অটোয়া, শনিবার ২৭ জুলাই, ২০২৪
অটোয়ায় মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র, মৃত্যুহীন প্রাণ (Nowfel Never Dies) প্রদর্শিত - সুলতানা শিরীন সাজি

ত ১৮ মার্চ, ২০২৩ শনিবার দুপুরে অটোয়ার Mayfair Theatre (1074 Bank Street)-এ টরন্টো নিবাসী প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা নাদিম ইকবালের, মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র, "মৃত্যুহীন প্রাণ"(Nowfel Never Dies) প্রদর্শিত হয়েছে।

বাংলাদেশের স্বনামধন্য কবি আসাদ চৌধুরী শুরুতে ভিডিও সংলাপে প্রামাণ্যচিত্রের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, “নওফেল নিজে সবাইকে বললেন যে তোমরা সবাই সরে যাও কিন্তু তিনি আহত মুক্তিযোদ্ধা কে কাঁধে নিয়ে নিরাপদে একটা যোদ্ধার প্রকৃত চরিত্রটা বজায় রেখে তাকে বাঁচানোর জন্য নওফেল চলে গেলেন। চলে গেলেন! আর আসলেন না। শেয়াল,কুকুর, শকুন শরীর এমন ভাবে বিকৃত করেছিল চেনার উপায় ছিলো না। নাকি কয়েকটা লাশ তারা নদীতে ফেলে দিয়েছিল। বাংলার এই আবহমান নদী, আমাদের ভাটিয়ালীর নদী, তাকে আপন করে বুকে জড়িয়ে ধরে আছে। তার মা তো চেয়েছিলেন, ”আমার বাবার মাথাটা একটু নিয়ে আসো, আমি ঘরে রাখবো”। সম্ভব হয়নি। কয়জনের মাথা রাখবে বাঙালী, কয়জনের মাথা রাখবে?
স্বাধীনতার জন্য এত ত্যাগ। ভাষার জন্য, সংস্কৃতির জন্য  এত ত্যাগ বাঙালী ছাড়া পৃথিবীতে আর কেউ কোনদিন করতে পেরেছে?
নওফেলকে আমরা ভুলে যাবো?
নওফেল মারা গেছে কিন্তু নওফেল অমর, মৃত্যুহীন প্রাণ!
নওফেল একটা দৃষ্টান্ত বাঙালীর…..সাহসের, বীরত্বের, মনোবলের, আত্মত্যাগের, সহকর্মীদের ভালোবাসার জন্য, দেশপ্রেমের জন্য একটা উজ্জল দৃষ্টান্ত, নওফেল।”


বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে কত লক্ষ, শত নাম না জানা মানুষ শহীদ হয়েছেন। কত মা বোন তাদের সম্ভ্রম দিয়েছেন, প্রাণ দিয়েছেন।কতজনের কথাই বা ইতিহাসে এসেছে! ঢাকায় দেখা হবার পর, নাদিম ইকবালকে নওফেল এর এর বোন তাঁর মায়ের লেখা একটা বই দিয়ে বলেছিলেন, সম্ভব হলে তাঁর শহীদ ভাই নওফেলকে নিয়ে কিছু করতে! দেশে যেয়ে ঘুরে ঘুরে নওফেলের সহযোদ্ধাদের খুঁজে বের করে তাঁদের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। কথা বলতে বলতে তাঁদের অনেকেই অশ্রুসিক্ত হয়েছেন। চোখ ভেসেছে  আমাদের ও।

অটোয়ার কবি এবং আবৃত্তিকার শরীফ হাসান শিশির এর উপস্থাপনায়, “স্বাধীনতা, সে অনেক দামে কেনা” শীর্ষক শিরোণামে অনুষ্ঠান শুরু হয়। গান, কবিতা,আলোচনা পর্বে অংশ নেন, সেতু হক, আকলিমা চমন, শিশু সাহিত্যিকে লুৎফর রহমান রিটন, নাট্যশিল্পী আফরোজা বানু এবং মুক্তিযোদ্ধা  ফারুক হোসেন! এছাড়া অটোয়ায় বসবাসরত মুক্তিযোদ্ধাদের মঞ্চে ডেকে সন্মান জানানো হয়।

মেফেয়ার থিয়েটারে এই প্রামান্যচিত্র দেখাবার জন্য  স্পনসর করেছেন অটোয়ার রিয়াল স্টেট এজেন্ট শাহ বাহাউদ্দিন শিশির। স্বাধীনতার মাসে এ এক দারুণ উদ্যোগ ছিল। চিত্র প্রদশর্নী শেষে দর্শকদের মধ্যে থেকে অনেকে প্রশ্ন করেন। নাদিম ইকবাল সব প্রশ্নের উত্তর দেন। সবাই নাদিম ইকবালের সুন্দর কাজের প্রশংসা করেন।
আমরা আশা করবো ভবিষ্যতে আরো অনেক জানা, অজানা মুক্তিযোদ্ধাদের, বীরাঙ্গনাদের সাহসীকতার গল্প উঠে আসবে নাদিম ইকবালের প্রামাণ্যচিত্রে। অটোয়ার অনলাইন পত্রিকা ‘আশ্রম’এর পক্ষ থেকে আয়োজক এবং নির্মাতা নাদিম ইকবালকে ধন্যবাদ এবং শুভকামনা।

ছবি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ - থিয়েটার এর ভিতরের  ছবি হাসান মাহমুদ টিপু, নাদিম ইকবাল, নাসিমা মীরা এবং রিয়াজ জামান এর ফেইসবুক থেকে সংগৃহিত।

সুলতানা শিরীন সাজি
সম্পাদক, আশ্রমবিডিডটকম
অটোয়া, কানাডা