অটোয়া, রবিবার ৬ এপ্রিল, ২০২৫
প্রেমহীন-প্রেমপত্র - অশুদ্ধ আচার্য্য

জনী,
রাত এখন গভীর! 
একটু আগেই দূরে কোথা থেকে যেন 
রাত দুটো বাজার ঘন্টাধনি কানে এলো; 
মন বলছে তুমি এখনো ঘুমাওনি, 
শোভন-কোমল বিছানায় শুয়ে 
কেবল এপাশ-ওপাশ করছো!
ঘুম না আসার কষ্টটা আমি বুঝি - 
কষ্টের মিছিল যখন 
হৃৎপিণ্ডের প্রকোষ্ঠগুলি চেপে ধরে -
মস্তিষ্কের নিউরনে প্রচন্ড ঝড় তোলে -
তখন ঘুমের কোলে আশ্রয় নিয়ে 
দু’দন্ডের তরে হলেও
মানুষ শান্তি খোঁজে!   

আজ কতটা বছর পর কেন জানি 
তোমাকে লিখতে খুব ইচ্ছে হলো -
যখন লিখতে শুরু করলাম -
ভাবলাম তোমাকে কী বলে 
সম্বোধন করি -
প্রেয়সী, প্রিয়তমা, প্রিয়া -
না কোনটাই যুৎসই মনে হলো না –
এসবতো একজন প্রেমিকার প্রতি 
একজন প্রেমিকের সম্বোধন -
তুমিতো আর আমার প্রেমিকা নও!
শেষে শুধু "রজনী"টাই বেছে নিলাম!
তবে অস্বীকার করবো কী করে -
এক সময়তো তুমি শুধু -
আমার রজনীই ছিলে না -
ছিলে আমার "রজনীগন্ধা"!
আজ বলতে দ্বিধা নেই -
সে সময়টায় তুমি
কী অবলীলায়
এক মদির সুবাসে 
আমার জীবনটা সুবাসিত করেছিলে! 
এক সময় তুমিতো রজনীগন্ধার মতোই 
আমার জীবনে গন্ধ ছড়িয়েছিল -
সেই গন্ধ এক সময়
আমাকে উন্মাতাল করে দিতো -
আমি পাগলের মতো 
সেই গন্ধ ছুঁতে চাইতাম -
এমন সুবাস যদি শেষ হয়ে যায় 
এই ভেবে ভেবে 
আমি বুকভরে সারাক্ষণ এই সুবাস নিতাম -
সারাজীবন ভর ফুসফুসে 
জমিয়ে রাখবো বলে!
কিন্তু কই - শেষরক্ষা হলো কই!!

থাকগে সেই কথা -
জীবনেতো একদিন সবকিছুই হারিয়ে যায় -
তা বলবে কি একটু -
তুমি কেমন আছো?
আজ কেন জানি জানতে মন চাইছে  -
এখনো কি তুমি তোমাদের দোতালার
দখিনের বারান্দায় বসে 
শরতের ভরা-পূর্ণিমা রাতে
চাঁদের সাথে খেলা কর,
তোমাদের খোলা ছাদে
রবি ঠাকুরের "মন মোর মেঘের সঙ্গী ….”
গানটার সাথে দুবাহু মেলে মন খোলে নাচো ,
তোমাদের বাড়ির কামরাঙ্গা গাছটার সাথে 
আগের মতোই মিতালী করো।
জানতে ইচ্ছে করছে এখনো কি তুমি -
হেমন্তে র দূর্বাঘাস থেকে শিশির কণা এনে 
তোমার নরম তুলতুলে ঠোঁটে মাখো -
মন খারাপ হলে একা হাঁটতে হাঁটতে 
ওই দূরের নামহীন পাহাড়টায় চলে যাও!

দেখো দেখি কেমন আনমনা হয়ে
কী সব ছাই-ভস্ম লিখছি!
তোমার কি মনে আছে -
অনেক দিন আগে তুমি 
একটা চিঠি দিয়েছিলে -
চিঠিটার উত্তর দিয়েছিলাম কিনা মনে নেই -
পুরানো কাগজ ঘাঁটতে গিয়ে 
আজ হঠাৎ করেই চিঠিটা খুঁজে পেলাম -
তুমি জানতে চেয়েছিলে 
আমি কোথায় কেমন আছি -
সেকথা আজ একটু করে বলি -
বহু বছর আগে একদিন হঠাৎ করে 
সব কিছু ছেড়ে-ছুঁড়ে 
চলে এসেছিলাম পৃথিবীর এক প্রান্ত সীমায় 
সুখের সন্ধানে -
হয়তো জানতে চাইবে -
সুখের সন্ধান পেয়েছি কিনা -
উত্তরে বলি –
সুখ পেয়েছি কিনা জানিনে;  
তবে সুখের সংজ্ঞা খুঁজতে খুঁজতেইযে  
জীবন প্রায় কেটে গেল!
এখনো জানিনা সুখ কাকে বলে -
তাই সুখ খুঁজে পেলাম কিনা 
সেই উত্তরটাও ঠিক দিতে পারলাম না !

তবে তোমাকে এই টুকু বলি - 
আর সবার মতোই
দিন আমার কোন এক রকম করে 
কেটেই যাচ্ছে –

জানো আজ বলতে ইচ্ছে করছে -
মাঝে মাঝে ভাবি 
তোমার আর আমার মাঝে এখন 
সাত-সমুদ্রের ব্যবধান -
তুমি যখন গ্রীষ্মের খরতাপে অতিষ্ঠ হয়ে 
রাত্রির বুকে প্রশান্তি খোঁজ -
আমি তখন এখানে আলোর সাথে 
দিন-রাত্রি খেলা করি!
তুমি যখন শীতের সোনা-রোদ গায়ে মেখে 
স্বর্গের আবেশ অনুভব করো -
আমি তখন এখানে -
বুক-ভরা বরফের ভারে ভারাক্রান্ত  
সাগরের কান্না শুনি!
তোমার জীবনে এখনো যখন -
গ্রীষ্ম-বর্ষা-শরৎ-হেমন্ত-শীত- বসন্ত খেলা করে  - 
আমার এখানে শীত আর বসন্ত 
সারাক্ষণ আমাকে ভালবাসায় জড়িয়ে রাখে!
তুমি যখন সেখানে 
গাছেদের সাথে মিতালী করো - 
আমি তখন এখানে 
পাথরের সাথে সখ্য গড়ার চেষ্টা করি!

চিঠিটা লম্বা হয়ে যাচ্ছে -
শেষে হয়তো সবটা না পড়েই ফেলে রাখবে -
তাই শেষ করার আগে শেষ কথাটা 
বলে নিই - 
আজ তোমাকে লিখতে বসে মনে একটা কথা 
বার বার উঁকি দিচ্ছে -
এক সময়েতো আমরা 
দুজনেই দুজনার খুব কাছের ছিলাম -
তবু কেন এমন হলো!
এর একটা উত্তরও বোধ হয় -
আমি খুঁজে পেয়েছি !
স্থুল অর্থেই একজন মানুষ যখন  
আর এক জন মানুষের খুব কাছে আসে -
তাঁকে আলিঙ্গন করবে বলে -
তখন তাঁকে যেমন আলিঙ্গন করতে পারে -
তেমনি তাঁর কাছ থেকেও -
আলিঙ্গন পেতে পারে!
আবার দুজন এতো কাছাকাছি এলে -
যেমন আলিঙ্গন করা যায় -
তেমনি আবার একে অপরকে 
আঘাতও করা যায়!

আবার একে বিমূর্ত অর্থেও বিশ্লেষণ করা যায় -
আমরা একজন আর একজনের -
খুব কাছাকাছি এলে 
যেমন একে অপরের মনকে 
আশার আলোয় আলোকিত করতে পারি -   
তেমনি আবার একে অপরের জীবনটা 
বেদনার বিষ-বাষ্পেও ভরে দিতে পারি !!
তোমার আমার ক্ষেত্রে 
কোনটা সত্যি হয়ে দেখা দিয়েছিলো -
সেটা বোধ করি আজ এখানে 
না বলাই শ্রেয়! 

এখন তবে 
এখানেই শেষ করলাম !
সবার উপরে এটাইতো সত্যি - 
আমাদের জীবনে সব কিছুইতো আপাতঃবিরোধী -
[After all life is a paradox]

“ভালো থেকো” এটা হয়তো 
আমার জন্য বলা শোভন হবে না –
তবে এইটুকু নিশ্চয়ই বলবো -
তবুও একটু হলেও শুভেচ্ছা নিও!!
ইতি - অযাচিত
………………………………

অশুদ্ধ আচার্য্য
নভেম্বর ১০, ২০২২ সাল, 
ইকালুইট, নুনাভুট, ক্যানাডা