মানসিকতা জীবন আর দূরদর্শীতা এসবের মিশ্রণ যদি সঠিক না হয় তাহলে অনিবার্য পতন
মানসিক ভাবে আমরা দিন দিন হারছি, ক্ষণে ক্ষণে হারছি। সময়ে অসময়ের হারছি কিন্তু জীবনে হারে তো মানুষ একবার শেষ বেলায়, যে দিন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ হয়।প্রত্যেকটা মানুষ জীবনে অনেকবার মরে।বারেবারে মরে,কিছু মানুষ মরে জীবিত থাকে তারা হয় স্মরণীয় আর কিছু মানুষ ঘৃণিত হয়ে রয়ে যায় মীরজাফরের বংশধর হয়ে।
জীবনের দর্শন বুঝা এবং দর্শন ঠিক করা নাকি খুব জরুরী আমার এক সহকর্মী বড় ভাই বলেছে। কিন্তু সত্যি বলতে কি দর্শন ঠিক করা যায়? ওনার একটি কথা ঠিক দর্শন বুঝতে চেষ্টা করা।দর্শন উপলব্ধি করা,দর্শন বুঝে দূরদর্শী হওয়াটা উচিত।
আপনারা হয়তো খেয়াল করবেন আমরা ছোট বেলা থেকে শুনি বাবা কি হবে?
মা হয়তো শিখিয়ে দেয় ডাক্তার হব, ইঞ্জিনওয়ার হব বলো।
কেউ বলে না আমি ভদ্র একজন মানুষ হব। ভালো কাজ করব। এই কপটতাই আমাদের নষ্টচাঁদ হয়ে বেড়ে তোলে।
বাংলাদেশে রাজনীতিবিদ বা রাজনৈতিক নেতা হওয়ার ইচ্ছা জমে কৈশোরের পর বা যৌবনের শুরুতে, এজন্য বোধহয় ভালো নেতা পাওয়া যায় না। ঐযে বললাম মানসিকতা জীবন দূরদর্শীতা এসব তো রাজনৈতিক নেতার প্রয়োজন।কিন্তু মজার বিষয় এখন আর নেতার অভাব নেই, ডাকসাইটে প্রচুর, অপরদিকে হাসি নেতা, পাতি নেতা, পাড়ার নেতা, ব্যানার নেতা। এত রকমের নেতার ভীড়ে নব প্রজন্ম ভাবছে নেতা বুঝি এরকমি! নব প্রজন্ম নেতার খোঁজ বাদ দিয়ে তাই ভাই নেতাকেই প্রভাবশালী ভেবে পাড়ার ছিঁচকে মাস্তানি থেকে পাঁকা হাতের খুনের নেতা হয়ে জন্ম নেয়য় একদিন। অথচ স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে কয় রকমের নেতা জনগন দেখেছে???? ক্যান্টনমেন্টের নেতা পর্যন্ত। দেখেছে,ফলাফল রাষ্ট্রীয় বিপর্যয়।
লোভে ক্ষমতার অন্ধতায় মানুষ মরে বারবার মরে। এই মরাতে কয়জন বাঁচে???? লাল সবুজ পতাকার তলে কয়জন বাঁচে??? তকমা নিয়ে মরে বারবার মরে কারণে অকারণে মরে।
অর্থবিত্ত না লাগবে না বললে ভুল, অর্থবিত্ত ছাড়া চলা মুশকিল বর্তমান পুঁজিবাদী সমাজে। এই অর্থবিত্ত যখন নেশা হয়ে যায় তখন হিতাহিত জ্ঞান লোপ পেয়ে ঐ জীবন আর মানসিকতার মধ্যে সংঘর্ষে নিহত হয় দর্শন যার ফলে বিচ্যুতি ঘটে দূরদর্শীতার।
মন দিয়ে মন বোঝা যায়, গভীর বিশ্বাস শুধু নীরব প্রাণের কথা টেনে নিয়ে আসে। - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.......
আমরা দিন দিন নিজের স্বার্থে দেশটারে শেষ করছি, খুঁবলে খুঁবলে খাচ্ছি।তারপর জ্ঞানী ভাব নিয়ে সকল সুস্থ মানসিকতা বাদ দিয়ে দলকানা হয়ে প্রতিশোধ নেয় সতীর্থদের।আর সতীর্থের রক্ত মাড়িয়ে পদপদবী অর্থ অলংকারে ভূষিত হওয়ার মাঝে ত্যাগের সুখ ত্যাগের আনন্দ পাওয়া যায় না, পাওয়া যায় বিস্মৃতি কষ্ট, যা আজীবন পীড়া দিবে প্রত্যেকটি ধাপে।
জীবন দর্শন বুঝা ব্যক্তি আর যাই করুক হেরে যায় না,বুকে দম নিয়ে বুক এগিয়ে বলে জীবন একটা এই জীবন, যা ব্যর্থতা তাও আমার যা সফলতা তাও আমার।
“ ছাইটা হল স্মৃতি আর আগুনটা বর্তমান ”--- সমরেশ মজুমদারের এই উক্তিটা আমি কখনো ভুলি না কারণ, ছাইটা তো আসলে স্মৃতি পড়ে থাকে সবাইকে কাঁদনোর জন্য,ঈর্ষার জন্য, সহানুভূতির জন্য, আর আগুন তাতো বর্তমান। যার সামনে থাকে সেই দেখে, সেই বুঝে তাপ কি! তাপের জ্বালা কি! যেই জ্বালা অন্তরে গেঁথে রয় জীবনভর। কত মানুষ কত মানুষকে উপকার করতে চাই,অথচ আমরা ঠিক অপকারটাই তারে উপহার দিয়,অথচ ভাবি না পৃথিবী কোন ঋণ বাকি রাখে না সুদে আসলে ফেরত দেয়।আর যখন ফেরত দেয় তখন তা নেওয়ার মতো সাহস থাকেনা।মানসিকতা পরিবর্তন জরুরী এই বিংশ শতাব্দীর যুগে অনলাইনেই এসব উক্তি এবং দর্শন ভালো পাওয়া যায়,পড়লে মনটা অন্তত বলবে - থাক বাবা পরের ক্ষতিটা করব না অথচ আমরা ঠিক ঘোড়ার পায়ে আঘাত করি।বাজির ঘোড়া কখনো বেইমানি করে না। মানসিক বিকারগ্রস্ত মানুষই একামাত্র মানুষের ক্ষতি করে।জীবনটাকে সুন্দর করতে হলে অবশ্যই দর্শনগত পরিবর্তন জরুরী, দর্শনের সাথে জীবনের যোগসূত্র স্থাপন করতে হয় মানসিকতার সাথে জীবনের জয়গান গাইতে হবে নাহয় মানুষগুলো সব অমানুষ হয়ে যাবে। মানুষ হওয়ার আলো না থাকলে পশুরা যে দখল করবে জীবন! যে জীবন কখনো তাপ দেবে না,আলো দেবে না, কথা দিবে না।
নয়ন চক্রবর্ত্তী, সংবাদকর্মী
চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ।
-
নিবন্ধ // মতামত
-
20-08-2018
-
-