অটোয়া, শনিবার ২৭ জুলাই, ২০২৪
ভিন্ন জীবন (পর্ব - দুই) - সুফিয়া ফারজানা

পর্ব - এক পড়তে ক্লিক করুন 

পর্ব - দুই

লিলির বিয়েতে যৌতুক হিসেবে দেয়ার কথা ছিল মাত্র দুই লাখ টাকা আর ছেলের জন্য একটা মোটর সাইকেল। যদিও এটাকে যৌতুক কেউ বলে না, মেয়ে জামাইকে খুশি হয়ে কিছু উপহার তো সবাই ই দেয়, এই আর কি। এত চমৎকার ছেলে, অবস্থাপন্ন পরিবার, লিলির বাবা ঝোঁকের মাথায় রাজি হয়েছিলেন দিতে। তবে সময় নিয়েছিলেন। 

ছেলে নিজেই পছন্দ করেছিল লিলিকে। লিলির স্কুলে যাওয়ার পথেই সেলিমের মুদির দোকান। দোকানে বিক্রি বাটা ভালো। সেলিমের বাবা সিকান্দার আলীর জমিজমাও আছে বেশ। ক্লাস নাইনের ছাত্রী লিলি খেয়াল করেছে অনেক বার, সে সামনে দিয়ে গেলেই সেলিম বেচাকেনা বন্ধ রেখে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকে। লিলিও তাকাতো লাজুক চোখে। সেভাবে কথা হয়নি কখনও।

একদিন সিকান্দার আলী নিজেই প্রস্তাব নিয়ে এলেন লিলির বাবার কাছে। লিলির বাবার নিজের জমি খুবই সামান্য। তাই অন্যের জমি ভাগে চাষ করেন। দুই বোনের মধ্যে লিলিই দেখতে শুনতে ভালো, পড়াশুনাতেও বেশ ভালো। স্কুলের রজব মাস্টার প্রায়ই বলেন, মেয়েটাকে কষ্ট করে এসএসসি টা পাশ করাও, জমির। মেয়েটার মাথা ভালো, বিশেষ করে অংকে সে খুবই ভালো। 

এত ভালো ঘর থেকে সম্বন্ধ এসেছে, পড়াশোনার আর কি দরকার? যতই পড়াশোনা করুক, বিয়ে তো দিতেই হতো একদিন। তারপর সেই সংসার। সংসারই তো আসল জায়গা মেয়ে মানুষের। জমির শেখ পাকা কথা দিয়ে দিলেন সিকান্দার আলীকে। সামনের মাসের প্রথম শুক্রবারেই বিয়ের তারিখ ঠিক হল।

বিয়ের পরেই প্রথম কথা হল সেলিমের সাথে। মানুষটা সহজ সরল, খুব ভালবাসে লিলিকে। দরিদ্র বাবার সংসার থেকে স্বচ্ছল শ্বশুর বাড়িতে এসে চমৎকার মানিয়ে নিলো লিলি। শ্বশুর সিকান্দার আলীও খুব ভালবাসতেন তাকে। সকাল বিকাল হাঁক ছেড়ে ডাকতেন, 'কই গেলা, শেখের বেটি? আমার চা টা তুমিই বানাইও, মা। আমাগোর ছোড বৌমার হাতের চা একবারে ফাস্ট কেলাশ। কি কও সেলিমের মা?'

সেলিমের বাবা ভালবাসলেও সেলিমের মা কখনোই মন থেকে মেনে নেননি লিলিকে। তার সোনার চাঁদ আইএ পাশ ছেলে কি দেখে পছন্দ করলো এই কাইল্যা মাইয়ারে?

লিলির গায়ের রং কালো না ঠিক, শ্যামলা। তার বাবা অন্যের জমিতে কামলা দেয়। বাড়িঘরের অবস্থাও তো ভালো না। সত্যিই তো, কি দেখে সুদর্শন সেলিম পছন্দ করলো লিলিকে?

লিলি নিজেও অবাক হয়। সেলিম এত ভালবাসে, এত ভালবাসে যে খুশিতে কান্না আসে লিলির। বাজার থেকে লুকিয়ে তার পছন্দের গরম জিলাপী এনে চুপিচুপি হাতে দিয়ে বলে, 'তাড়াতাড়ি খাইয়া লও। তোমার শাশুড়ি আম্মা দেখলে কিন্তু খবর আছে।'
(চলবে)

সুফিয়া ফারজানা
ঢাকা, বাংলাদেশ