অটোয়া, বুধবার ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
একূল-ওকূল - অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়

     হিমাংশু সরকার! ওর সাথে আবার যে কোনদিন দেখা হতে পারে তা ছিল স্বপ্নেরও অতীত।  সেদিন ওকে ডি.টি.সি. বাসের কন্ডাক্টারের সিটে বসে থাকতে দেখে ভুত দেখার মতো অঙ্কন চমকে ঊঠেছিল। আগের মতো আর রোগা নেই। স্বাস্থ্যটা একটু ফিরেছে।  ঘণ কালো এক গাল দাড়ি থাকা সত্ত্বেও চিনে নিতে বিশেষ অসুবিধে হয়নি। চুল খুব ছোট করে ছাঁটা অনেকটা ফুটবল খেলোয়াড়দের মতো।  জানালার পাশে তাঁর নির্দিষ্ট আসনে বসে সে একমনে যাত্রীদের টিকিট পাঞ্চ করছিল। খুচরো পয়সার খুব টানাটানি থাকার জন্যে টিকিটের পেছনে দুই-একজনকে কি সব লিখে দিচ্ছিল।  ওর কর্ম ব্যস্ততার সুযোগে ভীড়ের মধ্যে অঙ্কনও এক সময় হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল টিকিটের জন্যে।        
     টিকিট নিয়ে কন্ডাক্টারের ডানদিকে তিন আসন যুক্ত স্থান বেছে নিয়ে সঙ্গী দুই বন্ধুর সাথে অঙ্কনও বসে পড়ে। বসা মাত্র তাঁরা নিজেদের মতো আলোচনায় লিপ্ত হয়ে পড়েছিল।  কিন্তু অঙ্কন তাঁদের কথোপকথনে ভাগ নিতে পারছিল না।  কেমন যেন একটা অস্বস্তি বোধ করছিল। কিছুতেই  তাল মেলাতে পাচ্ছিল না বন্ধুদের সাথে। নিছক ভদ্রতার খাতিরে হুঁ, হ্যাঁ করতে হচ্ছিল কখনো কখনো। আসল কথা সেই মূহুর্তে মনের অবদমিত ভাবখানা সে হৃদয় গভীরে সংগোপনে লুকিয়ে রাখতে চাইছিল। ধরা পড়ে গেলে হয়তো হাজার কৈফিয়ত দিতে হবে তাঁকে।  সেই কৈফিয়তটুকুই সে দিতে নারাজ আর সেই কারণেই তাঁর এত অস্বস্তি ।  
     অঙ্কনের সমস্ত ভাবনা চিন্তার কেন্দ্রবিন্দু তখন হিমাংশু সরকার, তাঁর এককালীন স্কুল সহপাঠী। সেই মূহূর্তে ওর কথা ভাবা ছাড়া তাঁর করনীয় কিছু ছিল না। অন্য কোন কথা ভাবতে মন সায় দিচ্ছিল না। বারে বারে ওকে আঁড় চোখে চুরি করে দেখতে হচ্ছিল। ঠিক যেমন করে বিয়ের পরে লোকে চুরি করে প্রথম কনে বৌকে দেখে। ব্যাপারটা কি যে অস্বস্তিকর ঠেকছিল তা ভাষায় বর্ণনা করার উর্দ্ধে।  না পাচ্ছিল সে বিগত দিনের সুমধুর সম্পর্ক সূত্র ধরে হিমাংশুকে কাছে টেনে নিতে, না পাচ্ছিল মিথ্যে অহংকার ও আভিজাত্য বর্জন করে ওর সাথে একাত্ম হতে।  কেবলই স্কুল জীবনের ফেলে আসা দিনগুলোর কথা মনে পড়ছিল।
     সাধারণ ছেলে বলতে যা বোঝায় হিমাংশু ছিল ঠিক সেই প্রকারের। লেখাপড়ায় খুব ভালো ছাত্র না হলেও নেহাত মন্দ ছিল না। এছাড়া ওর একটি ঈশ্বর প্রদত্ত বিশেষ গুণ ছিল, খুব সুন্দর কিশোর কুমারের গান গাইতে পারতো।  গানের তালিম ছিল না, অথচ গানে ভূবন ভরিয়ে দিত।  স্কুলের হাউস ফাংশনে ও রবীন্দ্র সঙ্গীত পরিবেশন করতো। ওর বাবা-মা ছিল না, ও বড় দাদা-বৌদির কাছে মানুষ।  ওর বড় দাদা সরকারি অফিসে ছাপোষা এক কেরাণী ছিল।  স্বচ্ছল পরিবার যে ছিল না সেটা ওর পোষাকের দিকে তাকালেই স্পষ্ট বোঝা যেত। কিন্তু ওর দিক থেকে সেই ব্যাপারে কোন ভ্রুক্ষেপ ছিল না। নিজেকে সে ওই ভাবেই মানিয়ে নিয়েছিল।  
     গ্রীষ্মের ছুটির শেষে স্কুল খোলার পরে সবে মাত্র নতুন ক্লাস শুরু হয়েছিল। একদিন ও স্লেট রঙের স্কুল ইউনিফর্মের বদলে কালো রঙের প্যাণ্ট পরে প্রেয়ার লাইনে এসে দাঁড়িয়েছিল। ব্যাপারটা অন্য কারো নজর এড়িয়ে গেলেও হেড মাস্টারের বিষ নজরে পড়ে গিয়েছিল।  প্রেয়ারের শেষে সকলে ক্লাসে চলে যাওয়ার পর ভাদ্রমাসের অসহ্য রোদে ওকে খোলা মাঠে এক পায়ে দাঁড় করিয়ে রেখেছিলেন।  গরীবের প্রায়শ্চিত্ত স্বরূপ সেই শাস্তি ও মাথা পেতে গ্রহণ করেছিল।  কোন প্রতিবাদ করেনি মুখ ফুটে।  প্রতিবাদ করেছিল তখন, যখন হেড মাস্টার মহাশয় বলেছিলেন – বাপকে গিয়ে বলিস স্কুল ইউনিফর্ম কিনে দিতে না পারলে নাম কাটিয়ে যেন ঘরে বসিয়ে রাখে। লেখাপড়া শিখে কোন লাভ নেই।
     তখন সারা শরীরটা তাঁর ঘামে ভিজে গিয়েছিল।  পিতৃহারা হিমাংশুর অবস্থা তখন যেন ঠিক খাপ খোলা তলোয়ার। বিদেহী পিতার কথা সেদিন ও সহ্য করতে পারেনি। মূহুর্তকাল সময় নষ্ট না করে হেড মাস্টারের মুখের উপর জবাবদিহি করেছিল এই বলে – কি করবেন না করবেন সেটা আপনার পরামর্শ নিয়ে করবে না আর যাই করুক। তারপর যা হওয়ার তাই। সেই সনাতন প্রথার পুনরাবৃত্তি- দুর্বলের উপর সবলের অত্যাচার। প্রতিবাদ জানাবে কে? যে অপরাধী সেই বিচারক । 
     সেই কথার প্রক্ষিতে হেড মাস্টার তাঁকে মারতে এলে হিমাংশু তাঁর হাতখানা সজোরে ধরে ফেলেছিল মাত্র এর বেশি আর কিছু নয়। ফলঃস্বরূপ হেড মাস্টারের হাত ঘড়িখানা খুলে মাটিতে পড়ে গিয়েছিল। হেড মাস্টার সেই সুযোগে নিজের অন্যায়টা ঢাকতে গিয়ে সমস্ত অপরাধ হিমাংশুর ঘারে চাপিয়ে দিয়ে স্কুলময় রটিয়ে বেরিয়েছিলেন তাঁকে নাকি মারতে উঠেছিল হিমাংশু। আর সেই দিনই ছিল হিমাংশুর স্কুল জীবনের সর্বশেষ দিন।  তাঁকে ইচ্ছাকৃত স্কুল থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।  সে তখন দশম শ্রেণীর ছাত্র ছিল। ঘটনাটা না ঘটলে পরের বছর ও আমাদের সাথে হায়ার সেকেন্ডারি পরীক্ষায় বসতো। ওকে যারা ঘনিষ্ঠ রূপে চিনতো তাঁরা সকলেই সেইদিন ওর জন্যে অশ্রু বিসর্জন করেছিল।  যথারীতি পরের দিন স্কুলে গিয়ে তবু মনে হয়েছিল হয়তো ওর দেখা পাওয়া যাবে কিন্তু সেই আশা কেবল দূরাশাই থেকে গিয়েছে চিরকাল। শুধু সেই দিনগুলো কেন তারপর কত যে দিন-রাত্রি এসেছে গিয়েছে তার হিসাব রাখেনি কেউ।  কিন্তু হিমাংশুর ছায়া পর্যন্ত কেউ দেখতে পায়নি স্কুলের ত্রিসীমানায়। প্রায় সপ্তাহ খানেক ও সকলের আলোচ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল।  প্রায়শঃই মনে হতো আর কোনদিনও ওর পাশে বসে সুখ দুঃখের গল্প করা হবে না। ওর সুরেলা গলায় আর কোনদিনও গান শোনার সুযোগ হবে না। মানতে কষ্ট হচ্ছিল যে চিরদিনের জন্যে নীরব অভিমানে ও সবাইকে ছেড়ে চলে গিয়েছে।  
     কালের গতিতে সময় এগিয়ে গিয়েছে নিজ খেয়ালে কারো অপেক্ষা না করেই।  বহুদিন পরে একদিন হঠাৎ অপ্রত্যাশিত ভাবে হিমাংশুর সাথে দেখা হয়ে গিয়েছিল। আমাদের স্কুলের নিকটবর্তী সরোজিনী নগর বাস ডিপোতেই ও তখন কর্মরত।  পলিথিনে ছাওয়া ছোট্ট একটা অস্থায়ী চায়ের দোকানে দাঁড়িয়ে হিমাংশু তখন চা পানে ব্যস্ত ছিল।  আমরা লক্ষ্য করার আগেই ও আমাদের হাতছানি দিয়ে কাছে ডেকে নিয়েছিল।  পরনে ছিল খাকি রঙের ঢিলে-ঢালা ময়লা উর্দি। ওকে দেখে আমাদের অন্তর্গভীরে তখন কি যে তোলপাড় চলছিল ওকে নিয়ে সেই কথা কি করে ব্যক্ত করি? অথচ কি আশ্চর্য! হিমাংশুর সেই দিকে কোন ভ্রুক্ষেপ ছিল না। ও ছিল নির্বিকার বরং আলাপের শুরুতেই ও হাসি মুখে আমাদের সকলকে জিজ্ঞাসা করেছিল – তোরা কেউ চা খাবি?  খুব ভালো চা বানায় লোকটা। খেয়ে দেখ না একবার। 
     এতদিন পরে ওকে দেখতে পেয়ে মনটা আনন্দে যতটা উদ্বেল হয়ে উঠেছিল, ততটাই করুণ লাগছিল ওর পোষাকের পানে চেয়ে। এক কথায় খুব বেমানান ঠেকছিল। ওর দিকে তাকানো যাচ্ছিল না। ঘুড়ে ফিরে কেবলই পুরনো দিনের কথা মনে পড়ছিল। ওর সকরুণ অনুরোধ অস্বীকার করে সবাই একবাক্যে বলেছিল – না রে চা খাবো না। তুই নিঃসঙ্কোচে খা।
     আমাদের সঙ্গে স্বভাবসিদ্ধ রসিকতার সুরে বলেছিল -  ও হ্যাঁ, তোরা তো মায়ের হাতে তৈরী হরলিক্স খাবার ছেলে। চা খেলে যদি গায়ের রঙ কালো হয়ে যায় আবার। মিচকি হাসির ফাঁকে একটু থেমে হিমাংশু আরো বলেছিল - চা আমি নেশার জন্যে খাই না। এতে মিষ্টি থাকে তাই পেটে গেলে ক্ষিদে পায় কম। গরীবের দুঃখ-কষ্ট তোরা কি বুঝবি? রূপোর চামচ মুখে নিয়ে জন্মেছিস তোদের চিন্তা কিসের? এই সংসারে গরীব ঘরে জন্ম নেওয়াটা যে  কি বেদনাদায়ক তা অনুভব সাপেক্ষ। তোদের বলে বোঝানো যাবে না।       
     কথার ফাঁকে কাগজের কাপে গরম চায়ে চুমুক দিয়ে বলেছিল – এবার বল কেমন আছিস, সব ভালো তো? লেখাপড়া কেমন চলছে?  এই বছর তোদের হায়ার সেকেন্ডারি! খুব মন দিয়ে লেখাপড়া করিস। অন্তত তোদের নিয়ে আমি যেন একদিন গর্ব করতে পারি। যেমন কথায় আছে – A man is known by his associates. 
     পরক্ষণেই হয়তো নিজের কথা ভেবে কেমন যেন বিবর্ণ ফ্যাকাশে হয়ে গিয়েছিল কিছুক্ষণের জন্যে। বেশ কিছুক্ষণ নীরবতার পরে নিজেই এক সময় বলেছিল – তোরা কি সুন্দর ভাবে পাশ করে এক একজন বিদ্যাসাগর হয়ে বেরোবি। শুধু আমিই পারলাম না। শুয়োরের বাচ্চাটা সেদিন তুচ্ছ কারণে আমায় স্কুল থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিল। আমি নেহাত গরীব কিনা তাই পার পেয়ে গেল ব্যাটাচ্ছেলে। আমার হয়ে প্রতিবাদ করার লোক ছিল না তাই বেঁচে গিয়েছিল। দেখবি তোদের গায়ে কেউ আঁচড় পর্যন্ত লাগাতে পারবে না। তোদের টাকার জোড় আছে লোকবলও আছে। মরবে শুধু আমার মতো ছেলেরা, যাদের কিছুই নেই, চির নিঃস্ব। কথার শেষে পরিহাস ছলে  বলেছিল – পাশের মিষ্টি খাওয়াবি কবে?  
     স্থির হয়েছিল একদিন ওকে সঙ্গে নিয়ে সরোজিনী নগর মাকের্টে কোন রেস্তোরায় ঢুকে ওর পছন্দ মতো খাবার খাওয়ানোর। সেই ইচ্ছা পূরণ করার হেতু তাঁরা আগাম তৈরী হয়েই এসেছিল।  আশা করেছিল হিমাংশুকে সঙ্গে পেয়ে ওরা সকলে মিলে খুব আনন্দ করবে, নিজেদের সুখ-দুঃখের কথা আদান-প্রদান করবে। কিন্তু হায়! তাঁর কর্মস্থলে খোঁজ নিয়ে জানা গেল যে গত দু’দিন আগেই নাকি সে অন্যত্র বদলি হয়ে গিয়েছে।  
     আজ এতদিন পরে ওর সঙ্গে দ্বিতীয়বার দেখা। হারিয়ে যাওয়া পুরনো মনের মানুষকে খুঁজে পেলে কার না ভালো লাগে? কিন্তু অঙ্কন আজ একান্তই নিরুপায়। সেই সময় হিমাংশুকে চুরি করে দেখা ছাড়া দ্বিতীয় কোন বিকল্প ছিল না তাঁর কাছে। ওর সঙ্গে দুটো কথা বলার জন্যে মনটা উতলা হয়ে উঠেছিল অথচ কথা বলতে সাহস হচ্ছিল না।  লক্ষণ গন্ডির ওপারে গেলেই যে বিষম বিপদ। অঙ্কন কিংকর্তব্যবিমূঢ়।  উভয় সঙ্কটে ভূগছিল সে।  তবু হাল ছেড়ে বসে থাকেনি।  সুযোগের অপেক্ষায় ছিল।  কয়েক মূহুর্তের জন্যে হলেও সে একবার অন্ততঃ হিমাংশুর সাথে কথা বলতে চায়। হিমাংশু ওকে চিনতে পেরেছে কিনা সেটা জানার জন্যে ভীষণ কৌতূহল হচ্ছিল।  
     বাঁদিকে স্বামী মালাই মন্দির আর পুঁজিবাদিদের আবাস স্থল বসন্ত বিহারকে ডানদিকে রেখে বাসটা মোড় ঘোরে। তারপর ওই রাস্তা ধরে সোজা এগিয়ে গেলেই আই.আই.টি. হোস্টেল। অঙ্কনের গন্তব্য স্থল। অঙ্কনকে সেখানেই নেমে যেতে হবে। বাসটা ক্রমশঃ জনশূন্য হয়ে যাচ্ছে। হোস্টেল নিকটবর্তী হতেই অঙ্কন সঙ্গী দু’জনকে সামনের দরজা দিয়ে নামতে বলে। তারপর মিথ্যে অজুহাত দিয়ে বলে– তোরা এগিয়ে যা আমি বাকি পাওনাটা নিয়ে আসছি। আসল কথা ওদের চোখের আড়ালে হিমাংশুর সাথে কয়েকটা কথা বলার ইচ্ছে। ওরা এগিয়ে গেলে অঙ্কন সুযোগ মতো এক সময় নিজের অবদমিত ইচ্ছেটা প্রকাশ করে – আমায় চিনতে পারলি হিমাংশু?

হ্যাঁ খুব পেরেছি। চোখে চোখ রেখে হিমাংশু সটান প্রশ্ন করে – তুই অঙ্কন না?

তাহলে কথা না বলে এতক্ষণ চুপ করেছিলি কেন?  অঙ্কন জানায় – আমি কিন্তু তোকে অনেকক্ষণ ধরে লক্ষ্য করছিলাম। 

কথা বললেই জবাব দিতাম। হিমাংশু আরো বলে - তুই চুপ করে ছিলি কেন?

     অঙ্কন নিরুত্তর। হিমাংশু তাঁর দুর্বলতার কথা টের পেয়ে গিয়েছে মনে করে সে অন্য প্রসঙ্গে চলে যায়– কোথায় থাকিস আজকাল?

থাকি অনেক দূরে যমুনার পারে শাহদারা। এবার পাল্টা প্রশ্ন – তুই থাকিস কোথায়?

আই.আই.টি. হোস্টেল। কথাটা জানাতে পেরে মনটা বেশ হাল্কা লাগছিল। মূহুর্তে খুশির ভাব ছড়িয়ে পড়েছিল অবয়বে। এমন একটা অসম্ভব খবর জানাতে না পারলে বুঝি নিজের কাছেই অপরাধী হয়ে থাকতে হতো সারাটা জীবন। বোধহয় নিজেকে কখনো ক্ষমা পর্যন্ত করা যেত না।

সময় সুযোগ করে একবার চলে আয় না আমার বাস ডিপো হাউস কাজীতে। গল্প করা যাবে। হিমাংশু এরপর একটু উচ্ছসিত হয়ে বললে – তোর হোস্টেল থেকে আমার ডিপো তো খুব কাছেই।

     অঙ্কন তাঁর সহজ সরল আহ্বানে স্বীকৃতি দিতে পারেনি মিথ্যে অহমিকার দরুন। ভাবলেশ হীন হয়ে কিছুক্ষণ চিত্রার্পিতের ন্যায় দাঁড়িয়ে থাকে। হিমাংশুর মতো সে উদাত্ত স্বরে বলতে পারেনি - তুই আয় না একদিন আমার হোস্টেলে। কি জানি বললে পরে সে যদি সত্যি সত্যি চলে আসে। তাহলে বাকি বন্ধুদের কাছে কি পরিচয় দেবে? লজ্জায় নাক কাটা যাবে যে! সগর্বে বলতে পারবে কি হিমাংশু তাঁর এককালীন স্কুলের সহপাঠী! 

     অঙ্কন এক সময় বাস থেকে নেমে পড়ে। সেই সঙ্গে একরাশ ধূলো উড়িয়ে বাস দ্রুত গতিতে এগিয়ে যায়।
আকারে ইঙ্গিতে বোধহয় অঙ্কনকে এটাই বোঝাতে চাইছিল– খ্যাতি, মান, যশ আর প্রতিপত্তির তুলনায় এই জীবনের কোন সম্পর্কই শ্রেয় নয়। চলার পথে সময় বিশেষে তাৎপর্য হীন কিছু অস্থায়ী সম্পর্ক ধূলোর মতো উড়িয়ে দেওয়াটাই সমীচীন। 

অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়
দিল্লী, ভারত