অটোয়া, রবিবার ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪
'শেষ নাহি যে' বজলুস শহীদ

ধ্যাপক মীজান সাহেবের সাথে পরিচয় এতই আকষ্মিক ছিল যে, মেঘ না চাইতে বৃষ্টির মত। একদিন শামীম ওয়াহিদ ভাই (আজাদ ভাই) হঠাৎ করেই এলেন আমার বাসায়, মনট্রিয়াল থেকে, ২০০৯ বা ২০১০ সালের কথা। বিকেল ৩ টার দিকে কলিং বেলের শব্দে দরজা খুলেই কিছুটা বিষ্মিত হলাম, ছোট খাট একটা বয়োবৃদ্ধ লোক দেখে, বললেন - শামীম ওয়াহিদ এখানে আছে কি -না।
আমি উনাকে নিয়ে ভেতরে বসানোর পর শামীম ভাই পরিচয় করিয়ে দিলেন - ইনি প্রফেসর মীজান, গনিত আর ম্যাটা ফিজিক্স নিয়ে অধ্যাপনা করছেন, খুব নামকরা লেখক।
বলাই বাহুল্য, শামীম ভাইও সাহিত্য প্রেমিক একজন সফল মানুষ। বাংলাদেশে তাঁর আরিয়াল প্রকাশনী বেশ কটি গ্রন্হ প্রকাশ করেছে, 'ফেরারি' নাম করা সাহিত্য পত্রিকা যেখানে সমরেশ মুজুমদারের সাক্ষাৎকার প্রকাশ করেছেন তিনি। এর বিশেষ সংখ্যা উপহার হিসেবে দিতে এসেছেন প্রফেসর মীজান স্যারকে আর তাঁর লেখা নিতে এসেছেন।
এতবড় নামকরা অধ্যাপক, অটোয়ায় থাকেন, বাংলাদেশের মানুষ অথচ আমি তাঁকে চিনি না, খারাপই লাগছিলো।
চায়ের ছোট্ট একটা আয়োজনের ফাঁকে অনেক কথা শুনলাম উনার কাছে। তাঁর চিন্তা, চেতনা, বিশ্ব ব্রহ্মান্ড (ইউনিভারস্ নিয়ে আলোচনা) আমাকে নতুন এক জগতে নিয়ে গেল। আমি অবাক হোয়ে তাকিয়ে আছি উনার দিকে।
উনি বললেন, আপনাদের জীবদ্দশাতেই অনেক সত্যের সন্ধান পাবেন।
আমি ইসলামের সাথে দ্বন্দ্ব কতটুকু তাই মিলাচ্ছিলাম। বিস্তর ফারাক, উনি অধ্যাপক, আমার ফিজিক্স এর জ্ঞান বিন্দু মাত্র নেই। তাই সাহিত্যের দিকে উনাকে ফিরিয়ে নিয়ে গেলাম। বললেন তিনি এখন লিখছেন - শেষ বিকেলের বারবণিতাদের নিয়ে। পড়ন্ত জীবনে উদ্ভ্রান্ত যৌবনের মহিলাদের মনোবেদনা, নিসংগতা নিয়ে।
আমি জানি না, তাঁর সে লেখা তিনি শেষ করে গিয়েছেন কি-না, কিন্তু আমাকে দিয়ে গিয়েছেন জীবন, ফিজিক্স, মেটাফিজিক্সের এক অনির্বচনীয় দর্শন।
যাবার আগে এমন সানুগ্রহ আমন্ত্রণ জানিয়ে গেলেন, বাংগালীদের জন্য একরাশ ভালবাসার কথা বলে গেলেন, তাতে মনে হলো তিনি ভাল মানুষই নন, একজন ভাল বন্ধু। তিনি আমাদের মাঝে নেই, কিন্তু, তাঁর বিছানো আসনটা আজও আছে আমার মনের দেউলে। যখনই রবীন্দ্রনাথের এই গানটা শুনি, তখনই তাঁর কথা মনে পড়ে- 
" ওই আসনতলের মাটির 'পরে লুটিয়ে রব।
তোমার চরণ-ধুলায় ধুলায় ধূসর হব।"

বজলুস শহীদ । অটোয়া, কানাডা