অটোয়া, বৃহস্পতিবার ২ মে, ২০২৪
বিজয়ের মাসে রুমা বসুর একগুচ্ছ দেশ ও মুক্তিযুদ্ধের সনেট

১) বাংলা ও বাঙালি
স্বাধীনতা তুমি মোরে পরিচয় দিলে
প্রসবিলে দশ মাসে মোর বাংলাদেশে
একাত্তরে বাঙালিরা নিজ দেশ পেলে
ত্রিশ লক্ষ প্রাণেরই বিনিময়ে শেষে।

হানিল কত যে প্রাণ বুদ্ধিজীবীদের
হিংস্র পশু সম যত পাকিস্তানী  সেনা
সম্ভ্রম লুন্ঠিলো কত মাতা কন্যাদের 
পাকিস্তান শোধ কর বাংলাদেশী দেনা।

মাতৃভাষা মাতৃভূমি জয় করে নিতে
অকুতোভয় বাঙ্গালী প্রমাণ যে করেছে
বাংলা ভাষা ও বাঙ্গালী পরিচিত  হতে
মুক্তিযুদ্ধে নিজ দেশ জিতিতে পেরেছে। 

পৃথিবীর বুকে এক নব দেশ হলো।
বাংলাদেশ মানচিত্রে নিজ স্থান পেল॥

২) পরভূমে 
রদেশে কেটে গেল আধেক জীবন,
স্বামী পুত্র সকলেই আছে পরভূমে,
তাইতো হবে না ফেরা কভু মাতৃভূমে,
হয়তো এই পরবাসে হবে যে মরণ!

পড়ে  আছে স্বভূমিতে এ’ মন ও মনন,
মম চিতা জ্বলে যদি এদেশের ভূমে,
চিতাভস্ম যেন মিলে জলেতে স্বভূমে,
সব কিছু ঠিক হবে মরণের ক্ষণ।

মাতৃভূমি মাগো তুমি করো মোরে ক্ষমা,
যত ব্যথা রয়ে গেলো এ জীবনে জমা॥

ভাই বোন সকলের ভালবাসা  ঠেলে,
ভালো লাগা ভালবাসা সব দেশে রেখে,
মনের শান্তি সবই নিজ দেশে ফেলে,
এলাম হেথা বিদেশের স্বপ্ন চোখে মেখে॥

৩) বঙ্গবাসী
বেশ বসনভূষণ বঙ্গললনার,
বংশানুক্রমে ব্যাপ্তি বহে বিশ্বময়,
বেনে বানায় বসন, বোনের বধূর,
বঙ্গগুণী বুনিতেছে  বাংলার  বংশীয়।

বাংলাদেশ বাংলাভাষা বঙ্গেরসন্তান,
বয়োবৃদ্ধদের বোলে বাংলার বিজয়ে,
বীরদর্পে বাংলারছেলে বক্তব্য বলেন,
বঙ্গভাষায় বঙ্গেতে  বিভাবসুজয়ে।

বেল , বিলিম্বি, বেদানা, বঁইচি, বড়ই,
বল বাড়ায় বাংলায় বসবাসকারীর।
বড়ণখা, বনচণ্ডাল, বেল,বকুলই,
বন বনস্পতিরূপ বর্ধনে বাংলার।

বঙ্গমাতা বঙ্গভূমি বক্ষেরমাঝারে
বঙ্গসন্তান  বঙ্গাব্দ ব্যাপিকা বহেরে।।

৪) জন্মভূমি
হে আমার জন্মভূমি বঙ্গমাতা মম,
তোমার সন্তানেরে যে মানুষ বানাও,
মাথা উঁচু তাদেরকে করতে শেখাও, 
কোটি কোটি সন্তান তব বাঁচে পশু সম।

ভুলে জীবন যাদের  হলো আঁধারতম,
পাক থেকে তাদের কে টেনেই ওঠাও,
সুন্দরের সভা মাঝে তাদের পাঠাও।
ইচ্ছেতে আঁধারে যারা, তাদের না ক্ষম।

স্বর্গের মাটি দিয়ে গড়া এই মাতৃভূমি,
সবে রক্ষা করে যেন ভেবে পূন্যভূমি॥

বিশ্বাসঘাতকতা করে যে স্বদেশের সনে,
তাকে শাস্তি পেতে হবে জেনে রেখো সবে,
সারা বিশ্ব তাদেরকে ছুঁড়ে দেয় কোনে,
কখনও দেশদ্রোহীর  ক্ষমা নাহি হবে। 

৫) আমার বাংলা
হংকার হলো আমি বাঙালি সন্তান 
বাংলাদেশে’ মেয়ে আমি, এই পরিচয়
বাংলা ভাষা গানেরই মতো শ্রুতিময়
বাংলাকে ধারণে বাড়ে বাঙালির মান।

শ্রুতিমধুর বাংলাই বাঙালির প্রাণ
বাঙালি প্রাণ সর্বদা উজ্জ্বল যে হয় 
বাঙালি রান্নার স্বাদ রসনাতে রয়
মেলোডিতে ভরা বাংলা সুরময় গান।

মেধা ও মননে সেরা বাংলার মানব 
শ্যামলিমা ঘেরা সারা বাংলার প্রান্তর
একাত্তরে বাঙালির রক্তে ভেজে মাটি
তাড়িয়েছে পাকিস্তানী  যুদ্ধের দানব
শহিদ হারিয়ে কাঁদে বাঙালি অন্তর
মুক্তিরা ছিল বাঙালি সন্তান যে খাঁটি॥

৫) স্বাধীনতা নাকি স্বেচ্ছাচারিতা
ত্রিশ লক্ষ তাজা প্রাণ উৎসর্গের ফল
কোটি মানুষ পেল যে এই বাংলাদেশ
স্বেচ্ছাচারিতায় সব হলো যে বিকল
অসৎ লোকে করেছে যে এদেশ শেষ।

স্বাধীনতার নামটা যে স্বেচ্ছাচারিতা-
এ দেশেতে হয়ে গেছে  কালের আবর্তে।
বীরের রক্তে রাঙানো এই স্বাধীনতা
জবাবদিহির সময়  হয়েছে যে মর্তে।

জাতির  জনককে মেরে ক্ষমতালোভীরা
আঁধারে পাঠিয়েছিল সোনার দেশটা,
পা চাটা - ক্ষমতালিপ্সু বুর্জোয়া আমলারা,
রঙ পাল্টে এ দেশের  করল কী হালটা!

গিরগিটিদের মুখোশ টেনে ছিঁড়ে দিলে
সোনার বাংলার পুনঃ স্বাধীনতা মিলে।

৬) বীরাঙ্গনা সন্তান
মি জন্মেছিলাম এক স্বাধীন দেশে 
পরাধীনতা সম্বল করা কোনো ক্ষণে
ছিনিয়ে নিতে জন্মভূমি অসম এ রণে
বীরাঙ্গনার সম্ভ্রম বিনিময়ে শেষে।

যে দেশের স্বাধীনতা পাওয়ার রেশে
গোত্র পরিচয় হীন মম প্রবেশ এ বনে
হয়েছে আমারই মত আরো শিশু সনে
জন্মেছিলাম এ দেশে পিতৃ হীন বেশে।

মেলেনি আমার স্থান স্বাধীন মাটিতে
মোর মা হয়নি পূজ্য কোন বীর সম।
পারিনি আমি এ ভূমে গর্বেতে হাঁটিতে
জন্মেই জীবন হলো অন্ধকার তম।

যুদ্ধ শিশু  জন্ম নিয়ে স্বাধীনতা এল,
আমাদের ঠাঁই বাংলার মাটিতে না হলো॥

৭) বাংলার স্বাধীনতা
য়াহিয়া খান ছিল বড়ো শয়তান 
উনিশ শ একাত্তরের পঁচিশে মার্চেতে
গণহত্যা শুরু করে বাংলার গর্ভেতে
নৃশংসতা করেছিল হীন পাকিস্তান।

রাজাকার আলবদর ও পাকি মাস্তান
বাঙালির রক্ত নিয়ে যুদ্ধে ছিল মেতে
মুক্তিযোদ্ধারা রেখেছে পাকিরে ভয়েতে 
 বাঙালির  কাছে হেরে করেছে প্রস্থান

২৬ মার্চে স্বাধীনতা ঘোষনাটা  হলে
জয় ১৬  ডিসেম্বরে, জয় বাংলা,বোলে।

তিরিশ লক্ষ বাঙালি প্রাণ দিয়েছিল
বুদ্ধিজীবিদের পাক সেনারা হেনেছে
হাজার  হাজার শিশু জন্ম নিয়েছিল
দুই লক্ষ বীরাঙ্গনা সম্ভ্রম দিয়েছে॥

৮) বাংলা বোল
বাংলাদেশে উনিশ শ বাহান্ন সালের
ফেব্রুয়ারীর একুশ বৃহষ্পতিবারে,
পাকিস্তানি বর্বরেরা উপর মিছিলের
গুলিতে রক্তাক্ত করে বাঙালি প্রাণেরে

ভাষা শহিদ হলো যে বীর পাঁচজন
বরকত, শফিউর, জব্বার, রফিক, 
সালাম এরাই সেসব বাঙালি সন্তান 
ভাষার পথে রক্তাক্ত প্রথম পথিক

বাংলা বাঙালি মুখের মধু মাখা বোল
পাকিস্তানি বর্বরেরা কেড়ে নিতে চায়
ভেবে নিয়ে বাঙালিরে আসলে দুর্বল
বাহান্নতে বাঙালির তাজা রক্ত খায়।

একুশে ফেব্রুয়ারী এ মাভাষা দিবস
বাঙালি বিশ্বের বুকে করালো প্রবেশ॥ 

৯) বুদ্ধিজীবী দিবস

চৌদ্দই ডিসেম্বরের সে ভয়াল রাত,
পঞ্চাশ বছর পরও গায়ে কাটা দেয়।
পাকিস্তানীরা বাংলাকে করে দিতে কাত,
বুদ্ধিজীবীদের উপর খড়্গ তুলে নেয়।

বাঙালির বিজয়ের আগের মুহূর্তে,
রাজাকার আলবদর আল শামসকে,
সাথে নিয়ে পাকিস্তানী নর পিশাচেতে,
মেরেছিল আমাদের বুদ্ধিজীবীদেরকে।

শিক্ষাবিদ, গবেষক, চিকিৎসক, কবি
প্রকৌশলী, সাংবাদিক, সাহিত্যিকদের
কেউ ছাড় পায়নি, বাংলা ছিল যার দাবি,
নোংরা হত্যা যজ্ঞ থেকে পাকিস্তানীদের।

স্বাধীন বাংলাদেশকে করতে মেধাশূন্য 
বুদ্ধিজীবী হত্যা করে পাকিস্তানী বন্য।

রুমা বসু
অটোয়া, কানাডা