ভবের হাটে - বাবুল আহমদ
ভবের হাট মেইন রোডের দক্ষিণ পাশে। উত্তর পাশে খোলা চারণ ভূমি আর তির তির করে বয়ে চলা সতীনের খাল। সতীনের খাল বর্ষায় টইটম্বুর। শীতকালেও কিছু পানি থাকে। হাটটির নাম ভবের হাট কেন কিম্বা খালটির নাম সতীনের খাল কেন এ নিয়ে মনে নানা প্রশ্ন আসে কিন্তু কোনো উত্তর খুঁজে পায় না হারাধন। কাউকে জিজ্ঞেস করে জেনে নেয়ার মতো বুদ্ধি তার মাথায় নেই।
সে একটি ফর্দ নিয়ে বাজারে এসেছে। সংসারের সব প্রয়োজনীয় জিনিসের নাম লিখা তালিকাটি বুক পকেটে ঢুকিয়ে দিয়ে বউঠাকুরন বলে দিয়েছেন, যদি ভুলে যাস তাহলে ফর্দটা বের করে দোকানীকে দেখাবি- সে’ই বলে দিবে। হারাধন ঘাড় কাত করে বুঝিয়েছিল, যা বলেছ সব মনে থাকবে।
বেলা দ্বিপ্রহর থেকেই গ্রামের হাটে দোকানীরা পসরা সাজাতে শুরু করে। নানান রকম পণ্য। তাতে আবার ভাগ আছে। একেক জায়গায় একেক রকম পণ্য সাজানো। মেছপট্টি আর পসারীপট্টিতে মাথার উপর ছাদ আছে। সব্জি’অলারা বসে খোলা আকাশের নীচে। নানা রকম খাবার জিনিস, গৃহ সাজানোর জিনিস, মুড়ি মুড়কি বাতাসা সব একদিকে। হাটের নিয়মিত দোকানীরা মাথার উপর ছাদ পায়। হারাধন ঘুরে ঘুরে এইসব দেখে। যত দেখে তত অবাক হয়। তার চোখে সবই নতুন লাগে। একে একে শূণ্য জায়গাগুলো ভরে ওঠে। বাজার জমে যায়।
হাটে ওর মত আরও অনেক কিশোর আসে। যুবক আসে। পৌড় আর বৃদ্ধরাও আসে। যে যার প্রয়োজনে আসে। কিশোররা আসে ঘুরে ঘুরে হাটের বিচিত্র জিনিস দেখতে আর হাতের আদুলী ভাঙ্গিয়ে মোয়া খৈ বাতাসা কিনে খেতে। যুবকরা আসে বাবু সেজে। তাদের মাথায় সুগন্ধি তেল মেখে, মহিষের শিংয়ে বানানো কাকই দিয়ে চুল পরিপাটি করে- পরিষ্কার জামা কাপড় পরে, পায়ে হাওয়াই স্যান্ডেল চাপিয়ে। তারা হাটের বাইরে বসে চা পান করে, বিড়ি ফুকে আর বেদেনীদের কাছে সিঙ্গা লাগানোর উাসিলায় ভেল্কী দেখে।
হারাধনের শখ হয় সে নাগর দোলায় চড়ে। লাল নীল হলুদ বেলুনে খেলনা বন্দুক দিয়ে নিশানা স্থির করে। মাটিতে পাতা কাঠের বোর্ডে গোল চাকতি ছোঁড়ে ভাগ্য পরীক্ষা করে। এভাবে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসে। আলোর অভাবে সব তামশাঅলারা তাদের শতরঞ্জি গুছিয়ে নেয়। হাট জমে উঠেছে। সবাই কেনা বেচায় ব্যস্ত। হারাধন বুক পকেটে হাত দিয়ে ফর্দটি অনুভব করে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে রাত হয়। সবাই কেনাকাটা করে ফিরছে। হারাধনের বাড়ি ফেরার তাগিদ নেই। তার পকেট শূণ্য।
বাবুল আহমদ। সিলেট
-
গল্প//উপন্যাস
-
24-08-2022
-
-