অটোয়া, শনিবার ২৭ জুলাই, ২০২৪
ভিন্ন জীবন (পর্ব-এক) - সুফিয়া ফারজানা

জও দুই কাজ শেষ করতে এক ঘন্টার বেশি লেগে গেল। এই বাসা ছাড়াও আরও তিন বাসায় কাজ করে লিলি। তাছাড়া এক বাসায় দুই বাচ্চাকে স্কুল থেকে নিয়ে এসে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত রাখে সে। সেই বাচ্চাদের স্কুল ছুটি হয় একটায়। এখন বাজছে দশটা দশ। তাহলে আরও তিনটা বাসার কাজ কখন শেষ হবে আজ? একটার আগে শেষ হবে তো?? দ্রুত ঘর মোছা শেষ করে ধোয়া কাপড়গুলো মেলে দেয় বারান্দায়। 
"আফা, আমি গেলাম। কাইল আইতে পারমু না। আলিফের খুব জ্বর, কাইল একটু হাসপাতালে নিয়া যামু।" 
"তোমার আর কত ছুটি চাই, বুয়া? এত বাহানা করলে কি চলে, তুমিই বলো। এই মাসে আরও তিন দিন আসোনি। এবার থেকে আমাকেও বেতন কেটে রাখতে হবে, দেখি।"
"রাইখেন, আপা। পোলাডার অসুখ! কি করমু, কন।"

দ্রুত বেরিয়ে আসে লিলি। তার চোখে পানি এসে যায়। সে এত চেষ্টা করে, ভালভাবে কাজ করে সবাইকে খুশি রাখতে।কিন্তু কারো মনই সে জয় করতে পারলো না এত কাজ করেও। নির্দিষ্ট কাজের বাইরেও সে দুই একটা কাজ করে দেয় সবারই। 

আরও তিন বাসার কাজ শেষ করে সাবিত-সারার স্কুলের গেটে পৌঁছাতে একটা পার হয়ে যায় লিলির। তাকে দেখেই দৌড়ে আসে সারা। 'লিলি আন্টি, তুমি এত দেরী করলে কেন?' সারার চোখে পানি। লিলি কোলে তুলে নেয় সারাকে। সাবিতের হাত ধরে খুব সাবধানে পার হয় স্কুলের সামনের রাস্তা। রিকশা ঠিক করে উঠতেই গল্প জুড়ে দেয় সারার দেড় বছরের ছোট ভাই সাবিত। সারাদিন স্কুলে কি হল, কোন টিচারের পড়া সে পারেনি, কে তার কান মলে দিয়েছে, সারা কতবার তার ক্লাসে উঁকি দিয়ে দেখে গেছে, আরও কত সব গল্প!

সাবিতের গল্প শুনতে শুনতে বার বার অন্যমনস্ক হয়ে যাচ্ছিলো লিলি। সাবিতের কথা বলার ভংগি অবিকল আলিফের মত। আলিফের জ্বরটা কমেছে তো? মলি কি মাথায় পানি দিয়েছে ঠিক মত? মলি লিলির ছোট বোন। গ্রাম থেকে এসেছে কয়েক দিন হল। গার্মেন্টসে কাজ করতে চায়। আজ সাবিত-সারার মা ফিরলে একবার বলতে হবে, মলির একটা কাজের ব্যবস্হা করা যায় কি না।

বাসায় এসে সাবিত-সারাকে গোসল করিয়ে ভাত খাইয়ে দেয় লিলি। সারাদিন বাসায় থাকেন কেবল ওদের অসুস্থ দাদী, তিনি বলতে গেলে অচল, বয়সের কারণে চোখেও দেখেন না ভালো। বাচ্চা দুটি কে খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দাদীর ঘরে এসে দাদীর হাত পা মালিশ করতে বসে লিলি। কিন্তু বার বারই মনে হতে থাকে আলিফের কথা। ছেলেটার জ্বর যদি আরও বাড়ে? ছেলেটা দুপুরে খেয়েছে তো??
(চলবে)

সুফিয়া ফারজানা
ঢাকা, বাংলাদেশ