অটোয়া, শুক্রবার ২৯ মার্চ, ২০২৪
স্বদেশ, স্বাধীনতা ও একটি প্রশ্ন?

২৫ মার্চ '৭১ মধ্যরাত---
গুড়ুম গুড়ুম শব্দ!
ঘুম ভেঙে গেল
কানের পর্দা ফেটে যাচ্ছে---
এতো শব্দ কীসের???
কান খাড়া করে---
বালিশ থেকে মাথা উঠিয়ে,
হাতের উপর ভর করে,
তাকিয়ে থাকলাম দেয়ালের দিকে---

শব্দ-শব্দ আর শব্দ---
শব্দ বেড়েই চলেছে ভিন্ন ভিন্ন শব্দে, অনবরত।
চাতক পাখির মতো, চোখ মেলে,
বালিশে হেলান দিয়ে বসলাম---
তারপর একটু একটু করে---
এক পা-দু'পা এগোলাম---

রান্নাঘরে জানালা দিয়ে,
বারুদের গন্ধ ভেসে আসলো---
গোলার ধোঁয়ায় প্রকৃতির সবুজ ঝলসে গেল---
চিৎকার শোনা যাচ্ছে মৃত্যুর মতো অদ্ভুত সুরে---

এবারে মনের দরজা খুলে গেল---
বুঝে ফেললাম সবকিছু---
শেখ মুজিবের অমৃত ভাষণ কানে বাজছে
বাঁশির সুরের মতো---
যেমনঃ-
'... প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো ...।'
'... তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকো ...।'
'... এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম;
এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম ...।'
কী অসম্ভব তেজোদীপ্ত ভাষণ---
মনের একেবারে ভেতরে বেঁধেছে আসন।

২৬ মার্চ---
মুজিব ঘোষণা করলেন,
স্বাধীনতা দিবস---

আমরা রক্তের স্রোত বয়ে যেতে দেখলাম--
রাজধানীর রাজপথে---
সেই রক্তের ভেতর,
স্বাধীনতার স্বাদ পেলাম অন্যরকম।

২৭ মার্চ---
পাকহানাদারদের আওতায়,
চলে গেল বাংলাদেশের সীমানা---
আমরা শেখ মুজিবের বাণী,
সাথে নিয়ে,
যার যা আছে তা নিয়েই
ঝাঁপিয়ে পড়লাম রণাঙ্গনে---
বাংলাদেশের পতাকা ছিনিয়ে আনতে জনারণ্যে---

কত মায়ের যে অশ্রু ঝরলো
কত বোন যে সম্ভ্রম হারালো
তা গুণে শেষ করা যায় না---

কত ভাই যে বোন হারালো
কত বোন যে ভাই হারালো
অসংখ্যের মতো---

আমরা নয়মাস যুদ্ধ করলাম---
একটা স্বাধীন দেশের জন্য,
একটা ভাষার জন্য,
একটা নিজস্ব পতাকার জন্য---
মনে মনে বললাম---
মুজিব তুমি ধন্য হে ধন্য।

তারপর আমরা স্বাধীন হলাম,
আমরা মায়ের ভাষা পেলাম,
সমস্বরে গেয়ে উঠলাম,
'জয় বাংলা বাংলার জয়,'
আমাদের যেন নেই কোনো ভয়---

১৬ ডিসেম্বর---
বিজয়ের উল্লাস দেখলাম---

কিন্তু আজ---
সেই নয়মাসের বিপ্লবের,
সূক্ষ্ম স্মৃতির বেড়া বাঁধতে গিয়ে
শুধু একঝাঁক প্রশ্নেরা,
বুকের বারান্দায় এসে,
ভিড় করে বলছে---
আমরা কি পেরেছি,
সবুজ পতাকার মাঝে,
রক্তলাল বৃত্তের মর্যাদা দিতে?

আমরা কি পেরেছি,
বজ্রকণ্ঠের সেই মর্মস্পর্শী
বাণীর নির্যাসটুকু নিতে?
এ আমার ভীষণ যন্ত্রণার একটি প্রশ্ন-???

নূরুন্ নাহার । ঢাকা
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯