নির্বাচিত কবিতা - শংকর ব্রহ্ম
১) প্রলম্ভ
ঊষা তো ধুয়েছে মুখ
ফুল হয়ে ফুটেছে সকালে
তবু কিছুটা সিঁদুরগুড়ো
লেগে আছে আকাশের বুকে
হেমন্ত পড়েছে কাৎ হয়ে হেলানো মাস্তুলে
পাখিদের কিচির মিচির শুনে
নদীটি উঠেছে জেগে
সব কিছু বোঝেনি এখনও
ফাঁদ তো দেখেছ চাঁদু
এবার তবে দেখবে এসো ঘুঘু
বিষণ্ণতা ম্লান মুখে রযেছে দাঁড়িয়ে
রেলিংয়ের ধার ঘেসে
বাইরে চা বিকেচ্ছে যে রাজ পুরোহিত
তাকে ডেকে মস্করায় মাতি
নাকি সুরে কাঁদার জন্য বায়না দিয়ে রাখি
২) বিষাদ ঘোচাতে
কবিতায় খুঁজি আমি জীবনের মানে
জীবনের মানে খুঁজে পেয়েছে কজনে
কবিতা লেখা যে খুব নিরর্থক কাজ
এই কথা কবি হয়ে বুঝে গেছি আজ
তবুও কবিতা লিখি গভীর আশায়
যদি কেউ পড়ে কিছু আনন্দ পায়
চেনা জানা সুহৃদ স্বজন
আসলে তা পড়ে বা ক'জন
আমরা কবিতা লিখি এই ভেবে
হয়তো তাতে দেশোদ্ধার হবে
আসলে কবিতা লিখে হয় না কিছুই
তবুও তা লিখে যাই অভ্যাসের বশে
কিম্বা হয়তো তা স্বভাবের দোষে
রাম শ্যাম যদু মধু অনেকেই কবিতা লেখে না
তাতে কি পৃথিবী খুব গেছে রসাতলে
যারা সব সারাদিন কাজ কর্ম সেরে
ঘরে ফিরে খায় দায়,স্ফূর্তি করে
তারপরে, নিঃসাড়ে ঘুমায়
কবিতা তাদের কাছে বিমূঢ় বিস্ময়
কেন যে কবিতা লিখি নিজেই জানি না
তবুও তো লিখে যাই মোহের কুহকে
নাকি নির্বাণের মোহে
অথবা নিজের ভিতরে জমা বিষাদ ঘোচাতে
দিনে কিংবা রাতে
৩) পরশ
শীতকাল এলেই আমার খুব তৃষ্ণা জাগে মনে
সুগন্ধি খেজুর রসের
আর ঠিক সে সময়ই মনে পড়ে
সেই সহজ সুন্দর গ্রাম্য বধুটির কথা
যে আমায় রসসিক্ত রেখে ছিল সারা শীতকাল।
আর তার কথা মনে হলে
মনে পড়ে রসভর্তি মেটে হাড়ির কথা
যাকে আমার মাঝে মাঝেই
ভুল হয়ে যায় সেই গ্রাম্য বধুটি ভেবে
আর সেই নিষ্কলঙ্ক বধুটির কথা ভাবলেই
আমার শরীরে হিমেল পরশ এসে লাগে
৪) সূর্যোদয়
গভীর শীতের রাত ঘড়িতে সময় বাধা নেই
মজুররা পোড়াচ্ছে টায়ার
গুমোট ধূসর ধোঁয়ার কুন্ডলী
রূপসী নারীর মতো বাড়চ্ছে হাত
করুণ দয়া প্রার্থীর মতো দাঁড়িয়ে হাত নাড়ছে।
উদাসীন আকাশ তার নীল ভ্রূকুটি ছোঁয়ায়
নব আবাহনে কাঁটা ঝোপের মতো মুখিয়ে আছে
কনকনে হীমেল বাতাস
দুরন্ত মন ফিরে পেতে চায় শীতে
বুকের কৌটয় ভরা বাসন্তী বাহারী রূপ
ডুবে যাওয়া সূর্য যেন আজ দুরন্ত আবেগে
জেগে উঠতে চায় অকস্মাৎ ডুবন্ত সোনালী রথ
শংকর ব্রহ্ম
কলকাতা
-
ছড়া ও কবিতা
-
20-06-2024
-
-