অটোয়া, রবিবার ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪
একফোঁটা আগুনের ফুলকি - জান্নাতুল নাইম

মি তোমার সেই নারী, প্রিয় বিশ্বনেত্রী ক্লারা জোসেফিন জেটকিন।
যার জন্য তুমি ভেবেছিলে শত বছরেরও অধিক সময় আগে। প্রতিবাদের ছায়ামুর্তি হয়ে ছিলে সুতার কারখানার অসংখ্য নারী শ্রমিকের ভিড়ে প্ল্যাকার্ড হাতে হাতে।
হাজারো নারী শ্রমিক তাঁদের অধিকার আদায়ের দাবীতে রাস্তায় নেমেছিল ১৮৫৭ সালের সেদিন নিউইয়র্ক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে।
প্রতিবাদের ঝড় উঠেছিল মজুরি বৈষম্য, কর্মঘণ্টা নির্দিষ্টকরণ, ও কাজের অমানবিক পরিবেশের বিরুদ্ধে।
সরকারী লেঠেল বাহিনীর দমন-পীড়ন চলেছিল সেই মিছিলে।

ক্লারা তুমি ছিলে একজন রাজনীতিবিদ, নারী সংগঠক ও নারী অধিকার আদায়ের নেতৃত্বের অন্যতম পথিকৃত।
১৯০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্কের নারী সংগঠনের পক্ষ থেকে তুমিই নেতৃত্বে দিলে সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলনে। 

তারপর ১৯৭৫ সাল থেকে তোমার প্রস্তাবিত এই দিনটি ইতিহাস হয়ে গেল। 
জাতিসংঘ স্বীকৃতি দিল। তুমি ও তোমার নারীবাদী সব বার্তা, কর্মশালা পৃথিবীর নারী হিসেবে আমরা হয়ে গেলাম।

সেই থেকে প্রতিবছর ৮ই মার্চ আমরা মানব জাতি নারী পুরুষ নির্বিশেষে, তোমার মতো মহান ও গুণীজনের স্মরনাপন্ন হই।  শ্রদ্ধা জানাই তোমার মতো অসংখ্য নারী নেতৃত্বকে।
তিনশ পঁয়ষট্টি দিনের মধ্যে এই একটি দিনকে বিশেষভাবে।

তারপর তুমি চলে গেলে, অথচ আমাদের মধ্যে কী অপরূপ মহিমায় অমর হয়ে থেকে গেলে।
তোমার মতো নক্ষত্র হয়ে আমরণ বেঁচে আছেন বাঙালি মুসলিম নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন।

বেঁচে আছেন কাজী নজরুল ইসলামের অগ্নি নাগিনী খ্যাত আরেক মুসলিম নারী সমাজকর্মী মাসুদা খাতুন।
‘মিসেস এম রহমান’ ছদ্মনামের এই ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী নারী ছিলেন বেগম রোকেয়ার ঘনিষ্ঠতম কলম বন্ধু।

আরো ছিলেন তৃনমূল পর্যায়ে নারীদের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে অবদানের অগ্রদূত ফরিদপুরের রোকেয়া রহমান কবির।
শ্রদ্ধার সাথে স্মরনীয় নারী শিক্ষাবিদ ও দার্শনিক ব্যক্তিত্বের অধিকারিনী কামিনী রায়, নুরুননাহার ফয়জুননেসা, হাসনা বেগম প্রমুখ।

মহীয়সী নারী, তোমরা তুলে ধরেছ এ সুন্দর পৃথিবী আমাদের মানব সমাজ সংসারে, সকল কল্যাণে। করেছ মহান ক্রম উন্নয়নে নারীকে উজ্জ্বলতর আলোর পথে।

তাই তো নেপোলিয়ান বোনাপার্ট উচ্চারণ করেছেন

“তুমি আমাকে শিক্ষিত মা দাও, 
আমি তোমাকে শিক্ষিত জাতি দিবো ”

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন 

“কোনোকালে একা হয়নিকো জয়ী,পুরুষের তরবারী,
প্রেরণা দিয়েছে, শক্তি দিয়েছে, বিজয়ালক্ষী নারী”।

তাই আপনাদের কাছে আমাদের একান্ত আবেদন, আজ এইক্ষণে-
নারীশিক্ষা-শিল্প-সাহিত্য ও সামাজিক উন্নয়নের সকল ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করুন,
দেশের অগ্রগতি ত্বরান্বিত করুন।
ভেদাভেদমুক্ত সুষ্ঠ সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখুন।

আপনার পরিবারই হোক প্রথম উপযুক্ত স্থান,
যেখানে আপনার মা-স্ত্রী-মেয়ে পাবেন সমঅধিকার ও যথাযথ সম্মান॥

জান্নাতুল নাইম
টরন্টো, কানাডা