অটোয়া, রবিবার ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪
আমার বন্ধু, আমার গর্ব – দেওয়ান সেলিম চৌধুরী

বিবেক আমাকে তাড়না করে
সামর্থ্য বলে চুপ, 
বন্ধুর লাগি কলম ধরা
তাতেও অসীম সুখ। 

যার জন্যে কলম ধরা, আমার অত্যন্ত ভালোবাসার একজন মানুষ। বুকে জড়িয়ে ধরার মত মানুষ, বন্ধু প্রতিম বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহেদ বখত ময়নু।
ময়নু ভাই হঠাৎ একদিন আমাকে ফোন করে বলেছিলেন, দেশে যাচ্ছি ৩/৪ মাসের জন্যে। একটা বই লিখবো। সেদিন কথাটা আমি মোটেও বিশ্বাস করিনি। ভেবেছিলাম ভাবীর হাত থেকে সাময়িক মুক্তি পাওয়ার এটা একটা অহেতুক বাহানা। পরে দেখলাম আমিই ভুল।

যখনই দেশে ফোন করেছি, দেখেছি পূর্ণ উদ্দ্যোমে বই লিখার কাজ চলছে। বইটি যে কোন মুহূর্তে পৃথিবীর আলো দেখবে দেখবে ভাব। কিন্তু লেখকের চোখে মুখে কোথাও প্রসব বেদনার বিন্দুমাত্র ছাপটুকু পর্যন্ত নেই। একেবারেই নির্লিপ্ত, নির্বিকার। ভাবলাম এত শক্তি উনি পেলেন কোথায়? পরে বুঝলাম ’৭১ এর চেতনায় পেয়ে বসেছে। সাথে সাথে ময়নু ভাইকে একটা ইলেকট্রনিক চিরকুট পাঠালাম। যাতে লেখাছিল, “যে ভালবাসায় আপনার মুক্তিযুদ্ধ, সেই ভালোবাসাকে আপনি কখনো কলঙ্কিত করেননি। এখানেই আপনি দূর্লভ।“

মানুষ যখন স্বপ্ন দেখে, সুন্দর পরিপূর্ণ স্বপ্ন, তখন ঘুম থেকে উঠেই তার স্বপ্নকে কাছের কোন মানুষের কাছে ব্যক্ত করতে চায়। কিন্তু যত গভীরতা দিয়েই তার স্বপ্নকে ব্যক্ত করতে চেষ্টা করুক না কেন, কোন অবস্থাতেই তার স্বপ্নকে ২৫ থেকে ৩০ ভাগের বেশী ব্যক্ত করতে পারেনা। বাকীটুকু রয়ে যায় স্বপ্ন দ্রষ্টার একান্ত আপন অনুভূতিতে। “আমার মুক্তিযুদ্ধ” বইখানি সেই স্বপ্নেরই বাস্তব প্রতিচ্ছবি। ১৫২ পৃষ্টার বই থেকে স্বপ্ন দ্রষ্টার সেই অনুভূতিকে পুরো মাত্রায় উপলব্ধি করা আমাদের জন্য অত্যন্ত দুরূহ ব্যাপার।

আমি মুক্তি যুদ্ধ করিনি। সেই সাহস বা সৌভাগ্য আমার হয়ে উঠেনি। কিন্তু ময়নু ভাইয়ের “আমার মুক্তিযুদ্ধ”-র হাত ধরে ধরে অনেকটা পথ হেঁটে এসেছি। জীবন মৃত্যু, আর আলো আঁধারে ঘেরা একটা বিভীষিকাময় পথ। সে পথে হাঁটতে গিয়ে আবিষ্কার করলাম দুই বিপরীত মেরুর একজন মানুষকে। যিনি আত্তর মন্ডলের মত রাজাকারকে মেরে ফেলতেও দ্বিধাবোধ করেননা। নিজের বিবেককে সস্তা দরে বিক্রি করতে পারেননি বলেই পাখি রাজাকারের কাছ থেকে হাত গুটিয়ে নেন ঘৃণাভরে। আবার একই সাথে আবুল বারীর জন্যে মন আজো ভারাক্রান্ত। নিজের অক্ষমতার যন্ত্রণা তাকে সুখে থাকতে দেয়নি। শৈলেন্দু প্রভাকে মাতৃত্বের চরম রূপ দান করেও অতৃপ্তির বেদনায় ভোগেন। দেশকে ভালোবাসেন পাগলের মত। তাইতো বলতে পেরেছিলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের কোন নিজস্ব ঠিকানা থাকতে নেই। দেশই তার ঠিকানা। “আমার মুক্তিযুদ্ধ” গ্রন্থে আমিত্বের কোন বড়াই নেই। নেই লোক দেখানো অহেতুক অহংকার। একান্ত সরলতায় বইটি যে অনেকটা পথ এগিয়ে যাবে, তাতে কোন সন্দেহ নেই। 

দেওয়ান সেলিম চৌধুরী
অটোয়া, কানাডা