অটোয়া, রবিবার ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪
আশ্রম: একটি চেতনার নাম – চতুর্থ পর্ব

কবির চৌধুরী, অটোয়া: বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহেদ বখত ময়নু ভাইয়ের “আমার মুক্তিযুদ্ধ” গ্রন্থের প্রকাশনা উৎসবে অটোয়ার সুধীজনদের উপস্থিতি নিশ্চিতকরনের লক্ষ্যে আমি, মহসীন বখত, গুলজাহান রুমি, সৌরভ বড়ুয়া, এবং সুলতানা শিরীন সাজি, প্রায় প্রতিদিন বিকালে টিমহরটন্সে মিলিত হই, বসে বসে আড্ডা দেই, আলাপ-আলোচনা করি। আড্ডার পাশাপাশি আশ্রমের অনুষ্ঠানকে সুন্দর করার জন্য বিভন্ন রকমের শলা-পরামর্শ করি! এইসব শলা-পরামর্শের মাঝে প্রতিদিনই ডিসেম্বরের অনুষ্ঠান নিয়ে তাদের সাথে কথা হয়। অনুষ্ঠান করবো কি না তাদেরকে জিজ্ঞাসা করি। গত দুই দশক ধরে শহরে অনুষ্ঠিত অনেক অনুষ্ঠান আয়োজনের সাথে আমি জড়িত ছিলাম। বিশেষ করে ২০০৯ সালে আশ্রম প্রকাশের পর থেকে তো ছোট বড় অনেক অনুষ্ঠান নিজেই আয়োজন করেছি। ইতিপূর্বে আশ্রমের কোনো অনুষ্ঠান নিয়ে কখনো এতো চিন্তা করতে হয়নি। কিন্তু এবার করতে হচ্ছে। কারণ, এবছর সুলতানা শিরীন সাজি আশ্রমের সম্পাদকের দায়িত্ব নিয়েছেন। তাঁর দায়িত্ব নেওয়ার পর এই প্রথম বড় পরিসরে আশ্রমের কোনো অনুষ্ঠান হচ্ছে। যেকোনোভাবেই হোক অনুষ্ঠানটিকে সুন্দর এবং আকর্ষনীয় করতে হবে।  

কিন্তু কীভাবে? নিত্যসঙ্গী নগরপলিটিক্স আর আমিত্বের সাথে যোগ হয়েছে মহামারী কোভিডের বিস্তার টেকাতে অন্যতম কার্যকরী পদ্ধতি ‘লকডাউনের’ পার্শ্বপতিক্রিয়া। অনেকের মতে, কোভিডের সময় লকডাউনের কারণে মানুষ অনেকটা আত্মকেন্দ্রিক আর ঘরমুখো হয়ে গিয়েছে। মানুষের বিনোদনের মাধ্যমগুলোতে বিরাট পরিবর্তন এসেছে। আগে মানুষ যেভাবে বিনোদনের জন্যে বাইরে যেত, এখন আর সেভাবে বাইরে যায় না। ঘরে বসেই ইন্টারনেটের সাহায্যে ইউটিউবে গানশোনা, সিনেমা দেখা থেকে শুরু করে অনলাইনে সওদাপাতিসহ জীবনযাপনের প্রয়োজনীয় অনেক কাজই মানুষ সমাধা করে নিচ্ছে। এমতাবস্তায় স্থানীয় শিল্পীদের নিয়ে, টিকেট দিয়ে “আশ্রম একক বা দ্বৈত” সঙ্গীতানুষ্ঠান করা আদৌ ঠিক হবে কি না, করলেও অনুষ্ঠানে দর্শক হবে কি না তা নিয়ে আমি যখন দ্বিধাগ্রস্থ তখন সঠিক সিদ্ধান্তটি নেওয়ার পথ দেখিয়ে দেন অটোয়ার ব্যাংক স্টীটে অবস্থিত ‘টেইক আউট কিং’ রেষ্টুরেন্টের মালিক আমাদের পারিবারিক বন্ধু, হিতাকাঙ্ক্ষী, নরুল আমীন চৌধুরী খসরু ভাই এবং তাঁর স্ত্রী জাহিদা বেগম মিতা ভাবী। খসরু ভাই এবং মিতা ভাবীকে আমি আমার আপন বড় ভাই এবং ভাবী হিসেবেই দেখি। অটোয়া ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাস থেকে খসরু ভাইয়ের দোকান কাছে থাকায় সেদিন ক্লাসের পর হাঁটতে হাঁটতে তাঁদের রেষ্টুরেন্টে চলে যাই। উদ্দেশ্য খসরু ভাইকে দেখা। সেখানে গিয়ে দেখলাম ভাবীও দোকানে। আমাকে দেখেই ভাবী বললেন, “কি ব্যাপার? আজকাল দেখি টিমহরটন্সে বসে খুব আড্ডা দিচ্ছেন! অনুষ্ঠান করবেন শুনলাম”।  আমি বললাম, জানেনই যখন, তখন জিজ্ঞাসা করছেন কেন? উনার পরের প্রশ্ন “কে গান করবে?” ভাবীর কথা শেষ হওয়ার আগেই খসরু ভাই বললেন, “এবার বাংলাদেশ থেকে কাউকে আনেন। আমি স্পনসর করবো।“ 

মিতা ভাবীর করা প্রশ্নটি, আমার গত কয়েকদিনের চিন্তার জট খুলতে শুরু করে দেয়। আমি বললাম এখনো জানিনা। আসলে কি করবো চিন্তা করছি। ইচ্ছে ছিলো ‘আশ্রম একক সঙ্গীতানুষ্ঠান’ করবো কিন্তু ডিসিশান নিতে পারছিনা কাকে দিয়ে অনুষ্ঠান করবো। এছাড়া সাজি ভাবী চাইছেন পত্রিকার ১৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বড়সড় একটা অনুষ্ঠান করতে। আমার কথা শুনে মিতা ভাবী বললেন, “আমার মতে, এইবার ‘একক সঙ্গীতানুষ্ঠান’ না করে সাজি ভাবীর কথামতো পত্রিকার ১৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীই উদযাপন করেন। অনুষ্ঠানে ৩/৪ জন ভাল শিল্পী নেন। সবচেয়ে ভাল হয় যদি গত কয়েকবছর আশ্রম একক/দ্বৈত সঙ্গীতানুষ্ঠানে যারা গান করেছেন তাদেরকে দিয়ে অনুষ্ঠান করেন। এতে দর্শকদের উপস্থিত কনফার্ম।“ ইউরেকা! ধন্যবাদ ভাবী। গত কয়েকদিন থেকে আমার অবচেতন মনের চিন্তাগুলো নিয়ে সিরিয়াসলি চিন্তা করার কথা মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য বিশেষ করে “কনফার্ম” শব্দটি বলার জন্যে আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। এছাড়া ৩/৪জন না, শহরের সব শিল্পীদের নিয়ে এবার অনুষ্ঠান করবো বলেই আমি চলে আসতে উদ্যত হই। মিতা ভাবী বললেন, “রাগ করলেন? উঠছেন যে? চলে যাবেন? চা খাবেন না? বিরিয়ানী খেয়ে যান।” আমি বললাম না। অন্য সময় খাব। আমাকে এখন টিমহরটন্সে যেতে হবে। “টেইক আউট কিং” রেষ্টুরেন্ট থেকে বের হয়েই মহসীন ভাই এবং সাজি ভাবীকে ফোন দেই, জানতে চাই কোথায় আছেন? ঘন্টাখানেক পরে কি টিমে আসতে পারবেন?

ঘন্টাখানেক পরে ডোনাল্ড স্ট্রিটের টিমহরটন্সে ঢুকেই দেখলাম মহসীন ভাই, রুমি ভাবী আর সাজি ভাবী কফি নিয়ে বসে আছেন। আমাকে দেখেই মহসীন ভাই জিজ্ঞাসা করলেন, “এত জরুরী তলব? ব্যাপারটা কী?” বললাম, বলবো ভাই, বলবো। বসতে তো দিন। আমার জন্যে রাখা কফিতে চুমুক দিতে দিতে বললাম, মহসীন ভাই, ৩ তারিখ আশ্রমের ১৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে শহরের সব শিল্পীদের আমন্ত্রণ জানাতে চাই। সবাইকে নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করলে কেমন হয়? আমার কথা শুনে উনারা বললেন খুব ভাল হবে, কিন্তু শহরের সব শিল্পীরা কি আশ্রমের মঞ্চে একসাথে গান করতে রাজী হবে? বললাম চেষ্টা করে দেখিনা কি হয়। আমার মনে আছে, সেদিনই আমরা অটোয়ার স্থানীয় কিছু শিল্পীদেরকে ফোন দিয়ে আমাদের অভিপ্রায়ের কথা বলি এবং অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার আমন্ত্রণ জানাই। আমরা খুব ভাগ্যবান যে সেদিন এবং এর পরে আমরা যাদেরকেই ফোন করেছি, তাদের মধ্যে অধিকাংশ শিল্পীই আমাদের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে আশ্রমের ১৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপনের অনুষ্ঠানে গান, কবিতা, নাচ করবেন বলে কথা দেন। এভাবেই “শহরের অধিকাংশ শিল্পীদের নিয়ে” আশ্রমের কোনো অনুষ্ঠানের শুরু। গুলজাহান রুমি আর সুলতানা শিরীন সাজির অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে আমরা ৩ডিসেম্বর সুন্দর একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করতে সক্ষম হই। 

আশ্রম আয়োজিত অনুষ্ঠানে শহরের সব শিল্পীদের না আনতে পারলেও “আমার মুক্তিযুদ্ধ” গ্রন্থের প্রকাশনা উৎসব আর “আশ্রমের ১৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর” অনুষ্ঠান থেকে আমার প্রাপ্তি অনেক। এই দুটি অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে মহসীন ভাই, রুমি ভাবী, সাজি ভাবীর সার্বক্ষণিক সঙ্গ আর সহযোগিতার পাশাপাশি অটোয়ার অনেকের সাহচর্য আমাকে আশ্রম পত্রিকা এবং আশ্রম সঙ্গীতানুষ্ঠান নিয়ে নতুনভাবে চিন্তা করতে উৎসাহিত করছে। বিশেষ করে আশ্রমের কর্মকাণ্ড নিয়ে লেখক মুস্তফা চৌধুরী, ড. মনজুর চৌধুরী ও লেখক সুপ্তা বড়ুয়ার লেখা প্রবন্ধগুলোর উল্লেখ করতে হয়। কবি বজলুশ শহীদ তো তাঁর লেখা একটি কবিতা আমাকে উৎসর্গই করে দিয়েছেন। আশ্রম নামক পত্রিকাটি নিয়ে তাঁদের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা আমাকে নতুনভাবে উজ্জীবিত করছে। এতসব প্রাপ্তির মাঝে আমি সবচেয়ে বেশি আনন্দিত এবং খুশি হয়েছি আশ্রমের ১৫তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানটি আশ্রমের সহসম্পাদক প্রয়াত মান্নান মোহাম্মদ মিঠু (মিঠু ভাই)কে উৎসর্গ করতে পেরে।

 



সত্যি কথা বলতে আমরা খুব ভাগ্যবান। এইদিনের বিরূপ আবহাওয়ায় যেখানে অনুষ্ঠান হবে কি না তা নিয়ে অনেকেই সন্দিহান সেখানে অটোয়ার শ’দেড়েক সঙ্গীতপ্রিয় দর্শকশ্রোতার উপস্থিতিতে, আশ্রম সম্পাদক সুলতানা শিরীন সাজির সাবলীল আর মনোমুগ্ধকর উপস্থাপনায়, অটোয়ার অধিকাংশ সঙ্গীতশিল্পী ও যন্ত্রশিল্পী যথাক্রমে, আশেক বিশ্বাস, মাইনুল আহসান, ডালিয়া ইয়াসমিন, সিতারা জেবিন, পিয়া ইসলাম, অপূর্ব দাশ, ফারজানা ইসলাম অজন্তা, শিশির শাহনেওয়াজ, আলী আহমদ রণি এবং রংধনু ব্যান্ডগ্রুপের সদস্য, সৈয়দ সিরাজুল ইসলাম, সুপ্তা বড়ুয়া, আরেফিন কবির, শুভ্র ইসলাম, চন্দ্রিমা বড়ুয়া, দুর্জয় বড়ুয়া, জাবেদ চৌধুরী, এবং আবৃত্তিকার যেমন, বজলুশ শহীদ, মুস্তফা চৌধুরী, রুমা বসু, মাসুদুর রহমান, শিউলি হক, মাকসুদ খান, গিয়াস ইকবাল সোহেল, তাপসী দাশ, নৃত্যে প্রিমা দত্তের পরিবেশনা এবং আলোচনায় লেখক মহসীন বখত আর কবি দেওয়ান সেলিম চৌধুরীর প্রাঞ্জল বক্তব্য আমাদেরকে উৎসাহিত করেছে, বিশ্বাস করতে বাধ্য করেছে স্বদিচ্ছা থাকলে ভালো কিছু করা যায়। 

আশ্রমের ১৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানকে ঘিরে আমার লেখা এই পর্বটি শেষ করার আগে অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া সকল শিল্পী ও কলাকুশলী এবং উপস্থিত অটোয়াবাসী সঙ্গীতপ্রিয় শ্রোতাদের ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানাই। আপনাদের অংশগ্রহণ ও উপস্থিতি ছাড়া আমাদের অনুষ্ঠান কখনো এত সুন্দর আর আকর্ষনীয় হতো না। আমি ধন্যবাদ জানাই আয়োজনের পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তিবর্গকে যেমন, তাজ মহল ইন্ডিয়ান রেষ্টুরেন্ট, নার্গিস বুটিক, আই এ ফাইনিন্সিয়াল গ্রুপ, বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহেদ বখত ময়নু. ইউনিটেক্স, এস এস মটরস, রয়েল লাপাস টিম রিয়ালিটি, লা ভি ইমিগ্রেশন, রুমি’জ ব্লগ অটোয়া কানাডা, আয়ান বুটিক, কাজী মাওলা বাদল, এলাইভ এডুকেশন, পাওয়ার মার্কেটিং রিয়েল এস্টেট, এম এফ ফুডস, পালকি রেষ্টুরেন্ট, এবং মন্ট্রিয়েল থেকে আগত “আলী মিষ্টি” ও তার মালিক তানিয়া এলেন প্রমুখকে। এছাড়া একটি অনুষ্ঠানের সবচেয়ে কঠিন কাজ টিকেট বিক্রিতে সাহায্য করার জন্য আমরা আন্তরিকভাবে, ডালিয়া ইয়াসমিন, অপূর্ব দাশ, তাপসী দাশ, সুপ্তা বড়ুয়া, আছিয়া বেগম, মাসুদুর রহমান, লিজা কিবরিয়া, চৈতি মামুন, রিয়াজ জামান, অনুরাধা দত্ত, সাদী ইমাম চৌধুরী এবং এই খারাপ আবহাওয়ার মাঝেও অনুষ্ঠানে ফটো তুলতে আসার জন্য আমরা আজিজ খানকে ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানাই। Rumi’s Vlog Ottawa Canada, ইউটিউব চ্যানেলের মালিক ইউটিউবার গুলজাহান রুমি গত কয়েকমাস ধরে অনুষ্ঠানের প্রচারের জন্য নিয়মিত ভিডিও আপলোড করেছেন। এমনকি পুরো অনুষ্ঠানের ভিডিও করে এখনো খণ্ড খণ্ড করে আপলোড করছেন। এই কাজের জন্য আমরা তাঁর কাছে কৃতজ্ঞ। 

আশ্রম: একটি চেতনার নাম প্রবন্ধে আশ্রমের ১৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে উপস্থিত একজন দর্শকের কথা না লিখলে, তাঁকে ধন্যবাদ না দিলে আমার এই কাহনের পূর্ণতা আসবে না। এই দর্শকের নাম রোজি জুবেরী। তিনি আশ্রমের সম্পাদক সুলতানা শিরীন সাজির ঘনিষ্ঠ বন্ধু। থাকেন কানাডার মেগাসিটি টরন্টোতে। টরন্টো থেকে অটোয়ার দূরত্ব প্রায় ৩০০ মাইল। এত দূরের পথ পাড়ি দিয়ে রোজি অটোয়ায় এসেছিলেন আশ্রমের অনুষ্ঠান দেখার জন্য, সুলতানা শিরীন সাজিকে উৎসাহ দেওয়ার জন্য। বন্ধুত্বের কি প্রগাঢ় বন্ধন! শহরের অতিআপন বন্ধুরা যখন, স্থানীয় শিল্পী, এত শিল্পী কেন? পত্রিকার অনুষ্ঠান মানে আলোচনার অনুষ্ঠান, টিকেটের এত দাম কেন? আমরা তো শহরের বাইরে যাবো, অন্য আরেকটা প্রোগ্রাম আছে বলে অনেক অনুষ্ঠানকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে, বা ওয়েদার খারাপ হবে বলে মুখরোচক আলোচনায় ব্যস্ত থাকে, সেখানে টরন্টো থেকে অটোয়া এসে শিরীন সাজিকে উৎসাহ দেওয়া সত্যিই অনুকরণীয়! ধন্যবাদ রোজি জুবেরী। স্যালুট আপনাদের বন্ধুত্বকে। আপনাদের মতো কিছু মানুষ আছেন বলে এখনো আমরা আমাদের নিজস্ব সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রসারে এবং প্রচারে আগ্রহবোধ করি, অনুপ্রাণিত হই, এই পরবাসে সদ্য পরিচিত মানুষকে আপন বন্ধু বলে গ্রহণ করতে দ্বিধাবোধ করি না।

 



এই বন্ধুত্বের কারণে, সঙ্গীতকে ভালোবাসার কারণে, বরাবরের মতো এবারো অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর অনেক দর্শকশ্রোতা, অংশগ্রহণকারী শিল্পী, কলাকুশলী আমাদেরকে টেলফোন করে, ফেইসবুকে স্টেটাস দিয়ে, ইনবক্সে মেসেজ দিয়ে ধন্যবাদ দিয়েছেন। অনুষ্ঠানের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। আশ্রম: একটি চেতনার নাম, লেখাটি শুরু করেছিলাম সেরকমই কিছু কমেন্ট এবং অটোয়া ইউনিভার্সিটির ছাত্র শিয়েতার ইমেইলের উল্লেখ করে আর শেষ করবো আশ্রমের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী কণ্ঠশিল্পী ফারজানা মাওলার ইমেইল দিয়ে। ফারজানা লিখেছেন, 

প্রিয় কবির ভাই, সাজি ভাবী এবং আশ্রম পরিবার,
     অকুন্ঠ অভিনন্দন রইলো একটি সার্থক, সুআয়োজিত অনুষ্ঠান উপহার দেয়ার জন্য।
     আমাকে আপনারা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানিয়ে অত্যন্ত সম্মানিত করেছেন। আপনাদের যত্নের ছোঁয়া ছিলো পুরো আয়োজনে। আলো, সাউন্ড - সবকিছু মিলিয়ে গান গাইতে খুব আরাম পেয়েছি, এটা আমি মন থেকে বলছি। অনেক শিল্পীদের একমঞ্চে নিয়ে আসার দুরূহ উদ্যোগ নিয়েছেন - এটাও আমার চমৎকার লেগেছে।
     আর দর্শক হিসেবে বলছি খুব গোছানো মনে হয়েছে পুরো আয়োজন। আমার প্রত্যেক শিল্পী ভাই-বোন খুব সুন্দর গেয়েছেন, আবৃত্তি করেছেন। রংধনু আমাদের অটোয়ার জন্য একটা নতুন পাওনা। গান-কবিতার বাছাই আমার চমৎকার মনে হয়েছে। কবিতা বা স্পীচ অনেক সময় বোরিং মনে হয় কিন্তু কালকের আয়োজনে আমার কাছে ঐ আইটেমগুলো বৈচিত্র্যপূর্ণ মনে হয়েছে। দর্শক খুব মনোযোগী ছিলেন। আমি বেশীরভাগ সময় হলে নীরবতা পেয়েছি, যা সবসময় শিল্পীদের জন্য সম্মানজনক।
     আবহাওয়ার জন্য আরো অনেক দর্শক এতো সুন্দর অনুষ্ঠান দেখতে পেলেন না - এটা একটা আফসোস। অনেক সময়ই শিল্পীরা সামনের সিঁড়ি দিয়ে স্টেজে ওঠা-নামা করছিলেন। এটা হয়তো এড়ানো যেতো বলে আমার মনে হয়েছে।
     একটা অনুষ্ঠান তৈরি করতে কি পরিমান শ্রম এবং শান্তি ব্যয় করতে হয়, তা আমি খুব ভালো করে জানি। এই পরিশ্রমের কদর যেন আয়োজকরা সবসময় পান। গঠনমূলক সমালোচনা সবসময় কাম্য, কারণ তা আসলে সহযোগীতার-ই নামান্তর। আক্রমণাত্মক এবং নিষ্ঠুরভাবে যখন সমালোচনা প্রকাশ করা হয়, তার পেছনে ১০০% ব্যক্তিস্বার্থ থাকে। এ ধরণের সমালোচকদের প্রতি আমার একবিন্দুও শ্রদ্ধা নেই। কামনা করছি আশ্রম পত্রিকা এবং আশ্রমের অনুষ্ঠান যেন এধরণের আক্রমণ কখনো না পায়।
     আশ্রমের উত্তোরত্তর শ্রীবৃদ্ধি কামনা করি। দুর্নিবার তারুণ্যের পথে এবার আশ্রম এগিয়ে যাক।

অনেক ধন্যবাদ।
-ফারজানা মাওলা (অজন্তা)

আশ্রমের ১৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান নিয়ে কণ্ঠশিল্পী ফারজানা মাওলা (অজন্তা) এবং অটোয়া ইউনিভার্সিটির স্টুডেন্ট শিয়েতার ইমেইল এবং অনুভূতি, কানাডার বহুজাতিক সমাজ ব্যবস্থায় অভিবাসী জনগোষ্ঠী, সাধারণ পাঠক, সঙ্গীতপ্রিয় দর্শকশ্রোতা, একজন সাংস্কৃতিক কর্মী, একজন সংগঠক, একজন শিল্পী, একজন লেখক, একজন প্রকাশক, এবং একজন সম্পাদকের কাছে কী বার্তা দিচ্ছে? (চলবে…)

কবির চৌধুরী
প্রকাশক, আশ্রম
৩০/১২/২০২৩
অটোয়া, কানাডা

পুনশ্চঃ
৩ ডিসেম্বর অটোয়ার আবহাওয়া খারাপ থাকার কারণে ফটোগ্রাফার আজিজ খান সময়মতো অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে না পারায় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী সবার ফটো তুলা সম্ভব হয়নি। তাই আমার এই লেখার সাথে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া সঙ্গীতশিল্পী, আবৃত্তিকার ও অন্যান্য কলাকুশলীদের ফটো সংযুক্ত করা যাচ্ছে না বলে আমি অংশগ্রহণকারী শিল্পী ও কলাকুশলীদের কাছে ক্ষমা চাচ্ছি।  
Photo Credit: Aziz Khan, Ottawa, Ont.