অটোয়া, রবিবার ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪
কেনো ভালোবাসি, তবু ভালোবাসি বলি না? - সুলতানা শিরীন সাজি

“মাঝে মাঝে রাতের গভীরে,
তোমাকে বের করে দেখি।
চোখ,
কান,
মুখ দেখি।
দেখি, হাতের মুঠো জুড়ে ভোরের সবটুকু আলো।
দেখি কি করে তুমি দিনে দিনে আমি হয়ে উঠেছো এক অচিন অভ্যাসে!"

কবিতার এই লাইনগুলো আমার নিজের লেখা কবিতা থেকে। ২০১৮ র ২ জানুয়ারীতে লিখেছিলাম। কেনো লিখেছিলাম তার কি কোন ব্যাখ্যা আছে? হয়তো জীবনের কোন বাঁকে, নির্ঘুম চোখে রাত জেগে বসে থাকার সময়, ফেইসবুক স্মৃতিতে উঠে আসা নিজের লেখা কবিতাটা পড়ে নিজেই চোখ ভাসাবো বলেই লিখেছিলাম। 

সমুদ্রে ডুবে গেলে কেমন লাগে? আজকাল মাঝে মাঝেই মনেহয় মধ্য সমুদ্রে আমি। চারদিকে অথই জল। বেঁচে থাকার কোন সদিচ্ছা খুঁজে পাইনা। এমন বোধের মধ্যে দিয়ে দিন যায়, রাত যায়,সব যায়। আশেপাশের মানুষকে খুশি রাখতে হলেও নিজের মধ্যে খুশি থাকতে হয়। খুঁজে ফিরি সেই সুখ, সেই খুশি।
ইচ্ছে করে ডুবে যাই অথই সমুদ্র জলে। কখনো ইচ্ছে করি বেড়িয়ে পড়তে। পথের পর পথ হেঁটে যে বেড়াই না কি করে বলি! শূন্যতার পথে পথে ঘুরে বেড়াই। এত স্মৃতি ছড়ানো। আমি কি তাহলে পরিব্রাজক হয়ে যাবো। অতীতের পথ এ হাঁটা পরিব্রাজক?

আমার আর সামনে তাকাতে নেই? 
অযুত, নিযুত স্মৃতিতে মোড়ানো আমাদের সেই ভালোবাসার জীবনে বাকিটা জীবন ঘুড়ি উড়াবো?  
পাশের মানুষ হঠাৎ চলে গেলে যে শূন্যতার সৃষ্টি হয়। যে ব্যথা হয় মনে। আমি যদি চলে যাই সেই ব্যথা কি কমে যাবে? এখন শুধু মনেহয় নিজের ভিতরের ঘড়ির কাঁটার সেই দম বুঝি শেষ হয়ে গেছে। চলে বেড়াই, চলতে হয় তাই। 

সুখ, সুখের ইচ্ছা হলো মানুষের পরম আনন্দের বোধ থেকে উৎসারিত হয়। সেটা যার হোক, যখনই হোক, নদীর স্রোতের মত তা চলতে থাকে। ভাসায় নিজেকে, ভাসায় চারিদিকের মানুষকে, যারা সুখি হতে চায়।

একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষ যখন চারাগাছ লাগায়, কেনো লাগায়? সেতো সেই গাছের থেকে ছায়া পাবেনা। তবু কেনো করে? ভালো মানুষ যারা,তারা অন্যর সুখের জন্য কাজ করে। নিজেরা ছায়া পাবে বলে, কেউ অশ্বথ, বট গাছ লাগায় না। এই ভালোত্ব ভিতরে থাকে। মানুষের জীবনের বড় মন্ত্র হলো হলো ভালোত্ব বোধ, মানুষ যখন নিজে ভালো হয়, তখন সেই ভালোর আলোতে অন্যরাও আলোকিত হয়। তার সব ভালো, তার হাসি, আমুদে স্বভাব। সবাইকে ছুঁয়ে যায়। 

মানুষ যখন থাকে, সেইসব গুনাবলী নিয়েই চলতে থাকে। যখন চলে যায়। সেতো চলেই যায়। যারা থাকে, তাদের চালিয়ে নিতে হয়। ইচ্ছা করুক বা না করুক। পৃথিবী চলতে থাকে।
কবি Robert Frost বলেছেন, “In three words I can sum up everything I’ve learned about life. It goes on.”
আসলেই তাই, Life goes on.
চলে যাওয়া প্রিয় মানুষের ভালোবাসা শক্তি হয়ে থাকে।
দুঃখ বোধ হলো মানুষের একার। যার কষ্ট,যার কান্না তাকেই কাঁদতে হয়। এখানে মানুষ বড় একা।
তাইতো নিজেকেই নিজে বলি,"তাই বলি ব্যথা পেলে ভেঙে তুমি পড়োনা গো।”
একা হওয়া, একা থাকা অনেক কষ্টের। যখন খুব প্রিয়জন চলে যায়। নিঃসীম একাকীত্বতা গ্রাস করে। তখন কথা বলতে ইচ্ছা করেনা। 

মানুষের জীবন কেনো এত মূল্যবান? কারণ একবারই আসা। আর এর পরের জীবনের প্রতি আমাদের যে বিশ্বাস তা আমাদের বেঁচে থাকতে সাহায্য করে। নাহলে ডুবে যাবার ইচ্ছাটাতেই থেমে যেতো জীবন।

আমরা প্রতিদিন সূর্য্য উঠতে দেখি, সূর্য ডুবতে দেখি। প্রিয় সন্তানের মুখ দেখি, আদর করি, জড়িয়ে চুমু খাই। কেউ জানিনা সেটাই কি শেষবার! 

জানিনা বলেই কি এত ভালো লাগে।
মানুষের জীবনে সব ভালোলাগা জিনিস ভালোবেসে করা উচিত। যতটুকু সময় আমরা পাই তাকে আনন্দময় করা উচিত।

কিযে কষ্ট কাউকে হারানো! যার যায় সেই জানে!
মানুষ অন্য কাউকে বদলাতে পারেনা। নিজেকে বদলাতে পারে মানুষ। আর তখনই সত্যিকারের পরিবর্তন হয়। আশা থাকলেই মানুষ বাঁচে। আশাহীন জীবন শূন্যতায় ডুবে যায়।

মানুষের জীবনের সুন্দর সময়গুলো স্মৃতিতে ঘিরে থাকে। আমাদের আছে। অজস্র স্মৃতিতে ভরা সেই জীবন।
কেউ কি লিখে রাখে স্মৃতি?
স্মৃতি থাকে পথের ধূলায়, গাছের পাতায়।
আকাশের নীল সাদায়,ফুলের পাঁপড়িতে। নদীর জলে,সমুদ্রের ঢেউ এ।
কথায় কথায়, হাসিতে।ভালোবাসার খুনসুটিতে। চোখের পাতায়,ঠোঁটের তিল এ। কানের লতিতে।

নিজের যখন কিছুই ভালো লাগেনা। তখন মনেহয় লিখিনা কেনো? একটু লেখাতে, একটা কোন শব্দ বা লাইনে কারো মনে যদি কোন ভালোলাগা জন্ম নেয়। উপকার হয়।

যখন ভীষন কষ্টে থাকি। বেঁচে থাকাটা ভার লাগে, তখন যেই মানুষটা চলে যেতে চায়নি তবু চলে গেছে.........তার কষ্ট,ব্যথাময় মুখ মনে করি।
তার বলে যাওয়া কত কথা। এইতো সেদিন ও বলে গেছে," মনের শক্তিতে আমি মঙ্গলগ্রহে যেতে পারি। শরীরের শক্তিতে না।"

শরীরের শক্তি যখন থাকে, যখন জীবনের বয়ে চলা থাকে। তখন আমরা অনেকেই একজন অন্যর ভুল না ধরে ভালোবাসিনা কেনো? কেনো তুচ্ছ জিনিস নিয়ে অভিমান করে দূরে সরে থাকি? কেনো ভালোবাসি তবু ভালোবাসি বলি না?

সুলতানা শিরীন সাজি
অটোয়া, কানাডা