অটোয়া, বুধবার ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
ইউরোপের পথে পথে (ছয়) – দীপিকা ঘোষ

মরা এখন ইউনিভার্সিটি কলেজ লণ্ডনের (ইউ সি এল) ক্যাম্পাসের ভেতর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে চলেছি।  ১৮২৬ খ্রীষ্টাব্দে সেন্ট্রাল লণ্ডনে এটি প্রতিষ্ঠিত হয় চার্চের রক্ষণশীল বলয়ের বাইরে অসাম্প্রদায়িক চেতনা প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য নিয়ে। পুরুষের মতো মেয়েরা যাতে সহশিক্ষা লাভ করে সব ক্ষেত্রে সমান অধিকার লাভ করে, সেই লক্ষ্য থেকে সমানসংখ্যক ছাত্রছাত্রী ভর্তির ব্যবস্থাও এখানে রাখা হয়। ঠিকানা-‘গাউয়ার স্ট্রিট, ব্লুমসবারি, লণ্ডন’। 
বিশ্বের কুড়িটি বিখ্যাত ইউনিভার্সিটির মধ্যে ‘ইউ সি এল’ অন্যতম। র‌্যাঙ্কিং-এর দিক থেকে এর অবস্থান আপাতত দশম স্থানে। ১৯৩৮ সাল থেকে আজ অবধি ইউনিভার্সিটি কলেজ লণ্ডন জন্ম দিয়েছে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নোবেল লরিয়েটের। ইতিহাস থেকে জ্যোতির্পদার্থবিদ্যা, মেডিসিন থেকে ভাষাতত্ত্ব, প্রযুক্তি থেকে সাহিত্য, সব বিষয়েই এখানকার গবেষণা আর একাডেমিক সম্পদ অত্যন্ত উঁচুমানের। এই বিদ্যাপীঠ ‘লণ্ডন’স গ্লোবাল ইউনিভার্সিটি’ নামেও পরিচিত। কারণ ১৫০ দেশের আন্তর্জাতিক ছেলেমেয়েরা অধ্যয়ন করছে এখানে। ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা সমপরিমাণ। ক্যাম্পাসের আয়তন ৪১৯ একর। ৩৬০ ডিগ্রী কাঁধ ঘুরিয়েও নজরের মধ্যে শুরু থেকে শেষ অবধি এর নাগাল পাওয়া যায় না। বুঝলাম, ওদের পাল্লায় পড়ে হাঁটতে হাঁটতেই আমাদের আজ জেরবার হয়ে যেতে হবে!

শ্রীমান কণিষ্ক ঘোষ পাপান, এখানে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ছাত্র। অতএব মিউজিয়াম থেকে বেরিয়েই তার প্রস্তাব শোনা গেলো–
এবার চলো, রেস্টুর‌্যান্টে ঢোকার আগে তোমাদের আমার ইউনিভার্সিটিটা দেখিয়ে আনি। হেঁটে গেলে এখান থেকে ওনলি ফিটটিন মিনিটের পথ।
বললাম-
তোর পনেরো মিনিট মানেই তো আবার চল্লিশ মিনিটের ধাক্কা!
ধাক্কা মানে?
ও তুই বুঝবিনে! এটা হলো আমাদের আপাদমস্তক বাংলা শব্দ!
আপাদমস্তক? কেন এসব কথা বলছো?
ওরে বাবা, এসব কোনো খারাপ শব্দ নয়!
মেসো, মামণি কিন্তু মাঝে মাঝে খুব উইয়ার্ড শব্দ ইউজ করে! তুমি কি নোটিশ করেছো? শুচির অভিযোগ সঙ্গে সঙ্গে উচ্চারিত হলো।
বললাম–
তোদের অত বুঝে কাজ নেই বাপু! বলছি, সত্যিই পনেরো মিনিট লাগবে, নাকি চল্লিশ?
উত্তরে কণিষ্ক ফের বিজ্ঞ হয়ে উঠলো–
রোজ বেশি করে হাঁটলে তোমার কি কিছু ক্ষতি হবে মামণি? অনেক হাঁটলে লিম্বগুলোতে রাস্ট পড়বে না! তুমি কি সেটা চাও না?
আমার কোনো লিম্বেই রাস্ট পড়েনি সোনা! রোজ আমি এক ঘন্টা করে ব্যায়াম করি! কিন্তু সকাল থেকে তোদের সঙ্গে হেঁটে হেঁটে এবার যে সবকিছুরই খুলে পড়ার যোগাড় হচ্ছে!
মেসো, দিদিভাই, তোমাদেরও কি তাই?
না, না, আমরা ঠিক আছি! মামণি, পাপান ঠিকই বলেছে! পনেরো মিনিটের বেশি সময় লাগবে না! বলেই শুচি তার সুন্দর মুখের মিস্টি হাসিতে উৎসাহ যোগাতে চাইলো।

দূর থেকেই নজরে এলো খোলা আকাশের নিচে বিস্তীর্ণ প্রাঙ্গন জুড়ে দলে দলে ছেলেমেয়েদের ভিড়। কয়েকজন তরুণ তরুণী মাইক্রোফোন হাতে ঘুরে ঘুরে কথা বলছে। কেউ কেউ দাঁড়িয়ে রয়েছে স্ট্যাণ্ড মাইক্রোফোনের সামনে। খানিকটা কাছে আসতে তাদের কণ্ঠস্বরে আবেগের ওঠানামাও বেশ স্পষ্ট হলো। কণিষ্ক আগে থেকেই জানিয়ে দিলো–
ওরা ড্রামা ডিপার্টমেন্টের স্টুডেন্ট। ড্রামা রিহার্সেল দিচ্ছে।
এখানে সব মিলিয়ে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা কত হবে পাপান? ঘোষ বহু সময় পরে কথা বললো।
একশোটা ডিপার্টমেন্ট মিলিয়ে ৩৯০০০। আর স্টাফদের সংখ্যা ১১০০০।
আমার এক কলিগ এখান থেকে কেমিস্ট্রিতে পিএইচডি করেছিলেন। কেমিস্ট্রি ডিপার্টমেন্টটা কোনদিকে? তুমি দেখতে চাও? তাহলে অনেকটা হাঁটতে হবে কিন্তু। ওটা অনেক পেছনের দিকে।

মাথার ওপর সারাক্ষণ প্রখর তেজে সূ্র্য জ্বলছে। ঘড়িতে দুটো বেজে পঁয়তাল্লিশ মিনিট প্রায়। লাঞ্চের সময় প্রায় অতিক্রান্ত। অতএব ঘোষের উৎসাহ নিভে গেলো–
নাঃ থাক! বরং তোমার ডিপার্টমেন্টটা দেখি চলো। তারপর আমরা লাঞ্চ সেরে নেবো।
হ্যাঁ আমিও সেটাই ভাবছি। তোমরা কী খেতে চাও? চাইনিজ, ইণ্ডিয়ান নাকি ব্রিটিশ?
এখন তো প্রায় তিনটে বাজতে চললো পাপান, দেখো কোন্ দোকান খোলা থাকে।

ঘোষের ফোন বাজছে। কথোপকথন থেকে বুঝতে পারছি, কণিষ্কের জননীর ফোন। হাসপাতালে কাজের ফাঁকে জামাইবাবুর সংবাদ নিচ্ছে। তার কর্তব্যচেতনা শিশুকাল থেকেই টনটনে। বুঝতে পারছি, ছেলেমেয়ের আচরণে সে অসন্তোষ প্রকাশ করছে। ঘোষ তাই বলছে–
না, না তাতে কী হয়েছে? কাল রাতে ঘুমিয়েছি তাতেই তো রেস্ট হয়ে গেছে। হ্যাঁ, হ্যাঁ, ব্রিটিশ মিউজিয়াম দেখা হয়ে গেছে। এখন পাপানের ইউনিভার্সিটিটা দেখছি! এরপরেই আমরা লাঞ্চ করে নেবো! তোমার চিন্তার কোনো কারণ নেই!
চলতে চলতে চোখে পড়ছে বিরাট বিশাল সব ম্যাসিভ বিল্ডিং। কোনোটার সামনে লেখা রয়েছে- ‘আটর্স এণ্ড হিউম্যানিটিস’। কোনোটাতে-‘পপুলেশন হেলথ সায়েন্স’। কোথাও আবার-‘ফ্যাকালটি অফ ল’। হঠাৎই পেছন থেকে কোনো তরুণীর কণ্ঠস্বর জলতরঙ্গ হয়ে ভেসে এলো–
হেই ক্যাণিষ! প্লিজ ওয়েট!
সঙ্গে সঙ্গে আমাদের অবাক করে দিয়ে থমকে দাঁড়ালো কণিষ্ক। বুঝলাম, বাঙালির ছেলে কণিষ্ক আন্তর্জাতিক  বন্ধুসমাজে ‘ক্যাণিষ’ হিসেবে আখ্যায়িত হচ্ছে। যেমন শুচি হয়েছে ‘সাচ’। চাইনিজ অরিজিনের মেয়ে সামনে এসে মৃদু হেসে জিজ্ঞেস করলো–
তুমি সেদিন যাদের কথা বলেছিলে, এরাই বুঝি তোমার সেই আত্মীয়?
হাঁ। আমার আঙ্কল আর আন্টি।
হ্যালো, আমি হেইরান। কোরিয়ান কন্যা। ভালো লাগলো তোমাদের সঙ্গে পরিচিত হয়ে। বলেই করমর্দনের জন্য হেইরান হাত প্রসারিত করে আন্তরিক হাসি মুখে ছড়ালো।
ঘোষ করমর্দন শেষ করে জানতে চাইলো–
তুমিও কি কণিষ্কর ডিপার্টমেন্টে?
না না। আমি এ্যাস্ট্রোফিজিক্সে। তোমরা আমেরিকায় কতদিন আছো?
অনেক বছর!
আচ্ছা! কেমন লাগছে আমাদের এখানে?
ভালো। ইচ্ছে আছে সবকিছু ঘুরে দেখার!
হ্যাঁ, সেই ভালো। তোমরা ঘুরে ঘুরে দেখো আর এনজয় করো! অনেক কিছু দেখার আছে। বাই ক্যাণিষ! আবার দেখা হবে! ভালো থেকো!

কণিষ্কর ডিপার্টমেন্ট, ক্যাফেটারিয়া ঘুরে দেখতে লম্বা সময় পেরিয়ে গেলো। তখনও অল্পসংখ্যক ছাত্রছাত্রী টানা বারান্দার মতো লম্বা টেবিলে বসে গল্প করছিল খেতে খেতে। তাদের আলাপচারিতার অস্পষ্ট গুঞ্জন মৃদু মৃদু তরঙ্গ তুলে ছড়িয়ে পড়ছিল চারপাশে। চোখে পড়লো, কেউ সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় উঠছে। কেউ বা লাফাতে লাফাতে নেমে আসছে ওপর থেকে। তারুণ্যের অনুপম কান্তি স্রোতের মতো গড়িয়ে পড়ছে তাদের শরীর বেয়ে। তাদের কত রকমের মুখ। কত রকমের ভাষা-সংস্কৃতি। বিভিন্ন রকম খাবার মেন্যু। কুকিং সিস্টেম। উপলব্ধি করলাম, সবকিছু মিলেমিশে বিশ্বায়নের প্রবল প্রতাপ ক্যাম্পাসের সবখানেই ফেটে পড়ছে মহামিলনের জয়গানে।

দীর্ঘ ফুটপাথে হেঁটে তিনবার রাস্তা ক্রস করে ম্যাপল স্ট্রিটে কণিষ্কর পছন্দের রেস্টুর‌্যান্টে প্রবেশ করতে তিনটে কুড়ি বেজে গেলো। পড়ন্ত বেলায় কাস্টোমারের ভিড় নেই। আমাদের দেখেই তরুণ ওয়েটার হাসিমুখে এগিয়ে এলো অভিনন্দন জানাতে। মেন্যু দেখে প্রত্যেকের পছন্দের তালিকা নির্ধারিত হওয়ার পর অনুচ্চ গলায় কথা বললো কণিষ্ক–
এখানে কেন এলাম জানো মেসো? স্টুডেন্ট আইডি কার্ড দেখালে থার্টি পার্সেন্ট ডিসকাউন্ট পাবো। এই সুবিধে সব রেস্টুর‌্যান্টে থাকে না। সিলেক্টিভ কিছু রেস্টুর‌্যান্টেই শুধু আছে।
স্টুডেন্ট আইডি কার্ডে আর কিসে কিসে ডিসকাউন্টের সুবিধে আছে?
অনেক কিছুতে আছে। হোটেল একোমডেশন, ট্রেনের টিকেট, প্লেন ফেয়ার, তারপর সিজন্যাল শপিংএর জন্যও কিছুটা আছে। তবে স্টুডেন্টরা চাইলে ওয়েস্টার, নিউস, নিউস এক্সট্রা, আইএসআইসি কার্ডও ইউজ করতে পারে। অবশ্য এগুলোর জন্য চার্জ করে।
শুচির সাজসজ্জার দিকে একটু বিশেষ আকর্ষণ আছে। এসেই সে রেস্টরুমে ছুটেছিল। ফিরে এসে আলোচনার শেষ অংশটুকু শুনতে পেয়ে বললো–
পাপান, ডেট অনুযায়ী আমার স্টুডেন্ট আইডি কার্ড কিন্তু ফিফটিন জুলাই অবধি ভ্যালিড আছে।
হ্যাঁ, তাহলে তুমিও ডিসকাউন্ট পাবে দিদিভাই।

খেতে খেতে ওদের বিভিন্ন আলাপচারিতা থেকে মনে হলো, এদেশের ছেলেমেয়েরা কত অল্প বয়স থেকেই না ব্যক্তিগত জীবনে স্বনির্ভরতা লাভ করতে সক্ষম। কোনো বিষয়েই কারুর সাহায্য সহযোগিতা পাওয়ার জন্য  তারা বিন্দুমাত্র লালায়িত নয়। এরা যেন জীবনের প্রথম থেকেই বুঝে নিয়েছে, নিজেদের ব্যক্তিভাগ্যকে গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত তাদের নিজেদেরই নিতে হবে এবং তার জন্য যথাকর্তব্য পালনের ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকা চলবে না। বিল মিটিয়ে বেরিয়ে আসতে চারটে পনেরো বেজে গেলো। বাইরে প্রখর রোদের ঝলকানি। ছাত্রছাত্রীদের পদচারণায় মুখরিত চারপাশ। দোকানপাটে খরিদ্দারের আনাগোনা। অসাধারণ স্থাপত্যশিল্পের উঁচু উঁচু বিল্ডিং।
বিগত শতাব্দীর ব্রিটিশ রাজ্যপাটের সদম্ভ ঘোষণা চারদিকে যেন উচ্চকিত হয়ে ফেটে পড়ছে। এখন আমাদের গন্তব্যস্থল দক্ষিণপশ্চিম লণ্ডনের উদ্ভিদ ও ফাঙ্গাস রাজ্য ‘কিউ গার্ডেন’। পৃথিবীর বৃহত্তম বোটানিক্যাল গার্ডেন হিসেবে আজও এটি সুবিখ্যাত। বছরে দর্শনার্থীর সংখ্যা, দশ লাখ পঁয়ত্রিশ হাজার।

ট্রেন স্টেশনে যাওয়ার আগেই কণিষ্ক তার মত পাল্টালো–
দিদিভাই, কিউ গার্ডেনে প্রচুর হাঁটতে হবে সবটা ঘুরে দেখতে গেলে। মেসো, মামণি আজ পেরে উঠবে না। আমরা ওটা সানডের জন্য রাখি। চলো, লণ্ডন ব্রিজে টেরোরিস্ট এ্যাটাকের জায়গাটা ওঁদের দেখিয়ে আনি আজ। মেসো দেখতে চেয়েছিল।
হাঁটতে হাঁটতে কয়েক পা এগিয়ে যেন হঠাৎই মনে পড়েছে এমনিভাবে বামে আঙ্গুল তুলে ফের সে বললো–
মামণি, এই যে আমার বাসা, আমি এখানে ফোর্থ ফ্লোরে থাকি।
বাঃ এ জায়গাটা তো ভারি সুন্দর! বড় বড় সব গাছ চারদিকে! শান্ত পরিবেশ!
হ্যাঁ। আর ওই যে সামনের রাস্তাটা দেখছো ওটা ক্রস করলে পাঁচ মিনিটের মধ্যে গ্রোসারির দোকান। আমরা সবাই ওখান থেকেই গ্রোসারি করি।
ঘোষ বাস্তববাদী লোক। অতএব প্রশ্ন এলো–
এখানে কি রুমে একা থাকার ব্যবস্থা? নাকি শেয়ার করতে হয়?
কেউ চাইলে শেয়ার করতে পারে মেসো। অনেকেই সেটা করে। আমি অবশ্য প্রাইভেটলি থাকতে পছন্দ করি। তাতে পড়তে সুবিধে হয়। তবে কিচেন সবাইকেই শেয়ার করতে হয়।
ভাড়া কত দিতে হয়?
এক হাজার পাউণ্ড।
তাহলে খাওয়া, বাড়ি ভাড়া, বই কেনা, টিউশন ফিসহ আরও সব খরচখরচা মিলিয়ে তোমাকে তো অনেক লোন করতে হয়েছে পাপান।
হ্যাঁ। কিন্তু তাতে কী হয়েছে? চাকরি করার পরেই সব পে করে দেবো।
তোমার স্টুডেন্ট লোনের ইন্টারেস্ট কত?
সিক্স পয়েন্ট থ্রি পার্সেন্ট।
শুচি এতক্ষণে মুখ খুললো–
জানো তো মেসো, এরপরে আবার বাবা-মার কাছ থেকেও অনেক নেয়! খরচের ব্যাপারে পাপানের খুব হাইফাই ভাব! নাইন্টি পার্সেন্ট টাইমই ও বাইরে খায়! বন্ধুদের খুব দামী জিনিষ গিফট করে! অবশ্য এসব কথা বলে লাভ নেই! মামণি তো কখনোই পাপানের ফল্ট দেখতে পাবে না! কেবল আমারটাই শুধু চোখে পড়ে!

এসব দেশে ইউনিভার্সিটির ছাত্রছাত্রীরা ইউনিভার্সিটির আবাসিক হলে কেবল ফার্স্ট ইয়ারে বসবাসের সুযোগ  পায়। দ্বিতীয় বর্ষ থেকে বাসস্থানের ব্যবস্থা নিজেদের করে নেয়ার দায়িত্ব পড়ে। কানাডা, যুক্তরাষ্ট্রের মতো যুক্তরাজ্যেও উচ্চ শিক্ষালাভের জন্য টিউশন ফি দুই শতকে বৃদ্ধি পেয়েছে কয়েক গুণ। সব পরিবারের পক্ষে সন্তানের উচ্চশিক্ষার জন্য এই বিপুল অর্থ যোগানো সম্ভব নয়। এরপর রয়েছে বাইরে থাকার জন্য বাড়ি ভাড়া, বাজারঘাট, বইপত্র কেনা থেকে যাবতীয় খরচের প্রশ্ন। অতএব আণ্ডারগ্রাজুয়েট, পোষ্টগ্রাজুয়েট, ফুল-টাইম, পার্ট-টাইম যে ক্যাটাগরিরই ছাত্রছাত্রী হোক, দরখাস্ত করলে নাগরিক হিসেবে প্রত্যেকেই সুদসহকারে লোনের সুবিধে পায়।
স্টুডেন্ট লোনের বিরোধিতা করে কেউ কেউ অবশ্য প্রস্তাব রেখেছিলেন–
সত্তর দশকের মতো ডিপার্টমেন্টের ফাণ্ড থেকেই ছাত্রছাত্রীদের টিউশন ফি পরিশোধ করা হোক। এবং সেজন্য প্রত্যেক ডিপার্টমেন্টে বড় মাপের ফাণ্ড তৈরী করতে হবে।

এই প্রস্তাব বাস্তব কারণেই ধোপে টেকেনি। কারণ সত্তরের দশকে ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া ছেলেমেয়ের সংখ্যা ছিল দশ শতাংশ। চল্লিশ পঁয়তাল্লিশ বছর পরে সেই সংখ্যা চল্লিশ পার্সেন্টের ওপর দাঁড়িয়ে। ডিপার্টমেন্টে ফাণ্ড তৈরী হয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আর সরকারী অনুদানে। সরকারি কোষাগারে অর্থ আসে সাধারণ নাগরিকদের আয়কর বাড়িয়ে। জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্রে নাগরিকের সব ধরনের নিরাপত্তা স্থিতিশীল রাখতে গেলে বহু রকম ব্যয়ভার বহন করতে হয়। সুতরাং ইউনিভার্সিটির ফাণ্ড বাড়াতে গেলে জনগণের কাঁধে আরও বিশাল মাপের ট্যাক্সের জোয়াল বসাতে হবে সরকারকে। কিন্তু লেবার হোক, কনজারভেটিভ হোক, কোনো পার্টির সরকারই জনতার অসন্তোষ কুড়িয়ে ট্যাক্সের পারিমাণ বেশি বাড়িয়ে জনপ্রিয়তা খোয়াতে রাজি নয়। চলবে…

দীপিকা ঘোষ
ওহাইয়ো, আমেরিকা।