নির্জনতার তৃতীয় প্রহর - জিল্লুর রহমান প্রামানিক
সোয়া একটার বাস চলে গেলে
আমরা দুজন বসেছিলাম
কৃষ্ণচূড়ার বিশৃঙ্খল ছায়ার শয্যায়
আর মার্কিন কাপড়ের মহাজাগতিক পাজামা
আমাকে টেনে নিয়ে গিয়েছিল
ভূমধ্যসাগরের অতলান্তে;
মহাশূন্যে সাঁতার কাটা ঈষদুষ্ণ জল--
নিমগ্ন ছায়াপথ
আমার বুকে মেখে দিল অতিলৌকিক ঘ্রাণ
আমার আত্মা থেকে উৎসারিত হল
প্রস্তরযুগের প্রথম সংগীত
আমি তাই গ্রীষ্ম আর হেমন্তের ঠিক মাঝখানে
তার জন্য নির্মাণ করলাম
স্বপ্নে ভাসমান গোলপাতার ছাউনি-দেয়া ঘর;
কিন্তু সে তখন নিজস্ব হৃদয়ের
অপরিমেয় উষ্ণতায়
থার্মোমিটারের পারদের মতো
ঊর্ধ্বগামী
আকাশ তার পদতলে
ঝরে-পড়া নূপুরের মতো
তুচ্ছতার গ্লানি নিয়ে বিষণ্ন পড়ে থাকে
তাই, দ্বিধাহীন ঔদাসীন্যে সে
প্রত্যাখ্যান করেছে আমার অন্নের নুন,
তৃষ্ণার জল; যেন সব অর্থহীন স্বেদ,
অস্তিত্বের স্বাদহীন ভেজা তোয়ালে
আর আমি মধ্যরাতের সরাইখানায়
অনাহুত নক্ষত্রের কঙ্কাল
সে জানত না যে, নিরন্তর সময়-প্রবাহে
বদলে যায় হৃদয়ের ভূ-সংস্থান
শরীরের স্বতন্ত্র ভাষা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে
রপ্ত করে আত্মঘাতী নিয়ম-কানুন--
তবু তাকে ফিরে আসতে হবে
যুক্তিসংগত এঁদো-ডোবায়
আমাদের সাদামাটা বেসরকারি জীবনের
বেনো সত্যের ভাঙা ভিটায়
আমার ভ্রান্তির বিলাস
তার কপালে এঁকে দেবে
চুম্বনের অনপনেয় জলছবি,
শুষে নেবে চোখের পাতার ক্লান্তি,
পুঞ্জীভূত ম্লানিমার ছাই--
আমি কোনো এক পৌরাণিক ধীবরের মতো
কালোত্তীর্ণ প্রতীক্ষায় আছি।
দিন গড়িয়ে মধ্যরাত
এখন এই মধ্যরাতে
অস্থিরতা আমাকে ভিজে ন্যাকড়ার মতো
চুপসে ফেলেছে।
উদ্ধত অসংখ্য অঙ্কুশের একটি চাদরে
কেউ জাপটে ধরে আমার মস্তিষ্ক।
নৈতিকতাকে কবরচাপা দিয়ে
তাতে রোপণ করেছি
কয়েকটি অপরাজিতার চারা।
এবং সঙ্গে সঙ্গে প্রস্ফুটিত হয়েছে নীলিমারঙের
দুটি সুডোল বৃত্তান্ত। আর
আমি তোমার কথা ভাবছি--
বড় অন্যায় হয়ে যাচ্ছে;
আলোকরশ্মির মতো পথ স্প্রিঙের মতো
বেঁকেচুরে গভীরতম অন্ধকারের লোভে
ছুটে যাচ্ছে তোমার নিভৃত শয্যায়। পদপিষ্ট হয়ে
থেঁতলে গেছে দ্বন্দ্ব-পারমিতা, উদ্ধত হয়ে উঠেছে
শরীরের পাশব হুঙ্কার, আমি তাকে
নিরস্ত করতে পারছি না, আকাশের মতো অনন্তকে সে
জন্মান্ধের দক্ষতায় পাশ কাটিয়ে যাচ্ছে,
সে মাথা খুঁড়ে মরছে, সে ক্ষিপ্ত ষাঁড়ের মতো
গুঁতো মারতে মারতে একটি গোপন গহ্বরে
সেঁধিয়ে গেল সহজাত প্রজ্ঞায়।
আমি স্বেদের লবণে-- বিধৃত জোঁকের মতো--
কুঁচকে যাই,
আমি দিগন্তের কাছে এক বিধ্বস্ত ঝড়ের
জলার্দ্র স্মৃতির মতো চিৎ হয়ে পড়ে থাকি।
জিল্লুর রহমান প্রামানিক
বাংলাদেশ
-
ছড়া ও কবিতা
-
27-06-2022
-
-