অটোয়া, শুক্রবার ১৯ এপ্রিল, ২০২৪
অটোয়া বাংলাদেশ হাইকমিশন এবং আমরা - কবির চৌধুরী

জকের লেখাটি বর্তমান সময়ে যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ‘ফেইসবুক’-এ, আমার ‘স্বল্পকালীন ফেইসবুক ফ্রেন্ড’, কবি সাংবাদিক সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলালের একটি পোস্টকে কেন্দ্র করে। ‘স্বল্পকালীন’ লেখার কারণ- ফেইসবুকে তাঁর সাথে আমার ফ্রেন্ডশিপের স্থায়িত্ব ছিল মাত্র ৩২দিন। গতমাসে ফেইসবুকে ‘অটোয়াতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মিলনায়তন ও পাঠাগার তৈরির উদ্যোগ’ পোস্টটি দেখে দুলাল আমাকে ফোন করেছিলেন। কারণ, পোস্টটি নিয়ে তিনি টরন্টো থেকে প্রকাশিত ‘সিবিএন’ পত্রিকায় সংবাদ করতে চান। সেইসূত্রে ফেইসবুকে তার সাথে আমার যোগাযোগ এবং পরিচয় হয়। কাকতালীয়ভাবে এই ফেইসবুকেই তার একটি পোস্টে, আমার একটি কমেন্টের জন্য তিনি আমাকে ‘আনফ্রেন্ড এবং ব্লক’ করেছেন।   

এ মাসের প্রথম সপ্তাহে ‘ফেইসবুকে’ সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলালের দেওয়া একটি পোস্ট আমার নজরে আসে। পোস্টের কেন্দ্রবিন্দু হলেন কানাডায় নিযুক্ত বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় হাইকমিশনার মিজানুর রহমান এবং বাংলাদেশ হাইকমিশন। হাইকমিশনার মিজানুর রহমানের একান্ত ব্যক্তিগত তিনটি ছবি সংযুক্ত ঐ পোস্টে দুলাল লিখেন- “---হাইকমিশনার মিজানুর রহমান বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করছেন। অসৎ ভাবে ভুয়া বিল-ভাউচার করে দুর্নীতির মাধ্যমে জনগণের পয়সা মারছেন, কানাডার ১৫০তম রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে কুইবেক সিটিতে যান, কানাডার প্রাদেশিক সরকার আমাদের মহান স্বাধীনতা দিবসকে মার্চ মাসকে ‘হ্যারিটেজমান্থ অফ বাংলাদেশ’ ঘোষণা দিয়ে অন্টারিও পার্লামেন্ট ভবন চত্বরে উড়লো বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা। সেখানে না এসে তিনি যান মাছ ধরতে বা স্নোতে কুত্তা দৌড় খেলতে! রাজা-বাদশাহ্‌ সেজে মজা মারছেন! ---আর টরন্টোর হাজার হাজার প্রবাসী বাঙালি স্বপ্ন পূরণের দিন তথা টরন্টোতে কনস্যুলার অফিসে কনস্যুলার সার্ভিস চালুর দিন তিনি আসেন নি! এই লোক কেমন লোক, তা আপনারাই বিচার করুন!”  

সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলালের দেওয়া পোস্ট দেখেই আমার চোখের সামনে ভেসে উঠে বাংলাদেশ হাইকমিশন, হাইকমিশনের কর্মকর্তাবৃন্দ এবং হাইকমিশনার মিজানুর রহমানের ছবি যিনি চলাফেরা, কথাবার্তায় অত্যন্ত অমায়িক এবং সাদাসিধে একজন মানুষ। পোস্টের অভিযোগগুলো বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল। মনে হল কোথায় যেন কিছু ফাঁকি আছে। বিশেষ করে ছবিগুলো দেখে। একটি ছবি তো মনে হল- ৫/৭ বছরের পুরনো এবং অত্যন্ত একান্ত। মোদ্দা কথায় আমার দেখা বর্তমান হাইকমিশন এবং হাইকমিশনার মিজানুর রহমানের চরিত্র এবং কাজকর্মের সাথে সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলালের উত্থাপিত অভিযোগ গুলো মানায় না। স্বাভাবিকভাবেই আমার মনে প্রশ্ন জাগে এই পোস্টটি কি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ একজন ব্যক্তিকে হেয় প্রতিপন্ন করা এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য? তাই, বিষয়গুলো জানার জন্যে আমি সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলালের দেওয়া পোস্টের সত্যতা জানতে চেষ্টা করি এবং লিখি- “দুলাল ভাই,---আপনার এই অভিযোগের ব্যাপারে অটোয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় হাইকমিশনার মিজানুর রহমানের বক্তব্য কী? আপনার এই পোস্টে তাঁর বক্তব্য সংযুক্ত করা খুবই জরুরী। কারণ, আপনি তাঁর কাজের ছুটির সময়ের বিষয় নিয়ে অভিযোগ করেছেন, যে সময়টা হাইকমিশনারের একান্ত নিজস্ব---”।          

একই দিনে আমার পোস্টের উত্তরে সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল টরন্টো থেকে প্রকাশিত বাংলা পত্রিকা সিবিএন-এ প্রকাশিত সংবাদের কিছু ‘পেপারকাটিং’ তাঁর পোস্টে সংযুক্ত করেন এবং আমার উদ্দেশ্যে লিখেন- “তার অপকর্ম নিয়ে সিবিএনের তথ্যপূর্ণ প্রচ্ছদ প্রতিবেদনে একাধিক রিপোর্ট পড়ুন! তার পর উকালতি করুন”। তার পোস্টে সংযুক্ত পেপারকাটিং দেখে আমি সিবিএন অনলাইন সংখ্যা খুঁজে পড়ার চেষ্টা করি এবং মন্তব্যে লিখি- “দুলাল ভাই, আপনি কিন্তু ব্যক্তিগত আক্রমণ করছেন, যা কোন অবস্থাতেই কাম্য নয়। দেখুন অটোয়াতে বাংলাদেশি পত্র-পত্রিকা খুব বেশি পাওয়া যায় না। তাই অনেক সংবাদই আমরা পড়তে বা দেখতে পাই না। সেকারণে, যে সংখ্যাগুলোতে হাইকমিশনের উপর প্রতিবেদন হয়েছে তা অটোয়ার অনেকের মত আমিও দেখি নাই। তাই, আপনার পোস্ট দেখে আমি বিষয়টির সত্যতা জানতে চেয়েছিলাম। এই যে আপনি সিবিএন পত্রিকার কাটিংগুলো দিয়েছেন, তা দেখে সিবিএন অনলাইন ভার্সনে পড়ার চেষ্টা করছি। শুধুমাত্র এই কাটিংগুলো পড়েই আমি আপনার কথা বিশ্বাস করতে পারি না। আর এই বিশ্বাস না করাটাকে আপনি খারাপভাবে ব্যাখা দিবেন তা ঠিক নয়। আপনার এই কাটিং পেপারগুলো দেখে আমি হাইকমিশন অফিসে যোগাযোগ করেছি। তাঁদের কথা আর আপনার দেওয়া পোস্ট এক নয়। আপনি বুঝতে চান নি যে, সবারই একটি লিমিটেশন আছে। আমি আশা করি দুচার দিনের মধ্যে আপনার পোস্টের যুক্তিকতা নিয়ে আশ্রমে লেখার চেষ্টা করবো। ---”।                

আমার করা এই মন্তব্যের পরপরই সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল আমাকে তাঁর ফ্রেন্ডলিস্ট থেকে আনফ্রেন্ড করে দেন এবং ব্লক করেন। সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল অবশ্যই আমাকে আনফ্রেন্ড এবং ব্লক করতে পারেন। এটি তাঁর মৌলিক অধিকার। তবে আনফ্রেন্ড করার আগে এবং আনফ্রেন্ড করার সময় আমাকে নিয়ে তিনি যে মন্তব্য করেছেন তাতে আমার মনে হয়, তাঁর শুধু কবিতা লেখাই উচিত ছিল – সাংবাদিকতা করা নয়, বিশেষ করে অনুসন্ধানীমূলক সাংবাদিকতা তো নয়ই। 

যাইহোক, গতকালকে আমি অটোয়াস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনে গিয়েছিলাম। উদ্দেশ্য বাংলাদেশ হাইকমিশন এবং হাইকমিশনার মিজানুর রহমানকে নিয়ে সম্প্রতি সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলালের ফেইসবুক একাউন্টে দেওয়া পোস্ট, পোস্টে সংযুক্ত ছবি এবং গত বছর টরেন্টো থেকে প্রকাশিত সিবিএন পত্রিকায় সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলালের লেখা প্রতিবেদন গুলো নিয়ে আলোচনা করা। অটোয়াস্থ হাইকমিশনে, সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলালের পোস্ট এবং আনীত অভিযোগ গুলোর প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে, হাইকমিশন সূত্রে জানা যায়, 

* মন্ত্রণালয় সরকারী আদেশের মাধ্যমে কোন কর্মকর্তার ভিজিটকে সরকারী হিসাবে বা কনসালটেশন হিসাবে গণ্য করতে পারে। আলোচ্য ভিজিটের ক্ষেত্রে, এরূপ সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে পরবর্তিতে নিয়মানুগভাবে ভ্রমণ খরচ বিল ভাউচারের মাধ্যমে সম্পাদন করা হয়।   

* নানা আয়োজনের মাধ্যমে কানাডা সরকার কানাডার ১৫০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন করে যার অংশ হিসাবে সীমিত কূটনৈতিক প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। হাইকমিশন সূত্রে জানা যায় যে, সে অনুষ্ঠানে সকল দেশের রাষ্ট্রদূত/হাইকমিশনারগন আমন্ত্রিত হননি। বরং ভৌগলিক জোট সমূহের ডিন গনই শুধুমাত্র আমন্ত্রিত হন। বাংলাদেশ, কানাডায় নিয়োজিত এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের সদস্যদেশ সমূহের জোটের সদস্য এবং এ জোটের তৎকালীন ডিন ভিয়েতনামের রাষ্ট্রদূত কানাডা সরকারের আমন্ত্রিত অতিথি হিসাবে সে আয়োজনে জোটের প্রতিনিধিত্ব করেন। তাই ইচ্ছাকৃতভাবে বাংলাদেশের হাইকমিশনারের এ অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত থাকার বিষয়টি যে অযৌক্তিক তা বলাই বাহুল্য। হাইকমিশন সূত্রে আরো জানা যায়, আলোচ্য সময়ে হাইকমিশনার কুইবেক শহরে যান এবং সে মময় কুইবেক ও মন্ট্রিয়লে প্রবাসী বাংলাদেশীদের সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিশেষ করে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত সাজাপ্রাপ্ত খুনী নূর চৌধুরীকে কিভাবে কানাডা থেকে বাংলাদেশে ফেরত নেওয়ার আন্দোলন বেগবান করা যায় সে বিষয়ে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণ করেন। 

* হাইকমিশন সূত্রে জানা যায় যে, ২০১৭ সালের ২৭ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস পালনের টরেন্টো সিটি কাউন্সিল কর্তৃক বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলনের আয়োজনে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। তাছাড়া ২৮ মার্চ হাইকমিশন অটোয়ার ফেরারমন্ট হোটেলে কানাডার রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী, অন্যান্য দেশের কূটনৈতিক প্রতিনিধি এবং প্রবাসীদের সম্মানে বাংলাদেশের ৪৭ তম স্বাধীনতা এবং জাতীয় দিবস উপলক্ষে একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সফল ভাবে এ অনুষ্ঠান আয়োজনের পূর্বপ্রস্তুতির জন্য হাইকমিশনারের অটোয়া অবস্থান অত্যাবশ্যক ছিলো। তবে ২০১৮ সালে টরেন্টো সিটি কাউন্সিল অনুরূপ আয়োজনে হাইকমিশনারকে আমন্ত্রণ জানায় এবং তিনি যথারীতি সে অনুষ্ঠানে যোগ দেন।  

* প্রবাসীদের কল্যাণে অটোয়াস্থ হাইকমিশনের উদ্যোগে টরেন্টোতে বাংলাদেশের কনস্যুলেট স্থাপিত হয় এবং গত ১৭ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখ হতে সেখানে সীমিত কনস্যুলার সেবা প্রদান করা হচ্ছে। পরবর্তিতে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো স্থাপনের পরে বৃহত্তর আঙ্গিকে আনুষ্ঠানিক ভাবে কনস্যুলেট উদ্বোধন করা হবে।

* প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, কর্মচারীদের টিম স্পিরিট বৃদ্ধির জন্য পরিবারের সদস্যদের সম্পৃক্ত করে ছুটির দিনে বাৎসরিক এক বা একাধিক পিকনিক বা আউটিং এর মতো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা একটি প্রচলিত এবং যৌক্তিক প্রক্রিয়া। এ ধরনের আয়োজনের বা কারো ব্যক্তিগত ছবি অনুমতি ব্যতীত প্রচার করা শুধু অনাকাংখিতই নয়, তা বেআইনি ও বটে।  

* হাইকমিশন সূত্রে জানা যায়, হাইকমিশনার তাঁর পরিবার সহ মিশর হতে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন শেষে ঢাকা ফেরার সময় তুরস্কে ছুটি কাটান। সে সময়েরকার ভ্রমণে হাইকমিশনারের স্বপরিবার ছবি তাঁর স্ত্রীর ফেইসবুক থেকে বিনা অনুমতিতে সংগ্রহ করে জনাব দুলাল নিজের ফেইসবুকে পোষ্ট করে অত্যন্ত বাজে ভাবে উপস্থাপন করেন যা অত্যন্ত আপত্তিকর।  

হাইকমিশনের বক্তব্যের সাথে আমি একমত। কোন অবস্থাতেই রাষ্ট্রের একজন বিশিষ্ট ব্যক্তির পারিবারিক ছবি নিয়ে ফেইসবুকে তামাশা করা সুন্দর দেখায় না। এই একটি মাত্র কারণেই সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল কর্তৃক লিখিত সবগুলো প্রতিবেদন অবিশ্বাস করা যায় এবং বলা যায় সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল, হলুদ সাংবাদিকতার মাধ্যমে অত্যন্ত সযত্নে হাইকমিশনার মিজানুর রহমান এবং বাংলাদেশ সরকারের একটি প্রতিষ্ঠানকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলার চেষ্টা করেছেন যা কোন অবস্থাতেই কাম্য নয়। 

বাংলাদেশ হাইকমিশনে যাওয়াটা খুবই অর্থবহ হয়েছে। একদিকে আমি যেমন সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলালের প্রতিবেদন সম্বন্ধে সম্যক ধারণা লাভ করেছি তেমনি কানাডার সাথে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক উন্নয়নের চালচ্চিত্রও জানতে পেরেছি যা আজকের লেখার জন্য অতীব জরুরী। এতসব কথার মধ্যে জানতে চাই বাংলাদেশ আর কানাডার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নয়নে অটোয়াস্থ হাইকমিশনের ভূমিকার কথা। 

হাইকমিশন সূত্রমতে- 
০৮-১১ জুন ২০১৮ তারিখ কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর আমন্ত্রণে জি-৭ নেতাদের সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কানাডা সফর করেন। উক্ত সম্মেলনে যোগদানের পাশাপাশি তিনি প্রবাসীদের আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগদান, কানাডার ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের সাথে বৈঠক সহ নানা অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ। হাইকমিশন সফলতার সাথে এ সফর আয়োজন করে। উল্লেখ্য, হাইকমিশন ২০১৬ সালের ১৬-১৭ সেপ্টেম্বর তারিখ মন্ট্রিয়ালে অনুষ্ঠিত 5th Global Forum For Replenishment Conference –এ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অংশগ্রহণ সফল ভাবে আয়োজন করে।

হাইকমিশন কানাডা-বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়ন এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সহযোগিতা বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। কানাডা-বাংলাদেশের মাঝে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ, বাংলাদেশে কানাডার বিনিয়োগ বৃদ্ধি, কানাডায় প্রবাসী বাংলাদেশীদের স্বার্থ সংরক্ষণ, কানাডার উন্নয়ন সহযোগিতা বৃদ্ধি ইত্যাদি বিষয়ে হাইকমিশন নানাবিধ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছে। বাংলাদেশে বিরাজমান রোহিঙ্গা শরনার্থী সমস্যা নিরসনে কানাডা বিশেষ ভূমিকা রাখছে। এক্ষেত্রে কানাডার সহায়তা আরো বেগবান করার জন্য হাইকমিশন সর্বদা স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, পররাষ্ট্র দপ্তর সহ সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষ, গণমাধ্যম ইত্যাদির সাথে যোগাযোগ রক্ষা করছে। উদাহরণ হিসাবে ০৭ নভেম্বর ২০১৮ তারিখ হাইকমিশনার কানাডা সিনেটের মানবাধিকার সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটিতে রোহিঙ্গা সমস্যা বিষয়ে বিশেষ আলোচনা এবং প্রশ্ন-উত্তর অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। এ সময় তিনি রোহিঙ্গা সমস্যা নিরসনে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রস্তাবনা সমূহের উপর আলোকপাত করেন। ইতোপূর্বে, ২০১৭ সালে হাইকমিশনার কানাডা সিনেটের মানবাধিকার সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটিতে রোহিঙ্গা সমস্যা বিষয়ে আলোচনা করে কানাডা সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন।

কানাডা-বাংলাদেশের মাঝে সরাসরি বিমান পরিচালনার জন্য বিমান পরিবহন চুক্তি, বিনিয়োগ নিরাপত্তা চুক্তি সম্পাদনের জন্য হাইকমিশন কানাডা এবং বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের সাথে সরাসরি যোগাযোগ রাখছে। নিকারাগুয়া এবং জামাইকার সাথে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্প্রসারণের উদ্দেশ্যে বাণিজ্য চুক্তি/সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। হাইকমিশনার সহ হাইকমিশনের কর্মকর্তাগণ কানাডার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে বাংলাদেশ সরকারের বিনিয়োগ বান্ধব নীতিমালা, রপ্তানী পণ্যের গুনগত মান এবং নতুন নতুন রপ্তানী পণ্যের বিষয়ে অবহিত করছে। এছাড়া হাইকমিশন স্থানীয় বাণিজ্য মেলায় অংশ গ্রহণ করে। বাংলাদেশের সাথে কানাডার দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাংলাদেশ সরকার নির্ধারিত লক্ষ মাত্রার চেয়েও বাংলাদেশ কানাডায় অধিক রপ্তানী করেছে। দূতাবাসের এই তৎপরতা সরকারের ঘোষিত অর্থনৈতিক কূটনীতিরই অংশ।



সরকারী কর্মচারীদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য কানাডায় প্রশিক্ষণ, উচ্চ শিক্ষার বিশেষ সুযোগ সৃষ্টির জন্য কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে হাইকমিশন প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এছাড়া বাংলাদেশের নার্সিং সেবার মান বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশে কানাডা থেকে নার্সিং প্রশিক্ষক নিয়োগের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

অটোয়াস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন বছর ব্যাপী বিভিন্ন জাতীয় দিবস পালনের পাশাপাশি বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি তুলে ধরে বাংলাদেশের উজ্জ্বল ভাবমূর্তি তুলে ধরার জন্য বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এছাড়া প্রবাসী বাংলাদেশীদের কনস্যুলার সেবা প্রদান সহজতর করা এবং তার মান বৃদ্ধির জন্য হাইকমিশন সারাবছরই নানাবিধ কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জনবান্ধব, প্রবাসীদের কল্যাণে গৃহীত পদক্ষেপ সমূহের ধারাবাহিকতায় অটোয়াস্থ হাইকমিশনের উদ্যোগে প্রবাসীদের দীর্ঘ প্রত্যাশিত বাংলাদেশের একটি কনস্যুলেট টরেন্টোতে স্থাপিত হয় যা গত ১৭ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখ হতে সীমিত কনস্যুলার সেবা প্রদান করছে। হাইকমিশন তার অফিস চত্বরের বাইরেও কানাডার বিভিন্ন প্রদেশে এমনকি জামাইকায়ও মোবাইল কনস্যুলার সেবা প্রদান করে। ২০১৮ সালে টরেন্টো শহর, আলবার্টা, সাসকাচুয়ান, নিউ ফাউন্ডল্যান্ড ও ল্যাবরাডর এবং জামাইকায় এরকম ৭টি মোবাইল কনস্যুলার সেবা কর্মসূচীর আয়োজন করে। হাইকমিশন প্রবাসীদের কনস্যুলার সেবা গ্রহণ সহজতর করার লক্ষে মন্ত্রণালয়ের সাথে সমন্বিত ভাবে কাজ করছে, যার মধ্যে অন-লাইন কনস্যুলার ফি প্রদানের সুযোগ প্রচলনের ব্যবস্থা করার উদ্যোগ অন্যতম। 

হাইকমিশন প্রবাসী ভাইবোনদের কানাডায় বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার জন্য আয়োজিত বিভিন্ন সাংস্কৃতিক, সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশ গ্রহণ করে। উদাহরণ হিসাবে প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রত্যাশা পূরণের জন্য সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস দেশব্যাপী পালনের জন্য কানাডা পার্লামেন্টে একটি প্রস্তাবনা গ্রহণের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এই প্রস্তাবটি দ্রুততম সময়ে পার্লামেন্টে পাশ হওয়ার জন্য হাইকমিশন কানাডার সাংসদ এবং বাংলাদেশী কমিউনিটির সংগঠকদের সাথে নিয়মিত যোগাযো রক্ষা করছে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ হাইকমিশনার মিজানুর রহমান কানাডার পাশাপাশি আরো তিনটি দেশ যথাঃ নিকারাগুয়া, জামাইকা এবং ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর রাষ্ট্রদূত/হাইকমিশনার এর দায়িত্ব পালন করছেন। হাইকমিশন এ সকল দেশে বাংলাদেশের স্বার্থ সংরক্ষণ, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক ও কূটনৈতিক সম্পর্কের সম্প্রসারণে নানাবিধ উদ্যোগ গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়নে সচেষ্ট। ২০১৮ সালে তিনি নিকারাগুয়া এবং ত্রিনিদাদ ও টোবাগো সফর করেন এবং সেখানকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী, শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী সহ উচ্চ পদস্থ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, ব্যবসায়ী মহল এবং গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সাথে আলোচনা করেন।

পরিশেষে বলতে চাই, হাজার হাজার মাইল দূরে থাকলেও আমরা আমাদের মাতৃভূমি বাংলাদেশের সুখে-দুঃখে নিজেদেরকে জড়াতে ভালবাসি, গর্ববোধ করি। বাংলাদেশ এখন আর তলাবিহীন ঝুড়ি নয়, বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশ। পৃথিবীর অনেক দেশই এখন বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে গ্রহণ করে। কানাডা প্রবাসী বাংলাদেশীরাও উন্নয়নের ভাগীদার। দেশী-বিদেশী বাংলাদেশীদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার কারণেই বাংলাদেশের আজকের এই অবস্থান। দেশের এই অগ্রযাত্রায় আমাদের উচিত সরকারকে ভাল পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করা। সাংবাদিকতার নাম নিয়ে, অবাধ তথ্য প্রবাহের সুযোগে নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য ফেইসবুক বা পত্র-পত্রিকায় নেতিবাচক এবং মনগড়া কাহিনী লিখে সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলার চেষ্টা না করাটাই শ্রেয় বা উত্তম।        
জয় হোক সুস্থ সাংবাদিকতার।    

কবির চৌধুরী
সম্পাদক, প্রকাশক
আশ্রমবিডিডটকম
অটোয়া, কানাডা।