অটোয়া, বৃহস্পতিবার ২ মে, ২০২৪
লোকটি - ফরিদ তালুকদার

কাল ছ'টা বেজে পয়তাল্লিশ কী সাতচল্লিশ 
প্রতি কর্মদিবসের ঠিক এই সময়টায় লোকটিকে এই স্থানে আমি অতিক্রম করতাম
সময় দু'একমিনিট এদিক-ওদিক হলে পরস্পরকে অতিক্রম করার স্থানটাও খানিকটা সামনে পেছনে হয়ে যেত
এর বেশি কিছু নয়
সবই যে একদম মাপা মাপা আমাদের ঘাট বন্দী জীবনে!

সে নিশ্চয়ই কোনোদিন আমাকে দেখেনি
ব্যাস্ত সকাল, শতশত গাড়ি হুঁশ হাঁস করে ছুটে যায় 
আমি তারই একটার স্টিয়ারিং এর পেছনে
আর সে ফুটপাত ধরে উত্তরমুখী, খানিকটা কেমন উদাসীন উন্নাসিকতায় ধীর পদক্ষেপে---
হয়তো তেমন কোনো ইচ্ছে-ই নেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর! 
মধ্য বয়সের ওপারেই হবে হয়তো, ছিপছিপে কেমন একটু রোগা-সোগা গড়ন
পিঠের সাথে লীন হয়ে থাকা তেমনই যুতসই একটি ব্যাকপ্যাক, ডান হাতে মাঝারি সাইজের একটি কফিকাপ
সে যাচ্ছে কোথাও--- 
হয়তো কর্মক্ষেত্রেই!

চাকার সাথে সাথে বাটখারার আবিস্কারও হয়তো আমাদের এই সভ্যতায় কম অবদান রাখেনি!
প্রতি সকালে লোকটাকে দেখলে আমার কেন যেন এ কথাটাই মনে হতো
আমরা এখন সবকিছুই কেমন বেশ মেপে মেপে করতে শিখেছি
এই যেমন সময়, মুখের হাসি, সুখের অনুভূতি, প্রিয়জনের প্রতি ভালোবাসা, দুঃখবোধ, বুক পকেটের গভীরতা... 
এখন সবই কেমন যেন নিক্তির একপাশে ঝুলে থাকে!
তীব্র কষ্টের সময়ও এখন আর তেমন প্রাণ ভরে যেন কাঁদতেও পারি না
হয়তো তেমন কান্না আসে-ই না!
মনের অবচেতনে তখনো কেমন যেন এক আতংক কাজ করে
অতিরিক্ততার আতংকই হয়তো! 
কিংবা বস্তু জগতের অন্যকিছু উপকরণ তখনো এসে মস্তিষ্কে ঢুকে পড়ে খুব অযাচিত ভাবেই
অথবা এখানেও সেই সময়ের মাপা হিসেব!

শুনি কেউ কেউ আবার অতিরিক্ত অনেক কিছুই করে যাচ্ছেন হরদম
যেমন অতিরিক্ত ভোগ, অতিরিক্ত ক্ষমতার দম্ভ, পেটমোটা মুদ্রায় অতিরিক্ত সুখ এবং এমন আরও কিছু  সুস্বাদু বিস্বাদ!
তবে ওগুলো তো আরেক পৃথিবী, আরেক বোধের গল্প
এখন না হয় থাক।

অনেকদিন হ'লো লোকটাকে আর দেখি না!
সেই দিনগুলোতে দু'একবার মনে হয়েছিল গাড়ি থামিয়ে লোকটার সাথে পরিচিত হবো একদিন
কিন্তু ঐ যে 'টাইম বাউন্ড'! 
আমাদের এমন অনেক মনে হওয়া-ই তো নিমিষে হারিয়ে যায় কাল স্রোতের তীব্র ধাক্কায়!

কিন্তু লোকটাকে আর দেখি না!
এজন্যে আমার যে খুব একটা দুঃখ বোধ হয় তাও ঠিক নয়
তবুও কেমন যেন, কেমন যেন একটা!?---
প্রতি সকালে ঐ স্থানটা অতিক্রমের সময় দৃষ্টিটা ঠিক ওদিকেই পড়ে
চোখজোড়া কাউকে যেন খুঁজে
খানিকটা ভাবি-ও
লোকটা হয়তো কর্মক্ষেত্র পরিবর্তন করেছে
কিংবা ছুটি নিয়েছে, দীর্ঘ দীর্ঘ ছুটি
যে ছুটিতে আর কখনো টাইম বাউন্ড থাকতে হয় না!
কিংবা কে জানে, ওখানেও হয়তো?---

জন্মের সাথেই জুটি হওয়া অবশ্যম্ভাবী সেই ছুটি ক্লান্ত এই পদক্ষেপকে একদিন থামিয়ে দিলেই হয়তো জানতে পারবো-

ওখানেও কোনো বিগ ব্যাং এর গল্প  আছে কিনা?
আছে কিনা এই পৃথিবীর অতৃপ্ত স্বপ্নদের কোনো উদবাস্তু শিবির!?

ফরিদ তালুকদার
মে ৮, ২০২৩
টরন্টো, কানাডা