অটোয়া, রবিবার ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪
দুঃখ বোধের ভেলায় - গোলাম কবির

একজীবনে মানুষের 
কতো কিছুই তো চাওয়া থাকে! 
কারো ঘর, কারো বর, কারো দু'মুঠো অন্ন, 
কারো একটা রঙিন চেকের শাড়ি,  
কারো বা একটা নাকের নথ, 
কারো চাওয়া থাকে কিশোরীর রঙিন
ঘুঙুর পায়ে সারা পাড়া বেড়ানো 
দিন গুলো ফিরে পাওয়া মধ্য বয়সে 
এসেও! আমাকে জিজ্ঞেস করো?  
আমার কিছু চাওয়ার আছে কী না  
জীবনের কাছে! আমি তোমাকে 
বলবো আমার সবটুকু চাওয়া! 

যা পেয়েছি তা তো বলবোই এমনকি
যা কখনো চেয়েছি মনেমনে 
কিন্তু পাইনি কখনোই তাও 
আজ বলে দেবো সব! 

শুনবে কী চেয়েছিলাম 
এই কচু পাতায় জলের অবস্থান 
কালীন সময়ের মতো জীবনে? 

চেয়েছিলাম আমার হারানো 
সকালবেলায় স্কুলে যাবার মূহুর্তে 
মা'র স্নেহচুম্বনে মাখা ভেজা দুটো গাল  
এই মধ্য বয়সেও ফিরে পেতে 
সেই একই আবেগের ফোয়ারা নিয়ে
অথচ পাচ্ছি কোথায়! সেই আবেগ 
মাখা চুম্বনের স্মৃতি এবং স্কুলে যাবার
মূহুর্তে মা'র তাকিয়ে থাকার ভঙ্গি  
আমার স্মৃতিতে ঝলমল করছে 
অথচ মা আমার এখন ৮৫বছরে  
সম্পূর্ণ ধনুকের মতো বাঁকা হয়ে 
কাঁপছেন বয়সের ভারে! আর আমি? 
তাও তো হলো প্রায় ষাট ছুঁইছুঁই!  
আজ কোমরব্যথা  তো কাল আর 
এক জায়গায় সমস্যা নিয়ে ভুগছি, 
নিজের মৃত্যুর কথা নিয়ে এখন 
প্রায়ই ভাবনা চলেই আসে, 
আনতে না চাইলেও। 
মা বলেন বালাই ষাট! 
এসব কথা বলবি না কখনো, 
আমি আছি না? 

আমি নিরুত্তর থেকে ভাবতে থাকি  
আবার কবে তাঁকে হারাই 
সেই ভয়েই অস্থির! 

তারও আগে ৩২বছর আগে 
চলে যাওয়া বাবার স্মৃতি 
এখনো পীড়া দেয়, 
হারানোর দগদগে ক্ষত সারে না কখনোই 
বরং তা রক্তিম পলাশের মতো 
গন্ধহীন কিন্তু বেদনার ভারে 
আমাকে নুইয়ে ফেলে, 
মৃত্তিকার টানে নিজের ও ফিরে 
যাওয়ার কথা বারবারই স্মরণের
বালুকাবেলায় ফিরে ফিরে আসে
আমার আকাশে ঘুরতে থাকা 
চিলের মতো সমস্ত অস্তিত্ব জুড়ে 
এক বিশাল শূন্যতার ডানা মেলে দিয়ে। 

তবুও জীবন কেটে যায় অনন্তের 
সিঁড়ি বেয়ে কোন অজানার পথে ,
গভীর অতৃপ্তি আর ক্লান্তি 
বাসা বাঁধে পরিযায়ী পাখিদের মতো 
ফিরে যাবার পথে কী হারালাম 
তার জন্য দুঃখ বোধের ভেলায়।

গোলাম কবির / বাংলাদেশ