অটোয়া, রবিবার ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪
আমাদের সংস্কৃতিই আমাদের সম্পদ – সুপ্তা বড়ুয়া

দেখতে দেখতে আরেকটি বছর কালের গর্ভে বিলীন হয়ে গেলো, হাতের মুঠো গলে বেরিয়ে গেলো আরো একটি বছর। ভালো-মন্দ, আশা-নিরাশা, হতাশায় কাটিয়ে দিলাম আমরা সবাই আরো একটি বছর। শীত প্রধান দেশ কানাডা, আর তার রাজধানী অটোয়াও চারদিকে তুষার নিয়েই আরেকটি বছরের যাত্রা শুরু করে। অন্যান্য মেগা-সিটির মতোও নয় অটোয়া শহর। একটা নিরিবিলি, শান্ত, মৃদু কোলাহলমুখর শহর অটোয়া।  

মাঝে কয়েকটা বছর ঘরের সামনে পাহাড়সম তুষারের স্তুপ নিয়ে বছরটা শুরু করলেও, এ'বছর মনে হচ্ছে একটু রেহাই দিচ্ছে তুষার। যদিও অটোয়ায় অন্যান্য বড় শহরের মতো উৎসব আর আয়োজনে নতুন বছরকে সবাই স্বাগত জানায় না, তবুও ছোট্ট পরিসরে সবাই কাছের মানুষ কিংবা বন্ধুবান্ধব নিয়ে যে যার মতো করেই নতুন বছরকে গ্রহণ করে নেয়। নতুন মানেই পুরোনোকে ফেলে একবুক আশা নিয়ে আবার পথ চলা। আমরা বাঙালীরাও এ প্রবাসে নিজের পরিচিতি পরিমন্ডল ছেড়ে আবারও নানা আশা নিয়ে পথচলা শুরু করি আরেকটি নতুন অধ্যায়ের। কথিত আছে, প্রায় ১০ হাজার বাঙালীর বসবাস এ শহরে। এত দূরে আটলান্টিকের এ'পাড়ে আমরা তুষার পরিষ্কার করতেই ব্যস্ত থাকি হয়তো নতুন বছরে। বছরটা তুষারপাত-ঠান্ডা দিয়ে শুরু হয় বলেই কিংবা বছরের শুরুতেই আমাদের দেশীয় কোন উৎসব/উপলক্ষ নেই বলেই কি'না জানি না, এসময় মোটামুটি ঘরবন্দীই থাকে বেশিরভাগ মানুষ। কিন্তু ২১শে ফেব্রুয়ারীর পরপরই আস্তে আস্তে বাঙালী কমিউনিটির মধ্যে একটা সরগরম ভাব শুরু হয়।

২০১৯ সালটা অটোয়ার সাংস্কৃতিক অঙ্গনটা ভীষণ জমজমাট ছিলো। প্রায় প্রতি সপ্তাহান্তে’ই কোন না কোন জায়গায় অনুষ্ঠান লেগেই থাকতো। আশা করছি ২০২০ সালও তার ব্যতিক্রম হবে না। ইতিমধ্যেই বেশকিছু ভালো আয়োজনের আগাম খবরও পেলাম। মনে মনে প্রস্তুতিও শুরু ওসব অনুষ্ঠান উপভোগ করার জন্য। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের যেমন আয়োজন হয়েছিলো ২০১৯ সালে, পাশাপাশি চ্যারিটিমূলক ইভেন্টও অনেক হয়েছে। কানাডা'র মূলস্রোতের মানুষের সাথে এসব চ্যারিটিমূলক কাজের মাধ্যমে সংযোগটা আগের চেয়ে দৃঢ়ই হয়েছে বলা যায়।

‘এই দূর পরবাসে তারা গুনি আকাশে আকাশে’। নতুন বছরে প্রত্যাশা, কানাডায় থাকলেও বাংলা সংস্কৃতিকে বুকে লালন করে কানাডার ঐতিহ্যকে সমৃদ্ধ করতে সচেষ্ট হবো। পাশাপাশি আমাদের উত্তর প্রজন্মকে আমাদের সাংস্কৃতিক বিকাশের মাধ্যমে সংযোগ স্থাপন করতে ভূমিকা পালন করে যাবো। যতদূরে যেখানেই থাকি না কেন, মাটির টান আমাদের সমৃদ্ধ করুক, আমাদের সংস্কৃতি-কৃষ্টির মাধ্যমে দেশের সম্মানকে আমরা এ প্রবাসে সমুন্নত রাখতে সচেষ্ট থাকবো। আমরা যেন ভুলে না যাই, মাল্টিকালচারাল কানাডাকে আমরাও আমাদের সংস্কৃতি-কৃষ্টি দিয়ে সমৃদ্ধ করতে পারি এবং কানাডার মূলস্রোতে আরো বিশাল ভূমিকা রাখতে পারি উত্তরোত্তর।

সুপ্তা বড়ুয়া । অটোয়া, কানাডা