অটোয়া, বুধবার ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
আমি যে মন দিয়েছি তোমায় - সুনির্মল বসু

চাইবাসা থেকে সারেন্ডার জঙ্গল। 
উঁচু-নিচু খাড়াই পথ। সবুজ জঙ্গল। দূরে পাহাড়ের মাথা ছুঁয়ে থাকা আকাশ। টিলা পাহাড়, মাথার ওপরে গাঢ় নীল আকাশ, মাঝখানে পাহাড় ঘেরা স্রোতস্বিনী। 
দূরে এক ঝাঁক চাহা, ধোবিন আর বুনোহাঁস, আকাশে অ্যালবারটস পাখির ওড়াউড়ি।
দীপ্তিমান আর মধুরিমা নৌকো করে ওপার থেকে এপারে চলে এসেছিল। কতদিন এমন মনোরম সৌন্দর্য দেখা হয়নি। কলকাতা থেকে এখানে কদিনের জন্য বেড়াতে এসেছে ওরা। শহরে জীবন যেন হাঁফিয়ে উঠেছিল। শুধু কাজ আর কাজ। দীপ্তিমান বলল, তোমার ভালো লাগছে তো,
এক ঝলক ওর দিকে তাকিয়ে মধুরিমা বলল, দারুন,
আমারও খুব ভালো লাগছে,
এত নীল আমি কোথাও দেখিনি,
সময় এখানে থমকে থেমেছে,
শহরে আর ফিরতে ইচ্ছে করছে না,
তাহলে এখানেই থেকে যাই,
চাকরি-বাকরির কি হবে,
তাইতো,
মানুষের হাত-পা বাঁধা,
না চাইলেও, বেঁচে থাকার জন্য কাজ করতে হবে,
তুমি কিন্তু এখানে লেখার সাবজেক্ট পেলে,
হ্যাঁ, লিখব তো, ডায়েরিতে নোট করে নিয়েছি,
ছবি তুলবে না,
তুলবো, তবে মনে মনে অনেক ছবি তুলে নিয়েছি,
পৃথিবীটা বড় সুন্দর, তাই না,
হ্যাঁতো,
এমন আকাশ, এমন নীল জলের সমারোহ, এমন পাখপাখালির ডাক, প্রজাপতির ওড়াউড়ি, যেন চোখের সামনে চিরকালের ছবি হয়ে গেল,
এখানে কত মানুষ এসেছে, চলে গেছে,
আমরাও একদিন চলে যাবো,
এই জায়গাটা এমনই থাকবে,
সৌন্দর্যের মৃত্যু হয় না,
শুধু দেখবার মতো চোখ থাকলেই হোল,
আমাদের চোখ দুটো যেন জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত
এভাবেই সৌন্দর্য দেখার মত থাকে,
যেন দুচোখ ভরে এই সৌন্দর্য চিরদিন দেখে যেতে
পারি,
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে হয়ে আসছিল।
ওরা নৌকা থেকে নেমে এপারে এলো। হোটেলে ফিরতে হবে।
পেছন থেকে কে যেন ডাকলো, দীপ্তিমান,
তাকিয়ে দ্যাখে, অনুরাধা। দীপ্তিমানের কলেজ জীবনের বান্ধবী। সঙ্গে ওর স্বামী।
অনুরাধা বলল, আলাপ করিয়ে দিই, আমার হাজব্যান্ড বিভাস, আর বিভাস, আমার কলেজ লাইফের বন্ধু দীপ্তিমান।
বিভাস ও দীপ্তিমান সৌজন্য নমস্কার বিনিময় করে।
মধুরিমার সঙ্গে অনুরাধার আলাপ হয়।
অনুরাধা বলে, দীপ্তিমান আর আমি অফ পিরিওডে লাইব্রেরীতে বসে গ্যাজাতাম।
বিভাস হাসে, মধুরিমা অবাক চোখে তাকায়।
দীপ্তিমান বলে, অনুরাধা, তোরা দুজন একদিন কলকাতায় আমাদের ফ্ল্যাটে আয় না, আমরা বাঁশদ্রোণীতে থাকি।
বিভাস বলে, আমরা বেহালায়। আসুন, দুজনে একদিন।
আসবো, কথা দিলাম।
ওরা চলে যায়।
দীপ্তিমান মধুরিমাকে বলে, কেমন লাগলো আমার বান্ধবীকে,
ভালো,
আর কিছু বলবে না,
কি আর বলবো,
আমার জন্য এক সময় ব্যাকুল ছিল অনুরাধা,
হোতে পারে,
অথচ ,এখন বরকে নিয়ে যেন কত সুখী,
মধুরিমা জবাব দিল না।
ততক্ষণে আকাশ জুড়ে মেঘ করেছে। ঝড় বৃষ্টি আসবে মনে হয়। ওরা দ্রুত হোটেলের দিকে ফিরে আসছিল।
মধুরিমার কেবলই মনে হচ্ছিল, কি জানি কেন, সুন্দর বিকেলটা মাটি হয়ে গেল। কোথা থেকে এক অজানা মেঘ এসে সৌন্দর্যের ছবিটা যেন ছিঁড়ে দিয়ে গেল।
দীপ্তিমান বলল, অনুরাধার সঙ্গে দেখা হয়ে খুব ভালো লাগলো। কতদিন পর দেখা, কতদিন।
মধুরিমার কিছুই ভালো লাগছিলো না। ওর চোখে তখন জল। এক বুক কান্না চোখের জল হয়ে নেমে এলো।
বৃষ্টি শুরু হয়েছিল। তাই দীপ্তিমান মধুরিমার চোখের জল দেখতে পেল না।

সুনির্মল বসু
নবপল্লী, বাটানগর, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা
কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ