অটোয়া, রবিবার ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪
রুমা বসুর কয়েকটি কবিতা

১) একাকীত্ব

ক্ষ কোটি মানুষের মাঝেও যখন মনে হয়-
এ’ জীবনে আর চিৎকার করে কেঁদে দুঃখ ভাসিয়ে সুখ আনা যাবে না
বেঁচে থাকতে আর কারো কাছে নিজের কষ্টের কথা বলে হালকা হওয়া হবে না,
এ’ জীবনে আর কাউকে মন খুলে সব কথা বলে খিলখিলিয়ে হেসে ওঠা যাবে না
কাছের মানুষের  কাছে তুচ্ছ কিছু নিয়ে আর এ’জীবনে বায়না করা হবে না।
       হাজার মানুষের ভীড়েও এ’মানুষগুলো  সমুদ্রের মাঝে ছোট্ট দ্বীপের মতই একা,
       কুরে কুরে খায় তাদের সহস্র বিষন্নতার কণ্টকময় নিঠুর সব পোকা।

ভালোবাসার প্রিয় মানুষটাকে এ মানুষগুলোও পাশে চায়
তাদের ক’জনায় আর সেভাবে তাকে নিজের  করে পায়,
মধুরতম ক্ষণটাকে চির অম্লান রাখার চেষ্টা সবাই করে
সযত্নে সারাজীবন তাকে ধরে রাখতে কত জনেই বা পারে
 মানুষের মন যখন চিৎকার করে সব কষ্ট বের করে চায়
এ কষ্টের ভাগ নেবার যখন কারোই পড়ে না আর দায়।

       সযতনে যক্ষের মতো গহীন কষ্ট গুলোকে মেকি আনন্দের প্রলেপে ঢেকে রাখতে হয়
       মনের গভীরতম কষ্টকে চেপে রেখে বাইরের হাসিতে সামনের মানুষটাকে  অভিবাদন করতে হয়

জীবনটা যখন এমনই একাকীত্বের সামনে এসে দাঁড়ায়
তখন সেই একাকী মানুষটার নিজের পিঠ দেয়ালে যেয়ে আট্‌কায়,
আর  তার নড়াচড়ার কোনো উপায় খোলা থাকে না
বেঁচে থাকার মত এতটুকু খড়কুটোর আশ্রয়ও সে পায় না।
পৃথিবীর সব বিষন্নতার ধোঁয়ায় ঢেকে যায় তার আকাশ
ধরিত্রীতে  সব আশার আলো নিভে যেয়ে সে তখন হতাশ।

       কত সহস্র কথার ভারে একাকী মানুষকে আত্মহননের পথ বেছে নিতে হয়
       সে  মানুষের লাশের ওজন তখন তার জমে থাকা কথায় ভারে কী ভীষণ ভারী রয়

চিরনিদ্রায় শুয়ে থাকে একাকীত্বের সব বোঝাকে সাথে নিয়ে
তার সে বোঝা হালকা হয় একেবারে পঞ্চভূতে মিলে গিয়ে॥

২) নিজেকে ভালোবাসতে শেখো

শুনছ তুমি? তোমায় বলছি, নিজেকে ভীষণ ভাবে ভালোবাসতে শেখো
তবেই তোমার চোখে পৃথিবীর গূঢ় সৌন্দর্য ধরা দেবে, মিলিয়ে দেখো।

অনেকের মাঝে থেকেও কত মানুষ একেবারে নিঃসঙ্গ থাকে
আবার মেকী সম্পর্কের মাঝে কেউ কেউ সেসব একাকীত্ব ঢাকে।

মা-বাবা, ভাইবোন, বর বা বঁধু, বন্ধু বা সন্তান
কোনো একজনকেই শুধু দিও না তোমার সবটুকু প্রাণ

একটি সলতের আলোকে যদি বানাও তোমার সবে ধন নীলমনি বাতিঘর
খুঁজে না পেলে সে শিবরাত্রির সলতে, ধরিত্রীর সব পথ হবে তোমার সর্বর

তোমার সেই সে একাকী চলার পথে, প্রারম্ভ হবে তোমারই অগস্ত্য যাত্রা
প্রতিটা নিঃসঙ্গ মুহূর্ত বাড়াবে তব চলার পথের  অমানিশার মাত্রা।

নিঃসঙ্গ দ্বীপেও নিজের চারপাশে ভালোবাসার জগৎ গড়ে তোলো
বাইরের একাকীত্বকে তোমারই হৃদ মাঝারের  আনন্দ দিয়ে ভোলো॥

৩) জন্ম থেকে মৃত্যুর পথই জীবন

ন্ম থেকে মৃত্যুর উদ্দেশে চলার পথের নামই হ’লো জীবন
প্রাণী জন্মের একটাই ডেসটিনেশন, সেটা হ’লো মরণ।

এ পথ চলার শুরুতে কেউ সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মায়
আবার কেউ হয়তো জন্মেই তার জন্মদাত্রী মাকে হারায়।

জীবনের পথটা কারো জন্য থাকে ফুল দিয়ে সাজানো
আবার কারো কাজ হ’লো পথের কাঁটা উপড়ানো।

যে পথেই চলুক জীবন তার লক্ষ্য একটাই, আলিঙ্গন করা এ’মৃত্যুকে
সত্যিকারের মানুষ তার জীবন পথের দাগ রাখতে পারে ধরণীর এ’বুকে।

তোমারই সুকর্মের সুবাস লোকে নিবে তার হৃদয় ভরে
অপকর্মে পালাবে মানুষ তোমার থেকে ভয়ে ও ডরে।

কী ভাবে জন্মালে তুমি, সেটা রাখে না কেউ মনে
তোমার রেখে যাওয়া কর্ম বেঁচে থাকে এ’ধরার সনে।

জীবনের পথটাকে ক’রে তোলো মঙ্গলময় পৃথিবীর জন্যে
মৃত্যুতেও তবে লোকে খুঁজবে তোমার কর্ম, জীবন-মরণের অরণ্যে।

৪) সাত জনমের শপথ

“যদেতৎ হৃদয়ং তব তদস্তু হৃদয়ং মম, 
যদিদং হৃদয়ং মম তদস্তু হৃদয়ং তব”
এ কথা ব’লে বিয়েতে আমরা সাত জনম এক সাথে থাকার শপথ নেই,
এ’জন্মে কটা দম্পতি হাতে হাত রাখতে পারছি, তার হিসেব কে আর দেই।

আগের জনমে কে যে সঙ্গী ছিল, সেটা আমরা কেউ মনে করতে পারি না,
পরের জনমে কে আমার জীবন সঙ্গী হবে, এ জনমে আমরা কেউ জানি না।
আমরা আজ জানি না আদতে আবারও এ ধরায় জন্ম নেবো কি না
আজকে কে বলতে পারি ধরিত্রীতে জন্মালেও সেটা মনুষ্য জন্ম রবে কি না।

 ভালোবেসে পাশে থাকার প্রতিটা মুহূর্ত যদি আমরা স্মরণীয় করে রাখি,
এ’জন্মেই শত জনমের ভালোবাসায় পরিপূর্ণ দোঁহার জীবন যদি দেখি,
তবেই হবে, এই জন্মেই সাত জনমের শপথ রক্ষা করে একসাথে বাঁচা 
সেটাই হবে পৃথিবীতেই একসাথে দুজনে মিলে সুখ স্বর্গের অমরাবতী রচা।

একসাথে মৃত্যুটা তো আমাদের কারোই নিজের ইচ্ছেতে হবে না
ভালোবাসায় বাঁচাটা তো অন্য কারো ইচ্ছের পরোয়া করবে না,
তাই তো বলি এক জীবনে বার বার বিরহের দহন জ্বালায় না মরে 
সহস্রাধিক ভালোবাসার মুহূর্ত দিয়ে শত জন্মের প্রেম নিয়ে এসো ঘরে।

এক জীবনের ভালোবাসা দিয়ে সহস্র জনমের অমূল্য ঘড়া পূর্ণ থাক,
মরনেও ভালোবাসার অশ্রু দিয়েই শেষ যাত্রার সে পথ খানি ভিজে যাক॥

রুমা বসু 
অটোয়া, কানাডা
২২ শে মার্চ, ২০২৪