আশ্রম: একটি চেতনার নাম – নবম পর্ব
কবির চৌধুরী, অটোয়াঃ অনেকেই জিজ্ঞেস করছেন, ‘শনিবারের নিবন্ধে’র কি হলো? দু’তিন সপ্তাহ হয় ‘শনিবারের নিবন্ধ’ দেখছি না! উত্তর দেওয়ার মতো কিছু না থাকায় চুপ থাকি। তাদেরকে পাল্টা প্রশ্ন করতে পারিনা কি লিখবো? আমাদের চারিপাশে এমন কি ঘটছে যে, তা লিখতে হবে? আমার জানামতে অটোয়ার বাঙালি সমাজে এমন কিছু ঘটেনি যে, তা নিয়ে আমি কিছু লিখতে পারি। তারপরেও চেষ্টা করেছিলাম আবুল-তাবুল কিছু লিখতে। আমার ব্যক্তিগত ব্যস্ততার কারণে লেখা হয়ে উঠেনি। কিন্তু দু’তিন দিন আগে জনৈক এক বন্ধুর ছোট একটি প্রশ্নের কারণে সর্বোপরি গতকালকের একটি উপহার এবং আজকে একটি ইমেইলের প্রতিউত্তরেই আজকের এই লেখা। জনৈক বন্ধুবরের কথার জবাব আমি টিমহরটন্সেই দিয়েছিলাম। এখন মনে হচ্ছে, প্রশ্নটি তো শুধু ওর না! একই প্রশ্ন হয়তো অটোয়ার অনেক বাঙালির মনে ঘুরপাক খাচ্ছে! তাই তার করা প্রশ্ন নিয়ে কিছু লেখা আবশ্যক। আবশ্যক এই কারণে যে, প্রশ্নটার বিষয়ের সাথে আমার সম্পৃক্ততা তো খানিকটা আছে বৈ কি? এছাড়া অটোয়ার প্রথম সংগঠন ‘বাকাওভ’, এবং অটোয়ার বাংলা পত্রিকা ‘আশ্রমে’র কর্মকাণ্ডের অনেক কিছুই মাঝেমধ্যে লিখি। সেজন্যেই আমার এই আত্মপক্ষ সমর্থন! আমার সুহৃদ বন্ধুর প্রশ্নটা ছিল, “‘বাকাওভ’ বা “আশ্রম” কি এবার একুশে ফেব্রুয়ারি পালন করছে না?” যেহেতু আমি ‘বাকাওভ’ অন্তর্বর্তীকালীন কমিটির পাঁচ সদস্যের এক সদস্য, এবং অটোয়ার বাংলা পত্রিকা ‘আশ্রমে’র প্রকাশক, তাই মনে করি এবার অটোয়ায় ‘বাকাওভ’ বা ‘আশ্রম’ কেন একুশে ফেব্রুয়ারি উদযাপন করে নাই তা নিয়ে কিছুটা আলোকপাত করা একান্ত জরুরী।
পাঁচ-সাত হাজার বাঙালি অধ্যুষিত শহর অটোয়ায় বাঙালিরা বাঙালির বারো মাসের তেরো পার্বনের অনেকগুলোই করে থাকি এবং অত্যন্ত উতসাহ আর উদ্দীপনার সাথে! কিন্তু যখনই বাংলার ইতিহাস আর গর্বের কোন দিন পালন করার সময় আসে তখন নানা অজুহাতে তা উদযাপনে আমরা অনেক সময় বিরত থাকি। ভাগ্যিস আমাদের শহরে বাংলাদেশ সরকারের দূতাবাস আছে। তাই বাংলাদেশের জাতীয় দিবসগুলো উদযাপন হয়ে থাকে, যদিও সেখানে শুধু আমন্ত্রিতরা যাওয়ার সুযোগ পেয়ে থাকেন। তাই অনেক সময়ই আমি আক্ষেপ করি আমরা কেন নিজেরা উৎসাহ নিয়ে আমাদের আত্মার সাথে সম্পর্কিত জাতীয় অনুষ্ঠানগুলো নিয়ে আলোচনা সেমিনার করি না? এই ভাবনা থেকে ‘আশ্রম’ প্রকাশের পর থেকে মাঝেমধ্যে আমরা ‘আশ্রমে’র ব্যানারে বাংলাদেশের জাতীয় দিবসগুলো নিয়ে আলোচনার ব্যবস্থা করেছি। কিন্তু গত কয়েক বছর থেকে ‘বাকাওভ’ এইসব দিনগুলো উদযাপনের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ‘আশ্রম’ আর দিনগুলো উদযাপন করছে না। নির্দিষ্ট করে বলেতে গেলে, ২০১৮ সালে শাহ বাহাউদ্দীন শিশির ‘বাকাওভে’র দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রতিবছরই একুশে ফেব্রুয়ারিসহ বাংলাদেশের অন্যান্য জাতীয় দিবসগুলো যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপন করা শুরু হয়। প্রতিবছরই আমরা একুশে ফেব্রুয়ারির মধ্যরাতে অস্থায়ীভাবে তৈরি শহীদ মিনারে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছি। যা অটোয়ায় অত্যন্ত বিরল। আমরা দেখেছি প্রচন্ড শীত উপেক্ষা করে অটোয়ার বাঙালিরা একুশের ফেব্রুয়ারির মধ্যরাতে অটোয়ার সিটিহল বা ব্রনসন সেন্টারে অস্থায়ীভাবে নির্মিত শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেছেন। কোভিডকালীন সময় বাদ দিলে গত কয়েক বছর একুশে ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবসসহ বাংলাদেশের অন্যান্য জাতীয় দিবসগুলো উদযাপনের কৃতিত্ব শাহ বাহাউদ্দীন শিশির এবং তার কমিটির। কিন্তু এবছর করা যায়নি। কারণ, আমাদেরকে ‘বাকাওভে’র কমিটি করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। আমরা মনে করেছিলাম ফেব্রুয়ারির মধ্যেই ‘বাকাওভে’র নির্বাচন সম্পন্ন করে নতুন কমিটি গঠন করতে পারবো, এবং নতুন কমিটিই একুশের অনুষ্ঠান আয়োজন করবে। কিন্তু নানাবিধ কারণে বিশেষ করে ‘বাকাওভ’কে গতিশীল ও কার্যকরী সংগঠনে পরিণত করার লক্ষ্যে ‘বাকাওভে’র সদস্য সংগ্রহ এবং সংবিধানকে সময়োপযোগি করতে কিছু পরিবর্তন এবং পরিবর্ধনের প্রয়োজন দেখা দেওয়ায় আমাদের আন্তরিক ইচ্ছা থাকা স্বত্বেও ফেব্রুয়ারিতে ‘বাকাওভে’র নির্বাচন করা যায়নি বলে এবছর একুশে ফেব্রুয়ারিসহ বাংলাদেশের অন্যান্য জাতীয় দিবসগুলো উদযাপন করা সম্ভব হয়নি। ‘বাকাওভে’র বিদায়ী কমিটির এই ধারাবাহিকতা রক্ষা করা যায়নি বলে আমি ব্যক্তিগতভাবে ‘বাকাওভে’র বিদায়ী সভাপতি শাহ বাহাউদ্দীন শিশিরসহ ‘বাকাওভে’র সকল কর্মকর্তা ও সদস্য ও অটোয়ার সকল বাঙালির কাছে ক্ষমা চাচ্ছি।
এক সময় ছিল, কোন বাঙালির সাথে দেখা হলেই জিজ্ঞাসা করতাম- ভাই/ভাবী, লেখালেখির অভ্যাস আছে? থাকলে ‘আশ্রমে’ লিখবেন। যারা মাঝেমধ্যে লিখতেন, তাদেরকে প্রতিদিনই ফোন করে লেখা দেওয়ার কথা বলতাম। দেখতাম অনেকেই দিচ্ছি দিচ্ছি করে দু’তিন সপ্তাহ সময় নিয়ে নিতেন। তখন বুঝতাম না, প্রবাসের এই ব্যস্ত জীবনে লেখালেখি খুব সহজ না যে, যে কোন সময় লিখতে বসে গেলাম। এখন বুঝি। ইচ্ছা করলেই লেখা যায় না। এই তো আমি আমার নিজের প্রতি সপ্তাহের ‘শনিবারের নিবন্ধ’ লিখতে পারছি না। এখানে কী শুধু মাল-মসলার অভাব? না! চাইলে অনেক মাল-মসলাই যোগাড় করা যায়! সোর্সের কি অভাব আছে? ফেইসবুক, এক্স, রীল, লাইভ ভিডিও, সর্বোপরি বিভিন্ন ওয়েবজার্নাল। এখন তো ঘরে বসেই সংবাদের কাট-পেইস্ট করা যায়! কিন্তু তারপরেও নিজের ওয়েবসাইটে, নিজের সাপ্তাহিক কলাম লিখতে পারি না। এই না পারার মেইন কারণ, সময়! আসলে আমি নিজেকে নিয়ে এত ব্যস্ত যে, আমি বুঝতেই পারিনি গত দুই শনিবার আমি কিছু লিখিনি! আগেই লিখেছি, আজকের লেখার সূত্রপাত একটি উপহার এবং একটি ইমেইল। আমার জীবনে আমি অনেক উপহার পেয়েছি! আমার কাছে অনেক ইমেইল এসেছে। সব সময়ই আমি তা সাদরে গ্রহণ করেছি। এইতো কিছুদিন আগেও আমার এই ধারাবাহিক লেখাতে দুটো ইমেইলের উল্লেখ করেছি। আজও এরকম একটি ইমেইলের কথা লিখবো। তারআগে উপহারের কথাটি লিখি! গতকাল, সন্ধ্যার দিকে হঠাৎ করেই শ্রদ্ধেয় ড. মনজুর চৌধুরী (মনজুর ভাই) ফোন করে জিজ্ঞাসা করলেন, কোথায় আছি। বাসায় আছি বলতেই বললেন, আমি আসছি! কফি খেতে যাব! মনজুর ভাই, আমাদের সিলেটের লোক! আরো ক্লিয়ার করে বললে আমার নিজের জেলা সুনামগঞ্জের লোক। মনজুর ভাইয়ের আদি নিবাস সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলার ছৈলা গ্রামে। উনার বাবার নাম আব্দুর রব চৌধুরী। খুবই বনেদি ও শিক্ষিত পরিবারের সন্তান মনজুর ভাই ১৯৯৮ সালে কানাডায় আসেন। অটোয়াতে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন ২০০০ সাল থেকে। ড. মনজুর চৌধুরীর লেখাপড়া সিলেটের এমসি ডিগ্রী কলেজ আর রাশিয়ায়। এমসি কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে সোভিয়েত ইউনিয়নে উচ্চশিক্ষার জন্য চলে যান। সেখানে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়াশোনা শেষ করে কানাডায় চলে আসেন। মনজুর ভাই গতানুগতিক ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার পেশায় না গিয়ে মানুষকে শিক্ষা দেওয়াটাকেই তাঁর পেশা হিসেবে নিয়ে নেন। বর্তমানে পেশায় তিনি একজন শিক্ষক! তিনি ব্যতিক্রমধর্মী একজন শিক্ষক! মনজুর ভাই বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় কাজ করলেও এই পদ্ধতির অনেক কিছুই মেনে নিতে পারেন না। তাই তো তিনি নিজের মতো করে ছেলেমেয়েদেরকে শিক্ষা দেওয়ার পদ্ধতি নিয়ে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁর এই প্রচেষ্টার অন্য নাম 'AlivEducation'! মনজুর ভাই তাঁর এই প্রতিষ্ঠানকে তিল তিল করে গড়ে তুলছেন। তিনি আশা করেন একদিন 'AlivEducation' এর শিক্ষা মডেল বর্তমান প্রজন্মের শিক্ষানবীশদের কাছে খুব আকর্ষণীয় একটি শিক্ষা মডেল হিসেবে সমাদৃত হবে। এই সমাজহিতৈসী, শিক্ষাবিদ মানুষটির সাথে গতকাল বিকেলে ওগলভীর ষ্টারবাকে আমার দীর্ঘ্য আলাপ-আলোচনা হয়। আলাপের বিষয়বস্তু 'AlivEducation', ‘আশ্রম’ ‘বাকাওভ’ আমার লেখা ‘শনিবারের নিবন্ধ’ ইত্যাদি। বরাবরের মতো উনি আমাকে আমার লেখা এবং ‘আশ্রম’কে কেন্দ্র করে অটোয়ায় কাজ চালিয়ে যেতে বলেন। আমাকে উৎসাহ দেওয়ার জন্যে আলাপের এক পর্যায়ে মনজুর ভাই আমাকে Napoleon Hill এর লেখা ‘Think & Grow Rich’ গ্রন্থটি দিয়ে বললেন, ‘বইটি আপনার জন্যে আনলাম। না পড়ে থাকলে, ভাল করে পড়বেন। আপনার কাজে লাগবে।‘ বইয়ের নামটি দেখেই বললাম, মনজুর ভাই, এখন কি আর ধনী হওয়ার বয়স বা সময় আছে। যেভাবে আছি সেভাবেই থাকতে পারলে ভাল। তারপরেও পড়বো। বইটি দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। উনি বললেন, ‘এই বইটি শুধু যে ধনী হওয়ার রেসিপি দিবে তা কিন্তু না। টাকা রোজী ছাড়াও পৃথিবীতে আরো বহু কিছু অর্জনের সহায়ক বই হিসেবে এটিকে কাজে লাগাতে পারবেন। মনে হচ্ছে মনজুর ভাইয়ের কথাই ঠিক। বইটির দুয়েক পাতা পড়ে মনে হলো, লেখক গ্রন্থটিতে লক্ষ্যের প্রতি মানুষের একাগ্রতা নিয়ে আলোচনা করেছেন। আমার জীবনে পাওয়া অনেক উপহারের মাঝে মনজুর ভাইয়ের দেওয়া উপহার আমার কাছে সারাজীবন শ্রেষ্ঠ উপহার হিসেবে বিবেচিত হবে। ধন্যবাদ মনজুর ভাই।
এই প্রবাসে বিশেষ করে অটোয়াতে যখন ‘মাসিক আশ্রম’ প্রকাশের উদ্যোগ নেওয়া হয়, তখন এখানে একটি পত্রিকা প্রকাশের জন্য সবচেয়ে বেশি দরকারী বিজ্ঞাপণের কোন ব্যবস্থা ছিল না। হাতে গোনা দুটি গ্রোসারি দোকান এবং কয়েকটি রেস্টুরেন্ট। বিজ্ঞাপণের অভাব আমি হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি। আমার ভাগ্য ভাল। আমার চারিপাশে কিছু বন্ধুবান্ধব আর আমার ভাইয়েরা ছিলেন। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত সাহায্য করে যাচ্ছেন। তাদের সহযোগিতা না পেলে এতদিন এই পত্রিকা চালানো সম্ভব হত না। এত প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও ‘আশ্রমে’র প্রকাশনা চালিয়ে যাওয়ার একমাত্র কারণ, আমরা আমাদের দ্বিতীয় আবাসভূমি নির্মাণে গর্বিত অংশীদার হতে চাই। তাইতো, শুরু থেকেই আমরা আমাদের পত্রিকাকে অটোয়ার বাঙালিদের মুখপাত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছি। আমরা সব সময় চেয়েছি, ‘আশ্রম’কে ঘিরে অটোয়ায় একটি সুন্দর সাংস্কৃতিক বলয় গড়ে তুলতে। অনেকাংশেই আমরা আমাদের গতিপথ থেকে বিচ্যুত হয়েছি। কিন্তু সাথে সাথে ফিরে এসেছি আপন কক্ষপথে। আর এই কক্ষপথে ফিরে আসতে আমাকে সহযোগিতা করছেন, ‘আশ্রমে’র সম্মানিত লেখক ও পাঠকবৃন্দ। পত্রিকার প্রসার আর শ্রীবৃদ্ধি করতে ‘আশ্রমে’র অসংখ্য লেখক যেমন অবদান রাখছেন তেমনি কিছু কিছু পাঠক পত্রিকার লেখার মান কেমন তা জানিয়ে আমাদেরকে উপকৃত করছেন। অনেকেই ইমেইল করে তাদের মতামত জানান। লোকবলের অভাবের কারণে অনেক সময় আমরা পাঠকের মতামতের উত্তর দিতে পারি না। ঠিক এরকমই বাংলাদেশের টাঙ্গাইল থেকে একজন পাঠক ‘শনিবারের নিবন্ধ’ পড়ে তাঁর সুচিন্তিত মতামত জানিয়ে আমাকে একটি ইমেইল করেছেন। অর্থাৎ আমার কাছে একটি খোলা চিঠি লিখেছন। আমাদের এই পাঠকের নাম, জাকির সোহান। আমি ‘আশ্রমে’র পাঠকদের জন্য চিঠিটি হুবুহু এখানে কপি করে দিচ্ছি। চিঠিটি দেওয়ার আগে আমি জাকির সোহানকে তাঁর লেখা চিঠির জন্য ধন্যবাদ দিতে চাই। ধন্যবাদ জাকির ভাই।
প্রিয় কবির চৌধুরী সমীপে খোলা চিঠি
আশ্রম: একটি চেতনার নাম' ধারাবাহিকটির সব পর্বই পড়া হয়েছে। কেন পড়েছি? পড়াশোনায় আলসেমি অথচ কানাডা সম্পর্কে জানতে আগ্রহ অনেক বেশি। নিজে বাঙ্গালি, থাকি বাংলায়। কানাডার ভূমিপুত্রদের সংস্কৃতি বোঝার সুযোগ,যোগ্যতা ও সামর্থ্য নিজের মত করে মেলে না। সেখানে বাংলাদেশ থেকে গিয়ে বাঙ্গালিরা নিজে সমৃদ্ধ হওয়ার পাশাপাশি কানাডাকেও সমৃদ্ধ করছে, মূলধারার সংস্কৃতি উদযাপন করছে জেনে বেশ পুলকিত বোধ করছি। কানাডাকে নিজের মত করে চেনার জানার অনন্য একটি সৌভাগ্য 'আশ্রম: একটি চেতনার নাম' ধারাবাহিকটি।
বিশ্বায়নের যুগে কোনো জাতির নির্দিষ্ট গন্ডিতে আবদ্ধ থাকা কষ্টকর। বরং দুনিয়ায় বিচরণ করাই সহজ। যেখানে পারো বিচরণ করো- নইলে অকালে মরো! এই বিচরণের ধারাবাহিকতায় বাঙ্গালিরাও কানাডায় থিতু হচ্ছে। তাদের লড়াই সংগ্রাম, চাওয়া-পাওয়া, ত্যাগ, ভোগ সবই উঠে আসছে এই ধারাবাহিকে।
এই ধারাবাহিকটি যত দীর্ঘ হবে আমরা মনে করি কানাডার ইতিহাসে বাঙ্গালির একটি ইতিহাস রচিত হবে। শুরু থেকে আপনার লেখাটি পড়ছি। প্রত্যাশা করি নিয়মিত লিখুন, থেমে থেমে লিখুন, ধীরে ধীরে লিখুন। বাংলাদেশের প্রান্ত হতে বিদেশের বাঙালির আখ্যান শুনতে ভালো লাগছে। মনে হচ্ছে আমার চোখের সামনে এসব ঘটছে। বাকাওভের তৎপরতা বেশ কৌতূহল উদ্দীপক। মুক্তিযুদ্ধ! ফাঁসির মঞ্চে জীবনের গান!! কানাডার স্বর্গীয় লাইফস্টাইলের মধ্যেও বাঙালিরা মুক্তিযুদ্ধের গল্প করে তা এই অধমের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। মুক্তিযুদ্ধ মানে মানুষ, মুক্তিযুদ্ধ মানে স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ মানে সাম্য, মুক্তিযুদ্ধ মানে ভ্রাতৃত্ব। আহা! এখন তো উৎসবমুখর বাংলাদেশে 'দেশের গান'ই শুনতে পাই না। অথচ বিশ বছর আগে হাইস্কুল পেরুনো আমি জাতীয় দিবসে হাটে বাজারে স্কুল কলেজে 'দেশের গান' শুনতাম। এখন যা শুনি তা না হয় না-ই বললাম।
তবে আপনাদের কাছে অর্থাৎ কানাডিয়ান বাঙালির কাছে মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশ সম্পর্কে জানার নতুন দিক উন্মোচনের সূত্র হয়েছে এই ধারাবাহিক।
চ্যাঁচড়ামি, নিচুতা, দ্বিমুখী চরিত্রকে গোপনে পরম গর্ব মনে করা বাঙালীর মধ্যে বাকাওভ বাতিঘর।
কানাডার বাঙালি কানাডার অংশ। আপনার লেখুনিতে সেই অংশের ইতিহাস পড়তে আগ্রহী।
ভালো থাকুন অবিরাম এই কামনায়-
জাকির সোহান
টাঙ্গাইল
বাংলাদেশ।
জাকির ভাই, আমি দায়বদ্ধতা থেকে ‘শনিবারের নিবন্ধ’টি লেখার চেষ্টা করছি। জানি না কতদিন বা কতটুকু লিখতে পারবো। তবে চেষ্টা করবো। ভালো থাকবেন।
পরিশেষে, ১৯৫২ সালে মায়ের ভাষা – বাংলা ভাষা – রক্ষার তাগিদে নিজেরদের জীবন বিলিয়ে দেওয়া ভাষাশহীদ, সালাম, জব্বার, রফিক, বরকত, শফিকুলদের স্মৃতি আর আত্মত্যাগের প্রতি সম্মান জানিয়ে আজকের মতো শেষ করছি। সবাই ভাল থাকুন। (চলবে…)
কবির চৌধুরী
১৭/২/২০২৪
প্রকাশক, আশ্রম
অটোয়া, কানাডা
-
নিবন্ধ // মতামত
-
17-02-2024
-
-