অটোয়া, রবিবার ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪
বিনোদ ভালো আছে -ফরিদ তালুকদার

বিনোদ.. কেমন আছো?
ভালো আছি দাদা..
আবার কিছু লিখছো বুঝি..?
চেষ্টা করছি..
ভালো.. ভালো.. বেশ ভালো…

বিনোদ ভালো আছে..!

মাঝে মাঝে বিনোদ ভালো থাকে..
মাঝে মাঝে  যখন সে পরাণ বিলের কাছে বসে 
যখন সে তার জলে কাশফুলের ছায়া নিভে যেতে দেখে
যখন সাদা বক তার ডানায় গোধূলির রং মেখে ঘরে ফেরে
বিনোদ ভালো থাকে…

বিনোদ ভালো থাকে
যখন পরাণ বিলের আকাশ
আধখানা চাঁদ আর তারাদের ঘরবাড়ি হয়..
যখন শতাব্দীর নৈঃশব্দ্য ভেঙে
পরাণের পাড়ে কাশফুলেরা সব 
দূর নিবাসী শ্যামলী নারী হয়ে যায়
তারাদের দেশ থেকে নেমে আসা নারী 
আলো আঁধারির মিহি চাদরের নীচে..
বহু বহুদিন  আগের সেই অচলার মত নারী
সমৃদ্ধ খোপার প্রদেশ ঘুরিয়ে
অধরে  লুফে নেয়া  আঁচলের খুঁট.. 
সেই  অচলা
বুকে মৌসুমি নদীর উচ্ছ্বাস আর ভালোবাসার  
আধো প্রকাশি অচলা..

বিনোদ ভালো থাকে মাঝে মাঝে এমনি..!

ধূপ ধুনার গন্ধে অপার্থিব সন্ধ্যার বাতাস
ঘরে ঘরে আনত মস্তক গৃহবাসী জন..
বিনোদের কোন উপাসনা নেই..

ছোট জানালার কাছে 
সাড়ে তিন ঠ্যাঙা টেবিল আর 
সদ্য মেরামতী চেয়ার
বিনোদ বসে পূরণ খাতা হাতে
পূরণ না মেলা অংকটা  আজ আবার গোলমেলে মাথায়
বিনোদ ভালো নেই...

কিছু একটা লিখতে হবে..
অন্যরকম কিছু  একটা লিখতে হবে আজ
অসুস্থ হারাধনের দেরী করে কাজে আসায়
ফ্যাক্টরি যেভাবে বেড় করে দিলো তাকে…?
হয়তো সেকথাই...
বিনোদ বসে আছে..
বসে আছে পূরণ খাতার পড়ে কলম ধরে 
সন্ধ্যা পার হয়ে রাত গড়ায়
নির্জন পাড়ায় জেগে থাকে শুধু নেড়ী কুকুরের  যুদ্ধ উৎসব
বিনোদ বসে আছে..
পূরণ খাতায়  একটা দাগ ও পড়েনি এখনো
একটা দাগ চাই…
একটা নূতন শব্দ চাই…
একটা নূতন…

মাথার মধ্যে হাজার শব্দের ভিড় 
লঙ্গরখানার লাইনের মত ভিড়..
পূর্ব ঘোষণা মতে
উন্মুক্ত মাঠে প্রতিবাদী কোন যুবককে
জীবন্ত অগ্নিদাহের দৃশ্য দেখার জন্যে…  
বিনা টিকিটে যীশু খৃষ্টের ক্রুশ  বিদ্ধের মত ঘটনা 
প্রত্যক্ষ করার জন্যে.. 
মানুষ জাতীয় প্রাণীরা যেভাবে স্রোতের মতন ছুটে যায়
তেমনি হাজার শব্দের ভিড় 
মাথার তন্ত্রীকে ছিঁড়ে ফেলতে চায়
অথচ..
বিনোদের মনপুত একটি শব্দও নেই

একটি শব্দও নেই  যা
থম থমে নৈশব্দের মত ভয়ংকর 
একটি লাইন ও নেই যা
লাশের নির্নিমেষ দৃষ্টির মত অকুতোভয় 
একটি স্তাবক ও মাথায় আসে না 
যা এই ক্ষরণের পাশাপাশি দাঁড়ায় 

যা আমাদের অন্তর্গত সত্যের মুখে থুতু ফেলে দেয়

বিনোদ ভালো নেই ..!

নিদ্রাহীন রাতের ক্লান্ত সিঁড়ি পথে
বিনোদ নেমে আসে তপ্ত মাটির ভোরে
সে হাঁটতে থাকে 
হাঁটতে থাকে সে গ্রাম, মাঠ, শ্মশান ঘাট, রাজপথ, গলি পেরিয়ে
উদ্দেশ্যহীন, ঠিকানাহীন, ভ্রুক্ষেপহীন.. 
হৃদয় পুড়ে চিমসে তামাটে রং
হাঁটতে হাঁটতে বিনোদ পৌঁছে বোধের শেকড়ে
কিন্তু পূরণ অংকের জট তখনো খোলে না..

কেনো একটুখানি শুধু চিকিৎসার অভাবে
অচলার অকাল প্রয়াণ হলো..?
কেনো হরিপদ আজ তার কাজটা হারালো..?
কেনো তার একমাত্র ছেলেটা এখন…?

জুলুমের বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে
যে কিশোরের বাবা খুন হয়
দশ বছর বয়সের যে বালক তার
বাবার কফিন কাঁধে নিয়ে  শ্মশানের পথে যায় 
কেন তাকে বলতে হয় ভালো আছি..?

বিনোদ ভালো নেই…

শুধু বেঁচে থাকার জন্যে ই যদি বলতে হয়
ভালো আছি..
তাহলে কেমন এই বেঁচে থাকা..?
কেন এমন বেঁচে থাকা…!?

ফরিদ তালুকদার
টরোন্টো, কানাডা।