অটোয়া, বুধবার ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
ইউরোপের পথে পথে (আঠারো) – দীপিকা ঘোষ

   বারও আমরা হাই-স্পিড ট্রেনের যাত্রী। রোমের ‘টার্মিনি স্টেশন’ থেকে ফ্লোরেন্সের ‘সান্তা মারিয়া নোভেলা স্টেশনে’ চলেছি। সময় লাগবে দেড় ঘন্টা। এবারও আমাদের আসন পড়েছে আলাদা আলাদা জায়গায়।  অস্বস্তি হচ্ছে বুকের ভেতর। কারণ ভাষা যে কখনো সখনো বিরাট প্রতিবন্ধক হয়ে ওঠে অচেনা পথে ঘাটে,  এরই মধ্যে সেটা টের পেয়েছি হাড়ে হাড়ে। কণিষ্ক, শুচি ফ্রেঞ্চ, ইটালিয়ান দুটোই জানে কাজ চালানোর মতো। তাই প্রতিনিয়ত কাছে থাকলে বড় নিশ্চিন্তে থাকি। আমার মুখোমুখি আপাতত একজোড়া কৃষ্ণাঙ্গ দম্পতি। দু’চারটি শব্দোচ্চারণই জানিয়ে দিয়েছে অচেনা ভাষায় কথা বলছে ওরা। বসেই পার্স খুলে সাজসজ্জায় মনোযোগ দিয়েছে মেয়েটি। আর বিশাল দেহ নিয়ে ছেলেটা ঠেসান দিয়েছে আসনে। তার চোখের ওপর হাবল টেলিস্কোপের মতো একজোড়া স্নানগ্লাস। যেন সূর্যরশ্মি থেকে তখনো মুখ ঢাকায় ব্যস্ত সে।  
     কয়েক সেকেণ্ডের মধ্যে লম্বা চুলওয়ালা চল্লিশ পেরুনো এক ভদ্রলোক সামনে এসে দাঁড়ালেন। ভীষণ পুরুষালি গলায় কোন ভাষায় যে কী কতগুলো উচ্চারণ করলেন বোঝা দায়। তবে বুঝতে বিলম্ব হলো না দৃষ্টি যখন আমার মুখে, শব্দোচ্চারণও আমাকে লক্ষ্য করেই বর্ষিত। বড় অসহায় লাগলো মুহূর্তের জন্য। অবশ্য একটু পরেই আমাকে উদ্ধার করলো তারই বয়সী এক রমনী।
     পেছন থেকে সামনে এসে স্পষ্ট ইংরেজিতে বললো-
     বলছি যে, তুমি জানালার দিকে আমার আসনে গিয়ে বসো। আমি তোমারটায় বসছি। কিছু মনে করো না প্লিজ! প্রেগন্যান্ট তো, ভেতরে বসতে কষ্ট হয়!
     হ্যাঁ, হ্যাঁ নিশ্চয়ই! কোনো অসুবিধে নেই! প্লিজ তুমি বসো এখানে!
     আলাপ জমে উঠলো আমাদের। রমনীর নাম মারা রোমানো। স্টিল কোম্পানিতে চাকরি করে। ছজন পুরুষ সহকর্মী বন্ধুর সঙ্গে সাতদিন আগে প্যারিসে গিয়েছিল বিজনেস কনফারেন্সে যোগ দিতে। স্বামী সঙ্গে নেই। তাই পরিচিত বন্ধুরা খুব যত্নআত্তি করছে খুঁটিনাটি বিষয়েও মনোযোগ রেখে। অন্যান্য আরও বিষয় নিয়ে কথা বলতে বলতে মারা একসময় বললো-
     টরন্টো ইউনির্ভাসিটিতে ইংরেজি শিখেছি। এখন চাকরি করছি অনুবাদক হিসেবে। আমার এই বন্ধুরা ইংরেজি জানে না তো, সেজন্যই আসতে হলো।
     তোমার বাচ্চা কখন হবে?
     অগাস্টের দুই তারিখে। ছেলে হবে জানো? আমার কেন জানি মনে হচ্ছিলো মেয়ে হবে! যাই হোক, আমার হাজব্যাণ্ড খুব খুশি!
     এ কি তোমার প্রথম..?
     নাঃ। পাঁচ বছরের ছেলে রয়েছে।
     ভোরের আকাশ আজ জমাট মেঘে ঢাকা ছিল। তারপর আলোছায়ার খেলা খেলতে খেলতে সকাল না গড়াতে  বিরাট সোনার বলের মতো উঠে এলো সূর্য। ফসলের মাঠ, ঘোলাটে জলের নদী, পাহাড়ের ঢেউয়ের সারি পেছনে ফেলে ট্রেন ছুটছে ঝমঝমিয়ে। মারা অনর্গল কথা বলছে বন্ধুদের সঙ্গে। একইভাবে অবিশ্রান্ত কথার খই ফোটাচ্ছেন লম্বা চুলওয়ালা ভদ্রলোক। মানুষের পক্ষে যে এত কথা বলা সম্ভব এদের দুজনকে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন হতো। মারা এবার ফের আমাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো-
     তুমি এখানে প্রথমবার এসেছো, তাই বলছি! ফ্লোরেন্সের ট্যাক্সি ড্রাইভারদের সম্পর্কে সতর্ক থেকো! পৃথিবীর মধ্যে এরাই হচ্ছে ওয়ার্স্ট ক্যাটাগরির! দামাদামি নিয়ে এমন অভদ্রতা করবে..! হাঁটা পথের মধ্যে হেঁটেই তো সব দেখতে পারবে! আর দূরে গেলে গাড়ি ভাড়া করে নিয়ো। নিজে ড্রাইভ করবে!
     সময়ের হিসেব কষে বুঝতে পারছি, ফ্লোরেন্স এসে যাচ্ছে। আগের বারের মতো আবারও যাতে ভুল স্টেশনে নেমে গিয়ে অসহায় না হয়ে পড়ি, শুচিদের ব্যতিব্যস্ত করে না তুলি সেজন্য সামনের দিকে বার বারই চোখ রাখছিলাম। কণিষ্ক আর ঘোষের আসন পরের কম্পার্টমেন্টে। কিন্তু মারার উপদেশ তখনো ফুরোয়নি। আবার বকবক করতে আরম্ভ করলো সে-
  ‘গুস্তাভা ডুমো’ আর ‘ওস্টেরিয়া দিই ফিওরেনটিনি’ হচ্ছে ফ্লোরেন্সের বেস্ট রেস্ট্যুর‌্যান্ট! দাম বেশি নয়! কিন্তু ডেলিসাস খাবার! আচ্ছা তোমাকে এদের চেহারাটাই না হয় দেখিয়ে দিচ্ছি, বলেই সে সেল ফোনে রেস্ট্যুর‌্যান্টের ছবি দেখাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।
     এবং পরক্ষণেই সচেতন হলো-
     এগুলোর সবই অবশ্য বিফ আর পর্কের প্রিপারেশন! তুমি কি...?
     উত্তর শুনে উৎসাহে ভাটি পড়লো তার-
     ওঃ হো! তাহলে তো আর এসব চলবে না! আমি তোমাদের সম্পর্কে সবই জানি। আমার অনেক ভারতীয় বন্ধুরা রয়েছে তো!

     এখনো দুপুরের খাওয়ার সময় হয়নি। অতএব হোটেলে মালামাল রেখে বেরিয়ে পড়া গেলো বিশ্বখ্যাত ফ্লোরেন্স ক্যাথেড্রলের উদ্দেশ্যে। এর নির্মাণ কাজ শেষ হতে সময় লেগেছিল ১৪০ বছর। ১২৯৬ থেকে ১৪৩৬ খ্রীষ্টাব্দ পর্যন্ত। উৎসর্গ করা হয়েছে এর ডিজাইনার বিখ্যাত প্রযুক্তিবিদ, সান্তা মারিয়া ডেল ফিয়োরেকে। ক্যাথেড্রলের অফিসিয়্যাল নাম তাই -‘Cattedrale di Santa Maria del Fiore'. স্থানীয় ভাষায় ‘জুয়মো’ (Duomo)। রোমান ও গ্রীক শিল্পের মিশ্রণে নতুন সৃষ্টির উন্মেষ ঘটিয়েছে এখানকার চার্চ, মনুমেন্ট এবং অসাধারণ সব বিল্ডিংগুলো। ফ্লোরেন্স তাই ইউরোপে নবজাগরণের(Renaissance) আঁতুড়ঘর হিসেবে খ্যাত। অবশ্য শুধুমাত্র পাথরের অনন্য স্থাপত্যশৈলী আর শিল্পসৌন্দর্যের কারণেই এই সুখ্যাতি নয়। বিজ্ঞান-প্রযুক্তি, ধর্ম-দর্শন, নতুন চিন্তার নবজাগরণ দিয়েও গোটা ইউরোপকে প্রবলভাবে প্রভাবিত করেছিল ফ্লোরেন্স। 
     ইটালিকে ভেতর থেকে দেখবো বলে হাঁটা শুরু হলো আমাদের। ইউরোপের সবখানেই পথিক চলাচলের জন্য  রয়েছে প্রশস্ত ফুটপাথ। ফ্রান্সের তুলনায় এখানে অবশ্য পরিপাটির অভাব চোখে পড়ে। পথের দুই পাশে উঁচু উঁচু সব পাথরের তৈরী ম্যাসিভ বিল্ডিং। এখানকার স্থাপত্য দেখে শুরু থেকেই মনের কোণে যে জিজ্ঞাসার চলাচল ছিল, আজও সেটা ফিরে এলো। প্রশ্ন জাগলো-
     প্রাচীন এবং মধ্য যুগে যখন বিদ্যুৎ আবিষ্কার হয়নি, ক্রেন তৈরী হয়নি, তখন এত ভারি বস্তু অত উঁচুতে তোলা কী ব্যবস্থায় হয়েছিল? কেমন করেই বা সম্ভব হয়েছিল নিখুঁত প্রযুক্তিতে এমন নির্মাণ কাজ?
     জিজ্ঞেস করতেই কণিষ্কের পরিষ্কার জবাব-
     সেসব নিয়ে এখনো রিসার্চ চলছে মামণি। অনেকগুলো উত্তর রয়েছে। তবে কনফার্ম হওয়া যায়নি। আজ কী খাবে বলো?
     সে একটা কিছু খেলেই হলো!
     মেসো, দিদিভাই তোমাদেরও কি তাই? আমি শুনেছি, ফ্লোরেন্স ক্যাথেড্রলের কাছে ‘মিস্টার পিজ্জা’ নামে খুব একটা ভালো রেস্টুর‌্যান্ট আছে! ওখানকার পিজ্জা নাকি বেস্ট! যেতে চাও?
     হ্যাঁ চলো। দেখা যাক কী রকম। মেসোর উৎসাহভরা জবাব এলো।
     দিদিভাই, তুমি?
     ভালোই হবে! তবে আমি আজ তোমাদের সবাইকে খাওয়াবো!
     ডানপাশের টানা বিল্ডিং-এর দরজার সামনে পরপর সাইনবোর্ড টাঙানো। ‘বুটিক স্টোরে’ পলকের দৃষ্টিপাতেও নজরে এলো, ভারতীয় জামাকাপড়ের ছড়াছড়ি সেখানে। তারপরেই একটি ইটালিয়ান স্টোরে সাজানো রয়েছে স্যুট-কোট, টাই, ক্যাপ। পাশের দোকানে সুসজ্জিত কাচের দেয়াল দিয়ে চোখে পড়ছে, কয়েক জোড়া জুতো স্যাণ্ডেল হুকের গায়ে ঝোলানো। তারপর পর পর পেছনে ফেলে এলাম রুথ’স কোশার (জুইশ রেস্টুর‌্যান্ট), পাক হালাল কাবাব (পাকিস্তানী), আরারাতসহ (আর্মেনিয়ান) ইটালিয়ান, মরোক্কান, লেবানিজ খাবারের দোকানগুলো। পথের পাশেই একটু উঁচু জায়গায় পা নামিয়ে বসে রয়েছে কালো কাপড়ে ঢাকা একটি জুবুথুবু মূর্তি। কাছে আসতে হঠাৎ হাত বাড়িয়ে দিতেই চমকে উঠলাম। অস্ফুটে বেরিয়ে এলো-
     ও মা! এতো দেখছি জীবন্ত মানুষ! দূর থেকে মনে হয়েছিল বেঁকে থাকা একটা স্ট্যাচু বুঝি!
     শুচি একটু হেসে উঠলো-
     ও তো বেগার মামণি! ভিক্ষে চাইছে!
     ভিক্ষে চাইছে তো এভাবে পুরো শরীর কালো কাপড়ে ঢাকা কেন? বলতে বলতেই ব্যাগ থেকে পয়সা বার করে দিলাম তাকে।
     শুচি সরে এসে বললো-
     কেন ওকে দিলে? ও তো টেরোরিস্টও হতে পারে! দেখছো না সবকিছু ঢেকে রেখেছে?
     সে তো হতেই পারে! কে জানে কেন, হঠাৎই দিয়ে ফেললাম!
     ক্যাথেড্রলের একদিকে সারি সারি দোকানপাট। প্রবেশপথের সামনেই তিনটে স্বাস্থ্যাজ্জ্বল সুঠাম শরীর লাল ঘোড়া। তাদের পিঠে সওয়ার হয়েছে লাল-কালো-সবুজ রঙের ইউনিফর্ম পরা সবলদেহী তিন ব্যক্তি। গার্ড সম্ভবত। বাকিংহাম প্যালেসে, ভ্যাটিক্যান সিটির পিটার ব্যাসিলিকাতেও খুব উজ্জ্বল লালবর্ণের ইউনিফর্ম পরে জ্বলন্ত রোদ্দুরের ভেতর স্থিরভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছি নিরাপত্তা রক্ষীদের। তারা এতটাই স্থির যে, খুব কাছ থেকে চোখের পাতার নড়াচড়া না দেখলে বোঝা কঠিন এরা সত্যিই শ্বাস প্রশ্বাসবাহিত জীবন্ত মানুষ!
     লাইনে দাঁড়ানো মানুষগুলোর পোশাক পরীক্ষা করছেন দুজন নারী-পুরুষ। একটু পরেই পুরুষটি ঘোষণা করলেন-
     খুব ছোট পোশাক পরে চার্চে ঢোকা নিষেধ। হাঁটুর নিচ অবধি ঢাকা থাকতে হবে। আর স্লিভলেস ড্রেসও পরে যাওয়া চলবে না।
     শুচির পরিধানে হাফ প্যান্ট। সুতরাং সঙ্গে সঙ্গেই কণিষ্কর সতর্ক উচ্চারণ শোনা গেলো-
     দিদিভাই, এখানকার নিয়ম ভাঙা চলবে না! যারা তোমার মতো এসেছে, সবাই স্কার্ফ কিনে নিচ্ছে! তুমিও নাও!
     এটা কিন্তু এরা বাড়াবাড়ি করছে মেসো! তুমিই বলো সামার টাইমে যে কেউ তো লম্বা পোশাক নাই পরতে পারে! ঠিক নয়?
     নিয়ম তো নিয়মই শুচি! সব জায়গাতেই কিছু ট্র্যাডিশন থাকে শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য! কথা না বাড়িয়ে একটা কিনে পরে নে!
     তার মানে এরপর আর কিছু করা যাবে না মেসো! মামণির অর্ডার!
     ভেতরে যাওয়ার পরে আবারও মুগ্ধবিস্ময়ের দিগন্ত উন্মোচিত হলো সবার চোখে সামনে। কণিষ্ক ফিস ফিস করলো-
     মেসো, এখানে কিন্তু কাঠের কোনো কাজ নেই! সবই স্টোনের কাজ!
     সেটাই তো! তারপরেও সব জায়গায় ধনুকের শেপ কী করে এলো?
     আর ওইদিকে দেখো, অ্যাস্ট্রোনমিকাল সাইট। ওখানে জুপিটারসহ অনেকগুলো প্লানেটের কথা রয়েছে!
     পাপান এখানে কথা বলা নিষেধ! দরজার পাশে লেখা ছিল, পড়ে দেখোনি?
     সরি দিদিভাই!
     ওদের কথা শুনতে শুনতে, চারপাশের দর্শকদের চোখের মুগ্ধ দৃষ্টি দেখতে দেখতে মন আবারও সরব হলো ভেতরে ভেতরে। বার বার সে বললো-
     সমস্ত ইউরোপ জুড়ে একদিন কী আশ্চর্যভাবেই দুই ভিন্ন সত্তার উপস্থিতি ছিল! একদিকে বর্বর নিষ্ঠুরতা! অন্যদিকে সুকুমার বৃত্তির সীমাহীন জাগরণ! একদিকে অসাধারণ সব প্রযুক্তির আবিষ্কার! আরেকদিকে আপন সমাজ পারিপার্শ্বিকতাকেও নিরুদ্বেগে ধ্বংস করা! শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এমন ইতিহাসই ছড়িয়ে ছিল ইউরোপ জুড়ে!
     লাঞ্চের সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। ‘মিস্টার পিজ্জার’ ঠিকানা খুঁজে বার করা দরকার। ফ্রাঞ্চের মতো ইটালিতেও দেখেছি রেস্টুর‌্যান্টের সামনে কোথাও খোলা রাস্তায়, কোথাও সামান্য ছাউনির নিচে খাদ্যের আসর জমে উঠেছে মহাসমারোহে। এখানেও তার ব্যতিক্রম নয়। ফুটপাথ ধরে চলতে চলতে সহসা কানে এলো–
     তোমাদের ছেলে এখন উত্তর আফ্রিকায় রয়েছে! তার কোনো সংবাদ না পাওয়ায় উদ্বিগ্ন আছো তোমরা! সে ভালো আছে! ভেবো না!
     তাকিয়ে দেখি দুজন মধ্যবয়সী ককেশাস নরনারী গম্ভীর মুখে দাঁড়িয়ে এক দীর্ঘকায় কৃষ্ণাঙ্গ তরুণের কথা শুনছেন। তবে তরুণটি প্রচুর কথা বললেও নিতান্ত নীরব তারা। ভারি কৌতূহল হলো।
     ফ্লোরেন্সের ফুটপাথে জ্যোতিষীর জ্যোতিষচর্চা? ভাবা যায়?
     একটু জোরেই বললাম-
     শুচি, একটু অপেক্ষা কর তোরা।
     তুমি কোথায় যাচ্ছো? বলতে বলতে সেও কয়েক পা এগিয়ে এলো পেছনে।
     তরুণ এবার ককেশাস ছেড়ে ভারতীয়দের নিয়ে পড়লো-
     হাই! হ্যালো! হাউ আর ইউ?
     ভালো আছি।
     সবসময়ই ভালো থাকবে! কারণ তুমি খুব ভালো মানুষ!
     তুমি কী করে জানলে?
     বাঃ! জানবো না? আই ক্যান রিড ইওর ফেস! এই নাও, তোমাকে এই গিফট দিলাম আমার পক্ষ থেকে! বলেই সে লাল পাথরের একটি গণেশ আর হাতীর মূর্তি তুলে দিলো আমার হাতে!
     বললাম-
     আমার কাছে এগুলো কেনার মতো অত টাকা নেই!
     দরকার নেই! যেটুকু আছে, তাই-ই দাও!
     তার কাণ্ড দেখে শুচি কৌতুক নিয়ে হাসছিল। ঘোষও ততোক্ষণে এগিয়ে এসেছে কাছাকাছি। তরুণ বললো–
     হ্যালো মিস্টার, আমার নাম আলী! মিশর থেকে এসেছি! হাই ইয়্যাং লেডি, বয়ফ্রেণ্ডের খবর কি?
     তারপরেই সে মোক্ষম কথাটি ঝাড়লো–
     কাল রাতে আমার একটি মেয়ে হয়েছে! তার জন্য তোমরা কিছু কিছু করে দাও আমাকে! হাসপাতালের খরচা রয়েছে! বেবিফুড কেনা দরকার! আর সেসব টাকা আজই আমায় যোগাড় করতে হবে!
     কণিষ্ক দূরে দাঁড়িয়ে ক্ষুব্ধ চেহারায় তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে সব। স্পষ্টই বুঝতে পারছি তার ক্ষিধে এখন ‘মিস্টার পিজ্জা’ রেস্টুর‌্যান্টের টেবিলের দিকে ছুটছে। চলবে…

দীপিকা ঘোষ । ওহাইয়ো, আমেরিকা