অটোয়া, রবিবার ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং মহাজোটের নিরঙ্কুশ বিজয় – কবির চৌধুরী

বাংলাদেশের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের নিরঙ্কুশ জয়লাভের পর বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন শহরে বসবাসকারী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থক ও শুভানুধ্যায়ীরা বিভিন্নভাবে তাঁদের আনন্দ-উচ্ছ্বাস-প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন। কানাডার রাজধানী অটোয়াও তার থেকে ব্যতিক্রম নয়। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং মহাজোটের নিরঙ্কুশ বিজয় উপলক্ষে ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ অটোয়া’ শাখা গতকাল ব্যাংক স্ট্রিট ‘টেইক আউট কিং’ রেস্টুরেন্টে একটি বিজয়োৎসবের আয়োজন করে। অটোয়ায় বসবাসরত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কর্মী, সমর্থক এবং আওয়ামী লীগের শুভানুধ্যায়ীদের উপস্থিতিতে সন্ধ্যা ৭ঘটিকায় ‘আওয়ামী লীগ অটোয়া শাখা’র সাংগঠনিক সম্পাদিকা সোমা সাইফুদ্দিনের পরিচালনায় সভার শুরুতেই বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে নির্যাতিত মা-বোনসহ শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের, ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট রাতে শহীদ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তাঁর পরিবারের সদস্যবৃন্দ এবং গতকালের নির্বাচনে জামাত-বিএনপি সন্ত্রাসীদের হাতে নিহতদের আত্মার প্রতি সম্মান জানিয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন এবং উপস্থিত সবার সমবেত কণ্ঠে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। নিরবতা পালন এবং জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের পর বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের নির্বাচন নিয়ে একটি আনন্দময় আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। ‘অটোয়া আওয়ামী লীগ শাখা’র সভাপতি ওমর সেলিম শের, সহসভাপতি মোঃ আতিকুল ইসলাম, বাকাওভের সভাপতি শাহ্‌ বাহাউদ্দিন শিশির, বাকাওভের প্রাক্তন সভাপতি সর্বজন শ্রদ্ধেয় বেগম রাশেদা নেওয়াজ, ইঞ্জিনিয়ার তানবির নেওয়াজ, আবির সাইফুদ্দিন ও ‘আওয়ামী লীগ অটোয়া শাখা’র সাধারণ সম্পাদক আবু সাইফুদ্দিন সাইফুল, প্রমুখদের সাথে আমার নিজেরও আলোচনায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ হয়। শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের এই বিশাল জয়ে আলোচকবৃন্দ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও  বাংলাদেশের জনগণের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তাঁরা বলেন, ‘এই নিরঙ্কুশ জয়- শেখ হাসিনার রাজনৈতিক বিচক্ষণতার জয়- বর্তমান সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের জয়- বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের জয়। তারা আশা প্রকাশ করেন বাংলাদেশে উন্নয়নের এই ধারা অব্যাহত থাকবে। নবনির্বাচিত সরকার এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে একটি দুর্নীতিমুক্ত ও মাদকমুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে তুলবেন’।   
অটোয়ার আওয়ামীলীগ আয়োজিত এই সমাবেশে আসা সবাই একে অন্যের সাথে নির্বাচন নিয়ে তাঁদের আবেগ, উৎকণ্ঠা, উচ্ছ্বাস, আনন্দের কথা শেয়ার করেন। অনুষ্ঠান ৭টায় শুরু হলেও অনেকেই ৬টার পরপরই রেস্টুরেন্টে চলে আসতে থাকেন। একে-অন্যকে জড়িয়ে ধরেন - বিজয়ের অভিনন্দন জানান।

বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করছেন অটোয়ার সবার প্রিয় কণ্ঠশিল্পী নাসরিন শশী এবং উপস্থিত সুধীবৃন্দ
 সবার আনন্দ আর উচ্ছ্বাসের বিষয় ছিল বাংলাদেশের নির্বাচন। ৩০ ডিসেম্বর বাংলাদেশের কুয়াশাচ্ছন্ন সকালে যখন ‘একাদশ জাতীয় সংসদ’ নির্বাচনের ভোট শুরু হয়, তখন অটোয়ার সময় রাত ৯টা। সেই রাত ৯টা থেকে কিভাবে তারা সারাটা রাত নির্ঘুম টেলিভিশন এবং ফেইসবুক নিয়ে কাটিয়েছেন তা একে অন্যকে বলতে থাকেন। সেদিন রাতে আমি নিজেও ঘুমাইনি। সারারাতই টেলিভিশনের সামনে ছিলাম। হাজার হাজার মাইল দূরে বাস করেও বাংলাদেশের এই ঐতিহাসিক একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সাক্ষী হয়ে থাকতে চেয়েছিলাম এবং অবশেষে সাক্ষী হলাম।          

‘একাদশ জাতীয় সংসদ’ নির্বাচন ছিল বাংলাদেশের জনগণ তথা বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্যে এক অগ্নিপরীক্ষা। তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ২০০৮ সালের ‘নবম জাতীয় সংসদ’ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশে গণতন্ত্রের যাত্রাকে সুসংহত এবং শক্তিশালী করার উদ্দেশ্য ‘তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন’ ব্যবস্থার বিলুপ্তি ঘটায়। এর প্রতিবাদে জামাত-বিএনপিসহ বাংলাদেশের কিছু রাজনৈতিক দল ২০১৪ সালের ‘দশম জাতীয় সংসদ’ নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকে। শুধু বিরত থাকাই নয় নির্বাচনকে প্রতিহত করার নামে আগুণ সন্ত্রাসের সৃষ্টি করে। গত পাঁচ বছর জামাত-বিএনপি জোট তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্যে আন্দোলন করতে থাকে এবং বলতে থাকে - তারা দলীয় সরকারের অধীনে বাংলাদেশে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে দেবে না। সুতরাং বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন যখন বর্তমান সরকারের অধীনে ‘একাদশ জাতীয় সংসদ’ নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে তখন জামাত-বিএনপিসহ অনেক রাজনৈতিক দল এর প্রতিবাদ করতে থাকে এবং তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবী করে। কিন্তু বর্তমান সরকার তার সিদ্ধান্তে অটল থাকে এবং বলে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিকল্প নেই। এমতাবস্থায় ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে,গণফোরাম, জেএসডি, নাগরিক ঐক্য এবং বিএনপিকে নিয়ে ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হয় এবং নির্বাচন নিয়ে সরকারের সাথে আলাপ আলোচনা শুরু করে। সরকার এবং বিরোধীদলের ঐকান্তিক ইচ্ছার ফলে অবশেষে ৩০ডিসেম্বর, ২০১৮ বাংলাদেশের সব নিবন্ধিত দলের অংশগ্রহণে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।    

দুই দিন হতে চললো নির্বাচন শেষ হয়েছে। ইতিমধ্যে নির্বাচন নিয়ে, বাংলাদেশের পত্র-পত্রিকা, টেলিভিশন চ্যানেলের টকশো, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকসহ চায়ের দোকান, অফিস-আদালত, বাসা-বাড়ির ড্রয়িং রুমগুলোতে চুলচেরা বিশ্লেষণ শুরু হয়ে গিয়েছে। অধিকাংশ আলোচক, লেখক বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের এই বিশাল ব্যবধানের বিজয়কে ভালভাবে দেখছেন না। বিভিন্ন হেতু খোজার চেষ্টা করছেন। এই তো কিছুসময় আগে নির্বাচন নিয়ে টেলিভিশনে ঐক্যফ্রন্টের সংবাদ সম্মেলন দেখলাম। তাদের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনের ফলাফলকে প্রত্যাখান করা হয়েছে।    

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এই বিপুল জয় নিয়ে সুধীজনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া বা ঐক্যফ্রন্টের ফলাফল প্রত্যাখানকে আমি স্বাভাবিকভাবেই নিয়েছি। এটাই স্বাভাবিক। এটাই বাংলাদেশের নির্বাচনের বৈশিষ্ঠ। তবে, ঐক্যফ্রন্ট আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনের উল্লেখযোগ্য দিক হল- ঐক্যফ্রন্টের বিজয়ী প্রার্থীদের শপথ নেওয়ার ব্যাপারে ঐক্যফ্রন্ট আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেনের উত্তর। তিনি বলেন- ‘-শপথ নেওয়ার ব্যাপারটি আমাদের বিবেচনাধীন। আমরা বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেব’। আমি একজন প্রবাসী বাংলাদেশী হিসেবে ড. কামাল হোসেনের কাছে সবিনয় আবেদন করতে চাই, বাংলাদেশের এই নতুন জাগরণে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিয়ে, নির্বাচিত প্রার্থীদের ‘সংসদ সদস্য’ হিসেবে শপথ নেওয়ার ব্যবস্থা করবেন। ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে গণতন্ত্রের যাত্রাকে যেভাবে মসৃণ করেছে ঠিক সেভাবে সংসদ অধিবেশনে যোগদান করে সদস্যদের দায়িত্ব পালন করতঃ উদাহরণ সৃষ্টি করবে। যেকোন প্রতিযোগিতায় জয় পরাজয় থাকবেই। গণতন্ত্রে জয় পরাজয় সহজভাবে মেনে নেওয়াটাই উচিত - স্বাভাবিক। কোন জাতির উন্নতির পথের অগ্রযাত্রার প্রথম সোপান মেজরিটি জনগণের মতামতকে শ্রদ্ধা করা- সম্মান দেখানো। আমরা মানুষ। আলাদা আলাদা মানুষ। আমাদের প্রত্যেকের পছন্দ-অপছন্দ আলাদা। চিন্তা-ভাবনা আলাদা। একই মতাদর্শ বা একই মানুষকে অনেকের ভাল লাগবে কিন্তু একই চিন্তায় সবাই ঐ মতাদর্শ বা ঐ ব্যক্তিকে ভালবাসবেন তা অনেকাংশে সত্য না-ও  হতে পারে। 

পরিশেষে অটোয়ায় নির্বাচনোত্তর এই বিজয়োৎসব আয়োজন করার জন্যে সাইফুল, সোমা, খসরু ভাই, এবং মিতা ভাবীকে ধন্যবাদ জানাই। প্রচন্ড শীতের মাঝে আওয়ামীলীগ আয়োজিত বিজয়োৎসবে অটোয়াবাসী বাংলাদেশীদের উপস্থিতি এটিই প্রমাণ করে যে, আমরা প্রবাসী হয়েছি ঠিকই কিন্তু মনে-প্রাণে এখনও আমরা বাঙালি, বাংলাদেশী। বিজয়ের মাসে বিজয়ের দিনে আমি আপনাদেরকে একটি সুখবর দিতে চাই যে, আমরা অটোয়ায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে একটি অডিটোরিয়াম এবং লাইব্রেরী তৈরি করার উদ্যোগ নিয়েছি। এই মহতী উদ্যোগে আমরা অটোয়াবাসী সকল বাংলাদেশীদের সাহায্য এবং সহযোগিতা কামনা করছি। সবাই ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন। 

শুভ নববর্ষের শুভেচ্ছা। শুভ নববর্ষ ২০১৯

কবির চৌধুরী,
অটোয়া, কানাডা।