অটোয়া, রবিবার ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪
অঞ্জলি দেনন্দী, মমের কয়েকটি কবিতা

১) পুরোনো 

পুরোনো লোহার বাক্সে পুরোনো ন্যাকড়ায় জড়ানো।
পুরোনো ছবিগুলি, কাঠের ফ্রেমে বাঁধানো।
খুলে দেখি - ব্যথার স্মৃতিতে ভরানো।
বেদনার কাজ তো শুধুই কাঁদানো।
পুরোনো, পরিত্যক্ত বাড়িতে, পরে ছিল, এগুলো।
আমি সঙ্গে করে নিয়ে এলুম সেগুলো।
পুরোনো বাড়িটি যে বিক্রী করে দিলুম।
ফোটোগুলো নতুন ফ্ল্যাটে টাঙিয়ে নিলুম।
ঐ বাড়িতে আমি বড় হয়েছিলাম আগে।
এখন কত কথাই না মনে জাগে!
তখন বেঁচেছিল দাদু, ঠাম্মা, বাবা, মা আর ভাই।
এখন তারা আর কেউই বেঁচে নাই।
এই খালি বাড়িতে বাস করছে শুধুই ক্যাট।
তাদের বাড়িটা বেচে দিলাম তাই।
সেই টাকায় কিনলাম অনেক দূরে এক ফ্ল্যাট।
এতদিন আমি ও বাড়ি ছেড়ে, ভাড়া ঘরে ছিলাম।
এখন নতুন ফ্ল্যাটকে বাসস্থান করে নিলাম।
নতুন দেওয়াল থেকে পুরোনো মৃত যত ছবি,
যেন বলছে নীরবে, " ওরে ও প্রিয় কবি!
এখন আমাদের খুব ভালো লাগছে রে!
নতুন ফ্ল্যাটে এসে তোরই মত কবিত্ব জাগছে রে!"

২) বসন্ত

লাল শিমুলের কোলে
কালো কোকিল কুহু কুহু কুহু বোলে
আলহাদে দোলে......
পাশে আপন মনে নদী যায় বয়ে চলে......
সন্ধ্যা হলে
সুগন্ধ ছড়িয়ে গন্ধরাজ তার পাপড়ি খোলে।
সারা দিন আমের মুকুলে, গুনগুনিয়ে সুর তোলে
যত মৌমাছির দলে।
কৃষ্ণচূড়া আর রাধাচূড়া গায়ে গা ঠেকিয়ে কি যে বলে,
কে জানে ওরা যেন যে পরে ঢোলে ঢোলে?
বসন্তের আকাশ দেখে আমার মন যায় গলে।
উদাসী হই পলে পলে পলে।
প্রেম প্রকাশিত হয় নিজ বলে।
আহা, ভালবাসার রঙে রঙিন হই, পূর্ণিমায়, দোলে!

৩) খড়ের চালের ওপরে

ভোর থেকে সারা দিন ওরা
বকুম বকুম বকুম - ডাকে।
আবার মাঝে মধ্যেই আকাশে ওড়া।
আমার খড়ের চালের ওপরে ওরা থাকে।
আবার উড়ে এসে বসে আঙিনার বৃক্ষ শাখে।
ওদের তো যায় না ধরা।
ওরা তো নিজেদের মুক্ত পাখায় স্বাধীন রাখে।
ছোট্ট, হাল্কা দেহ পালকে গড়া।
উষ্ণ রক্ত ভেতরে ভরা।
আমার খড়ের চালের ওপরে ওরা ডিম পেড়ে রাখে,
তার ওপরে বসে দিনের পর দিন তাও দিতে থাকে।
ডিম ফুটিয়ে ছানা বের করে ওরা।
বড় করে, মুখে মুখ লাগিয়ে খাইয়ে, মাতৃত্ব তো কর্তব্য করা।
তারপরে বাচ্চাদের শেখায় ওড়া।
দায়িত্বে ওদের সংসার গড়া।
স্নেহের বন্ধনে আবদ্ধ ওরা।
জীবন কর্মে ভরা।
পায়রা-পরিবারের আমার খড়ের চালের ওপরে বাস করা।
হয় তো আমার ওপরে ওদের ভরসা আছে প্রাণ ভরা।

৪) স্ত্রী 

রান্না বান্না করে আমার স্ত্রী।
আবার আমার পোশাকও করে ইস্ত্রি।
কখনও আবার সে দেওয়াল রং করা মিস্ত্রি।
বন্ধ্যা রমণী বলে তার খুব দুঃখ।
তবুও সদাই তার হাস্য মুখ।
আমার ভালবাসা দেয় তারে সুখ।
কুড়ি বছর হল আমরা বিয়ে করে সংসারী।
আছে আমাদের অনেক বড় বড় বাড়ি।
অনেক দামী দামী দামী গাড়ি।
শুধু কোন সন্তান নাই।
ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করে চাই।
কি জানি যদি পাই......
আমার স্ত্রী ভজন গায়।
গানে গানে গানে আকুতি জানায়।
অঞ্জলি দেয় দেবতার পা'য়।

অঞ্জলি দেনন্দী, মম
নতুন দিল্লী, ভারত