অটোয়া, রবিবার ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
অটোয়াতে “শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস” উদযাপন ও একটি আশা–কবির চৌধুরী

শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ১০টা ৩০ মিনিট থেকেই অটোয়ার সাংস্কৃতিক অঙ্গনের প্রিয় একটি কেন্দ্র “ব্রনসন সেন্টার” স্থানীয় বাংলাদেশি-কানাডিয়ানদের উপস্থিতিতে ভরপুর হতে চলেছে। উদ্দেশ্য, রাত ১২টা ০১ মিনিটে, অস্থায়ীভাবে নির্মিত “শহীদ মিনার”-এ পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মাধ্যমে, ১৯৫২ সালে মায়ের ভাষা – বাংলা ভাষা – রক্ষার তাগিদে নিজেরদের জীবন বিলিয়ে দেওয়া ভাষাশহীদ, সালাম, জব্বার, রফিক, বরকত, শফিকুলদের স্মৃতি আর আত্মত্যাগের প্রতি সম্মান করা। [অস্থায়ী] শহীদ মিনারের পাদদেশে ফুল দেওয়া এবং শহীদদেরকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণের আয়োজন সেই দুপুর থেকেই শুরু হয়েছে। কাঠ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে বাঙালি জাতির অতি পরিচিত  এবং গর্বের আর প্রেরণার প্রতীক আমাদের “শহীদ মিনার” যা এখন বিশ্বের বিভিন্ন ভাষা রক্ষার আন্দোলনকারী কর্মীদের প্রেরণার উৎস। 

[অস্থায়ী] শহীদ মিনার নির্মাণ এবং অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নিয়েছে কানাডার অভিবাসী বাংলাদেশীদের প্রথম সংগঠন “বাংলাদেশ কানাডা এসোসিয়েশান অব অটোয়া ভ্যালী” – যা’ অটোয়ার বাঙালিদের কাছে “বাকাওভ” নামেই বেশি পরিচিত। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে আমাদের প্রিয় সংগঠন “বাকাওভ” এর জন্ম এবং জন্মের পরথেকেই সংগঠনটি বাংলা কৃষ্টি আর সংস্কৃতির চর্চা অব্যাহত রেখেছে। সেই নিজস্ব কৃষ্টি আর সংস্কৃতি চর্চার ধারাবাহিকতাই বাঙালি চেতনার আরেক নাম “একুশে ফেব্রুয়ারি”-কে কেন্দ্র করে অটোয়ায় অস্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণ এবং তার পাদদেশে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ। 

অটোয়ার জনপ্রিয় সাংস্কৃতিক কর্মী উৎপলা ক্রান্তির সঞ্চালনায় রাত ১০টা ৩০ মিনিট থেকে শুরু একুশের অনুষ্ঠান সাজানো হয়েছিল, একুশের গান, কবিতা আর আলোচনায়। আবৃত্তিকার শিউলি হক, রত্না ঘোষ এর কবিতা আবৃত্তি এবং লেখক ও কণ্ঠশিল্পী সুপ্তা বড়ুয়া আর রোয়েনা খানম এর গান পরিবেশনাসহ শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন, “বাকাওভ” বর্তমান কমিটির কার্যকরী সদস্য মহসীন আলী, “বাকাওভ” সভাপতি শাহ বাহাউদ্দিন শিশির। এছাড়া “অমর একুশ” এবং তার তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা করেন যথাক্রমে, লেখক ও কবি মহসীন বখত (অনুষ্ঠানে লেখক মহসীন বখত প্রদত্ত্ব আলোচনার লিখিত অধ্যায় পড়তে আশ্রমে খেয়াল রাখুন) , বাংলাদেশ দূতাবাসের ডেপুটি হাইকমিশনার মোঃ হারুন আল রশিদ, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়শনের (কানাডা) সভাপতি আরিফুজ্জামান আরিফ এবং কানাডা ফেডারেল পার্লামেন্টের সদস্য যথাক্রমে, চাদ্রা আরিয়া, এবং আনিতা ভেন্ডানবেল। এমপি আনিতা ভেন্ডালবেল তাঁর আলোচনার পর “একুশে ফেব্রুয়ারি” উপলক্ষে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রোডুর প্রদত্ত্ব বানী পড়ে শোনান এবং তার কপি “বাকাওভ”এর সভাপতি শাহ বাহাউদ্দিন শিশিরকে হস্তান্তর করেন। এছাড়া ও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কানাডা ফেডারেল পার্লামেন্টের সদস্যবৃন্দ যথাক্রমে ইয়াসীর নাগবী, ম্যারী ফ্রান্স লালন্ড এবং অটোয়ায় বসবাসকারী বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ যথাক্রমে, মহসীন রেজা, নূরুল হক, ফারুক হোসেন প্রমুখ, এবং বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সিলর অপর্ণা রাণী পাল। 

আলোচনার পর রাত ১২-০১ মিনিট থেকে শুরু করে রাত ১-০০টা পর্যন্ত শহীদ বেদীতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা হয়। শীতের এই মধ্যরাতে অটোয়ার বাংলাদেশী কানাডিয়ান নারী-শিশু-পুরুষ এবং কানাডিয়ান পার্লামেন্টের সদস্যদের উপস্থিতি এবং অস্থায়ী শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন প্রমান করে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে শহীদ ভাষাসৈনিকদের আত্মত্যাগ অনুসরনীয় এবং অনুকরনীয় এবং নব্য সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন থেকে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের লুপ্তপ্রায় ভাষাগুলোকে প্রাণ দান করতে পারে বাঙালির “একুশে ফেব্রুয়ারি”র আত্মত্যাগ এর প্রচার এবং প্রসার। 

অটোয়া কানাডার রাজধানী। এখানে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের এমব্যাসি এবং হাইকমিশান এর অবস্থান। সর্বোপরি এখানে কানাডিয়ান ফেডারেল সরকারের সকল এমপি, মিনিস্টারদের অফিস আদালত। অথচ এখানে অস্থায়ীভাবে নির্মিত শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করতে হয় – সত্যি তা বিশ্বাস করতে হয় – যাক আজ আর এসব নিয়ে আলোচনা না করে শুধু বলতে চাই, আমাদের এই আরশী নগর অটোয়াতে এখন প্রায় ১০হাজারের বেশি বাঙালির বসবাস। আমরা প্রতিনিয়তই মসজিদ-মন্দির বানাচ্ছি। আসুন এবার আমরা একটি শহীদ মিনার বানাই – যেখানে ৫২’ এর ভাষা আন্দোলনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে  শহীদ মুক্তিকামী মানুষের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানাতে পারে। প্রাণের সংগঠন “বাকাওভ” এবং বাকাওভ-এর কার্যকরী কমিটি এবং বাকাওভ-এর সভাপতি শাহ বাহাউদ্দিন শিশির অটোয়ার সর্বস্তরের জনগণকে সাথে নিয়ে অটোয়ায় একটি স্থায়ী শহীদ মিনার তৈরির সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণে উদ্যোগী হবেন এই আশা করে বিদায় নেব। সবাই ভাল থাকুন।


ধন্যবাদ
মিগওয়েছ
জয় বাকাওভ
জয় একুশে ফেব্রুয়ারি 
জয় বাংলা
কবির চৌধুরী
প্রকাশক, আশ্রম
অটোয়া, কানাডা