কবিতা - গোলাম কবির
কবিতা মানে
কবিতা মানেই
হৃদয়ের ক্ষত গুলো চুলকিয়ে বাড়ানো,
কবিতা মানে
অনেক না বলা কষ্টের সুনিপুণ অনুবাদ।
কবিতা মানেই
তোমার সাথে আমার সম্পর্কের ব্যবচ্ছেদ
গুলো তুলে ধরা অক্ষরের মালায়,
কবিতা মানে
ভালোবাসার পাল তোলা নৌকা
ভাসানো গহীন সাগরে।
কবিতা মানেই
শব্দ শিল্পের বর্ণিল কারুকাজ,
কবিতা মানে মানুষের ভিতরের
মানুষকে জাগিয়ে তোলা।
কবিতা মানেই
ইঁটের নিচে চাপা পড়ে থাকা হলুদ ঘাসের
কষ্ট গুলো প্রেস কনফারেন্সে বলে দেয়া।
কবিতা মানে
কবির নির্ঘুম একলা রাতের
কষ্ট গুলো বর্ণমালায় উঠে আসা।
কবিতা মানেই
গন্ধবণিকের মতো প্রেম ও ভালোবাসার
সুবাস ছড়িয়ে দেয়া পৃথিবীর সবখানে,
কবিতা মানে
জীবনের সব ভুল গুলো
ফুলে রূপান্তর করা।
কবিতা মানেই
মানবতাবোধ এবং কাঁটাতারের সীমান্ত
ভেঙে মুক্তস্বাধীন পৃথিবীর স্বপ্নের ফেরি করা,
কবিতা মানে
আমার যতো অভিমানের মেঘ সরিয়ে
তোমার কাছে পৌঁছে যাবার নিরন্তর সাধনা।
কবিতা মানেই
হাজার বছরের পুরনো মৃত নদীর
দীর্ঘশ্বাস বুকে ধারণ করা,
কবিতা মানে
আল মাহমুদের মক্তবে পড়া
চুল খোলা বালিকা আয়েশা আখতার।
কবিতা মানেই
পৃথিবীর বুকে ঘটে যাওয়া
যতো অন্যায়ের বিরুদ্ধে রক্তপাত হীন
কলম যুদ্ধে নেমে পড়া,
কবিতা মানে
এক পাহাড় সমান অভিমানের
বরফ গলা নদী।
কবিতা মানেই
কবিতা লিখার জন্য ব্যর্থতায়
কবির অগণন উন্নিদ্র রাতের অশ্রুজল,
কবিতা মানে
দেবশিশু তুল্য অক্ষরের এক বিশাল সমাবেশ।
নদী একান্ত আমারই প্রেমিকা
এখন হঠাৎ করেই কারো
দুর্দান্ত ছবি দেখে কিংবা ধরো
কারো পাখির নীড়ের মতো
বনলতা সেন মার্কা চোখে
আলোর নাচন দেখে
কিংবা কারো টোল পড়া গালের
মুচকি হাসিকে মোনালিসার হাসি
ভেবে ভ্রম করে এমনকি কারো
কাঁচের চুড়ির রিনিঝিনি শব্দের
সুরেলা হাসির শব্দ পেয়ে
বিমুগ্ধতায় অথবা কারো ভীষণ
বাকপটুতায় মুগ্ধ হয়ে হুট করে
ভালোবেসে প্রেমে পড়ে যাবার
বয়স পেরিয়ে এসেছি, তাও সে
বলতে পারো বহু বছর হবে!
কিন্তু বিশ্বাস করো -
নদী যখন আমায় ডাকে তখন
নদীর আমন্ত্রণ উপেক্ষা করার
দূঃসাহস আমার হয়নি কখনো!
কী একটা নেশারঝোঁক
চেপে বসে মাথায়,
আমি তখন একদমই
ছুটে যাই নদীর কাছে!
এক ভীষণ মায়ার টানে আমাকে
চুম্বকের মতো আকর্ষণ করে সে ;
যে সেটা কোনো দিন নাকি রাত,
গরম কী শীত না কোনো বৃষ্টিভেজা দিনের
সকাল না মধ্যদুপুর এসব কোনো কিছুই
আমার খেয়ালে আসে না!
তারপর তখন বয়সটা কী
কিশোরবেলার নাকি যৌবনের কিংবা
প্রৌঢ়ত্বের সময়কালের ওসব কিছুও
আমার মাথায় একদমই ঢোকে না।
ও যখনই আমায় ডাকে তখন
কি একটা ভীষণ এবং প্রলয়ঙ্করী
নেশারঝোঁক চেপে বসে মাথায়,
আমি তখন একদমই নিতান্ত
ছেলেমানুষের মতো
ছুটে যাই নদীর কাছে!
নিজেকে তখন আর আঁটকে
রাখতে পারি না ইঁট পাথরের
চার দেয়ালের খাঁচায় বন্দী জীবনে,
খাঁচা ভেঙে উড়াল দেয়া পাখির মতো
মনের সুখে নদীতে দিই এক ডুব,
কখনো ওর নরম বুকে সাঁতার কাটি
মনের হরষে বিষাদে,
কখনো নদীর পাশে বসে
আপন মনেই একা একা কথা বলি,
গান গাই এবং আরো কতো রকমের
যে ছেলেমানুষি করে বসি
তার কোনো শেষ নেই!
তাই কখনো কখনো মনেহয়
নদী একান্ত আমারই প্রেমিকা!
এই তো আমার কথা শুনে
আমাকে পাগল ভেবে হেসে ফেললে!
তারপরও আমার কিন্তু অনেক সময়
তাই মনেহয়, মনেহয় -
নদী আমার, একান্ত আমারই প্রেমিকা।
গোলাম কবির
মোহাম্মদপুর, ঢাকা
-
ছড়া ও কবিতা
-
11-12-2022
-
-