন!
তোমাকে একটুখানি দেখার আশাতেই এই চলচ্চিত্রের
অবতারণা
তুমি নির্দ্বিধায় চলে এসো আমার কাছে।
কেউ বাধা দেবে না।
ঈশান-- আমাকে কোলকাতা শহরে যেতেই হয় জীবনের প্রয়োজনে। খুব শীগগিরি যাব হয়তো--
এখানে বাবলা গাছের নিচে
ফুরফুরে হাওয়া বড়ই মিষ্টি। নদীর তীরে বসা বকেদের কী মহা উল্লাস! পাড়ার ছেলেদের দল সাঁতার কাটতে দীঘির জলে কেমন ঝাঁপ দেয়। দেবদারু, শিউলির গাছে আজও দেখা যায় কত নতুন মৌমাছিদের আনাগোনা। এখনও কাশফুল ফোটে নদীর চড়ায়। তোমার সেসব দেখা হয়তো হবে না । তুমি কল্লোলিনী কলকাতার এক মস্ত মস্তিষ্ক। জানলার গরাদে রাখা এলিভিয়েরার গাছটা নিশ্চয়ই তোমাকে খুব সুখে রেখেছে। তোমার বাড়ির পোষা কুকুরটাও হয়তো নানান শব্দ করে তোমাকে কুর্ণিশ করে রোজ।
সেইসময় একটু আড়ালে তোমাকে দেখতে পাবো তো! ।তুমি কিছু ইংরেজি কবিতা বা বক্তব্য শোনাবে আমায়! জীবনে চলার জন্যে কিছু জ্ঞান দেবে। নয়তো হঠাৎই প্রশ্ন করবে আমায় " সবাই চলে গেল -- আর একা তুমি রয়ে গেলে কেন"!?
কী চাও আমার কাছে"!
ঈশান- --- কী উত্তর দেবো বলো তো সীতা!?।
আমি যে শুধু নির্ভেজাল তোমাকেই চাই। তুমি থেকো আমার সাথে আমার জীবনের পথদর্শী হিসেবে।
তুমি নারী আমি পুরুষ এই ভেদাভেদ করে কিচ্ছু লাভ নেই।
তোমাকে ভালোবাসি শুধু চোখের নেশায় দেহের নেশায় নয়।
তুমি দেখা দাও।
শুধু জানি পৃথিবীর সব কাজে আমার আর প্রয়োজন নেই।
তবুও জেগে জেগে স্বপ্ন দেখবো-- তুমি এসেছো আবার
আমার পুরোনো "শান" নাম টা ধরে ডাকছো---- ভাববো কতকিছু
বসে বসে
দেবো শান মনের মন্দিরে
রাখবো খুলে বাতায়নের পর্দা গুলো
যদি কোনও দিন দেখতে পাই কিংবা শুনি তোমার মধুর কন্ঠস্বর!
অথচ--
তোমার কাছে এদিনও শুনলাম-- 'আমি বাস্তব জ্ঞান হীন"।
আর তাই ভাবি বসে নিরালায়
এই জন্যেই কি সহজেই তুমি ছেড়ে যেতে পারলে আমায়!
আমি মাটিতে পা না দিয়ে আবেগে ভেসে বেড়াই!
সীতা তুমি কঠোর বাস্তববাদী মানি।
এবার তবে
আমায় দাও পরিত্রাণ।
একটা ইংরেজি বাক্য যেটা আগেও বলেছিলে আবার বলো-- , heresy of today is the Orthodox of tomorrow.
আজকের আমি আর কালকের নই।
তুমি থেকো ভালো ঐ খাঁচায় বন্দী পাখিটার মতোই
ভালোই তো -- যেটা তুমি চেয়েও পাওনি আমার কাছে।
আজ আমি ডাইরির পাতায় মলিন ধুলোর মাঝে তোমার ছবি
দেখে দেখে
সান্ত্বনা নিয়ে বেঁচে থাকি আর রবী ঠাকুরের কথা স্মরণ করে
বলি--
হে বন্ধু বিদায়।
যা কিছু দিয়েছো্ আমায়
তার থেকে বেশি ঋণী করেছো আমায়।
হে বন্ধু বিদায়।
সত্যেন্দ্রনাথ পাইন। পশ্চিমবঙ্গ
তারিখ- ১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৯
-
ছড়া ও কবিতা
-
03-06-2022
-
-