প্রেমহীন-প্রেমপত্র - অশুদ্ধ আচার্য্য
রজনী,
রাত এখন গভীর!
একটু আগেই দূরে কোথা থেকে যেন
রাত দুটো বাজার ঘন্টাধনি কানে এলো;
মন বলছে তুমি এখনো ঘুমাওনি,
শোভন-কোমল বিছানায় শুয়ে
কেবল এপাশ-ওপাশ করছো!
ঘুম না আসার কষ্টটা আমি বুঝি -
কষ্টের মিছিল যখন
হৃৎপিণ্ডের প্রকোষ্ঠগুলি চেপে ধরে -
মস্তিষ্কের নিউরনে প্রচন্ড ঝড় তোলে -
তখন ঘুমের কোলে আশ্রয় নিয়ে
দু’দন্ডের তরে হলেও
মানুষ শান্তি খোঁজে!
আজ কতটা বছর পর কেন জানি
তোমাকে লিখতে খুব ইচ্ছে হলো -
যখন লিখতে শুরু করলাম -
ভাবলাম তোমাকে কী বলে
সম্বোধন করি -
প্রেয়সী, প্রিয়তমা, প্রিয়া -
না কোনটাই যুৎসই মনে হলো না –
এসবতো একজন প্রেমিকার প্রতি
একজন প্রেমিকের সম্বোধন -
তুমিতো আর আমার প্রেমিকা নও!
শেষে শুধু "রজনী"টাই বেছে নিলাম!
তবে অস্বীকার করবো কী করে -
এক সময়তো তুমি শুধু -
আমার রজনীই ছিলে না -
ছিলে আমার "রজনীগন্ধা"!
আজ বলতে দ্বিধা নেই -
সে সময়টায় তুমি
কী অবলীলায়
এক মদির সুবাসে
আমার জীবনটা সুবাসিত করেছিলে!
এক সময় তুমিতো রজনীগন্ধার মতোই
আমার জীবনে গন্ধ ছড়িয়েছিল -
সেই গন্ধ এক সময়
আমাকে উন্মাতাল করে দিতো -
আমি পাগলের মতো
সেই গন্ধ ছুঁতে চাইতাম -
এমন সুবাস যদি শেষ হয়ে যায়
এই ভেবে ভেবে
আমি বুকভরে সারাক্ষণ এই সুবাস নিতাম -
সারাজীবন ভর ফুসফুসে
জমিয়ে রাখবো বলে!
কিন্তু কই - শেষরক্ষা হলো কই!!
থাকগে সেই কথা -
জীবনেতো একদিন সবকিছুই হারিয়ে যায় -
তা বলবে কি একটু -
তুমি কেমন আছো?
আজ কেন জানি জানতে মন চাইছে -
এখনো কি তুমি তোমাদের দোতালার
দখিনের বারান্দায় বসে
শরতের ভরা-পূর্ণিমা রাতে
চাঁদের সাথে খেলা কর,
তোমাদের খোলা ছাদে
রবি ঠাকুরের "মন মোর মেঘের সঙ্গী ….”
গানটার সাথে দুবাহু মেলে মন খোলে নাচো ,
তোমাদের বাড়ির কামরাঙ্গা গাছটার সাথে
আগের মতোই মিতালী করো।
জানতে ইচ্ছে করছে এখনো কি তুমি -
হেমন্তে র দূর্বাঘাস থেকে শিশির কণা এনে
তোমার নরম তুলতুলে ঠোঁটে মাখো -
মন খারাপ হলে একা হাঁটতে হাঁটতে
ওই দূরের নামহীন পাহাড়টায় চলে যাও!
দেখো দেখি কেমন আনমনা হয়ে
কী সব ছাই-ভস্ম লিখছি!
তোমার কি মনে আছে -
অনেক দিন আগে তুমি
একটা চিঠি দিয়েছিলে -
চিঠিটার উত্তর দিয়েছিলাম কিনা মনে নেই -
পুরানো কাগজ ঘাঁটতে গিয়ে
আজ হঠাৎ করেই চিঠিটা খুঁজে পেলাম -
তুমি জানতে চেয়েছিলে
আমি কোথায় কেমন আছি -
সেকথা আজ একটু করে বলি -
বহু বছর আগে একদিন হঠাৎ করে
সব কিছু ছেড়ে-ছুঁড়ে
চলে এসেছিলাম পৃথিবীর এক প্রান্ত সীমায়
সুখের সন্ধানে -
হয়তো জানতে চাইবে -
সুখের সন্ধান পেয়েছি কিনা -
উত্তরে বলি –
সুখ পেয়েছি কিনা জানিনে;
তবে সুখের সংজ্ঞা খুঁজতে খুঁজতেইযে
জীবন প্রায় কেটে গেল!
এখনো জানিনা সুখ কাকে বলে -
তাই সুখ খুঁজে পেলাম কিনা
সেই উত্তরটাও ঠিক দিতে পারলাম না !
তবে তোমাকে এই টুকু বলি -
আর সবার মতোই
দিন আমার কোন এক রকম করে
কেটেই যাচ্ছে –
জানো আজ বলতে ইচ্ছে করছে -
মাঝে মাঝে ভাবি
তোমার আর আমার মাঝে এখন
সাত-সমুদ্রের ব্যবধান -
তুমি যখন গ্রীষ্মের খরতাপে অতিষ্ঠ হয়ে
রাত্রির বুকে প্রশান্তি খোঁজ -
আমি তখন এখানে আলোর সাথে
দিন-রাত্রি খেলা করি!
তুমি যখন শীতের সোনা-রোদ গায়ে মেখে
স্বর্গের আবেশ অনুভব করো -
আমি তখন এখানে -
বুক-ভরা বরফের ভারে ভারাক্রান্ত
সাগরের কান্না শুনি!
তোমার জীবনে এখনো যখন -
গ্রীষ্ম-বর্ষা-শরৎ-হেমন্ত-শীত- বসন্ত খেলা করে -
আমার এখানে শীত আর বসন্ত
সারাক্ষণ আমাকে ভালবাসায় জড়িয়ে রাখে!
তুমি যখন সেখানে
গাছেদের সাথে মিতালী করো -
আমি তখন এখানে
পাথরের সাথে সখ্য গড়ার চেষ্টা করি!
চিঠিটা লম্বা হয়ে যাচ্ছে -
শেষে হয়তো সবটা না পড়েই ফেলে রাখবে -
তাই শেষ করার আগে শেষ কথাটা
বলে নিই -
আজ তোমাকে লিখতে বসে মনে একটা কথা
বার বার উঁকি দিচ্ছে -
এক সময়েতো আমরা
দুজনেই দুজনার খুব কাছের ছিলাম -
তবু কেন এমন হলো!
এর একটা উত্তরও বোধ হয় -
আমি খুঁজে পেয়েছি !
স্থুল অর্থেই একজন মানুষ যখন
আর এক জন মানুষের খুব কাছে আসে -
তাঁকে আলিঙ্গন করবে বলে -
তখন তাঁকে যেমন আলিঙ্গন করতে পারে -
তেমনি তাঁর কাছ থেকেও -
আলিঙ্গন পেতে পারে!
আবার দুজন এতো কাছাকাছি এলে -
যেমন আলিঙ্গন করা যায় -
তেমনি আবার একে অপরকে
আঘাতও করা যায়!
আবার একে বিমূর্ত অর্থেও বিশ্লেষণ করা যায় -
আমরা একজন আর একজনের -
খুব কাছাকাছি এলে
যেমন একে অপরের মনকে
আশার আলোয় আলোকিত করতে পারি -
তেমনি আবার একে অপরের জীবনটা
বেদনার বিষ-বাষ্পেও ভরে দিতে পারি !!
তোমার আমার ক্ষেত্রে
কোনটা সত্যি হয়ে দেখা দিয়েছিলো -
সেটা বোধ করি আজ এখানে
না বলাই শ্রেয়!
এখন তবে
এখানেই শেষ করলাম !
সবার উপরে এটাইতো সত্যি -
আমাদের জীবনে সব কিছুইতো আপাতঃবিরোধী -
[After all life is a paradox]
“ভালো থেকো” এটা হয়তো
আমার জন্য বলা শোভন হবে না –
তবে এইটুকু নিশ্চয়ই বলবো -
তবুও একটু হলেও শুভেচ্ছা নিও!!
ইতি - অযাচিত
………………………………
অশুদ্ধ আচার্য্য
নভেম্বর ১০, ২০২২ সাল,
ইকালুইট, নুনাভুট, ক্যানাডা
-
ছড়া ও কবিতা
-
17-11-2022
-
-