অটোয়া, রবিবার ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪
গোলাম কবিরের কয়েকটি কবিতা

১) এমনই বৃষ্টি ভেজা দুপুরে
মার শহরে আজ সারাদিন 
বৃষ্টি পড়ছে ভীষণ! 

বৃষ্টির ফোঁটা গুলো শহরবাসীর 
তাপদগ্ধ দুপুরের ক্লান্তি ধুয়ে দিচ্ছে।  

কিছু উদোম শরীরের বস্তিবাসী 
বালকেরা পিচঢালা রাস্তার ওপরেই   
সেই বৃষ্টির ফোঁটা গুলো 
গায়ে মাখছে ভীষণ মজা করে, 
খালি পেটেও ওদের চোখ মুখ
উল্লাসে ফেটে পড়ছে!   

কোথাওবা হয়তো কোনো শহুরে 
কিশোরী বহুতল ভবনের ফ্ল্যাটের 
ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আদর করে 
বৃষ্টির ফোঁটা গায়ে মাখছে! 

শহরের গাছপালা গুলো সব 
নেয়ে উঠছে বৃষ্টির জলে। 

এমনই বৃষ্টির ভিতরে কোথাও হয়তো
রিকশার হুড নামিয়ে কোনো তরুণ
প্রেমিক তার প্রেমিকার লাজুক 
ঠোঁটে ঠোঁট রাখছে গভীর আবেগে, 
আবেশে, শিহরণে থেকে থেকে 
কেঁপে উঠছে তাদের বুক! 

এমনই বৃষ্টি ভেজা দুপুরে আমার 
খুব করে তোমার জন্য মন উতলা হচ্ছে, 
আমার কিছুই ভালো লাগছে না, 
মন শুধু তোমাকেই চাইছে ভীষণ!
এখন আমার কেবলই মনে পড়ে 
তোমার কথা, মনে করে করে 
আমারও যে চোখে তুমুল বৃষ্টি নামলো
তা কিন্তু দ্যাখার কেউ নেই, 
এই বৃষ্টিতে শুধু আমিই ভিজে যাচ্ছি! 
তুমিও কী কখনো আমার জন্য 
এমনই চোখে নামা তুমুল বৃষ্টিতে 
ভিজে যাও জানতে ভীষণ ইচ্ছে করে!

২) এটাও কোনো কবিতা নয় 
মি আগেও বলেছি যে,
"আমি কোনো কবিতা লিখতে পারি না 
একদমই, নির্দ্বিধায় স্বীকার করছি তা। 
আমি শুধু আমার হৃদয়ের আনন্দ, 
বেদনা, ক্ষোভ, উচ্ছাস, উল্লাস, 
এগুলোই সবার সামনে তুলে দিই 
অক্ষরের মালা গেঁথে! তাই এটাও 
একদমই কোনো কবিতা নয়! 
এটা শুধু আমার হৃদয়ে উথলে ওঠা 
কষ্টের ঢেউ গুলো তোমাদের 
কাছে ছড়িয়ে দিলাম! "

"ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল" এর কবি 
হুমায়ুন আজাদ একদিন বলেছিলেন
তাঁর কবিতায় অনেকটা এরকমই, 
"সবকিছুই একদিন নষ্টদের 
দখলে চলে যাবে"! 

আমি তো বলি, 
"সবকিছুই তো এখন 
নষ্টদের দখলে চলে গেছে!"
ঠিক তেমন করেই সবকিছুরই মূল্য  
এমন ভাবে বাড়ছে যে তা সাধারণের  
ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গিয়ে বরং 
তাদের রোজগারকেই উপহাস করছে!
বাড়ছে না শুধু মানুষের জীবনের 
মান, মূল্যবোধ, নৈতিকতা! 
এগুলো এখন ক্রমেই ক্ষয়প্রাপ্ত 
হতে হতে একসময় 
তা একদমই শেষ হয়ে যাবে, 
এখন যেটুকু বাকি রয়েছে তাও! 
তাই ভীষণ ভয়ে আছি, 
সংশয় ও শংকায় আছি খুব!

৩) এক একদিন কবিতার সামনে
ক একদিন কবিতার সামনে 
দাঁড়িয়ে যাই নিজের দৈন্যতা নিয়ে,  
বিমুগ্ধ চোখের অপলক দৃষ্টি মেলে
বিপুল বিষ্ময়ে চেয়ে থাকি তার দিকে, 
দু'চোখে শ্রাবণের ঘন ঘোর বর্ষা 
নামিয়ে দিয়ে এশহরটাকে ভাসিয়ে 
দেই প্রবল বন্যায়! 

এক একদিন কবিতার সামনে হাঁটু গেড়ে 
বসে থাকি সামান্য শব্দ ভিক্ষা করতে, 
ভুলে যাই প্রেমিকার প্রতি আমার 
যত অভিমান, অভিযোগ আর 
অবহেলায় ক্ষয় হতে থাকা হৃদয়ের
সুতীব্র ব্যথায় অনুভবের উদাসী বাউল
মেঘের ঘনঘটায় হারিয়ে যাওয়া 
দিনান্তের সূর্যকে ঢেকে ফেলে! 

এক একদিন কবিতাকে দেখে 
দৌড়ে পালিয়ে যাই ওর আয়নায়
নিজের কষ্ট গুলো বেহায়ার মতো 
বলে ফেলি যদি এই ভয়ে 
কিংবা বলা যায় আমার কষ্ট গুলো 
হয়তো কখনো হঠাৎ করেই 
কবিতার শরীরে একজন কুষ্ঠ রোগাক্রান্ত 
মানুষের দগদগে ক্ষতের মতো 
উঠে আসার ভয়ে পালিয়ে আসি
কবিতার সামনে থেকে 
একদমই চোরের মতো! 

এক একদিন কবিতার সামনে বসে 
থেকে রিমান্ডে নেয়া একজন 
আসামীর মতো গড়গড় করে 
ভালোবাসা না পাওয়ায় নিজের সব
কষ্টের কথা বলে দিই একটুখানি 
হালকা হবার আশার ছলনায়! 

এক একদিন কবিতার সামনে চুপ 
করে বসে থাকি প্রবল মৌনতায়,
অন্ধকারে মুখ লুকিয়ে রাখি, 
যদি ধরা পড়ে যাই কবিতার কাছেই! 

এক একদিন ফের যদি প্রতারিত হই
এই ভয়ে কবিতার সামনে আসতেই 
ইচ্ছে করে না, তবুও কবিতার সাথেই
করি ঘরসংসার, কবিতা নিয়েই বেঁচে থাকি, 
কবিতার মাঝেই হারিয়ে যাই অসীমে!

গোলাম কবির
ঢাকা, বাংলাদেশ