অটোয়া, বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর, ২০২৪
ইউরোপের পথে পথে (এগারো পর্ব) -দীপিকা ঘোষ

বিখ্যাত ইংরেজ জীববিজ্ঞানী চার্লস ডারউইন বলেছিলেন, জীবনে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকাই জীবজগতে মৌলিক প্রয়োজনের শেষ কথা। কিন্তু এই মৌলিক প্রয়োজনের ব্যাখ্যা যেভাবেই করা হোক না কেন, বলা বাহল্য এর সীমারেখা অন্যসব মানবেতর প্রাণীর ক্ষেত্রে যেভাবে পরিমাপ করা যায় তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের পক্ষে সেটা একেবারেই খাটে না। তার প্রমাণ, মানবসভ্যতায় যুদ্ধের দামামা, যুদ্ধের কারণ জীবনের মৌলিক প্রয়োজনের বাইরে দাঁড়িয়েই প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে বহাল রয়েছে। সমাজবিজ্ঞানীরা তাই বলেন-
অনিঃশেষ চাহিদার কারণেই অনিঃশেষ যুদ্ধের প্রয়োজন মানুষ আপন স্বভাবের গভীরতা থেকে অনুভব করে। কেবল সভ্যতা-সংস্কৃতি পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে তার সংজ্ঞা পাল্টে যায়। বদলে যায় যুদ্ধের ধরণ।

কিন্তু তারপরও আজকের দৃশ্যমান বাস্তবতা হলো মানুষের অনিঃশেষ চাহিদা সত্ত্বেও যুদ্ধের বহু প্রয়োজনীয়তার দিকগুলো অনেকটাই নির্বাসিত আজ। অন্তত মধ্যযুগের ইউরোপের ইতিহাসের সঙ্গে তুলনা করে এমন কথা নিশ্চিত করে বলা যায়। যে ইউরোপীয় দেশগুলো উদার গণতন্ত্রের অনুসারি, যেখানে ভয়ংকর অপরাধেও আজ বিচারিক প্রক্রিয়ায় মৃত্যুদণ্ড স্বীকৃত নয়, সেখানে আদিমধ্য যুগ থেকে আধুনিক যুগের শুরু অবধি যে ইতিহাস রচিত হয়েছে তা চরম নিষ্ঠুরতা আর রণঝঞ্ঝার অনাকাঙ্ক্ষিত সংস্কৃতিতে পরিপূর্ণ। ফ্রান্সকেও সেই পরিস্থিতি অতিক্রম করতে হয়েছে। ইংল্যাণ্ডের রাজা তৃতীয় এডওয়ার্ড ব্যবসাবানিজ্য সংক্রান্ত অসন্তোষে ফ্রান্সের রাজা ষষ্ঠ ফিলিপের বিরুদ্ধে রণদামামা বাজিয়েছিলেন ১৩৩৭ খ্রীষ্টাব্দে। সেই যুদ্ধ ১১৬ বছর ধরে চলতে চলতে ১৪৫৩ খ্রীষ্টাব্দে পরিসমাপ্ত হয়েছিল ফ্রান্সকে নিঃশেষিত করে। পরিণতিতে ফ্রান্স জুড়ে মহামারি আকারে ছড়িয়েছিল প্লেগ। যুদ্ধে নিহত হয়েছিলেন অগণিত ফরাসি সেনা। দুর্ভিক্ষে প্রাণ হারিয়েছিল সহস্র প্রজাসাধারণ। অথচ শতবর্ষব্যাপি বর্বর যুদ্ধে ফ্রান্স এবং ইংল্যাণ্ডকে নির্দ্বিধায় সহায়তা দিয়েছিল মিত্রশক্তি দেশগুলো। কিন্তু আজ এমন অন্ধ উন্মত্ত সহিংসতাকে কোনো সভ্য দেশের পক্ষেই প্রশ্রয় দেওয়া সম্ভব নয়। 

আমাদের আজকের দর্শনীয় স্থান এমনই দুটি ঐতিহাসিক পীঠস্থান যার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ফ্রান্সের আধুনিক গণতন্ত্রের অভ্যুত্থানের কাহিনী। যার গোড়াপত্তন হয়েছিল ইটালির ফরাসী লেফটেন্যান্ট নেপোলিয়ন বোনাপার্টের হাতে। অবশ্যই প্রত্যক্ষভাবে নয়, পরোক্ষভাবে। ব্রেকফাস্ট সারার তিন মিনিটের মধ্যে ট্যাক্সি মিলে গেলো। তরুণ ড্রাইভার। সোনালি রঙের ঝাঁকড়া চুলে পম্পাডৌর হেয়ার কাট। ট্যাক্সি থেকে নেমে ভদ্রতা করে দরজা খুলে বললো-
বনজৌর!
শুচি হেসে প্রত্যুত্তর করলো–
বনজৌর! এস্টসে কুয়ি টাউট ভা বিয়েন?
শুনেই তরুণের মুখে প্রসন্ন হাসি ফুটলো-
টাউট ভা বিয়েন! টাউট ভা বিয়েন মারসি ই ভু?

কী নিয়ে আলাপচারিতা চলছে একেবারেই অনুমান করতে না পেরে তাড়াতাড়ি ট্যাক্সিতে উঠে বসে রইলাম। হয়তো আমাদের গন্তব্য সম্পর্কে বিস্তারিত বুঝিয়ে খানিক পরে উঠে এলো শুচি। পাশে বসে অস্ফুটে জিজ্ঞেস করলো-
তোমাকে যে ও গুড মর্ণিং বললো, তুমি উত্তর দিলে না তো মামণি?
আমি তো বুঝতেই পারলাম না ও কী বললো, তো উত্তর দেবো কী?

আমার অসহায়ত্ব অনুভব করে মজা পেয়ে প্রথম কয়েক সেকেণ্ড নিঃশব্দে ফুলেফুলে হাসলো মেয়েটা। তারপরে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন রমনী হয়ে বললো-
বুঝতে না পারলেও গেস করে নিতে হয়, এমন সকালবেলায় দেখা হলে মানুষ জেনারেলি কী বলতে পারে! মেসো তো ঠিকই বললো- গুড মর্ণিং! শোনো, বিকেলের পরেই দেখা হলে এরা কিন্তু বলবে- ‘বনসৌয়র’! তখন কিন্তু বলতে ভুলো না, ‘বনসৌয়র’!

কয়েক মিনিটের ভেতর প্রথম রাস্তাটা পেরুতেই সুপার মার্কেট চোখে পড়লো। এবং পাশের রাস্তা ক্রস করতে দেখা মিলেলো ট্রেন স্টেশনের। স্টেশনের সামনেই ধুমপানরত কয়েকটি নারী পুরুষ। তাদের চারপাশে ধূসর ধোয়া হালকা পরশে কুণ্ডলি পাকিয়ে উড়ছে। যাত্রীদের মধ্যে চলছে দৌড়ঝাঁপ, ছুটোছুটি। সিঁড়ি বেয়ে কেউ কেউ আণ্ডারগ্রাউণ্ডের দিকে নামছেন সাবওয়ে কমিউটার ধরতে। কুড়ি মিনিটের মধ্যেই ভার্সাইল প্রাসাদ চত্বর সীমানায় পৌঁছে গেলো আমাদের ড্রাইভার। বললো-
সিকিউরিটির কারণে আর ভেতরে যাওয়া চলবে না! তোমাদের হেঁটে প্যালেসে যেতে হবে! তারপর টিকেটের জন্য লম্বা লাইনে অপেক্ষা করতে হবে।
অনেকক্ষণ কি অপেক্ষা করতে হবে?
এক থেকে দেড় ঘন্টা তো বটেই!
তার সঙ্গে কথা শেষ করে শুচি হাতঘড়িতে দৃষ্টি রাখলো-
আমাদের কিন্তু এখানকার রেস্টুর‌্যান্টেই লাঞ্চ সারতে হবে। কারণ প্যালেস ছাড়াও পেছনে রয়েছে মিউজিক্যাল ওয়াটার ফাউনটেইন! লেক! আটশো হেক্টরের গার্ডেনস অফ ভার্সাইল! সুন্দর সুন্দর স্ট্যাচু! সেগুলো দেখতে গেলে অনেকটা সময় লেগে যাবে! বলেই সে হাঁটতে আরম্ভ করলো। 
পথের পাশে চারদিকে বিরাট বিশাল গাছেরা সারি সারি দাঁড়িয়ে। আমেরিকায় অরণ্যের বিস্তার যেমনি থাক সচারচর রিসোর্ট এরিয়ায় এত বেশি প্রাচীন বৃক্ষের উপস্থিতি চোখে পড়ে না। সিকিউটির পুলিশ, রেস্টুর‌্যান্ট,  দোকানপাট ছাড়িয়ে চলে এলাম আঙিনায়। সুর্যের আলোয় কী গর্জিয়াস দেখাচ্ছে এক লক্ষ ঝলমলে সোনার পাতার ঝালরে ঢাকা প্রাসাদের অনিন্দ্যসুন্দর গেট! তিনটে গেট দিয়ে ভেতরে প্রবেশের ব্যবস্থা এখানে।(এক) বাঁদিকের ‘A' গেট প্রাইভেট ট্যুরিস্টদের জন্য। (দুই)যারা গাইডেড ট্যুর নিচ্ছেন তাদের প্রবেশপথ ডানদিকের ‘B’ গেট দিয়ে। (তিন) যারা শারিরীকভাবে অক্ষম, তাদের জন্য প্রবেশদ্বার সিঁড়িবিহীন ‘H’ গেট। টিকেট কিনে দু পা সামনে বাড়াতেই জাঁকজমকের জৌলুস এবং ভেতরের বিস্তীর্ণ প্রসারতা দেখে বোঝা গেলো কত অনন্যসাধারণ রাজকীয় ঐশ্বর্য, বলিষ্ঠ বীর্যের শক্তিমত্তা, দাম্ভিক আত্মরম্ভিতা ঘোষণা করছে এই বিশ্বখ্যাত রাজপ্রাসাদ, ‘ভার্সাইল প্যালেস’!

দেখতে দেখতে বিমুগ্ধ অনুভূতি জানিয়ে দিলো-
পরিশ্রম, একাগ্রতা, ধৈর্য, বলিষ্ঠতা, অহংবোধের প্রবলতা, প্রতিভা, কল্পনা, মেধা, শিল্পভাবনা, উচ্চাশা, অর্থ গৌরব এবং সূক্ষ্ম পরিশীলিত চেতনার অনন্য সম্মিলনের মহাপ্রকাশ ভার্সাইল রাজপ্রাসাদ! এই জন্যই প্রাসাদ তৈরীর উদ্যোক্তা রাজা চতুর্দশ লুই, নিজেকে সূর্যসমতুল্য প্রতাপশালী ভেবে নিজের নামকরণ করেছিলেন ‘Sun King'! যিনি গ্রীক দেবতা ‘এ্যাপলোর’ প্রতিভূ! 

কিন্তু শুরুতেই এটি রাজপ্রাসাদ ছিল না। রাজা ত্রয়োদশ লুই ১৬৬২ খ্রীষ্টাব্দে ভার্সাইলে একটি লজ নির্মাণ করেছিলেন তাঁর ‘শিকার ভবন’ হিসেবে। তাঁর মৃত্যুর পরে উচ্চাভিলাষী রাজা চতুর্দশ লুই ১৬৬৯ খ্রীষ্টাব্দে জমির বিস্তীর্ণ প্রসারতা বাড়িয়ে সেই ভবনকে প্রাসাদ হিসেবে নির্মাণের পরিকল্পনা করেন। ১৬৮২ খ্রীষ্টাব্দে অফিসিয়্যালি একে রয়্যাল রেসিডেন্স হিসেবে ঘোষণা করা হয়। রাজপ্রাসাদে রয়েছে ৭০০ বেডরুম! ২০০০ বিরাটাকার ধনুকাকৃতি জানালা! সাতষট্টিটি সিঁড়ি! ১২৫০টি ফায়ারপ্লেস! ভেতরের আয়তন ৮১৫০২৬৫ স্কয়ার ফিট। রাজা, রাণী এবং রাজপরিবারের সদস্যরা ছাড়াও সরকারের মন্ত্রী, অভিজাতবর্গ, ডিপ্লোম্যাট, সরকারি কর্মচারিদের বসবাসের জন্য প্রাসাদ চত্বরের বাইরে একই স্টাইলে নির্মিত হয়েছে অনেকগুলো এ্যাপার্টমেন্ট। রাজা চতুর্দশ লুই বিচারবিভাগকেও স্থানান্তরিত করেছিলেন রাজপ্রাসাদের নাগালের মধ্যে। কারণ তিনি সবার আনুগত্য লাভ করেই রাজশক্তিকে প্রতিদ্বন্দ্বীহীন করে তুলতে চেয়েছিলেন।         
সমবেত দর্শকদের নিয়ে অভিজ্ঞ প্রবীন গাইড রিশ বিসেট, একের পরে এক পেরিয়ে চলেছেন রাজপ্রাসাদের ঘরগুলো। ঝড়ের বেগে উচ্চস্বরে বিবরণ দিচ্ছেন বিভিন্ন রুমের উপপাদ্য বিষয়বস্তুর ওপরে। রিশ বলছেন-
আমরা এখন ‘The War Room’-র অভ্যন্তরে দাঁড়িয়ে। বিশাল গ্যালারি রাজরাজরা, সৈন্যসামন্ত, যুদ্ধবিগ্রহের জীবন্ত দলিলে ভরপুর। এখানে আমাদের ফেঞ্চ সৈন্যদের বিজয়লাভের গৌরবময় ইতিহাসের পাতা খুলে দেওয়া হয়েছে! এটি ফরাসি ইতিহাসের মূল্যবান মিউজিয়াম তাই!

এটি এ্যাপোলো রুম। রাজা চতুর্দশ লুইকে ডেডিকেট করা হয়েছে! এটি হারকিউলেস রুম! আর ওদিকটায় রয়েছে ‘মিরর রুম’। পাশেই ‘পিস রুম’!

মিরর রুমের একটি অসাধারণ ঐতিহাসিক ভুমিকা আছে! প্রথম বিশ্বযদ্ধের পরে ১৯১৯ খ্রীষ্টাব্দে ২৮শে জুন এই ঘরেই ‘ভার্সাই চুক্তি’ সম্পাদিত হয়!

আর এটি ‘The peace Room’, গীতবাদ্য সংস্কৃতির জলসাখানা! শান্তির দূত হয়ে ইউরোপে ফ্রান্স যে নির্মল পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল, এই ঘর তার প্রতীক!

রিশের বহুবিস্তৃত বর্ণনা উচ্চ প্রযুক্তি সিস্টেমে ইলেকট্রোম্যাগনেটিভ ওয়েভ নিয়ে ছড়িয়ে যাচ্ছে রুমের ভেতরে। হঠাৎ তার মধ্যেও কানের পাশে কয়েকটি শব্দ উচ্চারিত হতে শুনলাম-
দ্য মোস্ট এক্সট্রাভ্যাগান্ট এক্সজাম্পল!

অর্থাৎ অমিতাচারের চরম দৃষ্টান্ত! তরুণীর কণ্ঠস্বর নিশ্চিত। কিন্তু দর্শকের ভিড়ে কার কণ্ঠে উচ্চারিত হলো অনুমান করা শক্ত হলো।

ভার্সাইল রাজপ্রাসাদের মূ্ল্যমান নিয়ে আধুনিক ইতিহাসবিদদের মধ্যে যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে। তবে ১৯৭৯ তে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে তালিকাভুক্ত হওয়ার পরে ১৯৯৪ সালে এর যে মূল্যমান নির্ধারিত হয়, তার গাণিতিক নাম্বার, $ ২৯৯৫২০০০০০০০। পৃথিবীর সবগুলো রাজপ্রাসাদের তালিকায় ফ্রান্সের প্রাসাদের স্থান সর্বপ্রথমে। প্রতি বছর এখানে দর্শনার্থীর সংখ্যা এক কোটি। সাত নম্বর অবস্থানে রয়েছে ওয়েস্টমিনস্টারের বাকিংহাম প্যালেস। বছরে ভিজিটরের সংখ্যা পঞ্চাশ হাজার। সেখানেও রয়েছে রাজকীয় প্রতিনিধিত্বের চূড়ান্ত  নিদর্শন। কত ইতিহাস, শিল্প, কত শতভাবে শক্তিমত্তা প্রদর্শনের জন্য বিচিত্র বিপুল আয়োজন!

দুই ঘন্টা ট্যুরের পরে প্রাসাদের বাইরে বেরিয়ে আসার আগে আরও একবার মনে হলো-

এই রাজপ্রাসাদ শৌর্য, বীর্য, আভিজাত্য, অহংকার এবং অপরিমেয় ধনবিলাসিতার দুর্দান্ত কারুকার্যই তো শুধু নয়! ফ্রান্সের তৎকালীন জীবনযাত্রার অনন্যসাধারণ শিল্পসংস্কৃতির নান্দনিক উৎকর্ষতাও এর সবখানেই উন্মত্ত প্রকাশ ঘটিয়েছে! 
শুচিকে সে কথা জানাতেই মুগ্ধভাবে বললো-
ইয়েস! এ সিম্বল অফ পাওয়ার এণ্ড বিউটি!

পৃথিবীর সুন্দরতম বাগান ‘গার্ডেনস অফ ভার্সাইল’, প্রাসাদের পশ্চিমদিকে অবস্থিত। এর ল্যাণ্ডস্কেপ রচিত হয়েছে ক্ল্যাসিক ফ্রেঞ্চ গার্ডেন স্টাইলে। আটশো হেক্টরের বাগানে লেক, ক্যানাল, ঝর্ণা, ভাস্কর্য সবই রয়েছে। যতদূর দৃষ্টি যায় চোখে পড়ে গ্রীষ্মের সবুজ সামিয়ানায় ঢাকা বিস্তৃত দিগন্ত আকাশ ছুঁয়ে রেখেছে। অবিশ্বাস্য রকমের সুন্দর ভাস্কর্য থেকে ছুটে বেরুচ্ছে দুরন্ত জলের ফোয়ারা। লেকের জলে, লম্বা ক্যানালে যাত্রী নিয়ে নৌকো ভাসছে রূপকথার স্বপ্নরাজ্যের ছবি হয়ে। সবচেয়ে বড় কথা, প্রাসাদ অভ্যন্তরের মতো বাইরের বাগান পরিচর্যাতেও রয়েছে এমনই পারদর্শিতার ছোঁয়া যে দৃষ্টি ফেলামাত্র মনে হয়, মধ্যযুগের রাজশাসনামলে নয়, এর সবই বুঝি সদ্য সদ্য প্রস্তুত করা হয়েছে! 

গ্রীষ্মকাল বলেই এখনো শেষ মধ্যাহ্নের সূর্যের আলোয় ক্লান্তির পরশ লাগেনি। কিন্তু দর্শকদের দেহে ক্লান্তির ঢেউ নীরবে নামছে ধীরে ধীরে। লাঞ্চের জন্য প্রাসাদ রেস্টুর‌্যান্টে ঢুকতে হলো। স্ন্যাক কাউন্টারে দীর্ঘ লাইন পড়েছে। বহু ধরনের পেস্ট্রি ছাড়াও রয়েছে কেক, পিজ্জা, বার্গার, আইসক্রিম এবং বিভিন্ন ফেঞ্চ ফুডের সঙ্গে চা, কফি, শ্যাম্পেন, মার্গারিটা, শার্ডনে, গিমলেট, মার্টিনিসহ হরেক প্রকার পানীয়দ্রব্যের সম্ভার। বোতলের জলের থেকে এখানেই বেশি জনতার লম্বা লাইনের ভিড় জমেছে। লাঞ্চ দ্রুতই সারতে হলো। কারণ আমাদের পরের গন্তব্যস্থল বাস্তিল দুর্গ! ফরাসী বিপ্লবের আঁতুরঘর! চলবে…

দীপিকা ঘোষ
ওহাইয়ো, আমেরিকা।