১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ‘আশ্রম একক সঙ্গীতসন্ধ্যা’ এবং আমার একটি অনুরোধ - সুপ্তা বড়ুয়া
২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে ‘ডালিয়া মিউজিক স্কুল’এর ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে একটা অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়, নাম ছিলো “আগামীর হাত ধরে”। মন্ত্রমুগ্ধের মতো অটোয়ায় বেড়ে ওঠা আমাদের খুদে কানাডিয়ান-বাংলাদেশী পরবর্তী প্রজন্মকে দেখছিলাম। শাস্ত্রীয় সঙ্গীত দিয়ে শুরু হয় পরিবেশনা, একে একে বাংলা সঙ্গীতের মূর্ছনায় যেন ভুলিয়ে রেখেছিলো কয়েকটা ঘন্টা। কিন্তু এই সুন্দর পরিবেশনার পেছনের কুশীলবেই আমার মনোযোগ ছিলো বেশি। কেননা আমার মেয়ে'র জন্য একজন দক্ষ শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের প্রশিক্ষক খুঁজছিলাম অনেকদিন ধরেই। অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার আগেই আমার সিদ্ধান্ত নিতে দেরী হলো না, আমার মেয়ের সঙ্গীতে হাতেখড়ি এই গুণী মানুষটির হাতেই হবে। অসম্ভব পরিশ্রমী একজন মানুষ আর শিল্পের প্রতি চরম একাগ্রতা, দায়বদ্ধতা থেকেই এই সূদুর প্রবাসেও সঙ্গীতের সাধনায় নিবিষ্ট রয়েছেন। শুধু একজন ভালো শিল্পীই নন, একজন অত্যন্ত নিষ্ঠাবান শিক্ষিকাও তিনি। এতক্ষণ ধরে যার সম্পর্কে এত কথা লিখে যাচ্ছি, তিনি আমাদের সকলের প্রিয় ডালিয়া ইয়াসমিন। উনি একনিষ্ঠভাবে তৈরি করে যাচ্ছেন পরবর্তী প্রজন্ম এই সূদুর প্রবাসেও। আমার সন্তানদের সৌভাগ্য এমন একজন গুণী শিল্পীর কাছে ওরা বাংলা গানের প্রথম পাঠটা পেয়েছে।
“আশ্রম বাংলা ম্যাগাজিন”এর আয়োজনে এ'বছর অটোয়ার এই গুণী শিল্পীর একক পরিবেশনা আমরা শুনতে পাবো। ডালিয়া ইয়াসমিনের একক সঙ্গীতানুষ্ঠান হতে যাচ্ছে আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯, রবিবার সন্ধ্যা ৫-৮ টায়, কার্লটন ইউনিভার্সিটির কৈলাশ মিতাল থিয়েটারে। ডালিয়া ইয়াসমিনের সঙ্গীতচর্চা আর পরিবেশনা সম্পর্কে নতুন করে বলার বা উপস্থাপনের প্রয়োজন নেই। বাংলা গানের প্রত্যেকটি শাখায় তার উজ্জ্বল, স্বপ্রতিভ বিচরণ। একাধারে রবীন্দ্র, নজরুল, আধুনিক, দেশাত্ম থেকে শুরু করে শাস্ত্রীয় সংগীতসহ সবক্ষেত্রেই চরম দখল তার। তার এই বহুমুখী সঙ্গীত প্রতিভা অটোয়ায় আমাদের বিনোদন দিয়ে যাচ্ছে আজ বহুবছর।
শিল্পের পৃষ্ঠপোষকতা করা দর্শকদের নৈতিক দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে হয় নিজ তাগিদেই। আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে আমাদের শেকড়ের কথা শোনাতে হবে, আমাদের দেশীয় সংস্কৃতিকে আরো বেশি করে ছড়িয়ে দিতে হবে। আসুন আমাদের সকলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে ডালিয়া ইয়াসমিনের এই পরিশ্রম, প্রয়াসকে সফল করে তুলি। বাংলা সঙ্গীতকে অটোয়ায় বিকশিত হওয়ার পথে আরো একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাই, পাশাপাশি অনুপ্রাণিত করে যাই নতুন প্রজন্মকেও।
‘আশ্রম’কে ধন্যবাদ এমন একটি করে পরিবেশনা নিয়মিত চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। সঙ্গীতকে পৃষ্ঠপোষকতা করে যাচ্ছে আশ্রম। উল্লেখ্য যে, “আশ্রম বাংলা ম্যাগাজিন” অটোয়ায় বসবাসরত বাঙালীদের বাংলার সাথে যোগসূত্র অটুট রাখতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে ২০০৯ সাল থেকে। প্রাথমিকভাবে কাগজের মলাটে সাহিত্য সাময়িকী বের করলেও, যুগের ধারাবাহিকতায় রূপান্তর হয়েছে ভার্চুয়াল জগতেও সম্প্রতি “আশ্রমবিডিডটকম” নামে। অটোয়ায় বাংলাভাষা ও সংস্কৃতির পরিব্যপ্তিতে ‘আশ্রম’-এর ভূমিকা অতুলনীয়। ‘আশ্রম’ ২০১৩ সাল থেকে আয়োজন করে চলেছে স্থানীয় গুণী সংগীত শিল্পীদের জনপ্রিয় “একক সঙ্গীতানুষ্ঠান”। তারই ধারাবাহিকতায়, এবারের শিল্পী আমাদের প্রিয় ডালিয়া ইয়াসমিন।
আমরাও পারি অটোয়ায় বাংলা সঙ্গীতকে বিকশিত করার পথে ‘আশ্রম’এর সাথে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে। আমাদের সকলেরই উচিত এমন উদ্যোগকে সাফল্যমন্ডিত করা, পৃষ্ঠপোষকতা করা। দিনশেষে, সব আয়োজনই দর্শকদের জন্য। আপনাদের সকলের কাছে বিনীত অনুরোধ, আসুন অটোয়ায় বাংলা শিল্প সংস্কৃতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে ‘আশ্রম’-এর এমন আয়োজনের পাশে থাকি, শিল্পীকেও অনুপ্রাণিত করি, পৃষ্ঠপোষকতা করি।
সুপ্তা বড়ুয়া । অটোয়া, কানাডা
-
নিবন্ধ // মতামত
-
02-09-2019
-
-