অটোয়া, বুধবার ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
ফেলে আসা দিনগুলি (এগার পর্ব) -হুমায়ুন কবির

চাইনিজ রেস্তোরার এক কর্নারে রাবেয়া আর ফাহিম বসে আছে। ওয়েটার অনেক আগেই অর্ডার অনুযায়ী থাই ছুপ, চিকেন ফ্রাই, চিংড়ী ইত্যাদি খাবার দিয়ে গেছে। রাবেয়া অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও এসেছে। কারণ ফাহিম কিছু জরুরী কথা বলবে। দেশে আসার পর রাবেয়ার সঙ্গে খুব একটা কথা হয়নি। রেস্তোরার আলো আধারীতে প্রাণ খুলে কথা বলা যাবে। আর এই কারণেই এখানে আসা। প্রথমে ফাহিমই কথা শুরু করলো।
-তুমি এখনও মন খারাপ করে আছো?
-কই, এমনিতেই চুপচাপ আছি।
-খাচ্ছো না। শুধু চামচ দিয়ে খাবার নারা চারা করছো? কোন সমস্যা?
- না, কোন সমস্যা নেই। তুমিওতো খাচ্ছোনা! খাও।
-আসলে এখানে খেতে আসাটা অত জরুরীনা। তোমার সঙ্গে কিছু কথা বলা অনেক জরুরী। আর কথাগুলি তোমারও শোনা উচিত এবং আমার তোমাকেও বলা উচিত। অনেকবার ভেবেছিলাম যে, ফোনে বিস্তারিত বলবো। আবার ভেবেছি তোমার বিশ্বাস নাও হতে পারে। তাই ছুটি নিয়ে এলাম। তোমার জানতে ইচ্ছে করছেনা যে, কি এমন জরুরী কথা; যা বলার জন্য আমি আটলান্টা থেকে বাংলাদেশে ছুটে এসেছি?

রাবেয়া ফাহিমের চোখের দিকে তাকালো। এই চোখের চাহনীতে কোন পাপ নেই। যেনো নিষ্পাপ শিশুর দুটি চোখ। রাবেয়ার খুব মায়া হলো ফাহিমের জন্য। কেন যেন মনে হলো ফাহিম যে কথাগুলি বলতে চায়, তা শোনা খুব জরুরী। রাবেয়া বরাবরই শান্ত, ধীর স্থির।
-আচ্ছা বলো, তুমি কি বলতে চাও!

ফাহিম রাবেয়ার হাতদুটি নিজের হাতের মধ্যে নিলো। রাবেয়ার চোখের দিকে তাকালো। রাবেয়া এমনিতেই খুব নরম মনের। তারপর ফাহিমের এই অসাধারণ আন্তরিক আচরণে চোখ ভিজে গাল বেয়ে ফোটা ফোটা চোখের পানি পরতে থাকলো। ফাহিম বলতে শুরু করলো।
-তখন সবে মাত্র চাকুরিতে যোগদান করেছি। আটলান্টার সবচেয়ে বড় ও  ভালো হাসপাতাল। নাম 'আটলান্টা ক্যান্সার হসপিটাল'। এখানে ব্লাড ক্যন্সারে ও অন্যান্য ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদেরই আমাদের চিকিৎসা দিতে হয়। অন্য রোগীদেরও চিকিৎসা দেয়া হয়। তবে ক্যান্সারকে বেশি গুরুত্ত দেয়া হয়। ক্যান্সার এ এক মরণব্যাধী। যাকে আক্রান্ত করে তার জীবনের আলো নিভিয়ে দিয়েই এর কাজ শেষ হয়। আর এই কারণেই এর এমন নাম করণ করা হয়েছে।
 ডিউটির সময় শিফটিং করা আছে। মাঝে মাঝে রাতেও কাজ করতে হয়। এলিনা আমার সঙ্গেই কাজ করতো। খুব ভালো একটা মেয়ে। আমরা একসঙ্গে অনেক কাজ করেছি। একদিন এলিনা আমাকে 'গ্রেসি স্পুনে' খাওয়াবে বলে অনুরোধ করলো। 'গ্রেসি স্পুন'! অনেক সুন্দর একটি নাম। নামটি শুনলে মনে হয় কোন বিদেশী রেস্তোরা। আসলে তা নয়। রেস্তোরার  মালিক একজন বাঙ্গালী অভিবাসি। আটলান্টাতেই স্থায়ীভাবে বাস করেন। সহজে ও সুলভ মূল্যে মানুষ এখানে খাবার খেতে পারে। ব্যবসার পাশা-পাশি মানুষের সেবা দেওয়াও 'গ্রেসি স্পুনে'র মালিকের উদ্দেশ্য। ' গ্রেসি স্পুনে'র  বাংলা অর্থ হচ্ছে, "সুলভে ভোজনালয়" বা  'সস্তায় খাবারের জায়গা'। নামটি অসাধারণ।  মূল্য কম হলেও চমৎকার ও ভালো মানের সব খাবার পাওয়া যায়। দোকানটি ছোট। তবে এর বিশেষ দিক হলো অর্ডার করার পর খাবার তৈরির কাজ শুরু হয়। এখানকার প্রতিটি খাবারই হাতের স্পর্শ ছাড়া বিশেষ ব্যাবস্থায় রান্না করা হয়। যাতে খাবারের মান ও শ্বাদের বিষয়ে অনেক বেশি গ্রহণযোগ্যতা থাকে।

চমৎকার বসার জায়গা। এলিনাই মেনু দেখে খাবারের অর্ডার করলো। স্যান্ডউইচ, চিকেন রোল আর সফট ড্রিঙ্ক। এই আর কি। একেবারে সাধারণ বঙ্গালী খাবার। আমার সংগে কাজ করে করে এলিনাও বাঙ্গালী খাবারকে ভালোবেসে ফেলেছে।

খাওয়ার মাঝে আমি এলিনাকে প্রশ্ন করলাম,
-এলিনা তুমি বিয়ে করবেনা?
-মানে?
এলিনা চুপ করে থাকলো। এই প্রশ্নটা আমি এলিনাকে অসংখ্যবার করেছি। যতবার করেছি , ততবারই এলিনা এড়িয়ে গেছে। নইলে প্রসঙ্গ পালটে দিয়েছে। আমি অবশ্য বেশি পিরা-পিরি করতে পছন্দ করিনা। আর কারো মনের উপর চাপ প্রয়োগ করাও ঠিক না। একদিন এলিনার মা-বাবা আমাকে ওদের বাড়িতে ডিনারের জন্য নিমন্ত্রণ করলেন। আমি নিমন্ত্রণ গ্রহণ করলাম। নিমন্ত্রণের দিন ভাবছিলাম এলিনা ডিউটিতে এলে দু'জনে একসংগেই এলিনাদের বাসায় যাবো। কিন্ত এলিনা ডিউটিতে এলোনা। কি আর করা। আমি একাই গেলাম।

এলিনার মা আমার জন্য অনেক খাবার তৈরি করেছে। এলিনার বাবাও খুব ভালো মানুষ। ভদ্রলোক চিকিৎসক। বর্তমানে অবসরে  আছেন। বাসায় ঢুকেই মনে হলো সবারই মন খারাপ। আমি জানতে চাইলাম,
-কি হয়েছে? কোন সমস্যা?
এলিনার মা চোখের পানি মুছতে মুছতে বললেন।
-এলিনা খুব অসুস্থ।
-কি হয়েছে এলিনার?
-তুমি জানোনা?
-জি না। এলিনা কখনও বলেনি। তবে আমি যতবারই ওকে বিয়ের কথা বলেছি, ততবারই এলিনা এড়িয়ে গেছে। এলিনার কি হয়েছে? আমাকে বলুন। প্লিজ!
-তখনও এলিনার মা, মিসেস লিলিয়ান কাঁদছেন। আমি তখন মিসেস লিলিয়ানকেশান্তনা দিতে চেস্টা করলাম।
-কাদবেননা প্লিজ! আমাকে না বললে আমি কিভাবে বুঝবো যে, কি হয়েছে। এলিনা কোথায়?
-হাসপাতালে।
-কেন, কি হয়েছে এলিনার?
-'লিউকোমিয়া'!
-কি বলছেন?
-জি। প্রায় তিন মাস হয়ে গেলো রোগটা ধরা পরেছে। আমরা অনেক চেস্টা করছি। কিন্ত কিছুই হচ্ছেনা। ধীরে ধীরে এলিনার লোহিত কণিকা মরে গিয়ে সমস্ত শরীরে শ্বেত কণিকা জন্ম নিয়েছে। এখন ও শেষ স্টেপে আছে।

ফাহিম কথাগুলি শোনার পর একেবারে বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো। একি শুনছে সে! যে মেয়েটির সংগে এতো দীর্ঘ সময় একসঙ্গে চলেছি। লেখাপড়া, কাজ আরো কতভাবে সময় কেটেছে। প্রতিটি রোগীও মানুষের জন্য যে মেয়াটির এতো মমতা ছিলো। ক্যান্সার তার শরীরে বাসা বেঁধেছে ! কেন? কেন এমন হবে? ফাহিম তৎক্ষণাৎ হাসপাতালে ছুটে গেলো। এলিনা সিক বেডে শুয়ে আছে। আর এলিনার বাবা জন সাহেব পাশে বসে এলিনার কপালে আর মাথায় হাত দিয়ে স্নেহের পরশ বুলিয়ে দিচ্ছে। এলিনা চোখ বন্ধ করে আছে। বাবার স্নেহ উপভোগ করছে।

গুড ইভিনিং আংকেল।
-গুড ইভিনিং।
-কেমন আছো তুমি?
-জি ভালো আছি। আপনি?
-এই আছি আর কি।

ততক্ষণে এলিনা চোখ মেলেছে। মুখে স্বভাবসুলভ হাসিটা লেগেই আছে। ফাহিম একটা চেয়ার টেনে এলিনার পাশে বসলো। এলিনার কপালে হাত রখালো। এরই মধ্যে জন সাহেব উঠে বারান্দায় চলে গেছে। হয়তো এলিনা আর ফাহিমকে একা কথা বলার সুযোগ করে দেয়ার জন্যই এমনটা করেছে।

-কেমন আছো তুমি?
-জি ভালো। তুমি?
-ভালো না। কেন? আমিতো ভালো আছি।
-আমি ভালো নেই। তোমার শারীরে এতো বড় একটা অসুখ বাসা বঁধেছে। আর আমি কিছুই জানতে পারলামনা। আমি তোমার কেমন বন্ধু। বলোনা কেন বলনি আমাকে?
-তুমি কষ্ট পাবে তাই বলিনি। তাছাড়া ডাক্তার বলেছেন আমি ভালো হয়ে যাবো।
-অবশ্যই ভালো হয়ে যাবে। তুমি কত মানুষকে সাহায্য করেছো। তাদের সবার দোয়া তোমার সঙ্গে রয়েছে। তুমি অবশ্যই ভালো হয়ে যাবে।
-জি। অবশ্যই আমি ভালো হয়ে যাবো।

এরপর উন্নত চিকিৎসার কারণে এলিনা ধীরে ধীরে ভালো হয়ে উঠলো। ফাহিম রাবেয়াকে উদ্দেশ্য করে বললো,
-তুমি যেদিন ফোন করেছিলে সেদিন এলিনা আমার বাসায় ওর হাসব্যান্ডকে নিয়ে বেড়াতে এসেছিলো। আমি তোমার কথা ওকে বলেছিলাম। ও আমাকে বলেছিলো যে,তোমার সঙ্গে ও একটু মজা করবে। সেটাই করেছে। আর তুমি এই সামান্য দুস্টুমিটাকে সত্য ভেবে আমাকে ভুল বুজেঝো আর নিজেও সিমাহীন কষ্ট পেয়েছো। শুধুই । অযথা।

রাবেয়া কথাগুলি শুনে কেমন যেনো বোকা হয়ে গেলো। অযথাই এতো কষ্ট পেয়েছে। রাবেয়া আসলেই কি বোকা! লজ্জায় মাথা নিচু করে রাখলো। ফাহিম বললো,
-কি লজ্জা পাচ্ছো? লজ্জা কি। এক আধটু ভুল-বুঝাবুঝি না থাকলে সম্পর্কের বন্ধন শক্ত হয়না। আর ভালোই হলো, দেশেও আসা হলো। আর এবার তোমাকেও আমার সংগে যেতে হবে।
-কোথায়?
-আমার কাছে। আটলান্টাতে।
-কি বলছো?
-জি। আমি সব ব্যবস্থা করেই দেশে এসেছি। ওখানে একা একা আমারও খুব খারাপ লাগে।
-সত্যি!
-জি। সত্যি। তাহলে আর দেরি কেন। বাকি খাবারটা খেয়ে নাও।
-খাচ্ছি। তুমিও খাও।
-জি খাচ্ছি।

ফাহিম ওয়েটারকে ডাকলো। ওয়েটার এলে বাসার সবার জন্য পার্সেল খাবারের অর্ডার করলো।

চয়ন সকালেই নানা বাড়িতে এসেছে। রাবেয়ার মন খারাপ ছিলো বলে চয়নেরও মন খারাপ ছিলো। ফেরার পথে রাবেয়া চয়নের জন্য এক প্যাকেট ক্যাটবেরী ক্যান্ডি নিলো। এতোদিন ধরে রাবেয়ার বুকের মধ্যে একটা কস্টের বরফ পাথরের মত জমে ছিলো। আজকে সেটা আনন্দ ধারা হয়ে ভালোবাসার উত্তাল স্রোতে রাবেয়া আর ফাহিমকে ভাসিয়ে নিয়ে গেলো এক সিমাহীন আনন্দলোকে।

যেনো "আ-আনন্দ ধারা বহিছে ভুবনে"।

রাবেয়া খালা চলে যাবে ফাহিম খালুর সঙ্গে। চয়নও সবার সঙ্গে রাবেয়া খালা ও ফাহিম খালুকে বিদায় জানাতে এয়ারপোর্টে এসেছে। রাবেয়া খালাকে ছেড়ে দিতে খুব কষ্ট হচ্ছে। রাবেয়া ও ফাহিমকে ইমিগ্রেশনের ভিতরে চলে যেতে হবে। আর এক ঘন্টা পরেই ফ্লাইট। এক এক করে সবার কাছ থেকে রাবেয়া বিদায় নিলো। চয়ন চুপ-চাপ দাঁড়িয়ে আছে। যেনো জীবনের সমস্ত আনন্দ রাবেয়া খালা সঙ্গে করে নিয়ে যাচ্ছে। রাবেয়া চয়নের কাছে এসে দাড়ালো। চয়ন মাথা নিচু করে আছে। চোখের পানি কিছুতেই থামছেনা। রাবেয়া চয়নকে বুকে জড়িয়ে ধরলো। চয়ন শব্দ করে কান্না করে দিলো। রাবেয়াও কাঁদছে ।
-তুই এভাবে কাদলে আমি যেতে পারবো? আমি যেতে পারবোনা।
-খালা তুমি চলে গেলে আমি বাচবোনা। ঠিক মরে যাবো। তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যেওনা।

রাবেয়া আর কি বলবে। বলার আর কি আছে। সবাই এসে চয়নকে শান্তনা দিচ্ছে। কিন্তু চয়নের কচি প্রাণটা কিছুতেই বাধ মানছেনা। রাবেয়া  হ্যান্ড ব্যাগ খুলে ওর সব চেয়ে প্রিয় আই প্যাড বের করলো। চয়নের হাতে দিয়ে বললো,
-এটা তোকে দিলাম। এর মধ্যে আমি তুই যেসব গেম, আনিমেশন মুভি পছন্দ করিস তার সবগুলি লোড করে দিয়েছি। প্রায় জোর করেই চয়নের হাতে দিলো।
-আমার এসব কিছুই চাইনে খালা। আমি তোমাকে ছাড়া একটা দিনও থাকতে পারবোনা। তুমি যেওনা খালা। তুমি শুধু আমার খালা না আমার মা-ও।
-তুই এমন করলে কি হবে বলতো? আমি যেতে পারবো? তুই মন দিয়ে লেখাপড়া করবি। আমি তোকে ওখানে নিয়ে যাবো। তুই অনেক বড় ডাক্তার হবি। ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসা দিবি। তোর ফাহিম খালুকে ছাড়িয়ে যাবি।
-জি খালা। তুমি দোয়া করলে পারবো।
-অবশ্যই পারবি।

রাবেয়া চয়নের কপালে চুমু খেলো। ফাহিম হোসেনও চুমু খেলো। বললো ,
-তুমি ভালো থেকো। তোমার যখন আমাদের কথা মনে হবে, এই আই প্যাড দিয়ে ভিডিও কল করবে, কেমন। আমরা তাহলে আসি। তুমি মন খারাপ করলে তোমার খালা খুব কষ্ট পাবে।
-জি। মন খারাপ না করার জন্য আমি চেষ্টা করবো।
-অনেক ধন্যবাদ তোমাকে।

বিদায় নিয়ে রাবেয়া আর ফাহিম ইমিগ্রেশনের দিকে এগিয়ে চললো। পিছনে সবাই দাঁড়িয়ে আছে। রাবেয়া পিছন ফিরে তাকালো। চয়ন নিস্পলক তাকিয়ে রয়েছে। চিৎকার করে ডাকলো,

-খালা!----

রাবেয়া দাঁড়িয়ে গেলো। চয়ন ছুটে চললো রাবেয়ার দিকে। সবাই চয়নকে আটকালো। ঐ পাশে ফাহিম হোসেনও রাবেয়াকে আটকে রাখলো। প্রায় টেনেই নিয়ে গেলো ইমিগ্রেশনে।
-বিদায় খালা। বিদায়। ভালো থেকো। আল্লাহ হাফেজ।

ততক্ষণে রাবেয়া আর ফাহিম ইমিগ্রেশনে চলে গেছে।

মা পিছন থেকে এসে চয়নকে জড়িয়ে ধরে আছে। চয়নে শুনতে পাচ্ছে রাবেয়া খালা বলছে,

-"মন দিয়ে লেখাপড়া করবি। তোকে অনেক বড় ডাক্তার হতে হবে। বড় হয়ে তোকে ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসা দিতে হবে। আমি তোকে অনেক অনেক রঙ পেন্সিল, ভুতের গল্পের বই, আর চকলেট পাঠাবো। মন খারাপ করবিনা। ভালো থাকবি। খুব ভালো"। চলবে...

হুমায়ুন কবির
ঢাকা, বাংলাদেশ।