অটোয়া, বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর, ২০২৪
ভিন্ন জীবন (পর্ব-সাত) - সুফিয়া ফারজানা

ভিন্ন জীবন (পর্ব-ছয়) পড়তে ক্লিক করুন

পর্ব - সাত 

জও অফিস থেকে বের হয়ে ফারিন দেখলো, প্রতিদিনের মতই তার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে আরমান। এখান থেকেই ফারিন মিরপুরের বাস ধরে প্রতিদিন। তাকে দেখে এগিয়ে আসে আরমান, 'এত দেরী হল যে?'

'কিছু কাজ গুছিয়ে বের হলাম। এম ডি স্যার ডেকেছিলেন।'

'ও, তাই? ভালো, খুব ভালো। তোমার প্রমোশন এবার কনফার্ম।' 

'আমি কিছু পাওয়ার আশায় কিছু করি না, আরমান। আমি শুধু আমার কাজটা করি।'

'আমি জানি। অন্তত আমি তোমাকে জানি, ফারিন। চলো, একটু চা খাই।'

'আজ ভালো লাগছে না, খুব টায়ার্ড লাগছে।'

'সেই জন্যই তো চা খাবো। চলো, চলো।'

আরমান এমন নাছোড়বান্দা, কিছুতেই এড়িয়ে যাওয়া যায় না তাকে। একটা কফিশপে বসলো ওরা। আরমান বললো, 'আর কিছু খাবে?'

'না।'

'দূর! তোমার সবকিছুতেই না। খুব ভালো কলিজার সিংগাড়া বানায় এরা। দাঁড়াও, নিয়ে আসি।'

সিংগাড়া শেষ করে কফিতে চুমুক দিতেই ফারিনের মনে হল, সারাদিন পরিশ্রমের পরে এই খাবারটুকু, এই বিশ্রামটুকু তার প্রয়োজন ছিল। এই যে একটু সময় অলস বসে থাকা, এটারও প্রয়োজন ছিল। সত্যিই প্রয়োজন ছিল। ইদানীং  তার প্রয়োজনগুলো সে নিজেই বুঝতে পারে না। দিনরাত অন্যের প্রয়োজন মেটাতেই বেলা ফুরিয়ে যায় তার।
ইদানীং আরমানের মাঝে ভার্সিটির সেই হিমেলের ছায়া দেখতে পায় যেন। সেই হিমেল আর আজকের হিমেল সত্যিই কি একই মানুষ? মানুষ বদলায়, কিন্তু এতটা কি বদলায়? আর একবার কি ফিরে পাওয়া যায় না সেই উথাল-পাতাল ভালবাসা আর পাগলামি ভরা দিনগুলি?? না, তা যায় না। যে দিন যায়, একেবারেই যায়। রাতের সব তারা দিনের আলোর গভীরে থাকে না। 
ফারিন বুঝতে পারে, নিজের অজান্তেই আরমানের প্রতি একটা অনুভূতি, একটা দুর্বলতা তৈরি হচ্ছে তার। এই অনুভূতির নাম ফারিন জানে না। আরমান প্রায় তারই সমবয়সী। এত বয়সেও বিয়ে-শাদী করেনি। কবে করবে, কে জানে?? আরমানের কাছে ইদানীং কিছুটা প্রত্যাশাও করে ফারিন। প্রত্যাশা পূরণ না হলে অভিমান হয়। অবশ্য খুব বেশি অভিমান জমতে দেয় না আরমান। দিনে দিনে হিমেলের প্রতি যে অভিমান জমে জমে বরফ হয়ে গেছে, সেই বরফই কি গলতে চায় আরমানের হৃদ্যতার উত্তাপে??
কিন্তু ফারিন তো চায় না, চায়নি কখনও হিমেলের বিকল্প খুঁজতে। হিমেল, তার হিমেলের বিকল্প কি হতে পারে অন্য কেউ? কিভাবে সম্ভব?? সে তো ভালবেসে, পরিবারের সবার মতের বিরুদ্ধে গিয়ে বিয়ে করেছিল হিমেলকে। হিমেল, তার হিমেল যে তার সাবিত-সারার বাবা।  তিলে তিলে তার নিজের হাতে একটু একটু করে সাজানো সংসার, তার সাবিত-সারা, ফুলের মত দুটি সন্তান, তার হিমেল,এই তো তার অস্তিত্ব। এর কি কোন বিকল্প হতে পারে??
আরমান একটু খামখেয়ালি, পাগলাটে, কিছুটা গায়ে পরা স্বভাবের। তবে এসব কিছুর পরেও আরমানের মাঝে একজন চমৎকার সহানুভূতিশীল বন্ধুকে খুঁজে পায় ফারিন। নির্ভর করা যায়, এমন একজন মানুষ আরমান। হিমেলের মত দায়িত্বহীন, হৃদয়হীন নয়। কিন্তু পরক্ষণেই ফারিনের অপরাধী মনে হয় নিজেকে। সে ঠকাচ্ছে না তো হিমেলকে? সে তো কোন সম্পর্কে জড়াতে চায় না আরমানের সাথে। আবার আরমানকে এড়িয়ে চলতেও পারছে না সে। এই অদ্ভুত বিপরীতমুখী অনুভূতির নাম ফারিন জানে না।।
(চলবে)

সুফিয়া ফারজানা
ঢাকা, বাংলাদেশ