অটোয়া, রবিবার ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪
শেখ জলিল-এর কবিতা

১৷ থাক্ না না-বলা---
ললে তো সব গল্প ফুরিয়েই যাবে
তার চেয়ে কিছু গল্প থাক্ না না-বলা;
হৃদয়ের গোপন কোণে জমানো কথামালা
নিঃশেষে বললে কি থাকবে ভালো লাগা?
ভালো লাগা ছোটগল্পের কাহিনির মতোন
সমাপ্তি বিন্দুতে এসে হয় নাকো শেষ দেখা!

সমস্ত উজাড় করলে শুকিয়ে যায় ভরা নদী
ভালোবাসার গোপন ধারা বয়ে যাক নিরবধি৷

২৷ মেয়েটি এসেছে একা--
কাশ দেখেছে তাকে
সে বলেছে- তোমার দুচোখ আমার চেয়েও নীল!
পাখিরা শুনেছে গান
তারা বলেছে- তোমার কণ্ঠ আমাদের চেয়ে সুমধুর!
সাগর দেখেছে তাকে
সে বলেছে- তোমার দৃষ্টি আমার চেয়েও গভীর!
বাতাস শুনেছে ফিসফিস
সে বলেছে- তোমার অস্ফুট কথা বেশি আর্দ্রময়!

শহরের কারাগার ছেড়ে মেয়েটি এসেছে একা
এই সাগর সৈকতে ঝাউবনের বেলাভূমিতে;
সন্ধ্যার আঁধারে দূরের দিগন্তে উঠবে পূর্ণিমা চাঁদ
মেয়েটির রূপ লাবণ্যে সে খুঁজছে মেঘের ছায়া;
নারকেলের বনের ফাঁকে তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে পেঁচা
বলছে- এক অদ্ভূত আঁধার এসেছে এই পৃথিবীতে!

মাঝে মাঝে প্রকৃতিও হার মানে মানুষের কাছে
যখন দেখে মানুষ ছাড়া তারা কতোটা ঊষর!
এই আকাশ, বাতাস, সাগর, পাখি, চাঁদ-
সবাই লজ্জিত আজ মেয়েটির লাবণ্যপ্রভায়;
শুধু লজ্জিত হয়নি পারিপার্শ্বিক সমাজ ও মানুষ
তাই মেয়েটি ছুটছে দূরে একা সলিল সমাধি পানে৷

৩৷ অনন্ত অধরা তুমি--
পাবো পাবো করে হারিয়ে ফেলি সব সময়- তুমি অধরা চলন্ত এই সময়ের ভিড়ে৷ কত রুদ্র দিন যায়, মাস যায় তবু মরুর বুকে ফোটে না ক্যাকটাস ফুল! তুমি সেই ফুল যার পরিস্ফুটন নেই কোনও৷
জ্যাকপট পেয়ে যাবে বলে মানুষ লটারির টিকেট কেনে৷ কেউ হয় পকেট শূন্য, কেউ বা দেউলিয়া, কেউ পথের ভিখারী৷ বাজি ধরলেও কারও কারও জুয়ার ভাগ্য খোলে না সারাটি জীবন!
খরায় ফসল পোড়া কৃষকের মত আশা রাখি আগামী চাষের৷ ভালোবাসতে বাসতে ফতুর হয়ে গেছি নাছোড়বান্দা জুয়ারির মত৷ জানি এক জীবনে কাটবে না এই হৃদয় ক্ষত- তুমি অনন্ত অধরা শূন্যের ওপারে নক্ষত্রখচিত!

৪৷ কে যায়--
কে যায়-
ওড়ায় আশ্বিনের মেঘ, মাঠে শুষ্ক ধুলা;
কে যায়-
ছড়ায় অঘ্রাণের ধান, ডাল, তিসি, মূলা;
কে যায়-
ধরায় শীতের কাঁপন, কিষাণীর চুলা৷

কে যায় পূবালি সমীরণ নিয়ে
সাদা পালের নৌকায়-
ছৈয়ের আড়ালে সেই প্রিয় মুখ
দেখতে এ মন চায়!
আমি পরাবো তার গলেই মালা
এইবারের ফাল্গুনে-
পড়শি তোমরা সবাই রাখো গো
কান পেতে সব শুনে৷

৫৷ বিষণ্ন চড়ুই--
প্রত্যহ খুব সকাল বেলা
বাতায়নে বসে থাকে বিষণ্ন চড়ুই
ঘুমঘুম চোখে ভাবি শুধু
বেতাল ঘুমের ঘোরে সে কি আমার পাহারা?

গত রাতে ঝড়-বৃষ্টি ছিলো খুব
বেহুঁশ মাতাল ছিলাম বিরহে
হেমন্তের চাঁদ ডুবেছিলো বনানীতে
সেখানে পাখির ডাক শুনিনি কোথাও
তবু প্রত্যূষে সঙ্গী কেন আমার বিষণ্ন চড়ুই
ঘুমের সঙ্গমে ছুঁয়ে থাকে সেই বিচ্ছেদ বিভূঁই!

শেখ জলিল: আশির দশকের কবি ও গীতিকার৷ প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা আট৷ বর্তমানে কানাডার এডমন্টন শহরে প্রবাসী৷